বেবাক গাছ কাইটা ফালাইতাছে আমি ঔষধ বানামু কি দিয়া!!
বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের বৃক্ষ নিধন বিরোধী একটি বিজ্ঞাপনে মরহুম আবুল খায়েরের অসাধান আর হৃদয়গ্রাহী ডায়ালগের একটি অংশ। চমৎকার ভারিক্কী অভিনয় যার শব্দ চয়নও অসাধারন। ২ / ৩ বছর আগেও এই এ্যাডটি মাঝে মধ্যে বিটিভিতে দেখা যেত এখন দেখা যায় কিনা জানিনা কেননা ইদানিং টিভি দেখা হয়না।
এই বিজ্ঞাপণটিতে অভিনীত সবটুক কথা আমার টুইনের ছোটটি সুন্দর অভিনয় করে দেখাত, বেশী ভাল লাগত এক জায়গায় এসে আবুল খায়ের ছাতি হাতে একটা খালি জায়গা দেখিয়ে বলতেন,
এই এখানে একটা হরিতকি গাছ ছিল!
এখানে একটা শিশু গাছ ছিল!
গাছের মালিক তার কিশোর সন্তানের কাঁধে হাত দিয়ে বলত, ট্যাকার দরকার ছিল তাই কাইটা ফালাইছি! আমার পিচ্চিটাও আবুল খায়েরর মত হাত তুলে সে ভাবে ভাংগা আর আশাহত গলায় অভিনয় করে আমাদের চমক লাগিয়ে দিত! এভাবে সরাসরি টিভিতে অথবা আমার পিচ্চির এই অভিনয়ে চমকিত হলেও ভিতরে ভিতরে এক অব্যক্ত ব্যাথা অনুভব করতাম।
এর পরের অংশে মরহুম আবুল খায়ের গাছের মালিককে বলতেন:
গাছ লাগাইছিল ক্যাডা?
আমার বাবায়,
আপনি কি লাগাইছেন?
বাসা থেকে আমার অফিস ওয়াকিং ডিসটান্সে হওয়ায় আমি সাধারনত হেঁটে হেঁটে অফিসে যাই। কখনও কখনও বর্ষায় পানি জমলে, অতিরিক্ত গরম অথবা মন চাইলে রিক্সায় উঠি। আমার চলাচলের মূল রাস্তাটি এড়িয়ে ভিতরের ছোট গলি দিয়ে আসা যাওয়া করি অবশ্য তার কারন জ্যাম এবং ধুলোবালি।
আমার যাতায়াতের রাস্তায় বেশ উঁচু এবং অনেকটা জায়গা জুড়ে দৃস্টিনন্দন একটা জাম গাছ যা দৃস্টিগোচর হতেই আমি গাছটির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে অপেক্ষাকৃত ধীর গতিতে পথ অতিক্রম করতাম। জামের মৌসুমে গাছ তলায় পরে থাকা জাম, জামের বিচি, জামের বোটা আর শিশু কিশোরদের জাম ছিড়ে নেয়ার পরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জামের ডালপালায় একাকার রাস্তা, সর্বপরি জামের গন্ধে আমি হারিয়ে যেতাম আমার কৈশোরে। এখানে আর একটি বিষয় লক্ষ্য করেছি তা হল, গুলশান লেক কাছাকাছি হওয়ায় মাঝে মধ্যে অন্যান্য পাখির সাথে কিছু বকের দেখা মিলত এ গাছটিতে।
আমি যে গ্রামে বড় হয়েছি সে গ্রামটিও এ দেশের আর দশটি গ্রামের মতই সুনিবির ছায়াঘেরা যেখানে সবুজের শ্বাসত মায়াবী হাতছানী । আমাদের বাড়ীর সামনের দিকে প্রচুর জাম আর লোহাকড়া (জামের ছোট প্রজাতি অথবা জংলি জাতের জাম যার স্বাদ এবং ঘ্রাণ কিন্চিত ভিন্ন) গাছ ছিল। জামের মৌসুমে এক গাছে উঠে জাম খেতে খেতে অন্য গাছ দিয়ে নেমে যেতাম। জামের কসের আবার পেত্নী স্বভাব, একবার জামা কাপড়ে লেগে গেলেতো আর উঠত না। এভাবে জাম খেতে গিয়ে জামা কাপড় নস্ট করায় মায়ের কত যে বকুনী খেয়েছি,তার ইয়ত্তা নেই।
মাস দুয়েক আগে একদিন অফিসে যেতে যেতে হঠাৎ দূর থেকে লক্ষ্য করি, আমার চির চেনা জাম গাছটি তার স্বস্হানে নেই!! জায়গাটি ফাঁকা! আমি আঁতকে উঠি, তাইলে কি হত্যা করা হয়ছে মানুষের আর একটি আশ্রয়কে! হত্যা করা হয়েছে মানুষের অস্তিত্বকে!! ঢাকা শহর হারিয়েছে আর একটি গাছকে আর একখন্ড সবুজকে!! তার স্হলে তর তর করে বেড়ে উঠবে আরেকটি সুউচ্চ বহুতল ভবন!
ঢাকা শহর আজ কার্যত এক কঠিন এ্যাজমা আক্রান্ত রোগী! পৃথিবীর সবচেয়ে দুষিত শহরগুলোর মধ্যে তার নাম লিখিয়েছে। এ অবস্হায় আমরা বাঁচব কিভাবে? এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ৮:০৩