ঢাকা থেকে ১৫৯ কিমি দূরে নেত্রকোনা। নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর থানার একটি ইউনিয়ন বিরিশিরি। যদিও সব ঘুরার স্থান দুর্গাপুরের বিভিন্ন স্থানে কিন্তু ঘুরে এসে নাম হয় বিরিশিরির। উত্তরে মেঘালয়ের গারো পাহাড় , দক্ষিনে কিশোরগঞ্জ, পূর্বে সুনামগঞ্জ, পশ্চিমে ময়মনসিংহ। নেত্র বা চোখের কোনার মত দেখতে বলে এই জেলার নাম নেত্রকোনা অনেকেই মনে করেন।
সকাল বেলায় সবাই হাজির মহাখালি, বরাবরের মত লেট আজও লিফান। তার পাল্লায় পরে ডুবেছে সৈকতও। বাস ড্রাইভারকে ওস্তাদ ভাই দুনিয়ার তেল মারিয়া ১৫ মিনিট লেট করাইলাম।
কিভাবে যাবেন :
মহাখালি থেকে বাস আছে সরকার , জিনাত পরিবহন। কিন্তু আমরা জিনাত পেলাম খালি । ২২০ টাকা ভাড়া। সকাল সাড়ে ৮ টায় রউনা দিয়ে দুপুর ২ টা নাগাদ পৌছালাম। মাঝে একটা যাত্রা বিরতি নিম্ন মানের একটা হোটেলে।
জিনাত পরিবহনের কাউন্টার
যাওয়ার রুট :
পুরো রুটি জেনে রাখা ভালো এতে করে কোন যদি বাস না পান ভেঙ্গে ভেঙ্গে আসতে পারবেন।
গাজীপুর >ভালুকা >ত্রিশাল >সিকারিকান্দা >মাসকান্দা >চরপারা মোড় >ব্রিজ মোড় >চায়না মোড় >সম্ভু গঞ্জ > কাশি গঞ্জ >তারাকান্দা >শ্যামগঞ্জ >নেত্রকনা >ফাজিল্পুর >জলশুকা রেলক্রসিং >জারিয়া বাজার >যানযাইল বাজার >দুর্গাপুর
ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত বেশ ভালোই ছিলাম। এরপরই শুরু হল আসল খেলা। এক টিকেটে ২ টি রাইড। পুরাই দেশি স্টাইলে রোলার কোস্টার। আর রাস্তা গুলো যেন পাড়া মহল্লার গলির মত। বাসতো পুরাই ডিব্বার মত ডিগবাজি খাচ্ছে। ৩ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ পৌঁছে গেলেও বাকি পথ যেতে প্রায় ৩ ঘণ্টা লাগলো। এতদুর এক্কারে বর্ডারে।
কোথায় থাকবেন :
থাকার কথা বললে একবাক্যে যে কেউ বলবে YWCA এর কথা। এটি ২ তোলা পাকা বিরাট দালান। খুবই পরিস্কার। নিজস্ব কিচেন আছে। সামনে বারবিকিউ করার জন্য সুন্দর জায়গা আছে। ডবল বেড ১২০০ টাকা। তবে এখানে ৭ বেডের একটা বিরাট রুম আছে , প্রতিটি বেডের ভাড়া ২০০ টাকা করে।YWCA এর অমিতা সাংমা ০১৭১২০৪২৯১৬
YWCA এর অফিসে আমরা।
বারবিকিউ করার জন্য
৭ বেডের রুম সাথে বাথরুম ২টা আছে ।
এছাড়াও আছে YMCA সলিল চাম্বু গং – 01731039769/ 01916622684। রাস্তার সাথে আছে স্বর্ণা গেস্ট হাউজ
কোথায় খাবেন :
YWCA তে থাকলে নিজেরাই তাদের রান্না ঘরে রান্না করে খেতে পারেন বা তারাই রান্না করে দিবে। এছাড়া আছে হোটেল সঞ্জয় পুরা ফালতু আর বাটপার। রিক্সা ওলাদের কমিশন দিয়ে রাখে তারা যেন টুরিস্টদের এখানে নিয়ে আসে আর হুদাই দাম , খাবারের সিন্ডিকেট করে বলে এখনই রান্না করে দিচ্ছি করে দাম বেশি চায় এই বলে বাজার তো সকালে থাকে এখন দোকান থেকে কিনে আনতে হবে বেশি দামে।
বাটপার সঞ্জয় হোটেল
লাকি হোটেলে খেতে পারেন এটা বেশ ভালো। ফোন করে বললে গেস্টহাউজে খাবার পাঠিয়ে দিবে। ০১৮২৪০৮১৮০২, ০১৯২৬৭১৯২৭৪
