ডানপায়ের বুড়ো আঙুলটা ব্যথা করছে। পা ফেলতে পারছিনা। ঘুম ভাঙার পর থেকেই ব্যথা। বুঝতে পারছিনা কেন! খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছি। টিএসসির দিকে যাব। আজ একটা পরিক্ষা ছিল। লাস্ট সেমিস্টার এর মিডটার্ম। পরিক্ষা দিয়ে এসে অনেকক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম। ঘুম ভাঙার পর থেকেই পায়ে ব্যথা।
ডাকসুর সামনে দাঁড়িয়ে আছি। নাহ, ভালোই যন্ত্রণা করছে আঙুলটা। ইচ্ছে করছে কেটে ফেলে দিই। দাঁড়িয়ে থাকতেও কষ্ট হচ্ছে। ডাকসুর সামনের ছোট দেয়ালটায় বসে পড়লাম। রিকশায় করে যাব?? পকেটে সাকুল্যে সাতটাকা আছে। তারচেয়ে বরং বসে বসে মানুষ দেখি। প্রকৃতি দেখি। সেই ভাল।
আকাশটা কেমন থমথমে হয়ে আছে। পড়ন্ত বিকেলের রোদ কলাভবনের উপড় আছড়ে পড়েছে। কেমন মন খারাপ করা আলো। কৃষ্ণচূড়া গাছটাও যেন দাঁড়িয়ে আছে মন খারাপ করে। হালকা বাতাসে দুলছে পাতাগুলো। একটা কাক চুপচাপ বসে আছে। কাক স্থির পাখি নয়। বসে থাকলেও সে ঘাড়টি অন্তত নাড়াবে। এ একদম নট নড়নচড়ন। যেন ধ্যানে বসেছে। আচ্ছা, কাকদের সমাজে নেতা নেই? যদি থাকে, তাহলে তো কবিও থাকার কথা। কাক সমাজের কবি একটু গম্ভীর প্রকৃতির হবেন। সহজে ডাকবেন না। মাঝেমধ্যে কবিতা আউড়াবেন। একটু মোটা, কর্কশ স্বরে। বাহ, ভাবতে ভালই লাগছে।
টুংটাং টুংটুং করে একটা মেয়ে সাইকেল এ প্যাডেল দিতে দিতে চলে গেল ঝড়ের বেগে। রাস্তার অন্যপাশে হামান দিস্তায় পিষে কাঁচা কলা ভর্তা বানাচ্ছে ১৫-১৬ বছরের একটা ছেলে। বড় বড় চোখ। পরনে সবুজ গেঞ্জি। কোন মেয়ে সামনেদিয়ে গেলেই আড় চোখে তাকিয়ে দেখে নিচ্ছে। আবার ভর্তা বানানোয় মন দিচ্ছে। ওর এই স্বভাবটা একদিনে গড়ে ওঠেনি। কেমন লোভাতুর চোখ ছেলেটার।
ছেলেটাকে আড়াল করে আমার সামনে একটা রিকশা এসে দাঁড়ালো। মাথা ভর্তি ঝাকড়া চুল একটা ছেলে নামলো। ভাড়া মিটিয়ে চলে যেতেই রিকশাওয়ালা নিজেই রিকশায় বসল। বসার ধরণ আয়েশি। ট্যাঁক থেকে একটা সিগারেট এর প্যাকেট বের করল।একটাই সিগারেট আছে। সিগারেট ধরানোর পর চোখ বন্ধ করে টানছে। কিছু একটা ভাবছে যেন। কী ভাবছে সে? আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছে সে কি ভাবছে জানতে। নিতান্তই ছেলে মানুষী যদিও।
আচ্ছা, হুট করে কাউকে যদি এই ক্ষমতা দিয়ে দেওয়া হয় যে সে মানুষের ভাবনা,চিন্তা, মনের কথা বুঝতে পারবে! সে কী করবে? পাগল হয়ে যাবার কথা বোধহয়। এজন্যই প্রকৃতি কাউকে এই ক্ষমতা দেয়না।
কলাভবনে দেয়ালে রোদ গা আরো এলিয়ে দিয়েছে। কৃষ্ণচূড়া গাছটা জবু থবু হয়ে পড়েছে আরো। কাকটা এখনো স্থির বসে আছে। আমি তাকিয়ে আছি কাকটার দিকে। হঠাৎ কাকটা যেন ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালো। মনে হলো ঠোঁট বাঁকা করে হাসছে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।
চারপাশে হুট করে অনেক শোরগোল শুনতে পাচ্ছি। যেন একটা সাউন্ড প্রুফ ঘরে কেউ একটা জানালা খুলে দিয়েছে এবং ঘরটা গুলিস্তানে। আমার আশেপাশে খুব বেশি মানুষ নেই।তাহলে?
হঠাৎ করে আমি আতংক নিয়ে অনুভব করলাম,আমি মানুষের মনের কথা বুঝতে পারছি।
মাথা ঘুরছে আমার। পায়ের ব্যথা টের পাচ্ছি না। চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।টলতে টলতে পড়ে যাচ্ছি আমি।চোখ বন্ধ হবার আগ মুহূর্তে দেখতে পেলাম কাকটা উড়ে যাচ্ছে। হেলে পড়া সূর্যের দিকে...
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:২৭