২৯ সেপ্টেম্বর,২০১৩ ইং উত্তর বঙ্গ থেকে ফিরে ব্যাগপ্যাক নিয়ে রউনা দিলাম রাঙ্গামাটির পথে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি উপেক্ষা করে আমি আর তানভির পেট পুঁজো সেরে রিক্সায় চেপে বসলাম, গন্তব্য ফকিরেরপুল বাস কাউন্তার। কিছুক্ষনের মধ্যেই বাকি দুজন এসে হাজির যদিও আরও অনেকের যাওয়ার কথা ছিল। রাত ৯ :৩০ বিআরটিসি এসি বাসে করে যাত্রা শুরু করলাম।
বাসে আমরা ছাড়া আর দুজন যাত্রী। খটকা লাগলো মনে, কাল আবার রাঙামাটিতে হরতাল কিনা !! আজকাল পাহাড়ী-বাঙালি প্রায়ই ঝামেলা হয়। রাঙ্গামাটির বন্ধু পুরাবকে ফোন করে আশ্বস্ত হলাম, না এমন কিছু না। পুরো বাস জুড়েই আমাদের রাজত্ব। কখনো সামনে কখনো পিছনে, ২ সিট নিয়ে একেকজন ২টা করে কম্বল মুড়ে গল্প করছি। কখন যে চোখের পাতা গুলো লেগে গেছে মনে নেই, চোখ মেলতেই দেখি আলঙ্কারের মোড়। তখন ভোর
৬ টা বাস এগিয়ে যাচ্ছে। চারপাশের দৃশ্যপট বদলে যাচ্ছে সোজা রাস্তা গুলো আঁকাবাঁকা হয়ে যাচ্ছে, ইট কাঠের দালান গুলো হারিয়ে যাচ্ছে ঝোপঝাড় আর পাহাড়ের মাঝে। প্রকৃতিই যেন বলে দিচ্ছে আমরা
রাঙ্গামাটির কাছাকাছি।
মানিকছড়ি ক্যাম্প
সকাল ৮ :৩০ আমরা এসে নামলাম রিজার্ভ বাজারে । এটা রাঙামাটি শহরের শেষ প্রান্ত। গ্রিন ক্যাসেল হোটেল ভালো লাগলেও দামে হলো না। আমরা উথলাম হোটেল তাজ এ। ৩ টি ডবল বেডের রুম ৮০০ টাকাতে পেয়ে গেলাম। পর্যটন সপ্তাহ চলছে তাই ছাড় পেলাম ভালোই।
লেক ভিউ হোটেল থেকে
ইতোমধ্যে পুরাব এসে হাজির। ১০ টা নাগাদ বের হয়ে গেলাম । ইঞ্জিন বোট ভাড়া করলাম ১০০০ টাকায় সারাদিনের জন্য সাথে কিনে নিলাম কলা,রুটি আর পানি । ইঞ্জিনের অবিরাম শব্দে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা ঝুলন্ত সেতুর দিকে।
দোয়েল চত্বর
রাঙ্গামাটির স্টেডিয়াম
এখানে কোন বিশ্ববিদ্যালয় নেই, কলেজই শেষ
জেলা প্রশাসকের বাংলো
পর্যটন কমপ্লেক্স
বোটে ছাড়লে বোঝা গেলো আমরা রিজার্ভ বাজার ছাড়িয়ে আরও সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। রিজার্ভ বাজার থেকে দেড় কিমি দূরে ঝুলন্ত সেতু। বোটে যেতে ২০ মিনিটের মত সময় লাগলো। প্রবেশ মূল্য ১০ টাকা। আমরা সোজা সেতুর পাশে গিয়ে থামলাম অর্থাৎ টিকেট কাউন্তার পার হয়ে। ইচ্ছে করলে শহর থেকে সিএনজি দিয়েও আসতে পারেন। এখানে থেকে বোট ভাড়া পাওয়া যাবে সুভলং যাওয়ার জন্য। তবে এখানে ভাড়া বেশি গুনতে হবে।
শুভলং এর দিকে যাত্রা
ঝুলন্ত সেতুতে ঝোলাঝুলি করে আবার রউনা হলাম শুভলং ঝর্নার দিকে। রাঙ্গামাটির কথা বললেই যেন সবার কেবল মনে হয় ঝুলন্ত সেতু আর শুভলং এর কথা। পর্যটন কমপ্লেক্স থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগলো শুভলং যেতে। সরকারি পর্যটন জায়গা সাজানো গোছানো তো হবেই। তাই পাহাড় আরোহণ করে ঝরনা দেখার স্বাদ এখানে অনেকটাই মলিন। অনেকটা চিড়িয়াখানায় বাঘের মত। তবুও ঝর্নায় একটু দাপাদাপি করলাম।
রাঙামাটি শহর থেকে ২১ কিমি দূরে বরকল উপজেলা। শুভলং ঝর্না এখানেই। রিজার্ভ বাজার থেকে প্রতিদিন লঞ্চ ছাড়ে বরকলের দিকে। এছাড়াও কেয়ারি কর্ণফুলী রাঙামাটি থেকে শুভলং আসে। শুভলং ঘুরে ফেরার পথে পেদা টিং টিং বা টুকটুকি ইকো ভিলেজ বা চাই পাই এ যাত্রা বিরতি দেয়।
ঝর্নায় যাওয়ার টিকেট ঘর
শুভলং ঝর্না
শুভলং ঝর্না থেকে বের হয়ে পাশেই রয়েছে আরেকটি ঝর্না। এটি উচ্চতায় একটু কম হলেও পানির স্রোত অনেক বেশি। আর পুরো জায়গাটা অনেক বেশি পিচ্ছিল।
নিচে অনেক গভীর তাই আর পিছলা খাওয়ার চেষ্টা করলাম না।
কপ্তাই লেক - - কৃত্তিম এই লেক তৈরি করা হয় ১৯৬০ সালে। কাপ্তাই পানি বিদ্যুতের জন্য কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে। পাহাড়ের নিচে ছিল বসতি। বাঁধ দেয়াতে পানি এসে যাবে তাই তারা নতুন করে বসতি স্থাপন করে পাহাড়ের উপরে আর নিচের অংশ ভরে যায় পানিতে। এখনও কিছু কিছু জায়গায় পানি কমে গেলে ভেসে উঠে তখনকার রাজ বাড়ির ছাদ ও বড় বড় গাছ গুলো।
>> আগামী পর্বে থাকবে চাই পাইতে পাহাড়ী খাবার দাবার , রাজবন বিহার ও প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য।
( চলবে )
=============================================
সাজিদ ঢাকা'র ভ্রমণ পোস্ট সংকলন
=============================================