পৃথিবীর ইতিহাসের পাতায় এমন অনেক ঘটনাই আছে, যা প্রথমবারের মতো ঘটেছিল। বর্তমান সভ্যতায় যেগুলো ছাড়া আধুনিক জীবনযাত্রা একেবারেই অকল্পনীয়। যেমনঃ- কম্পিউটার, মোবাইল, ক্যামেরা ইত্যাদি। এগুলো যখন প্রথমবারের মত আবিষ্কৃত হয়েছিল ঠিক তখনকার মানুষের কাছে এগুলোই ছিল ইতিহাসের প্রথম এবং অত্যন্ত কৌতূহলের বিষয়! যা এখন আমাদের কাছে একেবারে খুবই সাধারণ ব্যাপার মাত্র। কিন্তু এখনো মাঝে মাঝে অনেকের মনেই কৌতূহল জাগে যে, এই সব জিনিস গুলো প্রথম কিভাবে এলো? কিভাবেই বা এই সব অত্যাবশ্যকিয় জিনিস গুলো আবিষ্কারের চিন্তা মানুষের মাথায় আসলো ইত্যাদী? মানুষের আবিষ্কৃত জিনিস গুলোর মধ্যে একটি অন্যতম আবিষ্কার হলো ফটোগ্রাফ। ফটোগ্রাফির জগতেও এমন অনেক কিছুই আছে, যা ইতিহাসে প্রথমবারের মত ঘটেছিল। আজ আমি সে গুলো নিয়েই আপনাদের সামনে আলোচনা করবো।
পৃথিবীর প্রথম ফটোগ্রাফারঃ- ফটোগ্রাফির ইতিহাসে ফরাসি উদ্ভাবক 'জোসেফ নিসেফোর নিপস' (১৭৬৫-১৮৩৩) এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে পরিচিত। কারন তাকেই বলা হয় ফটোগ্রাফির জনক এবং বিশ্বের প্রথম সফল ফটোগ্রাফার। তিনি বিশ্বের প্রথম ফটোগ্রাফটি তৈরি করেন ১৮২২ সালে। এটি ছিল পোপ সপ্তম পিউসের একটি প্রতিকৃতির ফটোগ্রাফ। কিন্তু ফটোটির একটি কপি তৈরি করতে গিয়েই এটি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তাই একই পদ্ধতিতে তৈরি উপরের ফটোগ্রাফটিকেই বিশ্বে ফটোগ্রাফির প্রথম নিদর্শন হিসেবে ধরা হয়। সতের শতকের একটি খোদাই করা ফ্লেমিশ চিত্রকর্মের উপর ভিত্তি করে নীপস এটি তৈরি করেছিলেন ১৮২৫ সালে। তবে ২০০২ সালে এই ফটোগ্রাফটি আবিষ্কৃত হওয়ার আগ পর্যন্ত নীপসের তোলা নিচের ছবিটিকেই বিশ্বের প্রথম ফটোগ্রাফ বলে ভাবা হত।
‘View from the Window at Le Grass’ নামক উপরের এই ছবিটি নীপস তুলেছিলেন ১৮২৬ সালে। ফটোগ্রাফির ইতিহাসে খুবই বিখ্যাত এই ছবিটিকে বলা হয় প্রাকৃতিক দৃশ্যের প্রথম সফল এবং স্থায়ী ফটোগ্রাফ। ছবিটি ডেভেলপ হতে প্রায় আট ঘন্টা সময় লেগেছিল বলে এটি ঝাপসা এবং এই সময়ের মধ্যে সূর্যের অবস্থান পরিবর্তিত হওয়ায় ছবিটিতে অট্টালিকার উভয় পাশই আলোকিত দেখা যায়। একই দৃশ্যের ফটোগ্রাফ যদি আজকের দিনে তোলা হত, তবে তা দেখাত অনেকটা নিচের ছবিটির মত।
১৮৩৫ সাল; প্রথম নেগেটিভ থেকে পজিটিভ ছবিঃ-
প্রথম দিকের ফটোগ্রাফিতে নেগেটিভের কোন বালাই ছিল না, বরং ছবির সরাসরি পজিটিভ তৈরি করা হত। ফলে একই ফটোগ্রাফ থেকে বারবার কপি তৈরি করা যেত না। কিংবা কপি তৈরি করার চেষ্টা করলে আগের মূল ফটোগ্রাফটি নষ্ট হয়ে যেত। তবে ১৮৩৫ সালে 'হেনরি ফক্স ট্যালবট' নামের একজন ব্রিটিশ উদ্ভাবক সর্বপ্রথম নেগেটিভ থেকে পজিটিভ করে ছবি তোলার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন এবং উপরের ছবিটি হল এই পদ্ধতিতে তোলা বিশ্বের প্রথম ছবি। এতে নেটের পর্দা লাগানো একটি জানালার নেগেটিভ ও পজিটিভ ছবি পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে।
১৮৩৮ সাল; প্রথম ছবি যাতে মানুষ রয়েছেঃ-
