ইদানিং ঘন ঘন ভূমিকম্প অনুভূত হচ্ছে এ অন্চলে। আমাদের পর্বত পরিমান সমস্যার মাঝে ভূমিকম্প এক মহা ভীতিকর অনুসংগ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশেষ করে আমরা যারা ঢাকা অথবা চট্রগাম শহরে বসবাস করছি। আমিতো সহজে মাথা থেকে বিষয়টি সরাতে পারিনা বরং এটি এখন প্রতি দিনকার ভাবনার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাড়িয়েছে!
৬তলা বিশিষ্ট একটি বিল্ডিংয়ে আমার বসবাস। একটি বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে এ বিল্ডিংটির কি অবস্হা হতে পারে এবং সে রকম অবস্হা থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে কি ভাবে বেড় হয়ে আসবো, সে ভাবনা আমাকে সত্যি আতন্কিত করে বৈকি! ভূমিকম্পের প্রথম ধাক্কায় মরে গেলে বুঝি বেঁচে গেলাম কিন্ত এভাবে যদি বেঁচে থাকি! ধরুন, শরীরের নিচের অংশে চাপা পরে হাত মাথা বেড় হয়ে আছে! অথবা হাত পা বিল্ডিংয়ের নীচে কিন্ত বেঁচে আছি!! অথবা ধ্বংষপ্রাপ্ত বিল্ডিংয়ের কোন এক ফাঁক ফোকোরে বেঁচে আছি!! তাহলে কে আসবে আমাদের উদ্ধারে?
গেল জাপানের ভূমিকম্পে রিখটার স্কেলে যার সর্বোচ্চ মাত্রা ছিল ৮.৯। উৎপত্তি স্হলের কাছা কাছি কিছু এলাকার বিল্ডিংগুলো আংশিক ক্ষতি হয়েছে কিন্ত কোথাও সম্পূর্ন বিল্ডিং কলাপস করেছে এমনটি আমার জানা নেই। আমি বলতে চাচ্ছি, জাপান তার অবকাঠামোগত কৌশলগুলো চমৎকার রপ্ত করেছে এবং তা বাস্তবায়নেও সফল হয়েছে। ফলশ্রুতিতে এত বড় ভূমিকম্প হওয়া সত্বেও ক্ষয় ক্ষতির পরিমান ছিল কম, যা ক্ষতি হয়েছে তা মুলত ভুমিকম্প পরবর্তী সুনামী এবং তৎপরবর্তী নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট থেকে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পরার কারনে। অবশ্য জাপান ২য় মহাযুদ্ধের পর এহেন একটি মহাধ্বংষলীলা থেকে আস্তে আস্তে সামলে উঠতে পারছে এবং বোধ করি সে শক্তি ও সমর্থ তাদের রয়েছে। আর জাপানীজরা এটাও প্রমান করেছে যে, তারা কতটা ধৈর্যশীল এবং শৃংখলাবোধ সম্পন্ন জাতি!
কিন্ত যদি এ ধরনের একটি মহাদুর্যোগ আমাদের উপর নেমে আসে! তাহলে আমাদের অবস্হা কি হবে? উচ্চ মাত্রার এ ধরনের একটি ভুমিকম্প হলে ঢাকার অধিকাংশ বিল্ডিং ধসে পরতে পারে কেননা আমরা বিল্ডিং কোড মেনে চলছি না, ব্যবহার করছিনা মান সম্পন্ন মাল মশলা। তা হলে বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে টেবিলের তলায় লুকিয়েই বা লাভ কি? গভীর রাতে ভূমিকম্প হলে দৌড়ে কোনভাবে নিচে নেমে আসতে চাইলেন, দেখবেন গেইটে বড় বড় ৪/৫টা তালা ঝুলছে আর চাবি বাড়ীওয়ালার কাছে!! হয়ত নীচে নেমে আসলেন কিন্ত দেখলেন খোলা আকাশের নীচে দাঁড়ানোর মত এক হাত জায়গাও নেই সে হিসেবে পুরান ঢাকার পরিস্হিতি একটু চিন্তা করুন!! উফ... কি সাংঘাতিক অবস্হা হতে পারে!
মনে আছে, বেশ ক'বছর আগে সাভারে সম্ভবত ৯/১০ তলা একটি বিল্ডিং ধ্বষে পড়েছিল। বাংলাদেশ সরকার আটকে পরা মানুষদের উদ্ধার আর ধ্বংষাবশেষ সরিয়ে নেয়ার জন্যে আর্মি, নেভী, এয়ারফোর্স, বিডিআর, পুলিশ আর ফায়ার সার্ভিসের লোকজনসহ সকল এজেন্সিগুলোকে একত্রে নিয়োজিত করেও মাস খানেকের মত সময় লেগেছিল উদ্ধার কাজ সম্পন্ন করতে! আটকে পরা মানুষ জনের হাত, পা, মাথা বিল্ডিংয়ের ফাঁক ফোকর থেকে বের হয়েছিল দিনের পর দিন!! এ হল, আমাদের সামর্থ!!
মোদ্দা কথা, আল্লাহ রহম না করলে আমরা নিজেরা নিজেদের জন্য কিছু করতে পারব বলে মনে হয় না কেননা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ী আসার রাস্তাটুকুও যে আমরা রাখি নাই
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১২ রাত ৯:৩৪