বাংলার পথে(পর্ব ৪০) -- চট্টগ্রাম ভ্রমণ ( ইতিহাস এবং থাকা খাওয়া ও দর্শনীয় স্থানের তথ্য)
চট্টগ্রাম ভ্রমণের ১ম দিন হানা দিলাম চিড়িয়াখানা ও ফয়েজ লেক। দুটোই পাশাপাশি অবস্থিত। বহদ্দারহাট থেকে মিনি বাংলাদেশ দেখে বাসে উঠলাম । বহদ্দারহাট থেকে সোজা নামলাম জিইসি মোড় হাতের ডানের রাস্তা চলে গেলো ফয়েস লেক ও চিড়িয়াখানার দিকে। জিইসি মোড় থেকে টেম্পুতে উঠে নামলাম USTC গেটে। ফয়েস লেকের বিরাট গেট দেখলেও তা বেশ দূরে তাই রিক্সা করে ১০ টাকায় পৌঁছে গেলাম। সকাল প্রায় ১০ টা। মনে হলো আমি একাই এই এলাকাতে আর দোকানিরা। গুরি গুরি বৃষ্টি পড়েই চলছে, এখানের এই এক সমস্যা বৃষ্টির মৌসুমে সারাদিনই বৃষ্টি পড়ে । তারাতারি নাস্তা সেরে নিলাম, আমি একা মানুষ সঙ্গিসাথি নেই , একা একা ঘুরার অন্যরকম একটা মজা আছে । সবকিছু সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ করা যায় , বিপদ কম আসে আর নিজেকে অনুভব করা যায়। অসুবিধা হলো ট্যুর শেষে দেখা যায় নিজের কোন ছবি নেই, কিছু কিছু ব্যাপার শেয়ার করার মানুষ পাওয়া যায় না , একা একা খেতে হয় , আর রিক্সা ভাড়া বেশি লাগে
যাই হোক প্রথমে পা বাড়ালাম চিড়িয়াখানার দিকে। ১৯৮৯ সালে তৈরি করা হয়চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। ৬ একর জায়গার উপর বানর, সিংহ, হরিণ ও হনুমান এই চারপ্রজাতির ১৬টি প্রাণী নিয়ে যাত্রা শুরু হয় এর।বর্তমানে এই চিড়িয়াখানায় ৭২ প্রজাতির মোট ২৮০টি প্রাণী রয়েছে বেশ ছোট দেখে অবাকই হলাম , তবুও খারাপ লাগেনি ছুটির দিনে বেশ ভালোই জমে উঠে।
এবার ছবি
১ম প্রবেশ
২য় গেট ও টিকেট কাউন্টার
আরও অনেক রকম বাদর আছে
এশিয়ান ভল্লুক
ভারতীয় সিংহ , দেশি নাই
কুমির
চিত্রা হরিণ
মায়া হরিণ
সাম্বার হরিণ
গন্ধ গোকুল
একবারে শেষ মাথায় উঁচু পাহাড়ের মত , বসে আড্ডা দেয়ার জন্য বেশ।
তার পাশে নিচে নামলে আরও কয়েকটি খাঁচা।
আরও কিছু ছবি ও এগুলো বড় করে দেখতে
বেলা ১২ টা নাগাত চলে এলাম ফয়েস লেকে। ৩১৯ একর এলাকা নিয়ে মানব সৃষ্ট এই লেকটি তৈরি করে আসাম-বাংলা রেলওয়ে ১৯২৪ সালে, রেলওয়ে এলাকার বাসিন্দাদের পানির ব্যবস্থা করতে। ইঞ্জিনিয়ার ফয় এর নাম অনুসারে এই লেকের নামকরন করা হয়। এখানে ৪৮.৭৫ একর জায়গা জুড়ে ২৭.৩০ কোটি গ্যালন পানি আছে উচ্চতা ৩০-৪০ ফিট । বাকি ২৮২.৯৬ একর জায়গাতে পাহাড় আছে। পাহাড় গুলো হল - - অরুনিমা , জল টুঙ্গি, অস্তাচল, গোধূলি , আকাশমণি , বনশ্রী, হিমঝুড়ি, আসমানি, গগনদ্বিপ, উদয়ন।