'লুই দাগ্যায়ার' নামের একজন ফরাসি উদ্ভাবক ১৮৩৮ সালে প্যারিসের একটি রাস্তার এই ছবিটি তোলেন, যাতে প্রথমবারের মত একজন সত্যিকারের মানুষ দৃশ্যমান। এটি একটি ব্যস্ততম রাস্তার ছবি হলেও রাস্তায় কোন যানবাহন না থাকার কারন, ছবিটি ডেভেলপ হতে প্রায় দশ মিনিট সময় লেগেছিল যার কারনে রাস্তার অন্যান্য চলমান লোকজন ও গাড়িঘোড়া দৃশ্যটি থেকে মুছে যায়। তবে ছবিটিতে রয়ে গেছে শুধু রাস্তার মোড়ে সেই দশ মিনিট ধরে স্থিরভাবে দাঁড়ানো নিচের মানুষটি, যিনি সম্ভবত জুতা পালিশ করাচ্ছিলেন। এবং সৌভাগ্যক্রমে, তিনি ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছেন। তবে দুর্ভাগ্যক্রমে, তাঁর পরিচয় অজ্ঞাতই রয়ে গেছে।
১৮৩৯ সাল; প্রথম পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফঃ-
যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় বসবাসরত 'রবার্ট কর্নেলিয়াস' নামের একজন ডাচ রসায়নবিদ ১৮৩৯ সালে নিজের এই ছবিটি তোলেন। এটি হল বিশ্বের প্রথম পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফ।
১৮৬০ সাল; আকাশ থেকে তোলা প্রথম ছবিঃ-
আকাশ থেকে বিশ্বের প্রথম ছবিটি তুলেছিলেন ফরাসী ফটোগ্রাফার ও বেলুনবিদ 'ফেলিক্স নাদার' ১৮৫৮ সালে। উড়ন্ত বেলুন থেকে তোলা ছবিটি ছিল একটি ফরাসি গ্রামের। কিন্তু সেই ছবিটির এখন আর কোন অস্তিত্ত্ব নেই। বরং আকাশ থেকে তোলা সবচেয়ে প্রাচীন এবং এখন পর্যন্ত টিকে থাকা উপরের ফটোগ্রাফটি তোলা হয়েছিল এর দু’বছর পর, ১৮৬০ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন শহরের এই ছবিটি তুলেছিলেন 'জেমস ওয়ালেস ব্ল্যাক' নামের একজন ফটোগ্রাফার।
১৮৬১ সাল; প্রথম রঙিন ছবিঃ-
বিশ্বখ্যাত স্কটিশ বিজ্ঞানী 'জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল' ১৮৫৫ সালে সর্বপ্রথম তিন রঙা ফিল্টার ব্যবহার করে ত্রিবর্ণ পদ্ধতিতে (three color process) রঙিন ছবি তোলার ধারণা প্রদান করেন। এর উপর ভিত্তি করে তাঁর তত্ত্বাবধানে ১৮৬১ সালে 'টমাস সাটন' বিশ্বের প্রথম রঙিন ফটোগ্রাফটি তোলেন। এটি ছিল একটি রঙিন চেকযুক্ত ফিতার ছবি।
১৮৭৭ সাল; প্রথম রঙিন ল্যাণ্ডস্কেপ ফটোগ্রাফঃ-
উপরের ছবিটি দক্ষিণ ফ্রান্সের একটি শহরের এবং এটি বিশ্বের প্রথম রঙিন ল্যাণ্ডস্কেপ ফটোগ্রাফ। 'লুই দুকো দ্যু হারো' নামের একজন ফরাসি উদ্ভাবক তাঁর স্ব-উদ্ভাবিত ‘বর্ণ বিয়োজন’ (subtractive color) পদ্ধতিতে এই ছবিটি তোলেন। রঙিন ছবি তোলার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত এটিই হচ্ছে মৌলিক পদ্ধতি। তবে পদ্ধতিটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের উপযোগী হতে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত সময় লেগেছিল।
১৮৭৮ সাল; প্রথম চলমান বস্তুর ছবিঃ-
ছুটন্ত ঘোড়ার চারটি পা কি একসাথে কখনও মাটি ছেড়ে শুণ্যে উঠতে পারে? কি প্রশ্নটা শুনে একটু অবাক হচ্ছেন তাই না? আসলে এটি অবাক হওয়ার মতই একটি প্রশ্ন! কারন এর আগে তো আমরা কেউই এমনভাবে ভাবিনি! তবে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে ১৮৭৮ সালে 'এডওয়ার্ড মব্রিজ' নামের একজন ইংরেজ চিত্রগ্রাহক সর্বপ্রথম পর পর কয়েকটি ক্যামেরা বসিয়ে দ্রুত ধাবমান ঘোড়ার ছবি তোলেন। বিশ্বের প্রথম চলমান বস্তুর ছবি তোলার এই পদ্ধতি থেকেই পরে জন্ম নেয় চলচ্চিত্রের ধারণা। একই সাথে সৃষ্টি হয় ফটোগ্রাফির একটি নতুন শাখা, যার নাম 'হাই স্পীড ফটোগ্রাফি'।
১৮৯৩ সাল; পানির নিচে তোলা প্রথম ছবিঃ-
