অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতে বিনিয়োগের ধারা অব্যাহত রয়েছে।
গত ১৫ মাসে (২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত) নতুন করে ১২৮টি গার্মেন্টস কারখানা যাত্রা শুরু করেছে।
এই কারখানাগুলো পুরোপুরি চালু হলে ৭৪ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে জানিয়েছে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
তবে একই সময়ে ১১৩টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, যেখানে ৯৬ হাজার ১০৪ জন শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। এর মধ্যে শুধুমাত্র গত আগস্টের পর বন্ধ হয়েছে ৬৯টি কারখানা, এতে কাজ হারিয়েছেন ৭৬ হাজার ৫০৪ জন।
কারখানা খোলা ও বন্ধের এই মিশ্র বাস্তবতার মধ্যেও তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৩ হাজার ২৫ কোটি মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০.৮৪ শতাংশ বেশি।
নতুন কারখানাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো: একেএইচ আউটওয়্যার, এ জেড কম্পোজিট, নেক্সটন, এলএসএ অ্যাপারেলস, সিটেক ফ্যাশন, সুপ্রিম আউটফিট, স্প্যারো গ্রিনটেক ইত্যাদি। এর মধ্যে ১৮টি কারখানায় শ্রমিক সংখ্যা হবে ১ হাজারের বেশি, যা ইঙ্গিত করে বেশিরভাগই ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তা।
এ জেড কম্পোজিট গাজীপুরে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করেছে, পূর্ণ উৎপাদনে গেলে ৭০০–৮০০ কর্মসংস্থান হবে। প্রতিষ্ঠানটির এমডি জহিরুল হাসান জানান, ঈদুল আজহার পর পুরোদমে উৎপাদন শুরু হবে।
অন্যদিকে, দেশের অন্যতম শীর্ষ গার্মেন্টস রপ্তানিকারক স্প্যারো গ্রুপ গাজীপুরে স্প্যারো গ্রিনটেক নামে নতুন কারখানা চালু করেছে, যেখানে ১ হাজার ৮০০ শ্রমিক কাজ করছেন। গ্রুপটির বার্ষিক রপ্তানি ৩০ কোটি ডলার।
বন্ধ হওয়া কারখানাগুলোর মধ্যে রয়েছে: বেক্সিমকো গ্রুপের ২৪টি, কেয়া গ্রুপের ৪টি, টিএনজেডের ৪টি, এবং ভারগো এম এইচ, মডিশ অ্যাটায়ার, সিরোক অ্যাপারেলস, ওডিশ ক্রাফট ইত্যাদি।
বেক্সিমকোর ১৪টি কারখানা একযোগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বন্ধ হয়েছে, যেখানে ৩১ হাজার ৬৭৯ জন শ্রমিক ও ১ হাজার ৫৬৫ জন কর্মচারী কাজ করতেন। শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে সরকার দিয়েছে ৫২৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, যদিও অনেকেই এখনও পাওনা বুঝে পাননি।
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘বড় ও মাঝারি অনেক কারখানা আধুনিক প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (AI) বিনিয়োগ করছে, সে কারণেই রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি আসছে। তবে ছোটদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’
সাবেক সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘নতুন কারখানা চালু এবং কিছু কারখানা বন্ধ হওয়া এই খাতের চলমান চক্র। তবে মার্কিন বাণিজ্যনীতি ও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নতুন বিনিয়োগে সতর্কতা তৈরি করেছে।’
তৈরি পোশাক শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি।
নতুন কারখানা খোলার মাধ্যমে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হলেও বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রমিকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামনের দিনে বিনিয়োগ প্রবাহ ও রপ্তানির গতি কতটা বজায় থাকবে, তা নির্ভর করছে দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যনীতির ওপর।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:২৯