বাস থেকে নামলাম দুর্গাপুর। অনেকেই ব্যাপারটা গুলিয়ে ফেলেন বিরিশিরি আর দুর্গাপুর। দূর্গাপুর থানার একটি ইউনিয়ন বিরিশিরি। রিক্সা ওয়ালা একবারে ঘিরে ধরল। তারা সবাই এক জোট।বাসস্ট্যান্ড থেকে YWCA হেঁটেই যাওয়া যায়। রিক্সায় গেলে ৫ টাকা ভাড়া। কিন্তু ট্যুরিস্টরা না চেনার ফলে প্রতারনার শিকার হয়ে থাকে।
ফ্রেস হয়ে খাওয়া দাওয়া সেরে রিক্সা নিয়ে ঘুরতে বের হওয়ার পালা। ৩ টার বেশি ঘরিতে তাই ঠিক করলাম আজ আর সোমেশ্বরী নদী পার হবো না। এই পারে গার পাহাড় , কালি মন্দির দেখে রাতে বার বিকিউ করবো। রিক্সা ঠিক করতে গিয়ে আবার সেই প্রতারনা, সব গুলাই একজাতের। অবশেষে ৩০০ টাকা করে রিক্সা ঠিক করলাম নদীর এইপারে যাযা আছে ঘুরে দেখব । বিরিশিরি ইউনিয়নে ফসলি মাঠ আর গারো পাহাড় ছাড়া আর কিছু নেই। বাকি সব সোমেশ্বরী নদীর ওপারে অন্যান্য ইউনিয়নে
এবার ফটুক দেখার পালা
রাস্তার অবস্থা বড়ই খারাপ , একটু পর পর নেমে যেতে হয়। তবে ভালোই লাগে। এখানে এসে মনে হলো এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে ধূলাসমৃদ্ধ এলাকা
বর্ডারের কাছে
ঐ যে গারো পাহাড়
ফিরে আসতে আসতে সন্ধ্যা প্রায়। চলে গেলাম কালি মন্দির। মন্দির ঘুরে এবার বাজারে বারবিকিউ এর জিনিসপত্র কিনতে। সৈকতের মুখ্য ভুমিকায় আমাকের এই অভিযান শুরু। বিশেষ ধন্যবাদ সৈকতকে।
বারবিকিউ করতে যা যা লাগবে ও যেভাবে করবেন :
মুরগি , পেয়াজ বাটা , গুরা মরিচ,সিরকা/টক দই, আদা বাটা,রসুন বাটা হলুদ গুরা, গরম মসলার (দারুচিনি, এলাচি, লবঙ্গ), সয়াবিন তেল , কেরোসিন তেল , লাকড়ি , লোহার শিক, সস ।
>> লাকড়ির বদলে কয়লা দিয়ে করতে পারেন কাঠ কয়লা বা সোনা কয়লা দিয়ে। লোহার শিক না পেলে রিক্সার স্পোক কিনে নিন। আর পারলে ঢাকা থেকে বারবিকিউ আর বক্স কিনে নিতে পারেন, নিউ মার্কেটে পাবেন। ১২০০-২০০০ টাকা। আমরা লোহার শিক যোগার করে মাটি গর্ত করলাম লাকড়ি পোড়াবার জন্য। ইটা দিয়ে বক্স বানালাম শিক গুলো রাখার জন্য।
মুরগীর মাংসের সাথে সব মসলা মিশিয়ে কাটা চামচ দিয়ে ভালো করে কেচে নিলাম। সয়াবিন তেল কিন্তু সাথে দিয়েছি। এবার ঘণ্টা ২ রেখে দিলাম। এই ফাঁকে চুলা বানিয়ে নিলাম । মুরগীর মাংস গুলো শিকে গেঁথে নিলাম। লাকড়িতে কারসিন ঢেলে আগুন দিলাম। এবার শিকগুলো মুরগি আগুনে পোড়ানর পালা। হালকা বাতাস করে আগুন বাড়িয়ে নেই নিভে গেলে। পোড়াতে পোড়াতে মাঝে মাঝে মসলার পানি গুলো একটু একটু করে মাখিয়ে দেই। একটু সয়াবিন তেলও দেই এতে করে মুরগী আর পুরে না। উলটে পালটে ভালো করে পোড়ালাম। এবার খাবার পালা


> বানান ভুল ও গুরুচণ্ডালী দোষ মার্জনা করবেন।
> অনেকেই হয়তো আশাহত হয়েছেন, চিনামাটির পাহাড় , নীল পানি এগুলো না দেখে , একটু সবুর করুন।
পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখুন , , রেখে আসবেন পদচিহ্ন আর নিয়ে আসবেন শুধুই ফটোগ্রাফ।
=============================================
সাজিদ ঢাকা'র ভ্রমণ পোস্ট সংকলন
=============================================