পানির নিচে প্রথম ছবি তোলেন 'উইলিয়াম থম্পসন' ১৮৫৬ সালে। দক্ষিণ পশ্চিম ইংল্যাণ্ডের ডরসেট উপকূলে পানির নিচে সাধারণ ক্যামেরা নামিয়ে সেই ছবিটি তোলা হয়েছিল, যার কোন অস্তিত্ত্ব এখন আর নেই। পানির নিচে ছবি তোলার উপযোগী সত্যিকারের ক্যামেরা তৈরি করেছিলেন ফরাসি উদ্ভাবক 'লুই বুটান' এবং তা দিয়েই তিনি ১৮৯৩ সালে পানির নিচের প্রথম সফল ছবিটি তুলেছিলেন, যা এখনও টিকে আছে।
১৮৯৬ সাল; প্রথম এক্সরে ছবিঃ-
বিয়ের আংটি পরা এই এক্সরে হাতটি 'অ্যানা বার্থা' নামের একজন মহিলার। তিনি ছিলেন বিশ্বখ্যাত জার্মান বিজ্ঞানী 'উইলহেলম কনরাড রান্টজেনের স্ত্রী'। ১৮৯৫ সালের শেষদিকে এই বিজ্ঞানী পরীক্ষাগারে গবেষণা করার সময় দেখতে পেলেন, ব্যারিয়াম প্লাটিনোসায়ানাইড নামের একটি রাসায়নিক পদার্থ নতুন এক ধরণের রশ্মি বিকিরণ করছে। তারপর এই রশ্মির সাহায্যে তিনি বিশ্বের প্রথম এক্সরে ছবিটি তুললেন। এর ফলে প্রথমবারের মত কাটাছেঁড়া ছাড়াই মানবদেহের অভ্যন্তরের দৃশ্য দেখা সম্ভব হল। এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য তিনি ১৯০১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে প্রথম নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
১৯২৬ সাল; পানির নিচে তোলা প্রথম রঙিন ছবিঃ-
উপরের ছবিটি পানির নিচে তোলা প্রথম রঙিন ফটোগ্রাফের। মেক্সিকো উপসাগরে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের ফটোগ্রাফার 'চার্লস মার্টিন ও ডঃ উইলিয়াম লংলি' ১৯২৬ সালে আরো কয়েকটি ছবিসহ হগ মাছের এই ছবিটি তুলেছিলেন। পানিরোধক বিশেষ ক্যামেরা ধারক ব্যবহার করে এবং শক্তিশালী বিস্ফোরণের ঝলকানির সাহায্যে সাগরতল আলোকিত করে এই ছবি তোলা হয়েছিল, যা পরে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক নামক একটা ম্যাগাজিনে ছাপা হয়েছিল।
১৯৪৬ সাল; মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম ছবিঃ-
এই ছবিটি কোন মানুষের তোলা নয়! বিশ্বের প্রথম মহাকাশচারী সোভিয়েত রাশিয়ার ইউরি গ্যাগারিন মহাকাশে গিয়েছিলেন ১৯৬১ সালে, অথচ এটি তোলা হয়েছে ১৯৪৬ সালে! আসলে এটি মহাকাশে প্রেরিত যুক্তরাষ্ট্রের একটি মানুষবিহীন 'ভি-২' রকেট থেকে তোলা একটি ছবি, যাতে একটি ৩৫ মিলিমিটার মোশন ক্যামেরা সংযুক্ত ছিল। ১৯৪৬ সালের ২৪ অক্টোবর তারিখে নিউ মেক্সিকোর হোয়াইট স্যান্ডস মিসাইল রেঞ্জ থেকে এই রকেটটি উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। ছবিটি পৃথিবীর বায়ূমণ্ডলের বাইরে ভূমি থেকে ৬৫ মাইল উচ্চতায় রকেট থেকে ধারণ করা।
১৯৫৭ সাল; প্রথম ডিজিটাল ছবিঃ-
বিশ্বের প্রথম ডিজিটাল ছবিটি কোন ডিজিটাল ক্যামেরার সাহায্যে তোলা হয়নি, কারণ তখন ডিজিটাল ক্যামেরাই আবিষ্কৃত হয়নি! 'রাসেল কার্শ' নামের এক আমেরিকান বিজ্ঞানী ১৯৫৭ সালে বিশ্বের প্রথম স্ক্যানারের সাহায্যে তাঁর তিন মাস বয়সী সন্তানের ফটোগ্রাফ স্ক্যান করে উপরের ডিজিটাল প্রতিচ্ছবিটি তৈরি করেন।
১৯৬৬ সাল; চাঁদ থেকে তোলা পৃথিবীর প্রথম ছবিঃ-
এটিও কোন মানুষের ধারন করা ছবি নয়! ১৯৬৬ সালের ২৩ শে আগস্ট তারিখে চাঁদ থেকে তোলা পৃথিবীর এই প্রথম ছবিটি তুলেছিল 'লুনার অরবিটার-১' নামের নভোযান। ২ লক্ষ ৩৬ হাজার মাইল দূর থেকে তোলা এই ছবিতে নাকি রাতের আঁধারে ঢাকা তুরস্কের ইস্তাম্বুল থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনের পূর্বাংশে অবস্থিত অর্ধেক পৃথিবী দৃশ্যমান।
১৯৬৮ সাল; চাঁদ থেকে তোলা পৃথিবীর প্রথম রঙিন ছবিঃ-
