একজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী অথচ গুগলের নাম শোনেননি এমনটা ভাবাও চরম বোকামী। ইন্টারনেটে সাধারনত কোন কিছুর প্রয়োজন হলে, তা পাওয়ার জন্য সাথে সাথেই আমরা গুগলে সার্চ দিই। এরপর অনেক গুলো ফলাফল থেকে নিজের প্রয়োজনীয় ফলাফলটি বেছে নিই। বর্তমানে গুগল হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী সার্চ ইঞ্জিন। গুগল ইনকর্পোরেটেড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বহুজাতিক ইন্টারনেট এবং সফটওয়্যার কোম্পানি। সার্চ ইঞ্জিন, অনলাইন বিজ্ঞাপন সেবা ও পণ্যের উন্নয়ন এবং হোস্ট করার মাধ্যমেই গুগল বিশেষভাবে পরিচিত। গুগলের মূলমন্ত্র হলো- ‘বিশ্বের তথ্য সন্নিবেশিত করে তাকে সবার জন্য সহজলভ্য করে দেওয়া।’ গুগলের অপ্রাতিষ্ঠানিক মূলমন্ত্র হলো- ‘Don’t be evil’। গুগল, সার্চ ওয়েবের একটি বৃহত্তম সার্চ ইঞ্জিন। গুগলের লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্বের যাবতীয় তথ্য সুবিন্যস্ত করা এবং সেগুলো কে সর্ব-সাধারণের জন্য উপযোগী করে প্রকাশ করা। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছি যারা হয়তো গুগলের ইতিহাস সর্ম্পকে ভাল ভাবে জানি না। গুগলের সেই সব অজানা ইতিহাসকে সুবিন্যস্ত করে সাজিয়ে তৈরি করেছি আমার আজকের এই পোস্ট।
গুগলের প্রাথমিক ইতিহাসঃ- স্ট্যানর্ফোড বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন সুনামধন্য ছাত্র 'ল্যারি পেজ এবং সার্গেই ব্রনি'ই হলেন গুগলের প্রতিষ্ঠাতা। গুগলের বর্তমান প্রধান কার্যালয় অবস্থিত “ক্যালফোর্নিয়া মাউন্টেইন ভিউ” নামক শহরে। ১৯৬৬ সালে ক্যালফোর্নিয়ার স্ট্যানর্ফোড বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন পিএইচডি কোর্সের ছাত্র ল্যারি পেজ এবং সার্গেই ব্রনি সর্ব প্রথম এর কাজ শুরু করেন। ১৯৯৮ সালের ৭-ই সেপ্টেম্বরে ল্যারি পেজ এবং সার্গেই ব্রনি একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানী হিসেবে গুগল প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু ২০০৪ সালের ১৯-শে আগস্ট এটি পাবলিক লিমিটেডে রূপান্তরিত হয়। গুগল প্রতি নিয়তই নতুন সেবা, নতুন পণ্য দিয়ে বিশ্বে নিজেদের প্রয়োজনীয়তা অনেকখানি বাড়িয়ে তুলছে। বিজ্ঞাপন জগতে নিজেদের অবস্থান করেছে সুদৃঢ়। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানী কিনে এবং অংশীদারিত্ব নিয়ে নিজেদের বহুমুখীতাকেও সমৃদ্ধ করছে। তাই তো সার্চের পাশাপাশি ই-মেইল, ভিডিও শেয়ারং এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ইত্যাদি বিষয়ে গুগলের বিভিন্ন ধরনের নানামুখী সেবা রয়েছে।
গুগলের নাম করনঃ- গুগলের শুরু হয় ১৯৯৬ সালে ল্যারি পেজ এবং সারজেই ব্রিন এর একটি রিসার্চ প্রোজেক্ট থেকে । তখনকার সার্চ সিস্টেম গুলো ছিল একটি টার্ম কতবার সার্চ করা হচ্ছে তার উপর নির্ভরশীল । তারা তখন "পেজ র্যংক টার্ম" টার উৎপত্তি করেন যে, একটি ওয়েবসাইট এর লিংক আরেকটি ওয়েবসাইটের লিংক এর সাথে সম্পর্কযুক্ত হবে এবং এভাবেই সার্চের ফলাফল আসবে ।
