বাংলার পথে(পর্ব ২৭) -- শেকড়ের সন্ধানে : উয়ারী-বটেশ্বর (১)
হাবিবুল্লাহ পাঠান সাহেবের মিনি মিউজিয়াম দেখার আগে সংক্ষেপে জেনে নিন যেই ৬টি কারণে এ অঞ্ছলে শনাক্তকৃত ৫০ টি প্রত্নপীঠের মধ্যে উয়ারী-বটেশ্বর দুর্গ-নগরকেই এর নিউক্লিয়াস বলা হয় ।
প্রথমত , বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত নদী তীরবর্তী এ অঞ্চলটির পাশ দিয়ে প্রবাহমান ব্রহ্মপুত্র নদ হয়ে বঙ্গোপসাগর মধ্য দিয়ে দক্ষিন ও দক্ষিন পূর্ব এশিয়া হয়ে সদুর রমান সাম্রাজ্য পর্যন্ত ব্যবসা বাণিজ্য চলতো ।
দ্বিতীয়ত , এখানকার প্রশস্ত রাস্তা , পার্শ্ব রাস্তা , বিভিন্ন ধরণের স্থাপত্য এ অঞ্চলের উন্নত নগর পরিকল্পনার পরিচায়ক।
তৃতীয়ত , জনপদ ও কেন্দ্রিয় শাসন ব্যবস্থার প্রতিক রূপে বহু ছাপাঙ্কিত রৌপ্য মুদ্রা স্থানটির প্রাক নাগরিক জনপদের ও পরবরতিকালের নাগরিক সভ্যতার সুস্পষ্ট প্রমাণ বহন করে ।
চতুর্থত , এ অঞ্চলের প্রত্নপীঠের দুর্গ প্রাচীর, পরিখা , অসম রাজার গড় ও পরিখা এবং এ অঞ্চলে প্রাপ্ত অসংখ্য লৌহ নির্মিত হস্ত কুঠার , বল্লম , পোড়ামাটির ক্ষেপণাস্ত্র এ অঞ্চলের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থার প্রমাণ বহন করে । সম্প্রতি মনে করা হচ্ছে গ্রিক সম্রাট আলেকজেন্দার গঙ্গা নদীর পূর্ব তীরে যে পরাক্রমশালী গঙ্গারিডি জাতির কথা শুনেছেন তা ছিল আজকের উয়ারী-বটেশ্বর ।
পঞ্চমত , উয়ারী-বটেশ্বর এর প্রাপ্ত লৌহ স্বল্প মূল্যবান পাথর এবং মৃন্ময় প্রত্নবস্তু এ অঞ্চলের এই তিনটি শিল্পের উৎকর্ষের প্রমাণ বহন করে ।
ষষ্ঠত , বিপুল পরিমানে মন্ত্রপুত কবচ , কিছু বিশ্বাস পাত্র এ অঞ্চলের মানুষের উন্নত চিন্তা ও দর্শন বিকাশের ইঙ্গিত বহন করে ।
আবার ফিরে যাই মিনি মিউজিয়াম এর খোঁজে । রিক্সাওয়ালা কে নিয়ে রউনা দিলাম হাবিবুল্লাহ পাঠান সাহেবের বাড়ির খোঁজে , কিন্তু বিপদের কথা হল , রিক্সাওয়ালা বাড়ি চিনে না। হল না কাজ , ভর দুপুর , রাস্তা ঘাটে তেমন মানুষজন ও নেই।
আশেপাশে যাকে পাই তাকেই জিজ্ঞাসা করছি , মজার ব্যাপার হল , মোটামুটি সবাই ই তার বাড়ি চিনে কেবল আমার রিক্সাওয়ালাটা ছাড়া ।
সাধারণ গ্রামের বাড়ি । ভিতরে চলে গেলাম , হাঁকডাক দিলে একজন বয়স্ক লোক বেড়িয়ে এলে সহজেই বুজতে পারলাম ইনি হাবিবুল্লাহ পাঠান , আগে ফটু দেখসিলাম । উনি এগিয়ে এসে সংগ্রহশালার গেট খুলে দিলো ।
ছবি তুলাতে হ্যাঁ বা না , , কিছুই লেখা নেই , তাই ধরেই নিলাম তুলা যাবে আর আমি ও রিক্সাওয়ালা ছাড়া কেও নাই ও । চুরি চুরি একটা ভাব , হাবিবুল্লাহ সাহেব একটু গম্ভীর স্বভাবের মানুষ , তাই কিছু জিজ্ঞাসা করতেও ভয় পাচ্ছিলাম । উনি রুমে গিয়েছেন শার্ট পড়তে এই সুযোগ , পকেট হইতে মোবাইল খানা বাহির কইরা , কোন দিক দৃষ্টি পাত না করিয়া আগে ফটুক তুলিতে লাগিলাম , এমনকি কি তুলিতেসি তাহা ও বুঝবার চেষ্টা করিলাম না , মাথায় শুধু আছে বাক্সে বন্দী জিনিস গুলোই আমার লক্ষ্যবস্তু
টপাটপ ফটু তুলা শেষ , আহ হ হ ! ! ! আবার শান্তি , আস্তে ধীরে আবার দেখি কি আছে এই সংগ্রহশালায় , ইতিমধ্যে হাবিবুল্লাহ সাহেব ও হাজির । হাতে একটি লিফলেট , পোষ্টের তথ্য গুলো সেখান থেকেই নেয়া
আসেন দেখি হাবিবুল্লাহ পাঠান সাহেবের সংগ্রহশালা
ক্যাপশন দেয়ার প্রয়োজন নাই , , এগুলো দেখে আমি যা বুজবো আপনারাও তাই ।
গলার মালা , কমদামী মনে হইতেসে
প্রাচীন কিছু কোরআন শরীফ
পুরো রুমটা
বাইরে থেকে
এইবার দেখেন আসল মানুষ কে , হানিফ পাঠান সাহেবকে
আরও একজন মানুষ , রিক্সাওয়ালা ভাই , এতক্ষণ যার মাথা চিবিয়ে খেয়েছি , দেখেই বোঝা যাচ্ছিল উনি এবার বলবে ভাই আপনি অন্য রিক্সা দেখেন । ইহা বলিবার আগেই তাহাকে আমি একটা ঠাণ্ডা পেপসি খাওয়াইলাম
এভাবেই আবার ফিরে আসলাম মরজাল বাসস্ট্যান্ডে , টেম্পু করে চলে গেলাম ভেলানগর । সেই খান থেকে বিআরটিসি বাসে আবার ঢাকা ।
উয়ারী-বটেশ্বর নিয়ে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে বই মেলাতে ।
উয়ারী-বটেশ্বর শেকড়ের সন্ধানে
মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ পাঠান , সুফি মোস্তাফিজুর রহমান
বইটি কিনতে ও বিস্তারিত জানতে
তথ্য সূত্র : *প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা কেন্দ্র থেকে পাওয়া লিফলেট
* উয়ারী-বটেশ্বর সভ্যতা
>> বানান ভুল ও গুরুচণ্ডালী মার্জনা করবেন ।
পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখুন , , রেখে আসবেন পদচিহ্ন আর নিয়ে আসবেন শুধুই ফটোগ্রাফ