এই ছবিটির নাম 'পৃথিবীর উদয়' (Earth rise)। অ্যাপোলো-৮ নভোযানের নভোচারীরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় পৃথিবীর এই রঙিন ছবিটি তুলেছিলেন। তারা তখন চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে ৩৫০ মাইল উপরে অবস্থান করছিলেন। পৃথিবী থেকে ২ লক্ষ ৪০ হাজার মাইল দূর থেকে তারা প্রত্যক্ষ করেছিলেন চাঁদের দিগন্তে পৃথিবীর উদয় হওয়ার এই অপার্থিব দৃশ্যটি।
১৯৭২ সাল; মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর প্রথম রঙিন পূর্ণ অবয়ব বিশিষ্ট ছবিঃ-
এই বিখ্যাত ছবিটির নাম ‘নীল মার্বেল’ (Blue Marble)। এটি আমাদের পৃথিবী নামের গ্রহটির প্রথম রঙিন পূর্ণ অবয়ব বিশিষ্ট ছবি। ১৯৭২ সালের ৭ ডিসেম্বর তারিখে অ্যাপোলো-১৭ নভোযানের নভোচারীগণ পৃথিবীর কক্ষপথ ছেড়ে চাঁদের পানে যাওয়ার সময় এই ছবিটি তোলেন। সূর্য তাঁদের পেছনে থাকায় উজ্জ্বলভাবে আলোকিত নীল গ্রহটির অসাধারণ প্রতিচ্ছবি ধরা পড়েছিল তাঁদের ক্যামেরায়।
১৯৭৫ সাল; ডিজিটাল ক্যামেরায় তোলা প্রথম ছবিঃ-
উপরের ছবিটি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কোডাক ল্যাবরেটরিতে ডিজিটাল ক্যামেরায় তোলা বিশ্বের প্রথম ছবি। এর এক বছর আগে, ১৯৭৪ সালে কোডাকের অ্যাপ্লাইড ইলেকট্রনিক্স রিসার্চ সেন্টারের প্রকৌশলী 'স্টিভেন স্যাসন'কে একটি ইলেক্ট্রনিক স্টিল ক্যামেরা উদ্ভাবনের দায়িত্ব দেয়া হয়। পরের বছর তিনি সাড়ে আট পাউন্ড ওজনের বিশ্বের প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরাটি তৈরি করেন, যা চালাতে ১৬টি ব্যাটারি লাগত। মজার ব্যাপার হল, এই ক্যামেরাটি ক্যাসেটের ফিতায় ছবি ধারণ করত। আর তখনও আবিষ্কৃত হয়নি কমপ্যাক্ট ডিস্ক, পার্সোনাল কম্পিউটার কিংবা ইন্টারনেট।
১৯৯২ সাল; ইন্টারনেটে প্রকাশিত প্রথম ছবিঃ-
সুইজারল্যাণ্ডের জেনেভায় অবস্থিত ইউরোপীয় আণবিক গবেষণা সংস্থা (CERN)-এ কর্মরত বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ বিজ্ঞানী স্যার টিম বার্নার্স লি ১৯৯২ সালে ইন্টারনেটভিত্তিক ‘World Wide Web’ উদ্ভাবন করেন। সার্নে কর্মরত মেয়েদের একটি প্যারোডি গানের দল হচ্ছে ‘Les Horrible's Cernettes’ বা ‘The Horrible CERN Girls’। ১৯৯২ সালে স্যার 'টিম বার্নার্স লি' এই গানের দলের সাথে সংশ্লিষ্ট তাঁর এক সহকর্মীকে দলটির কয়েকটি ছবি স্ক্যান করে দিতে বলেন। নিচের ছবিটি হল সেই গানের দলের একটি ছবি, যা প্রথম ছবি হিসেবে ইন্টারনেটে বিশ্বের প্রথম ওয়েব সাইট ‘info.cern.ch’-এ আপলোড করা হয়েছিল।
পৃথিবী বিখ্যাত ৬ টি অসাধারন ছবিঃ- ফটোগ্রাফ আবিষ্কার হওয়ার পর থেকে আজ অবধি পৃথিবীতে যে কত নিজুত কোটি ছবি উত্তলন করা হয়েছে তার ধরা-বাঁধা কোন হিসাব নেই। তবে উত্তলন করা সব গুলো ছবিই তো আর বিখ্যাত হয়ে উঠতে পারে না? কিন্তু তার মধ্যে কিছু জিনিস তো ব্যাতিক্রম থাকেই? আর নিচের উল্লেখিত ছবি গুলোও ঠিক তেমনই কিছু ছবি! যে ছবি গুলো এতটাই বিখ্যাত যে গুগল, উইকিপিডিয়া কিংবা ইন্টারনেটে সার্চ করলেই তা সবার আগে এসে সামনে উপস্থিত হয়! নিচে সেই সব বিখ্যাত ছবি, উত্তলনকৃত ব্যক্তি এবং ছবি সংশ্লিষ্ট ইতিহাস গুলো বর্ননা করা হলো।
১. অনাহারী শিশুর হামাগুড়ি দিয়ে খাবারের খোঁজ করা (১৯৯৪); ফটোগ্রাফারঃ কেভিন কার্টার।