তারা এই সার্চ ইন্জিন এর নাম দেন "ব্যাকরাব", কারন এই সিস্টেম টা সব ব্যাক লিংক চেক করে রেজাল্ট দিত। কিন্তু পরবর্তিতে তারা এর নাম পরিবর্তন করে গুগল রাখেন। তবে আমরা আজ যে গুগলকে চিনি এবং জানি যদি ভুল না হতো তাহলে সেটি আজ আমাদের কাছে "googol" নামেই পরিচিতি লাভ করতো। কারন এই গুগল নামটির উৎপত্তি হয়েছিল ভুল বানান "googol" থেকে। ল্যারি পেজ এবং সার্গেই ব্রিন পরিকল্পনা গ্রহণের ঠিক পরের বছর অথ্যাৎ ১৯৯৭ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর গুগল ডট কম নামে একটি ডোমেইন নিবন্ধন করেন। কিন্তু তারা যে ডোমেইনটি নিবন্ধন করতে চেয়েছিলেন সেটি না হয়ে ভুল বশত নিবন্ধিত হয় Google নামে। এ নিয়ে অবশ্য তখন তারা খুবই মনকষ্টে ভোগেন। Google শব্দটার মানে যেটা দাড়ায় সেটা হলো এমন একটা অঙ্ক যেটা ১০ টু দি পাওয়ার ১০০। অর্থ্যাৎ ১ এর পেছনে ১০০ টি ০ থাকবে।
10,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000
অত্যন্ত আশ্চার্য জনক বিষয় হলো এই শব্দটির উদ্ভাবক ছিলেন, ৯ বছর বয়সী মিলটন সিরোটা, যিনি বিখ্যাত ম্যাথমেটিশিয়ান 'এডওয়ার্ড ক্যাসনার' এর ভাতিজি ছিলেন। তিনিই এটা কে বিখ্যাত করে তোলেন তার বইয়ে এর কথা লিখে । এই নামটি পছন্দ করার পেছনে তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল যাতে তাদের এই সার্চ ইঞ্জিন এর পেছনেও এরকম অনেক মানুষ থাকে।
গুগলের প্রাথমিক মূলধন সংগ্রহঃ- ১৯৯৮ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর ক্যালিফোর্নিয়ার মেনলো পার্কে যখন গুগলের প্রাথমিক যাত্রা শুরু হয় তখন ল্যারি পেজ এবং সার্গেই ব্রিন-এর টাকা ছাড়াও সেই সময় তাদের পাশে এসে দাঁড়ান সান মাইক্রো সিস্টেমের সহ প্রতিষ্টাতা 'এন্ডি বেথটোশেইম'। তিনি গুগল কোম্পানী প্রতিষ্টা হওয়ার আগেই দুই বন্ধুকে এক লক্ষ ডলার দিয়ে সাহায্য করেন। পরের বছর জুন মাসে দুটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল নামক কোম্পানী গুগলে আড়াই কোটি (২৫ মিলিয়ন) ডলার বিনিয়োগ করে। পরবর্তিতে ২০০৪ সালে মাত্র ৮৫ ডলারে গুগল শেয়ার বাজারে তাদের শেয়ার ছেড়ে অল্পদিনেই তারা দুই হাজার তিন'শ কোটি ডলার আয় করে। বিনিয়োগ কারীরা যে ভুল করেননি তার প্রমাণ হলো, মাত্র তিন বছরের মাথায় এর প্রতিটি শেয়ারের মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৭০০ ডলার করে।
অফিস পরিবর্তনঃ- সান্তা মার্গারেট এ্যাভিনিউ-মেনেলো পার্ক ক্যালিফোর্নিয়ার ওজচিক্কি গ্যারেজ থেকে ১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে গুগল তার অফিস পরিবর্তন করে ১৬৫ ইউনিভার্সিটি এ্যাভিনিউ-আল্টো ডে তে স্থানান্তর করে। এ সময় গুগলের সর্বমোট কর্মী সংখ্যা ছিল মাত্র ০৮ (আট) জন। ধীরে ধীরে গুগলের কর্মচারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০ এ।
