উত্তর বঙ্গে একটা ট্যুর দেয়ার প্লান করলাম। উত্তর বঙ্গে এটা আমার ২য় বার যাত্রা। সাথে যাওয়ার কাওকে পেলাম না । আল্লাহর নাম নিয়ে একাই রউনা দিলাম, গাইবান্ধার পথে। যাওয়ার আগে অনেকেই বলেছে আমিও জানতাম, দেখার মত তেমন কিছুই নেই গাইবান্ধায়, নেটে খোজাখুঁজি করলাম তেমন কিছুই পেলাম না।কিছু না থাকলেও অবশ্যই থাকবে সবুজ ধানের ক্ষেত , নীল আকাশ আর নতুন কিছু মানুষ। এক মামা চাকরি করেন জেলা পরিষদে , কথা বলে ঠিক করলাম উনার সাথেই থাকবো। উনি অবশ্য অফিসারদের মেসে থাকেন, সেথানেই কয়েকটা বেড খালি আছে।
সকাল ৮ টা নাগাদ রউনা দিলাম ঢাকা হতে গাইবান্ধা পৌঁছাতে দুপুর ৪ টার মত বেজে গেলো। বগুরা থেকে যেতে সময় লাগে ১ ঘণ্টার বেশি। মামার সাথে মেসে উঠলাম। ঐ দিন আর বের হলাম না। মেসে রান্না বুয়া করে দিয়ে যান। আমার আগমন উপলক্ষে ব্যাপক রান্না করা হল। পেট টাইট করে খেয়ে দিলাম ঘুম। সন্ধার পর বেশির ভাগ সময় ই কারেন্ট থাকে না। তাই ঘুমই শ্রেয়।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আবার গাইবান্ধা অভিযান শুরু। রিক্সা একটা নিলাম। কোন ভাড়া ঠিক করলাম না। সারা দিন তাকে নিয়ে ঘুরবো। ভাড়া নিয়ে তেমন মাথা ঘামালাম না। উত্তর বঙ্গে সব কিছুরই দাম কম।
গাইবান্ধা জেলা সদর তেমন বড় না। বড় রাস্তার চার পাশে দোকানপাট উন্নয়ের বাতাস অব সময়ই হয়তো এই এলাকাকে এড়িয়ে গেছে। অনেক উপজেলা রয়েছে যার অবস্থা এই জেলা সদরের চেয়ে ভালো। দেশের একটি জেলা এখনও এত পিছিয়ে সত্যি হতাশা জনক। রিক্সা ও ব্যাটারির গাড়ি রয়েছে চলাচলের জন্য। আসুন এবার ঘুরে দেখাই জেলা সদরটাকে
গাইবান্ধা রেলওয়ে স্টেশন
ঐ স্টেশন মাস্টারের রুম
এটা স্বাধীনতা চত্বর
লাইব্রেরি ও ক্লাব
লাইব্রেরির এমনেই বিরাট গাছ। শহরে এমন আরও অনেক বড় বড় গাছ আছে , স্টেশন রোড পুরোটা দুপাশে গাছে সারি এমন
একমাত্র সিনেমা হল "তাজ"
শাহ আব্দুল হামিদ স্টেডিয়াম
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ১ম স্পিকার হলেন শাহ আব্দুল হামিদ । ১০ এপ্রিল ১৯৭২ তিনি স্পিকার হন কিন্তু ১ মে ১৯৭২ তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯০০ সালে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দপুরের খলসি গ্রামে। ১৯৩৬ সালে তিনি মুসলিম লীগের যোগদান করেন. ১৯৪১ সালে শাহ আবদুল হামিদ রংপুর জেলা বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ১৯৫৩ পর্যন্ত পোস্টে অব্যাহত থাকেন। ১৯৪৫ সালে তিনি ভারত লেজিসলেটিভ এসেম্বলি সদস্য নির্বাচিত হন. তিনি ১৯৫৬ সালে রংপুর আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং সভাপতি থাকেন ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত। তথ্য সূত্র