ছবিটি ১৯৯৪ সালে সুদানের দুর্ভিক্ষের সময় তোলা। একটি মেয়ে শিশু খাবারের খোঁজে ১ কি.মি. দূরে অবস্থিত জাতিসংঘের ক্যাম্পের দিকে হামাগুড়ি দিয়ে যাচ্ছে। বাচ্চাটি এতটাই দূর্বল ছিল যে হেঁটে যাওয়া তো দূরে থাক দাঁড়ানোর শক্তিটুকুও তার মধ্যে ছিল না। পিছনে একটি শকুন বাচ্চাটির মৃত্যুর অপেক্ষা করছিল! যাতে বাচ্চাটি মারা যাওয়ার সাথে সাথেই শকুনটি নিজের খাবারের চাহিদা মেটাতে পারে! খাবার সংগ্রহের এই যুদ্ধে কে জয়ী হয়েছিল, 'শকুন না মানবসন্তান' তা অবশ্য জানা যায়নি। কারণ ফটোগ্রাফার কেভিন কার্টার ছবিটি তোলার পর পরই ঐ স্থানটি ত্যাগ করেন।
কিন্তু অত্যন্ত আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, ছবিটি তোলার মাত্র তিন মাসের মাথায় কেভিন কার্টার চরম হতাশায় ভুগে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। এবং আত্মহত্যা করার আগে তিনি একটি সুইসাইড নোট লিখে যান! যাতে কেভিন পরিষ্কার ভাবে উল্লেখ করেন যে, "ঐ দুর্ভিক্ষ কবলিত শিশুটিকে কেন সেদিন আমি উদ্ধার করে নিয়ে আসলাম না এবং কেন তাকে কোন সাহায্য করলাম না, সেই আত্মগ্লানিতে দগ্ধ হয়ে আজ আমি নিজেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছি।"
২. জ্বলন্ত বুদ্ধ ভিক্ষু (১৯৬৩); ফটোগ্রাফারঃ ম্যালকম ব্রাউনি।
১১ই জুন, ১৯৬৩। দক্ষিন ভিয়েতনামের ক্যাথলিকপন্থী সরকারের নিপীড়নের প্রতিবাদ স্বরূপ ব্যস্ত সড়কের মাঝখানে গায়ে আগুন দিয়ে বুদ্ধ ভিক্ষু 'থিচ কোয়াং ডাক' আত্মোৎসর্গ করেন। আত্মোৎসর্গ করার আগে তিনি ভিক্ষু শাসক গোষ্ঠীদেরকে বলেছিলেন, "ঐতিহ্যবাহী বুদ্ধ পতাকা উত্তোলনের উপর নিষেধাজ্ঞা যাতে তুলে নেয়া হয় এবং খ্রিষ্ট ক্যাথলিক ধর্মের মত বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারেও যাতে কোন বাধা দেয়া না হয়।"
একটা অবাক করা ব্যাপার হলো, ভিক্ষু 'থিচ কোয়াং' যখন আগুনে জ্বলছিলেন তখন তিনি মৃত্যু যন্ত্রনায় একবারের জন্যও হাত-পা ছোঁড়াছুঁড়ি করেননি!
৩. পৃথিবীর উদয়(Earth rise), মহাশূন্য থেকে তোলা পৃথিবীর প্রথম ছবি (১৯৬৮); ফটোগ্রাফারঃ অ্যাপোলো-৮এর ক্রু।
১৯৬৮ সালের বড়দিন। মহাকাশ যান অ্যাপোলো-৮ তখন চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩৫০ মাইল দূরে এবং পৃথিবী থেকে ২,৪০,০০০ মাইল দূরে অবস্থান করছিল। মহাশূন্য থেকে পৃথিবীর এই অপার সৌন্দর্য দেখে অ্যাপোলো-৮’এর ক্রুরা সেটা ফিল্মবন্দী করতে ভুল করেননি। নাসার মতে এই ছবিটিই মহাশূন্য থেকে তোলা পৃথিবীর প্রথম ছবি!
পৃথিবীর কবিরা সূর্যোদয়ের রূপ-সৌন্দর্য নিয়ে অনেক কবিতা লিখেছেন। কিন্তু পৃথিবীর বাইরে যদি কোন কবি থাকে তাহলে তাকে অবশ্যই অন্ধকার ফুঁড়ে পৃথিবী উদিত হবার রূপ নিয়ে কবিতা লিখতে হবে।
৪. জ্বলন্ত মেয়েশিশু, যুদ্ধের বীভৎসতা (১৯৭২); ফটোগ্রাফারঃ নিক আট।
১৯৭২ সালের ৮-ই জুন। ৯ বছরের মেয়ে 'ফ্যান থি কিম ফুকের' গ্রামে নাপাম বোমা ফেলা হয়। বোমার আঘাতে সাথে সাথেই মারা যায় কিমের কয়েকজন খেলার সাথী। কিমও সেই বোমার আঘাতকে ঠেকাতে পারেনি, তার শরীরেও আগুন ধরে যায়। তাৎক্ষনিক ভাবে কাপড় খুলে ফেলে দিলেও ততোক্ষণে তার চুলে ও পিঠে আগুন ধরে যায়। সে অবস্থাতেই কাঁদতে কাঁদতে দৌড়াতে থাকে কিম। পরবর্তিতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে, প্রায় ১৪ মাস হাসপাতালে থাকার সময় তার শরীরে মোট ১৭টি অস্ত্রোপচার করা হয়!