গুগলের বর্তমান কর্মী সংখ্যাঃ- ২০১৩ সালে অধীনস্ত মোটরোলা কোম্পানীসহ সব মিলিয়ে গুগলে ৪৭,৭৫৬ জন কর্মী রয়েছে, যাদের মধ্যে ১০,০০০ হাজারেরও বেশি সফটওয়্যার ডেভেলপারগন রয়েছে ৪০টি অফিসে। ২০০৪ সালে কোম্পানীটি প্রথম শেয়ার বাজারে আসার পর এর প্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিন এবং ল্যারি পেজ এবং সিইও এরিখ স্কমিডট অনুরোধ করেন তাদের মূল বেতন যাতে এক ডলারে নামিয়ে আনা হয়। পরবর্তী সময়েও কোম্পানীর তরফ থেকে তাদের বেতন বৃদ্ধির ব্যাপারটি মানা করা হয়। কারন প্রাথমিকভাবে তাদের মূল বেতন আসত গুগলের শেয়ার থেকে। ২০০৪ সালের আগেই স্কমিডট $২৫০,০০০ আয় করেন প্রতি বছর এবং পেজ ও ব্রিন প্রত্যেকেই বার্ষিক বেতন পেতেন $১৫০,০০০।
২০০৭ এবং ২০০৮ সালের শুরুর দিকে, বেশ কিছু উচ্চ নির্বাহী গুগল ছেড়ে যান। ২০০৭ সালের অক্টোবরে ইউটিউবের প্রাক্তন প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা গিডিওন ইউও উচ্চ পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার বেন্জামিন লিং ফেসবুকে যোগ দেন। ২০০৮ সালের মার্চে শেরিল স্যান্ডবার্গ তারপর বৈশ্বিক অনলাইন বিক্রয় এবং পরিচালনার ভাইস প্রেসিডেন্ট ফেসবুকে তার ক্যারিয়ার শুরু করেন। একই সময়ে ব্র্যান্ড বিজ্ঞাপনের প্রধান অ্যাশ ইডিফ্রাউই নেটশপসে যোগ দেন। ২০১১ সালের, ৪ এপ্রিল ল্যারি পেজ সিইও এবং এরিখ স্কমিডট নির্বাহী চেয়ারম্যান হন। ২০১২ সালের জুলাইয়ে গুগলের প্রথম নারী কর্মী 'মারিসা মেয়ার' ইয়াহুর সিইও হতে গুগল ছেড়ে যান। নতুন কর্মীদের "নুগলারস" ডাকা হয় এবং কাজের প্রথম শুক্রবারে প্রপেলার বিনি নামক টুপি পরিধান করতে দেয়া হয়। গুগলের মোট আয় হচ্ছে ২.০৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার(২০০৬), প্রতিনিয়তই গুগল সমৃদ্ধ করছে তাদের তথ্য ভাণ্ডার। যার ফলস্রুতিতে বর্তমানে গুগলের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে।
বছর অনুযায়ী এক নজরে গুগলের উন্নয়নঃ-
# ২০০৪ সালে গুগল সার্চ ইনডেক্স নাম্বার ৬০০ কোটির সীমানা অতিক্রম করে। যেখানে ৪২৮ কেটি ওয়েব সাইট এবং ৮.৮ কেটি ছবি ছিল। এ বছরের এপ্রিল মাসেই গুগল জি-মেইল নামক আরো একটি ওয়েব সাইট চালু করে। তবে সে সময় জি-মেইলে নতুন এ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হলে অন্য ব্যবহারকারীর কাছ থেকে আমন্ত্রন পেতে হতো।
# ২০০৫ সালে গুগল যে নতুন সেবা গুলো চালু করে তার মধ্যে অন্যতম হলো, গুগল ম্যাপ, গুগল আর্থ, ওয়েব সার্চ হিস্ট্রি, গুগল টক, গুগল রিডার এবং গুগল অ্যানালাইসিস ইত্যাদী। এবং একই সাথে ব্লগার এবং জি-মেইল মোবাইল সংস্করনও চালু করা হয়।
# ২০০৬ সালে গুগলের নতুন সংযোজন হিসাবে পিকাসো এবং গুগল ক্যালেন্ডার চালু করা হয়। এবং এই বছরই আরো একটি জনপ্রিয় ওয়েব সাইট ইউটিউব ও স্কেচআপ কে কেনার ঘোষনা দেয় গুগল।
# ২০০৭ সালে গুগলের পক্ষ থেকে ইউটিউবকে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এবং গুগলকে আরো সুন্দর ভাবে উপস্থাপনের জন্য গুগল আর্থে স্ট্রিট ভিউ এবং স্কাই নামের নতুন সেবা যুক্ত করা হয়।
# ২০০৮ সালে প্রথম বারের মত পৃথিবীর মাত্র ০৮ (আট) টি ভাষায় গুগল ট্রান্সলেটর চালু করা হয়। সেই সাথে গুগল সাইট ও জি-মেইল কে ল্যাবস ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এবং এ বছরই গুগল কর্তৃক 'গুগল ক্রোম' নামের একটি ওয়েব সাইট দেখার সফটওয়্যার প্রকাশ করা হয়।
