বাংলার পথে (পর্ব ৩৭) -- রাঙামাটি ভ্রমণ (১)
ঝর্নায় দাপাদাপি শেষে অনুভূত হলো সর্বস্বগ্রাসী ক্ষুধা পেয়েছে সবারই, রউনা হলাম খাবারের খোঁজে। পেদা টিং টিং ও টুকটুকি ইকো ভিলেজ বন্ধ হয়ে গেছে সবারই একটু মন খারাপ হয়ে গেলো। এখন কেবল ২ টি আছে জুমঘর বা চাই পাই । আমরা চাই পাই এর দিকে রউনা হলাম।
ঐ যে চাই পাই দেখা যাচ্ছে
৬-২০ জন বসার ছোট বড় ছনের ঘর রয়েছে
এইবার খাওয়ার পালা। খাবের দাম বেশি হবে জানতাম কিন্তু এখানে মনে হয় একটু বেশিই বেশি। মেনুতে অনেক পদের খাবারের নাম লেখা থাকলেও প্রতিদিন সবপদ রান্না হয় না ।
এখানে ব্যাম্বু চিকেন (৪ জনের জন্য ২৯০ টাকা), কলাপাতায় ভাপে রান্না করা রুই মাছ (৪ জনের জন্য ২৬০ টাকা) , সবজি ১০০ টাকা ( ২ জনের জন্য) , ডাল ৬০টাকা (২ জনের জন্য), ভাত ১ ডিস (৬০ টাকা) , পানি ২ লিটার ৬০ টাকা , , , , বোটের পাইলটের জন্য ১৫০ টাকার প্যাকেজ
ব্যাম্বু চিকেনটা একটু বড় করে দেখেন এটা কিন্তু ৪ জন মিলে খেতে হবে
ফেরার পথে কাপ্তাই লেক
এইবার সোজা চলে গেলাম রাজবনবিহারের দিকে। এটি বৌদ্ধদের উপাসনালয় ।
বোট থেকে নেমেই প্রথমে এটি। মাথায় টুপি ও জুতা পায়ে প্রবেশ নিষেধ
এখানে দিয়ে প্রবেশ করে ২ তলায় রয়েছে আশ্রম , উপাসনালয় , সভাকক্ষ
২য় তলায় উঠার পরে এখানে প্রচুর বানর আছে। আর বানর তো বানরই , বাঁদরামি না করাই ভালো এখানে।
এবার ফেরার পালা , বিকেলের পরিবেশ টা খুবই সুন্দর , সবাই উঠে বসলাম বোটের ছাদে। ঝকঝকে নীল আকাশ , সবুজ পানি আর চারপাশে পাহাড়ের বুকে বাড়ি
রাঙ্গামাটিতে প্রবেশ করার সময় চোখে পরবে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্করটি
বিশেষ আকর্ষণ :
সন্ধ্যার পরে চলে এলাম বনরূপা বাজারে। এটি রাঙ্গামাটির প্রাণকেন্দ্র। সবকিছুর দোকান আছে এখানে। তবে আমরা এলাম পাহাড়ি খাবারের সন্ধানে। অবশেষে খুঁজেও পেলাম একটি দোকান। এখানে শামুক, কচ্ছপ, সহ চতুষ্পদী সেই জন্তুটি যা ইসলাম ধর্মে সম্পূর্ণ হারাম।
বিশেষ কৃতজ্ঞতা :
সারাদিন ঘোরাঘুরি শেষে এবার যাচ্ছি মমিনুল হক পূরব এর বাসায়। এত বিশাল আপ্যায়ন অপেক্ষা করছিলো কেওই আমরা ভাবি নি। যেতেই হালিম,ম্যাকারনি পায়েশ, চা , বিস্কুট। আর রাতের খাবারের আয়োজন সে তো হুলুস্থুল অবস্থা। চাপিলা , বাচা , রূপচাঁদা , কাচকি, ইলিশ, মুরগীর ২ পদ , কচি বাঁশের তরকারী। আঙ্কেলের সাথে বেশ অনেকক্ষণ গল্প করে ইচ্ছে করছিলো এখানেই ঘুমিয়ে যাই। আঙ্কেল অ্যান্টি অনেক বেশি আন্তরিক হয়ে আমাদের অতিথি করতে প্রস্তুত কিন্তু পরের দিন আছে অন্য প্লান তাই রউনা হলাম হোটেলের পথে।
আরও কিছু দর্শনীয় স্থানঃ
শ্রদ্ধেয় বনভান্তের জন্ম স্থান মোরঘোনায় স্মৃতি স্তম্ভ ও স্মৃতি মন্দির(নির্মাণাধীণ), কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্পিলওয়ে , কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান , রাঙামাটি শহরে জাদুঘর ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র