গ্যালারি দেখে মনে হয় না এখানে খেলা হয়
এটা সম্ভবত শাহ সুলতান গাজীর মসজিদ , স্থানীয় কেও ঠিক বলতে পারেন না। আসলে এই সব ব্যাপার নিয়ে কারো তেমন মাথা ব্যাথা নেই।
জেলা সদরে আর তেমন কিছুই নেই। এইবার রিক্সা নিয়ে রউনা দিলাম সাদুল্লাহপুরের দিকে। এখানে নলডাঙ্গায় জমিদারবাড়ি আছে। তা অবশ্য গাইবান্ধা শহরের কেও জানে না। সাদুল্লাহপুর প্রায় ১১ কিমি। রিক্সা তেই গেলাম। রিক্সা ওয়ালাটা পুরাই পাঙ্খা বাতাসের বেগে রিক্সা চালাচ্ছে । তার চোখ আমার দিকে মুখ দিয়ে অনবরত পক পক করতেসে আরে পায়ে প্যাডেল মারতেসে। যতই বলি দেখে রিক্সা চালাতে ততই তার বাহাদুরি বেড়ে যায়। আমি এবার শক্ত হয়ে বসে প্রস্তুতি নিলাম। যে কোন মুহূর্তে লাফ দেয়া লাগতে পারে। অবস্থা ভালো না, এরকম এক অভিজ্ঞতা এর আগে ঢাকায় একবার হয়েছে। এ পাগলা আমাকে ১৬ মিনিটে রিক্সায় মতিঝিল থেকে জিগাতলা নিয়ে গিয়ে ছিল। মনে হচ্ছিল রিক্সা কোস্টার। আর শেষ মুহূর্তে এক গাড়িতে লাগিয়ে বাম্পার খুলে ফেলসিলো। আজও এমন কিছু হবে জানতাম।
সাদুল্লাহপুরে প্রবেশ
দুপাশে কেবল ধান ক্ষেত
ঐ যা বলছিলাম, রিক্সা নিয়ে এক্কারে ধান খেতে। আমি একবারে অন্তিম মুহূর্তে একটা লাফ দিয়ে বেচে গেলাম। আর বেকুবটা রিক্সা নিয়ে ক্ষেতে। আমি আগে একখান ফটু তুইলা নিলাম। এরপর প্যান্ট গুটিয়ে নামলাম রিক্সা তুললে।
সাদুল্লাহপুর থানা
শহর থেকে রিক্সায় ১৬ কিমি এর মত এসে গেছি। আমার জানা মতে সাদুল্লাহপুরের নলডাঙ্গায় একটি জমিদারবাড়ি আছে। কিন্তু গাইবান্ধা শহরের কেও তো না ই ই ই সাদুল্লাহপুরের ও কেও কিছু বলতে পারছে না। সাদুল্লাহপুর থেকে নলডাঙ্গা আরও ৯ কিমি তাই আর সামনে না গিয়ে আবার ফিরতি পথ ধরলাম। এই দিকে মোবাইলে নেটওয়ার্কের অবস্থা খারাপ।
এই ছিল গাইবান্ধা ভ্রমণ। অনেক কিছুই খুঁজে পাই নাই, ইচ্ছে ছিল সব খুঁজে বের করার কিন্তু যেতে হবে রাজশাহী
>> গাইবান্ধা ভ্রমণে বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞ মামার কাছে থকার জন্য সুন্দর একটা জায়গা পেয়েছি আর বেলায় বেলায় বিশাল খাবারের আয়োজন।
পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখুন , , রেখে আসবেন পদচিহ্ন আর নিয়ে আসবেন শুধুই ফটোগ্রাফ।
=============================================
সাজিদ ঢাকা'র ভ্রমণ পোস্ট সংকলন
=============================================