# ২০০৯ সালে গুগল আর্থে মহা-সাগর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য যুক্ত করা হয়। একই সঙ্গে কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর অবস্থান নির্ণয়ের জন্য গুগল ল্যাটিচিউড চালু করা হয়।
#২০১১ সালে গুগল ইয়াহুকে কিনতে চেয়েছিল। এবং গুগলের সাথে আরো অন্তত দুটি কোম্পনীর কথা হয় এ বিষয়ে মধ্যস্থতা করার জন্য। তৎকালিন সময়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এর বিশ্বস্থ সূত্রের বরাত দিয়ে এ খবর প্রকাশ করা হয়েছিল। সে সময় ইয়াহুর অবস্থাটা খুব বেশি ভাল ছিল না। উক্ত সূত্রমতে গুগল ইয়াহুর সাইটের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন বিক্রি করেতে আগ্রহী। কিন্তু বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়েই শেষ হয়ে যায়।
# গুগল নতুন কোম্পানী ক্যালিকো শুরু করার ঘোষনা দেয় ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সালে যা পরিচালিত হবে এ্যাপলের চেয়ারম্যান আর্থার লেভিনসনের দ্বারা। দাপ্তরিক উন্মুক্ত ব্যাখায় বলা হয় "স্বাস্থ্য এবং কল্যানভিত্তিক" কোম্পানিটির মূল দৃষ্টি থাকবে "বৃদ্ধ ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত রোগের" প্রতি।
# ২০১৩ সালের তৃতীয় ভাগের সামগ্রিক আয়ের রিপোর্টে দেখা যায় ১৪.৮৯ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে যা আগের ভাগের চেয়ে ১২% বেশি। গুগলের ইন্টারনেট ব্যবসায় এক্ষেত্রে যোগায় ১০.৮ বিলিয়ন যার সাথে আরো ছিল ব্যবহারকারীদের বিজ্ঞাপনে ক্লিকের হার। ২০১৩ সালের নভেম্বরে গুগল ঘোষনা করে নতুন ১ মিলিয়ন বর্গ ফিটের (৯৩, ০০০ বর্গ.মি) অফিস স্থাপনের যা হবে লন্ডনে এবং সম্ভাব্য উন্মুক্তের সাল হিসেবে ২০১৬ সালকে ধরা হয়। নতুন অফিসে প্রায় ৪, ৫০০ চাকুরীজিবীর কর্মসংস্থান হবে এবং ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় বানিজ্যিক সম্পদ কেনার ইতিহাস হয়ে থাকবে।
# ২০১৪ সালের অক্টোবরে, ইন্টারব্রান্ড সূচক অনুযায়ী গুগল ছিল দ্বিতীয় সবোর্চ্চ মূলবান ব্রান্ড! পুরো পৃথিবীতে যার মূল্যমান ছিল প্রায় ১০৭.৪ বিলিয়ন ডলার! মিলওয়ার্ড ব্রাউনের অন্য একটি রির্পোটে গুগলকে প্রথম স্থানে রাখা হয়।
বর্তমানে শেয়ার মূল্যের দিক থেকে গুগল মাইক্রোসফটকে ও পিছনে ফেলেছে। গুগলের বর্তমান শেয়ারের মূল্য দাঁড়িয়েছে ২৪৯.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং অন্যদিকে মাইক্রোসফটের শেয়ার মূল্য ২৪৭.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অবশ্য দুটি কোম্পনীই অ্যাপলের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে আছে। বর্তমানে অ্যাপলের মোট শেয়ার মূল্য ৬১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ও বেশি। তবে সার্চ ইঞ্জিন, অ্যানন্ড্রয়েড সিস্টেম এবং ইউটিউবের মাধ্যমে বর্তমানে গুগল নিজেদের শেয়ার মূল্য অনেকটাই বাড়িয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। উল্লেখ থাকে যে, বর্তমানে ল্যারী পেইজ এবং সের্গেই ব্রিন গুগলের মাত্র ১৬ শতাংশের মালিক।
