“ইতিহাসের পাঠশালায় ভারত : সিন্ধু থেকে সেন” বইটিতে আমি ইতিহাসকে একটু ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। এখানে কেবলই কিছু ঘটনা পরম্পরা, রাজা-রাণী-রাজপুত্রের কাহিনী কিংবা যুদ্ধের বর্ণনা করা হয় নি। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বের করা হয়েছে ইতিহাসের নানান যোগসূত্র, নানান বিশ্লেষণ। রাজার চেয়েও অত্যাধিক গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়েছে তৎকালীন জনগণের অবস্থাকে। একটি ঘটনা কোন প্রেক্ষাপটে ঘটল? এর পেছনের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট কী ছিল? সেই ঘটনার প্রভাবটাই বা কী ছিল? এরকম অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়েছে বইটিতে।
সিন্ধু থেকে সেন সময়কালটা কিন্তু কম না। অনেক বড়। অনেক ঘটনা ঘটেছিল এই সময়টিতে। ভারতবর্ষে আর্যরা এসেছিল, অনার্যরা তাদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল। উত্থান ঘটেছিল গৌতম বুদ্ধ, মৌর্য সাম্রাজ্য, গুপ্ত সাম্রাজ্য, পাল সাম্রাজ্য, সেন সাম্রাজ্য সহ আরো অনেক সাম্রাজ্যের। এই সাম্রাজ্যগুলো একেক সময় একেক ভাবে এই উপমহাদেশ শাসন করে গেছে। তাদের এই শাসনের সাথে সাথে নানান পরিবর্তন ঘটেছিল ভারতবর্ষের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক জীবনেও। এই সময়কাল নিয়ে গবেষণাও হয়েছে অনেক। খোদ এক বাঙালিই (রাখালদাস বন্দোপাধ্যায়) তো সিন্ধু সভ্যতাকে হরপ্পা এবং মহেঞ্জোদারোতে উন্মোক্ত করে দেখান। কিন্তু এই ইতিহাসটাকে একেবারে সহজ সরল এবং গল্পের মত করে উপস্থাপন করা হয়েছে এরকম কোনো বই আমার চোখে পড়ে নি। সেই জায়গা থেকে বিশিষ্ট ইতিহাস লেখক আসিফ আযহারের উৎসাহ উদ্দীপনায় আমি সিন্ধু থেকে সেন বংশ পর্যন্ত ইতিহাসকে একটু ভিন্ন ভাবে লেখার দায়িত্বটি নেই। এটা জানতাম কাজটা অনেক কঠিন, তারপরেও নিয়েছিলাম। ইতিহাস যেন পাঠকরা উপন্যাসের মতো করেই গোগ্রাসে গিলে ফেলতে পারে সেই চেষ্টাটিই এখানে করা হয়েছে। যে পাঠক কখনো ইতিহাস পড়ে নি, কিংবা ইতিহাস নিয়ে সব সময়ই একটা ভীতি কাজ করে সেই পাঠকটিও যেন এক নি:শ্বাসে একটি ইতিহাসের বই পড়তে পারে এব্যাপারে আমি সর্বাত্মক সতর্ক থেকেছি। বইটিতে বর্ণনার পাশাপাশি বর্ণনা সম্পর্কিত নানা ধরনের ছবিও ব্যবহার করা হয়েছে যাতে পাঠকরা চোখের সামনে ইতিহাস পড়ার সাথে সাথে সেই দৃশ্যপটটিও দেখতে পান।
আরেকটি কথা না বললেই নয়। বর্তমানে লেখার ক্ষেত্রে আমাদের সবারই একটা জুজুর ভয় কাজ করে। আমরা চাইলেই অনেকে স্বাধীনভাবে মনের কথাটি লিখতে পারি না। সে লেখা যদি বিন্দুমাত্রও ধর্মকে স্পর্শ করে ফেলে তাহলে তো আর কোনো কথাই নেই। এই জুজুর ভয়ে আমাদের অনেকেই মনের কথাটি লুকিয়ে জুজুকে সামলে তারপর প্রকাশ করেন। এই বইটিতে এরকম কোনো ভয়কে পরোয়া করা হয় নি। আর্যরা ভারতবর্ষে এসে যে তান্ডবলীলা চালিয়েছিল, যেভাবে তারা সিন্ধু সভ্যতা ধ্বংস করে এদেশে তাদের একক আধিপত্য বিস্তার করেছিল প্রত্যেকটি বিষয়কে একেবারে ভেতর থেকে সমালোচনা করা হয়েছে। এখানে আলোচনা করা হয়েছে গৌতম বুদ্ধকে নিয়েও, তবে গৌতম বুদ্ধকেও সমালোচনার বাইরে রাখা হয়নি। তিনিও যে একটা পর্যায়ে এসে শোষিতদের ছেড়ে শোষকের দলে নিজেকে ভিড়িয়েছিলেন সেই ইতিহাসটি স্পষ্টভাবে এখানে উল্লেখ করা হয়েছে।
আশা করছি বইটি পাঠকদের ভালো লাগবে।
বইটি পাওয়া যাচ্ছে অঙ্কুর প্রকাশনীতে। স্টল নং-১৬৮-১৭০
লেখক
সৌরভ দাস
শিক্ষার্থী
বাকৃবি, ময়মনসিংহ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:২৬