কী হলো! দেবাশীষ মারা গেলো বাংলাদেশ এত নিশ্চুপ কেন? দেবাশীষ কেন মারা গেল জানেন? শুনলে আপনাদের সবার গা শিউড়ে উঠবে। আমাদের সমাজে পাশবিকতার যে চূড়ান্ত স্ফূরণ ঘটেছে তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ দেবাশীষের এই মুত্য। শুনো বাংলাদেশ, দেবাশীষের কোন স্বাভাবিক মৃত্যু হয় নি। দেবাশীষ আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যা করেছে আমাদের পুরো সিস্টেমের উপর তীব্র ঘৃণা পোষণ করে। তার এই মৃত্যুতে পুরো দেশজুড়ে নিউজে সয়লাব হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কারণ এর থেকে বড় পাশবিকতা আর কিছু হতে পারে না। কী পরিমাণ যন্ত্রলার স্বীকার হলে দেবাশীষের মত ছেলেরাও আত্মহত্যার মত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। অথচ এটা নিয়ে বাংলাদেশ নিশ্চুপ!
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) পড়াশোনা করেছিল দেবাশীস মণ্ডল। মৃত্তিকাবিজ্ঞানের এই ছাত্রের স্বপ্ন ছিল পবিপ্রবির শিক্ষক হবে। সেভাবেই তিনি নিজেকে প্রস্তুত করেছিল। অনার্স ও মাস্টার্সে সে ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট হয়েছে। মাঝখানে কিছুদিনের জন্য তিনি কুষ্টিয়ার রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগ দেয়। এরই মাঝে পবিপ্রবির মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগে লেকচারার নিয়োগের প্রক্রিয়াও শুরু হয়। সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। তার মৌখিক পরীক্ষাও ভালো হয়েছে। চাকরি পাওয়ার শর্তে কর্তৃপক্ষের ঘুষের আবদার পূরণে ১৫ লাখ টাকা জোগাড়ও করে ফেলেছিল সে। কিন্তু শেষের দিকে অদৃশ্য সুতার টানে সব আটকে যায়। চাকরি না হওয়ার কথা জানতে পেরে রাগে-ক্ষোভে-অভিমানে এই মেধাবী ছাত্র ১৪ মে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
দেবাশীষের জায়গায় সেদিন স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার ভাইজিকে নিয়োগ দেয়া হয় । যেটির জন্য দেবাশীষের থেকে যোগ্যতম আর কেউ ছিল না। অথচ ক্ষমতা নামক এক ঘাতকের কাছে দেবাশীষের অপমৃত্যু ঘটে গেল। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়। তাই তার ভাইজির যোগ্যতা সবার থেকে উপরে। এটিই বোধ হয় নিয়ম!
শিক্ষক নিয়োগের নামে পুরো বাংলাদেশ জুড়েই এখন এক প্রকার লীলা খেলা চলে। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এর মাত্রা আরো বেশি। ২০ টা নিয়োগ হলে সেটার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসি, প্রক্টর, রেজিস্টার, ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন, স্থানীয় এমপি, মন্ত্রী সবাই কেমন যেন উন্মাদ হয়ে যায়। তারা সবাই এক টেবিলে বসে দর কষাকষি শুরু করে। কে কয়টা নিবে এ নিয়ে চলে নানান ধরনের খেল। এজন্য কেউ মেকি আন্দোলন গড়ে তুলে কেউ তার ক্ষমতার দম্ভ দেখায়। এসবের মাধ্যমে শেষমেষ একটি ফয়সালার মাধ্যমে এই ভাগ বাটোয়ারা শেষ হয়। তারপর যে যত রেটে পারে তার অংশটি বিক্রি করে। কেউ বিশ লক্ষ কেউ পনের লক্ষ । এভাবেই এই নিয়োগ বাণিজ্যের সমাপ্তি ঘটে। দিন শেষে সবাই বড় অংকের টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরেন আর মাঝখান দিয়ে হাহাকার করে কিছু সাধারণ পরিবার। পড়ে থাকে দেবাশীষের মত মেধাবীদের লাশ!
যে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক নিয়োগের এই হাল সেই দেশের পক্ষে জ্ঞানে বিজ্ঞানে অগ্রসর হওয়া বেশ কঠিন বটে। আমরা বোধ হয় এসব কারণেই বারবার আটকে যাচ্ছি। আমি বলছি না সব শিক্ষকই এভাবে নিয়োগ হয়। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একবার পা দিয়েছে এরকম কেউ একেবারে চোখ বুঝে বলে দিতে পারে এসব নিয়োগের ৯০ ভাগই হয়ে থাকে টাকার বিনিময়ে। এজন্য ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট একটা ছেলেকে বাদ দিয়ে ক্লাসের গাধা ছাত্রটিকেও শিক্ষক বানাতে এসব লুটেরাদের হাত কাঁপে না।
এভাবে একটি দেবাশীষ নয়। অসংখ্য দেবাশীষকে এই লুটেরারা মানসিকভাবে প্রতিনিয়ত মারছে। তাদের এই অন্যায়ের কথা সবাই জানে। কিন্তু মুখ খোলা বারণ। কারণ তারা সবার মুখে কুলুপ এঁটে দিয়েছে। যে কারণে পুরো দেশ জুড়ে এখন এক অদ্ভুত নীরবতা। সবাই এখন একটা কথা বলার আগে পঞ্চাশ বার ভাবে। ফলে দেবাশীষরাও একটা ক্ষোভ নিয়ে সারাটি জীবন পার করে দেয়। এরকম দেবাশীষের সংখ্যা বাংলাদেশে অসংখ্য। তারা একটি স্বাধীন বাংলাদেশে একদল হারামি কর্তৃক লাঞ্চিত, অপমানিত। ছি: বাংলাদেশ! আমরা তো তোমাকে এমনটি দেখতে চাই নি।
সৌরভ দাস
সভাপতি
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাকৃবি শাখা।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:০৮