২০০৬ সালে গুগল ইনকর্পোরেট ১শ’ ৬৫ কোটি ডলারের বিনিময়ে ইউটিউবের মালিকানা কিনে নেয়। এখন সনাতন ইন্টারনেট সার্চ বিজ্ঞাপন ব্যবসার বাইরে গুগলের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎসে পরিণত হয়েছে ইউটিউব। বর্তমানে ইউটিউবের পৃষ্ঠায় ভিডিওর পাশে থাকা বিজ্ঞাপন বাবদ তাদের বার্ষিক আয় ৫শ’ কোটি ডলার। একটা অবাক হওয়ার মত কথা বলি! গুগল এর নতুন সিইও হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ বার্ষিক ১.২৫ মিলিয়ন ডলার বেতন পান।
গুগলের অজানা ১১টি সেবাপণ্যঃ-
০১. গুগল মার্স; গুগল আর্থের মতোই একটি প্রোগ্রাম, যা লাল গ্রহ মঙ্গল সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করে।
০২. গুগল স্কলার জ্ঞানমূলক তথ্য সংগ্রহের একটি সার্চ ইঞ্জিন। বিশ্ববিদ্যালয়, বই, আদালত এবং এ রকম অন্য সাইটগুলোর কাজে ব্যবহারের জন্য গুগল স্কলার তুলনামূলক দামী সার্চ ইঞ্জিন।
৩. গুগল স্ট্রিটভিওয়ের মতো গ্রাহকদের ভার্চুয়ালভাবে জাদুঘর, আর্ট গ্যালারি পরিদর্শনের একটি সাইট হচ্ছে গুগল আর্ট প্রজেক্ট।
০৪. বিভিন্ন ভাষায় টাইপ করার জন্য গুগলের সেবাদানকারী প্রোগ্রামটি হচ্ছে গুগল ট্রান্সলিটারেশন।
০৫. গুগল অস্ট্রেলিয়া ওলেগোর মধ্যকার একটি প্রকল্প হচ্ছে বিল্ড উইথ ক্রোম। এটি গুগল ক্রোম ওয়েব ব্রাউজারের মাধ্যমে ত্রিমাত্রিক ছবি প্রদর্শনের একটি প্রকল্প।
০৬. বিজ্ঞাপনদাতাদের জন্য বাজার-সম্পর্কিত ধারণাদানের সাইট হচ্ছে গুগল থিংক।
০৭. গ্রাহকদের অনুসন্ধান দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় টিপস দানকারী সাইট হচ্ছে পাওয়ার সার্চিং উইথ গুগল।
০৮. বন্ধুদের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাপারে পরিকল্পনা করার জন্য গুগলের নেটওয়ার্কের নাম হচ্ছে স্কিমার।
০৯. চলমান গানের শিরোনাম ও গানটি সম্পর্কে যে কোন ধরনের তথ্য নিতে গুগল সাউন্ড সার্চ ব্যবহার করা হয়।
১০. বিভিন্ন বিষয়বস্তু, প্রশ্ন বা ধারণা নিয়ে খোলামেলা আলোচনার জন্য রয়েছে গুগল মডারেটর।
১১. নিরাপদ অনুসন্ধানের জন্য রয়েছে এনক্রিপটেড ডট গুগল ডটকম। এতে অনলাইন ব্যাংকের মতো সিকিউর সকেট লেয়ার এসএসএল নামক নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে।
সার্চ জায়ান্ট থেকে টেক জায়ান্টঃ- সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে যাত্রা শুরুর পর থেকে গুগলকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। শুরুতে সার্চ ইঞ্জিন হিসেবেই বিশ্ববাসীর কাছে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয় গুগল। ১৯৯৮ সালে যাত্রা করা প্রতিষ্ঠানটি ২০০০ সালের জুলাই মাসেই ১০০ কোটি ওয়েবপেজের ইনডেক্স তৈরিতে সমর্থ হয়। ২০১১ সালের মে মাসে প্রথমবারের মতো এক মাসে ১০০ কোটি অনন্য ব্যবহারকারী গুগল ব্যবহার করেন। ২০১২ সালে গুগল'র রাজস্ব আয় ছাড়িয়ে যায় ৫ হাজার কোটি ডলার।
গুগল এর মজার কিছু বিষয়ঃ- গুগল যে সবসময় কাজেই ব্যবহৃত হবে এমন তো কোনো কথা নেই। মাঝে মাঝে তো এটা আমাদেরকে একটু বিনোদনও দিতে পারে!