৫. বিপ্লবী বীর চে গুয়েভারা (১৯৬০); ফটোগ্রাফারঃ আলবার্ট করদা।
বিখ্যাত এই ছবিটি তোলা হয়েছে ৫ই মার্চ, ১৯৬০ সালে কিউবার হাভানায়। আমরা বর্তমানে চে’র যে ছবিটি টি শার্টসহ বিভিন্ন জায়গায় দেখি সেটি এই ছবি থেকেই ক্রপ করে করা। ছবিটিতে চে’র দৃঢ়চেতা মনোভাব অসাধারণ ভাবে ফুটে উঠেছে যা বিপ্লবের আইকন হিসেবে এখনও ব্যবহৃত হয়। ছবিটি তোলার সময় চে’র বয়স ছিল মাত্র ৩১ বছর!
০৬। সবুজ চোখের মেয়ে, ফটোগ্রাফারঃ- ডেভিড লেজার।
ছবিটি প্রথমবার দেখলে মনে হবে সাদামাটা সাজে এক কিশোরীর মুখ। এর আবার আলাদা কী? কিন্তু এই সাদামাটা মুখই দ্বিতীয়বার আপনাকে ছবিটির দিকে তাকাতে বাধ্য করবে। কারণ, সমুদ্রের গভীরতামাখা সেই চোখের রং আর দশজন বাঙালির মতো নয়, একদম ঝকমকে সবুজাভ! মেয়েটা বাংলাদেশি? নাম তুলি! অস্ট্রেলিয়ান আলোকচিত্রী ডেভিড লেজার কেমন করে খুঁজে পেলেন সবুজনয়না বাংলাদেশি এই মেয়েকে? তারই একটি বর্ননা দিয়েছেন তিনি ঠিক এভাবেঃ-
‘সারা দিন ঘোরাফেরার পর শীতের বিকেলটায় একটু শান্ত সময় কাটানোর জন্য একটা গ্রামের ছোট্ট টিলার মতো জায়গায় গিয়ে বসি। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাকে ঘিরে একটা ভিড় তৈরি হয়। কেউ কেউ ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে আমার দেশ, নাম, এবং এখানে আসার কারণ জানতে চাইছিল। সময়টা উপভোগ করতেই আমি বাচ্চাদের সঙ্গে ফুটবল খেলতে শুরু করলাম। খেলতে খেলতেই আমার চোখ আটকে গেল একটি ঘরের সিঁড়িতে বসে থাকা এক কিশোরীর দিকে। সে খোলা চুলে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার টি-শার্ট পরেছে। তার চেহারা খুব সাধারণ ও অকৃত্রিম, কিন্তু তার চোখে ছিল অসাধারণ কিছু। আমি তার সঙ্গে কথা বলি। নাম জানতে চাই। নিজের পরিচয়ও দিই। তার সবুজ চোখের প্রশংসা করে জানতে চাইলাম সে আমার পোট্রে৴ট ছবির সাবজেক্ট হতে রাজি কি না। খুব সহজভাবেই মেয়েটি রাজি হয়ে যায়।’
ডেভিড বলছিলেন, ‘ছবি তোলার জন্য আমি চাইছিলাম তুলি সবুজ কোনো ওড়না বা স্কার্ফ পরুক। তাতে তার চোখের রং আরও স্পষ্ট হবে। কিন্তু সবুজ কিছু বাড়িতে নেই বলে জানায় সে। এরপর আমি সবুজের সঙ্গে অন্য কিছু খুঁজতে বললে সে লাল-সবুজে মেশানো একটা ওড়না (শাল) পরে। এটা মাথায় জড়িয়ে আমি তার কয়েকটি ছবি নিই। সেই সঙ্গে তাকে গত দিনের লাল-সবুজ টি-শার্ট পরিয়েও কিছু ছবি তৈরি করি।’
বছর দুই আগে রাজশাহীর পুঠিয়াতে তোলা সেই মেয়ের ছবি এক অর্থে মোড় ঘুরিয়ে দেয় ডেভিড লেজারের ফটোগ্রাফি ক্যারিয়ারেরও। তুলি নামের সেই মেয়ের মুখ উঠে আসে ডিজিটাল ক্যামেরা ওয়ার্ল্ড আর ফটো রিভিউ অস্ট্রেলিয়ার মতো বিশ্বখ্যাত ফটোগ্রাফি বিষয়ক সাময়িকীর প্রচ্ছদেও।
সংযুক্তিঃ- সর্বপ্রথম ফটোগ্রাফি এবং এর বিস্তারিত বিষয় সম্পর্কে উইকিপিডিয়ার হিস্ট্রি অব ফটোগ্রাফি, টাইমলাইন অব ফটোগ্রাফি টেকনোলজি এবং দ্য ওয়াণ্ডারফুল ওয়ার্ল্ড অব আর্লি ফটোগ্রাফি ও অন্যান্য মাধ্যম থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ফিচারটি লিখেছিলেন, শামীম ফয়সল! আমি শামীম ফয়সল ভাইকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি এমন সুন্দর তথ্য সমৃদ্ধ পোস্ট সর্বপ্রথম আমাদের সামনে উপস্থাপন করার জন্য!