দর্শনীয় স্থান
যাওয়া, থাকা এবং খাওয়াঃ
> ঢাকা থেকে রাঙামাটি যেতে বাস পাবেন ফকিরের পুল হয়ে সায়দাবাদ, কলাবাগান থেকেও ছাড়ে। তবে আমার জানা মতে বিআরটিসি ছাড়া আর কোন সরাসরি এসি নেই। নন এসি-৬২০ টাকা, বিআরটিসি এসি-৭৫০ টাকা। ট্রেনে গেলে চট্টগ্রামে অক্সিজেনের মোড় থেকে বাস পাবেন। অক্সিজেন থেকে রাঙামাটি ১২০-১৪০ টাকা।
> একটি বড় রাস্তা নিয়ে রাঙামাটি শহর। ছড়িয়ে ছিটিয়ে বেশ অনেক হোটেল আছে। বনরূপা বাজারে কিছু হোটেল আছে।বাসের শেষ স্টপেজ রিজার্ভ বাজার, এখানে গ্রিন ক্যাসেল অনেক বড় ও সুন্দর হোটেল। রুম নির্বাচনের সময় দেখুন জানালা দিয়ে লেক দেখা যায় কিনা।
> খাওয়ার জন্য মধ্যম মানের অনেক হোটেল আছে। স্বাস্থ্যকর খাবার থেকে বনরূপা চলে আসুন। বাঁশের তরকারী না খেয়ে ফিরবেন না।
কিছু প্রয়োজনীয় কথাঃ
>বৌদ্ধ বিহারে গিয়ে হাসি ঠাট্টা করা থেকে বিরত থাকুন, বানর হতে দূরে থাকুন। এখানে হাফ প্যান্ট বা থ্রি কোয়ার্টার পরে যাওয়া যাবে।
> রাঙামাটি বাংলাদেশের একমাত্র রিক্সা মুক্ত এলাকা, সিএনজি ভরসা।
> শহরের একমাথা থেকে শেষ পর্যন্ত ( রিজার্ভ বাজার) সিএনজি ভাড়া ২৪ টাকা , এক স্টপেজ থেকে আরেকটি ১০ টাকা ।
> তবলছরিতে রয়েছে বেশ কিছু আদিবাদিসের তৈরি পণ্যের দোকান ।
> বোট ভাড়া সারাদিনের জন্য ১০০০-১৫০০ টাকা যোগাযোগ করতে পারেন - মোঃ কামাল ০১৮২৭২৭৩০২৪ , ০১৭৩২৪৭৫৫৯৪ । বোটের চালকের খাবের খরচ কিন্তু আপনার।
> কাপ্তাই লেক দিয়ে পুরো শহরের যে কোন জায়গায় যাওয়া যায়
> ম্যালেরিয়ার জন্য রাঙামাটি বিখ্যাত , রাস্তায় রাস্তায় ব্রাকের পোস্টার দেখবেন , তাই হোটেলে মশারী , কয়েল বা স্প্রে ছাড়া থাকবেন না।
> কাজুবাদামের দাম বেশ সস্তা , চাকমা বাঁশের ছাতা বেশ আকর্ষণীয়।
>কাপ্তাই লেকে নামলে সাবধান প্রতি বছর বেশ কিছু মানুষ মারা যায়।
> আদিবাসিদের ছবি না জিজ্ঞাসা করে তুলবেন না। মনে রাখবেন আমরা তাদের ভাষা না বুঝলেও তারা কিন্তু বাংলা ঠিক বুঝে তাই কথাবার্তায় সাবধান।
> চাকমাদের একধরনের বাংলা মদ পাওয়া যায়, রিস্ক না নেয়াই ভালো।
সবচেয়ে ভালো লেগেছেঃ
শহরের সিএনজি সার্ভিসে মুগ্ধ। খালি রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাত দেখাবেন হাজির। প্রতি সিএনজিতে ৫ জন বসা যায়। নারী পুরুষ কোন সমস্যা নেই, সবাই পাশাপাশি বসছে। ভাড়াও নির্ধারণ করা কোন ক্যাচাল নেই।
পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখুন , , রেখে আসবেন পদচিহ্ন আর নিয়ে আসবেন শুধুই ফটোগ্রাফ।
=============================================
সাজিদ ঢাকা'র ভ্রমণ পোস্ট সংকলন
=============================================