www.google.com.hk/intl/zh-CN/landing/shuixia
এই লিংকে গেলে আপনি পানির নিচে হাবুডুবু খেতে থাকবেন। এমনকি আপনি যাই সার্চ করবেন সেগুলোও উপর থেকে নিচের দিকে এসে পানিতে ডুবে যাবে। আর যদি নাগড়দোলায় চড়তে চান তাহলে Google এ গিয়ে লিখুন Do a barrel roll, তারপর এন্টার। দেখুন আপনাকে তিন চক্কর নাগরদোলার দোল খাইয়ে নিয়ে আসবে। তাতেও যদি মন না ভরে তাহলে Google এ গিয়ে টাইপ করুন Google Sphere এবং এন্টার দিন। দেখবেন আপনার সবকিছুই ঘুরতেছে। আরা যারা গুগলের ভাঙচুর দেখতে চান তারা Google এ গিয়ে লিখুন Google gravity, তারপর এন্টার দেওয়ার পর প্রথম যে লিংকটি আসবে সেটিতে ক্লিক করুন। বাকিটুকু গুগল-ই আপনাকে করে দেখাবে। আর যদি গুগলকে উল্টাপাল্টা দেখতে চান তাহলে চলে যান এই লিংকেঃ- http://elgoog.im/।
গুগল সম্পর্কে কিছু চমকপ্রদ তথ্যঃ-
=> গুগলের আদি নাম হচ্ছে ‘ব্যাকরাব (Back rub)’!
=> প্রথমদিকে প্রতি সেকেন্ডে ৩০-৫০টি পেজ প্রসেস করতে পারত গুগল। কিন্তু বর্তমানে সেকেন্ডে কয়েক মিলিয়ন পেজ প্রসেস করতে পারে এই সার্চ ইঞ্জিন।
=> প্রতিষ্ঠার শুরুতে মাত্র ৪০ গিগাবাইট স্টোরেজ ব্যবহার করত গুগল। আর এখন এর ইনডেক্সে ১০০ মিলিয়ন গিগাবাইটের বেশি ডেটা রয়েছে। কেউ যদি ব্যক্তিগত ভাবে গুগলের এই সব তথ্য জমা রাখতে চান তাহলে তার এক টেরাবাইট আকারের এক লাখ হার্ডড্রাইভের দরকার হবে।
=> এক পর্যায়ে ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিন গুগলকে বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলেন। তখন ইয়াহু এটি কিনতে অস্বীকৃতি জানায়। ২০০২ সালে যখন ৩ বিলিয়ন ডলারে ইয়াহু গুগলকে কিনতে চায়, তখন গুগল রাজী হয়নি। বর্তমানে গুগলের মূল্য ৪০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
=> গুগলের হোমপেজ প্রথম থেকেই পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন; এতে খুব বেশি সেকশন/কনটেন্ট দেয়া হয়নি। প্রথম দিকে সাইটটির প্রতিষ্ঠাতারা মূলত এইচটিএমএল কোডিংয়ে অতটা দক্ষ না থাকায় তারা একে সাধারণভাবে রেখে দেন। পরবর্তীতে গুগল প্রসার লাভ করার পরেও এই পরিচ্ছন্ন চেহারাই রেখে দেয়া হয়।
=> পেজ এবং ব্রিন প্রথম দিকে গুগলকে 'What Box' বলে ডাকতো। তাছাড়া ব্রিন মাঝে-মাঝে 'Wet Box' বলেও ডাকতো। যা সাধারনত এক ধরনের কবিতার মত বুঝাতো।
=> আলেক্সা অনুযায়ী গুগল হল পৃথিবীর সব চাইতে বেশি ভ্রমনকৃত ওয়েবসাইট।
=> প্রতিদিন গুগল সার্চ ইঞ্জিন অপারেটিং এর জন্য ১ বিলিয়ন সার্চ অনুসন্ধানের প্রেক্ষিতে ১ মিলিয়ন কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়।