বর্তমানে লেক দর্শনার্থীদের বিনোদনের চাহিদা পূরণ করতে রয়েছে লেক’র ওপর ঝুলন্ত সেতু, অত্যাধুনিক রাইডস, মোটেল রিসোর্টস, সী ওয়ার্ল্ড, হানিমুন শ্যালে, ক্লাব হাউস, নৌকা, প্যাডেল বোট ও ইলেকট্রিক মোটর বোট, রেস্তোরা, মার্চেন্ডাইজ, গিফ্ট শপ, অবজারভেশন টাওয়ার
এখানে প্রবেশের জন্য নানা রকম প্যাকেজ রয়েছে। সব গুলোর ছবি আপলোড দিলাম ফেবুতে কারন এখানে এত ছোট লিখা বুঝা যাবে না। ফয়েজ লেক কনকর্ডের প্রবেশের জন্য একটা টিকেট কাটলাম ১০০ টাকার । লেক ঘুরতে টিকেট কাটলাম ১৫০ টাকা দিয়ে , এই ১৫০ টাকায় আছে ২০ মিনিট নৌকাতে ঘুরা, এক পিস গ্রিল চিকেন, একটা পরোটা , একটা কোক ( বেশ সাশ্রয়ী) ।
এটা ১ম গেট
রিক্সা করে আসার পর ২য় গেট
টিকেট কেটে ভিতরে ৩য় গেট
মোট ২৫০ টাকার টিকেট কাটার পর ভাবতে থাকলাম , দাম একটু বেশি ই পড়েছে । এই টাকায় নন্দনে সব কিছু ঘুরা যায়। যাই হোক, এবার পার্ক দিয়ে হেঁটে সোজা চলে গেলাম লেকের ধারে, খবর নিয়ে জানতে পারলাম রিভার ক্রুজের বোট ১ টায় ছাড়বে। কি আর করা পার্ক ঘুরতে পিছন দিকে ব্যাক করলাম। সি ওয়ার্ল্ড যেতে বোট সব সময় পাওয়া যায়। ক্রুজের বোট আলাদা। যাই হোক এবার পার্ক টা ঘুরে দেখা যাক , ,
শহীদ মিনার
এবার পার্কের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ে অব্জারভেসন টাওয়ারে রউনা
অবজারভেশন টাওয়ার
দূরবীনে দেখতে ১০ টাকা
উপর থেকে আশেপাশে
এবার সময় মত চলে এলাম নৌকার কাছে , টিভি নাটকে বহুল পরিচিত সেই ইঞ্জিনের নৌকা গুলান, মানুষে পরিপূর্ণ। আমি ছাড়া সবাই সঙ্গি সাথি নিয়ে আছে, একলা ভ্রমণে অনেক সময় বেশ বিচিত্র দৃষ্টিতে মানুষ তাকায় যা আমি বেশ উপভোগ করি। আজও তার ব্যতিক্রম না ।
বোট ছাড়ার জেটি
লেকের বুকে
লেকের দুপাশে এরকম রিসোর্ট আছে ভাড়া নিয়ে থাকা যায় , বর্ষায় বেশ জমবে ।
হরিণের পার্ক
কৃত্তিম ঝর্না
সি ওয়ার্ল্ডের গেট
২০ মিনিটের রিভার ক্রুজ শেষে ফিরে এলাম । কুপন দিয়ে খাবার নিলাম, একা একাই সব সাবার করলাম ,আর ভাবতে থাকলাম ২৫০ টাকা হলেও খারাপ না। অন্তত পেটপুঁজো তো হয়েছে।
>> বিভিন্ন তথ্যের ছবি ( প্যাকেজ বিবরন, নৌকা ছাড়ার সময়) ফেবু অ্যালবামে দিলাম কারন এগুলো ব্লগের ছোট ছবিতে পড়া যায় না।
এখানে দেখুন
পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখুন , , রেখে আসবেন পদচিহ্ন আর নিয়ে আসবেন শুধুই ফটোগ্রাফ।
=============================================
সাজিদ ঢাকা'র ভ্রমণ পোস্ট সংকলন
=============================================
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:২০