তথ্যসূত্রঃ-
০১। ছবি ব্লগ: ফটোগ্রাফির ইতিহাসে যা কিছু প্রথম
০২। বাংলাদেশ প্রতিদিন-ফটোগ্রাফির জগতে প্রথম
০৩। বিশ্বের বিখ্যাত ৫টি ফটোগ্রাফ
০৪। প্রথম আলো-সবুজ চোখের সেই মেয়েটি
পুনশ্চঃ- পরিশেষে সামান্য কিছু কথা বলবো! যদিও কথাগুলো অনেকটাই ব্যক্তিগত, তারপরেও পোস্ট সংশ্লিষ্ট বিধায় না বললেই নয়! আপনারা এই লেখার উপরে যে ছবিটি দেখছেন, সেটি অন্য কারো নয়; এই অধমেরই নিজ হস্তে অঙ্কিত একটি মামুলী ছবি মাত্র! আমি বিখ্যাত কোন চিত্রকর কিংবা কোন বড় মাপের ফটোগ্রাফার নই! সুতরাং আমার আঁকা ছবিটা হয়তো অনেকের কাছে ভাল নাও লাগতে পারে! তবে অন্যের কাছে এটি ভাল বা খারাপ যাই লাগুক না কেন, আমার কাছে কিন্তু এর মূল্য অপরিসীম। কারন এই ছবিটাই হলো আমার জীবনের প্রথম এবং একমাত্র অঙ্কন। জীবনে আমি আর কাওকে নিয়ে কখনও কোন ছবি বা কোন চিত্র অঙ্কন করিনি! আপনার হয়তো ভাবতে পারেন যে, ছবিটা হয়তো আমি নিছক কোন কল্পনার বশে এঁকেছিলাম? কিন্তু আপনি যদি তাই ভেবে থাকেন তাহলে আমি নিশ্চিত ভাবে বলবো যে আপনি ভুল ভাবছেন! কারন এটা নিছক কল্পনার বশে আঁকা কোন চিত্র নয়! এই ছবিটা আঁকার পিছনে জড়িয়ে আছে অনেক লম্বা একটা কাহিনী! যে কাহিনীটা আমাকে বাধ্য করেছিল পেন্সিল হাতে নিয়ে এই জীবন বাজি রাখা কাজটা সম্পন্ন করতে!
আজ থেকে প্রায় সাড়ে চার বছর আগে, একদিন বিকাল বেলা অনার্স প্রথম বর্ষের কিছু প্রয়োজনীয় বই কেনার জন্য আমি যশোর নিউমার্কেট থেকে সিএনজি চেপে যশোরেরই সব থেকে ব্যস্থতম যায়গা এবং যশোরের প্রাণকেন্দ্র নামে খ্যাত দড়াটানায় গিয়েছিলাম। সেখানে পৌছে আমি সিএনজি থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে গেলাম আমারই এক পরিচিত লাইব্রেরিতে। আর সেই লাইব্রেরিতে গিয়েই প্রথম ঐ মেয়েটিকে আমি দেখতে পাই! মেয়েটি এসেছিল তার ইন্টারমিডিয়েট ফাস্ট ইয়ারের কিছু বই কিনতে! হালকা নীল আকাশী রংয়ের স্যালোয়ার কামিজের সাথে ধবধবে সাদা একটা উড়না গায়ে তার নেল পলিশ রাঙানো হাত দুটো লাইব্রেরির সামনের টেবিলে ছড়িয়ে সে যখন দাঁড়িয়ে ছিল। তখন আমার কাছে মনে হয়েছিল, এ যেন মেয়ে নয়! রুপকথার কোন এক নাম না জানা পরী/এ্যঞ্জেল হবে! যে পথ ভুল করে মহাকাশ থেকে এই পৃথিবীতে নেমে এসে লাইব্রেরিটাকে আলোকিত করে রেখেছে! তার নাম ঠিকানা কিংবা পরিচয় আমি কিছুই জানিনা! কারন আমি ঐ একবারই মাত্র তার দেখা পেয়েছিলাম। এ জীবনে আমি আর তাকে কোনদিনও সামনে দেখিনি। অবশ্য চেষ্টা যে করিনি তা কিন্তু নয়! ওকে এক নজর দেখার জন্য প্রায় প্রতিদিন আমি দড়াটানায় যেতাম, কিন্তু কোনদিনও তাকে আমি দেখতে পায়নি। এমনকি যে লাইব্রেরিতে আমি ওকে প্রথম দেখেছিলাম সেখানে খোঁজ নিয়েও তেমন কোন সঠিক তথ্য পায়নি। তারা যে ঠিকানা দিয়েছিল তার সবই ছিল ভুল। কারন তারাও সেই মেয়েটির সঠিক ঠিকানা কিছুই ভাল মত জানতো না! কিন্তু মেয়েটি বই নিয়ে লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কি যেন ভেবে হঠাৎ করেই এমন একটা সুন্দর হাসি দিয়েছিল, যে হাসিটা আমার কাছে মনে হয়েছিল বিখ্যাত চিত্রকর লিউনার্দো দ্যা ভিঞ্চির আঁকা বিশ্ব বিখ্যাত ছবি 'মোনালিসার' থেকে কোন অংশেই কম নয়!