=> গুগলে প্রতি সেকেন্ড ২০ লাখেরও বেশি সার্চ করা হয়।
=> গুগলের ভিডিও সেবা ইউটিউবে প্রতি মাসে ৬০০ কোটি ঘন্টারও বেশি ভিডিও দেখা হয়। অথ্যাৎ যা বিশ্বের প্রত্যেক মানুষের মাসে এক ঘন্টা করে ভিডিও দেখার মত।
=> চট্টগ্রামের সি.ডি.এ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক ২য় বর্ষের ছাত্র 'আলি ওয়ামিম খান' গুগল স্টোরের একটি ত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ‘হল অব ফেম’ পুরষ্কার পেয়েছিল । যতদূর জানি , গুগল স্টোরে Dom based XSS ত্রুটি খুঁজে বের করার জন্য ওয়ামিমকে হল অব ফেম পুরষ্কার হিসাবে সার্টিফিকেট এবং ,৫০০০ ডলার প্রদান করে গুগল। ওয়ামিম গুগলকে সতর্ক করলে গুগল দ্রুত Loop Holes সমস্যা সংশোধন করে।
=> গুগলের প্রধান পাতা অর্থাৎ Google.com এ কোন বিজ্ঞাপন রাখা হয়না। যদি গুগল সেখানে বিজ্ঞাপন দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করতো, তাহলে তার জন্য প্রত্যেকটা বিজ্ঞাপনদাতারা কমপক্ষে ১০ মিলিয়ন ইউ এস ডলার দিত!
=> গুগল হোমপেজ দেখা যায় প্রায় নব্বইটি ভাষায়। এর ভেতরে কিছু অদ্ভুত ভাষাও আছে। যেমন জনপ্রিয় মুভি সিরিজ স্ট্রারট্রেক-এ ব্যবহৃত ‘ক্লিংওন’ ভাষা কিংবা দ্য মাপেট সিনেমায় ব্যবহৃত ‘বর্ক বর্ক বর্ক’ ভাষা।
=> গুগলে একটি “Chief Culture Officer” পদ আছে। তাঁর কাজ হল নতুন নতুন সংস্কৃতি তৈরি করা এবং গুগলের কর্মকর্তাদের সবসময় আনন্দে এবং খুশিতে রাখা।
=> স্টিভ জবস তার মৃত্যুর ১ বছর পূর্বে গুগলের বিরুদ্ধে একটি পবিত্র যুদ্ধে নামার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার কারন ছিল বর্তমান বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম Android চালু করা।
=> গুগলে যখন কোন বিষয় জানার জন্য সার্চ করা হয় তখন আমরা খুবই দ্রুত তার ফল দেখতে পাই। কিন্তু মজার বিষয় হলো, এই ফলাফল প্রদর্শনের আগে গুগল প্রায় ২০০ টি বিষয় বিবেচনা করে তারপর তা আমাদের সামনে প্রদর্শন করে!
=> ক্যালিফোর্নিয়া গ্যাজলিং নামক কোম্পানীর কাছ থেকে গুগল প্রতি বছর ছাগল ভাড়া করে। আর এই ছাগল গুলোর কাজ হলো গুগল হেড কোয়ার্টারের পাশে জমে যাওয়া ঘাস এবং আগাছা খেয়ে পরিষ্কার করা।
=> আপনি যদি গুগলে কোন কিছু সার্চ করতে গিয়ে ভুল বানান লেখেন তাহলেও কোন সমস্যা নেই। কারন সাধারনত আমরা কোন কিছু লিখতে গিয়ে ভুল করে থাকি, আর সে বিষয় গুলো মাথায় রেখেই সেই ডোমেইন গুলো কিনে রেখেছে গুগল। তাছাড়া আপনি গুগলে ৪৬৬৪৫৩.com লিখে সার্চ করলেও আপনার সামনে গুগল এসে হাজির হবে। কারন আপনার ফোনের কিপ্যাড খুজে দেখুন ৪৬৬৪৫৩ এর সাথে google এর কোন মিল খুঁজে পান কিনা?
গুগলের জানা অজানা মজার ১৫টি টিপসঃ-
১. আপনি গুগলে একটি টাইমার ও তার সঙ্গে অ্যালার্ম সেট করতে পারেন। এজন্য গুগল সার্চে timer কথাটি লিখুন আর তার আগে যে কোনো মিনিটের কথা লিখে নিন। এতেই শুরু হয়ে যাবে টাইমার।
২. নাসা স্যাটেলাইট থেকে তোলা মহাশূন্যের ছবি গুগলেই পাওয়া যাবে। এজন্য Google.com/sky লিখে দিলেই হবে।
৩. বিয়ে করতে যাচ্ছেন? গুগল আপনার বিয়ের অনুষ্ঠান, ভেনু নির্বাচনসহ বহু বিষয়ে সহায়তা করতে তৈরি আছে।
৪. গুগল এনগ্রাম একটি মজার টুলস, যার মাধ্যমে আপনি ১৫০০ সাল থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে প্রকাশিত ৫.২ মিলিয়ন বইয়ের মধ্যে ব্যবহৃত শব্দগুলোর পরিবর্তন বিষয়ে জানতে পারবেন।
৫. বড় কোনো সংখ্যা নিয়ে সমস্যায় আছেন? গুগল দিতে পারে সমাধান। সংখ্যাটিকে পড়ে দিতে গুগলে তা দিয়ে “=English” লিখলেই চলবে।
৬. গুগল ট্রান্সলেটের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার লেখা অনুবাদ করা যায়। তবে এতে একটি ‘ম্যানুয়াল’ বিষয়ও আছে। যেমন গুগলের মাধ্যমে আপনি কোনো একটি চীনা ভাষার চিহ্ন একেও তার অনুবাদ করতে পারবেন।
৭. গুগলের ইনপুট টুলের মাধ্যমে ৮০টি ভিন্ন ভাষায় ইনপুট দেওয়া সম্ভব।
৮. নানা ধরনের ফন্টের গুগলের সাহায্য নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এজন্য Google.com/fonts -এ যেতে হবে।
৯. গুগল স্কলারের মাধ্যমে তথ্য খুঁজে বের করা এখন আগের তুলনায় অনেক সহজ।
১০. বিশ্বের বিভিন্ন বিখ্যাত জাদুঘরে সংরক্ষিত বহু চিত্রকর্মের উচ্চ রেজুলিশনের ছবি দেখা যাবে গুগলে। আপনার সাংস্কৃতিক জ্ঞান বাড়ানোর জন্য এগুলো ব্যবহার করা সম্ভব।
১১. গুগলের ‘ডিজিটাল চিট শিট’ ব্যবহার করে উপকৃত হতে পারেন ব্যবসায়ীরা।
১২. মানুষের সাম্প্রতিক চিন্তাভাবনা সম্পর্কে জানতে চান? গুগলের সাহায্যে জানতে পারেন দৈনন্দিন সর্বাধিক সার্চকৃত শব্দগুলো।
১৩. গুগল ম্যাপে যোগ করতে পারেন আপনার নিজের তোলা ছবি। এতে ছবিটি কোথায় তোলা হয়েছে, তার তথ্য পাওয়া যাবে।
১৪. গুগলে রয়েছে সাউন্ড সার্চ-এর অপশন। কোনো একটি গান বাজানো হলে তা কোন অ্যালবামের, তা জানা সম্ভব।
১৫. গুগলের রয়েছে একটি অসাধারণ নোট রাখার ও রিমাইন্ডার অ্যাপ। এটি ডেস্কটপ ও স্মার্টফোনে একত্রেই কাজ করে।
তথ্য সূত্রঃ-
০১। গুগল - উইকিপিডিয়া
০২। গুগলঃ শুধুই একটি সার্চ ইঞ্জিন নয়(পর্ব-২)
০৩। গুগলের ইতিহাস জেনে রাখা ভালো
০৪। গুগল সমগ্র ও কিছু মজাদার তথ্য
০৫। গুগল: নাম, লোগো, হোডকোয়াটার এবং আরও কিছু : একটি ময়নাতদন্ত -২
ইত্যাদী।
পুনশ্চঃ- আজ এ পর্যন্তই! আগামী কোন একদিন বা কোন এক সময় হয়তো অন্য কোন নতুন বিষয় নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হবো আমি 'সাহসী সন্তান'! সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন আল্লাহ হাফেজ!
বিঃ দ্রঃ- টাইপিংয়ের ভুলের কারনে হয়তো অনেক জায়গায় বানানে ভুল থাকতে পারে। সেটাকে বিবেচ্য বিষয় হিসাবে না ধরে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখলে কৃতার্থ হবো।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:১৬