বিখ্যাত কবি সাহিত্যিকেরা প্রিয়তমার হাসিকে অনেক সুন্দর সুন্দর উপমা দিয়ে বিশ্লেষন করতে পারেন। তাদের মতে, কোন প্রিয়তমা যখন হাসে তখন তার সেই হাসিতে নাকি মুক্ত ঝরে? কিন্তু আমি বিখ্যাত কেউ নই, তাই হয়তো সেই মেয়েটির হাসিটাকে সেভাবে মূল্যায়ন করতে পারবো না। তবে এতটুকু বলতে পারি যে, 'মেয়েটার হাসিতে মুক্ত নয়, যেন জোৎস্না ঝরে পড়ে'! তার সেই ভূবন ভোলানো হাসিটাকে আমি আজও ভুলতে পারিনি!
সেদিনই দোকান থেকে একটা পেন্সিল আর একটা রাবার কিনে এবং আমার পরিচিত একজন আঙ্কেলের ফার্মেসির দোকান থেকে একটা প্যাড নিয়ে দ্রুত বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে রাবারকে নিজের হস্তগত করে, টেবিল ও চেয়ারকে রনাঙ্গন হিসাবে সাঁজিয়ে; সাথে সাথে পেন্সিল এবং প্যাডের সাথে শান্ত যুদ্ধ ঘোষনা করলাম। এবং কোন রকম বিরতি ছাড়াই একটানা সাড়ে চার ঘন্টা ঘাম ছুটানো যুদ্ধের পর, রাত ১২:৫৭ মিনিটে পেন্সিল এবং প্যাডের একগুয়েমিকে পরাজিত করে অবশেষে এই ছবিটা আঁকতে আমি সমর্থ হলাম! এই সেই ছবি, যে ছবিটা আজ থেকে সাড়ে চার বছর আগে আমি নিজের মনের একান্ত মাধুরী মিশিয়ে এবং হৃদয়ের সবটুকু ভালবাসা ঢেলে দিয়ে অঙ্কন করেছিলাম!
জানিনা আমার প্রথম দর্শনেই ভাল লাগা সেই মেয়েটি এখন কোথায় আছে, কেমন আছে? তবে যেখানেই থাকুক, আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে সব সময় দোয়া করি, সে যেন ভাল থাকে! অনেক বেশি সুখে থাকে! এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে সে হয়তো এখন অন্যের বুকে নিজের আশ্রয় খুঁজে নিয়েছে। কিন্তু আজও সে আমার কাছে হয়ে আছে অনেক আপন, অনেক পরিচিত! আজও আমি চোখ বন্ধ করলে তার সেই হাসি মাখা মুখটা আমার চোখের সামনে দেখতে পাই! শুনতে পাই তার ভুবন ভুলানো সেই হৃদয় জয় করা হাসি!
উৎসর্গঃ- আমার আজকের এই পোস্টটি সাম্যহোয়্যার ইন ব্লগের সিনিয়র ব্লগার জনাব 'আমিনুর রহমান' ভাইয়াকে উৎসর্গ করছি! কারন তিনি আমার করা বিগত "বিশ্বের অন্যতম প্রধান এবং জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগলের জানা-অজানা মজার ইতিহাস" নামক পোস্টটাতে মন্তব্যের মাধ্যমে অনেক সাহায্য করেছিলেন। যে জন্য ভাইয়াটার কাছে আমি অনেক বেশি কৃতজ্ঞ! আর আমার আজকের এই পোস্টটা আমিনুর রহমান ভাইয়ার নামে উৎসর্গ করে উনাকে আমি বিনম্র চিত্তে স্মরণ করছি!
সেই সাথে স্মরণ করছি এই ব্লগে আমার সব থেকে প্রিয় এবং আপনজন, সাম্যহোয়্যার ইন ব্লগের আইকন খ্যাত শ্রদ্ধেয়া শায়মা আপুনি কে! কারন আমার প্রায় প্রত্যেকটা পোস্টে তার অনন্য পদচারনা, তার সুন্দর সুন্দর মন্তব্য তাকে আলাদা করে ভাবতে আমাকে বাধ্য করে!
বিঃ দ্রঃ- মানুষ মাত্রই ভুল করে। সে জন্য আমারও যে কোন ভুল হবে না এমন নয়! তবে সেই ভুল টাকে নিজেদের মনে ঠাঁই না দিয়ে, বরং আমাকে একজন নিজেদেরই মানুষ মনে করে সব দোষত্রুটি গুলোকে ক্ষমা করে দেবেন! তাছাড়া টাইপিংয়ের ভুলের কারনে হয়তো অনেক জায়গায় বানানে ভুল থাকতে পারে। সেটাকে বিবেচ্য বিষয় হিসাবে না ধরে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখলে কৃতার্থ হবো!
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:১৫