বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের সাগরকন্যা বা বনকন্যা হল কুয়াকাটা। এটি দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র সমুদ্র সৈকত যেখান থেকে আপনি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দুটোই দেখতে পারবেন।
তাই ১৮ কিমি দীর্ঘ এই সৈকতটি দেখতে হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসে , উপভোগ করে রাতের আঁধার চিরে বেড়িয়ে আসা নতুনের বার্তা বাহক সূর্যের আগমন এবং দিন শেষে তার সমুদ্রের বক্ষে হারিয়ে যাওয়া।
সমুদ্রের বিশালতায় হারিয়ে গিয়ে নিজের মনের সংকীর্ণতা দূর করার জন্য এমন একটি পরিবেশ দরকার , যখন আপানার পাশে থাকবে কেবল আপনার অতীত , বিবেক ও আত্তউপলব্ধি , , তা হয়তো অনেকেই পাননি কোলাহল পূর্ণ কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এ গিয়ে , , তাই একবার হলেও একটু কষ্ট করে আসতে পারেন "কুয়াকাটা" ।
ভ্রমণের জন্য ব্যাগপ্যাক তৈরি ও সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
পথের হদিসঃ
ঢাকা থেকে কুয়াকাটা ৩৮০ কিমি। বরিশাল থেকে ১০৮ কিমি। পটুয়াখালী খালি থেকে ৭০ কিমি , কলাপাড়া থেকে ২৫ কিমি।
ঢাকা থেকে সরাসরি কুয়াকাটার বাস আছে , , সাকুরা পরিবহন (০১১৯০৬৫৮৭৭২ , ০১৭২৫০৬০০৩৩) সবচেয়ে ভালো , দ্রুতি পরিবহন - ০১১৯৬০৯৫০৩৩ । গাবতলি থেকে কুয়াকাটা যাওয়ায় অনেক বাস আছে। ভাড়া সরাসরি হলে ৬৫০+ ।
আর আপনি যদি ভেঙ্গে ভেঙ্গে যেতে চান তাহলে ৩ বার বাস বদলে ৫০০ টাকার মধ্যেই যেতে পারবেন । সাথে পরিবার না থাকলে আমি বলব ভেঙ্গে ভেঙ্গে যেতে , কারণ অনেক দূরের পথ এক বাসে বিরক্ত লেগে যাবে। যারা এইদিকে থাকেন তারা সায়দাবাদ থেকে সকাল ৬;৩০ এ পটুয়াখালীর বাসে উঠবেন। আমতলী নেমে খেপুপাড়া > কুয়াকাটা।
লঞ্চে গেলেঃ
বিকেল বেলা বরিশালের লঞ্চে উঠেন। সকালে নেমে বরিশাল লঞ্ছ ঘাট থেকে ১০-১৫ টাকা ভাড়া দিয়ে চলে আসুন নথুল্লাবাদ বাস স্ট্যান্ড। এইখান থেকে বাস পাবেন।
সদরঘাট থেকে বিলাস বহুল ডাবল ডেকার এম.ভি পারাবত, এম.ভি সৈকত, এম.ভি সুন্দরবন, এম.ভি সম্পদ, এম.ভি প্রিন্স অব বরিশাল, এম.ভি পাতারহাট, এম.ভি উপকূল লঞ্চের কেবীনে উঠে সকালের মধ্যে পটুয়াখালী কিংবা কলাপাড়া নেমেও যেতে পারেন । লঞ্চে সিঙ্গেল কেবিন ৭০০+ , ডবল ১৪০০ - ১৬০০ টাকা।
যাওয়ার রুট :
এটার গুরুত্ত অনেক। ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যাওয়ার পুরো রাস্তাটা জানা থাকলে বাসের চিন্তা করতে হবে না। ইচ্ছে মতো ভেঙ্গে ভেঙ্গে যেতে পারবেন।
ঢাকা > মাওয়া > ফেরি পাড় হয়ে ওপারে কাওরাকান্দি > ফরিদপুর > ভাঙ্গা > গোপালগঞ্জ টেকের হাট > ভুরঘাটা , মাদারিপুর > গৌরনদী বরিশাল > লেবুখালি ফেরি > আমতলী পটুয়াখালী > খেপুপাড়া > কলাতলি বীচ ।।।।।।
** ৫ টি ফেরি মাওয়া , লেবুখালী, কলাপাড়া, হাজীপুর ও মহিপুর
আমরা যেভাবে গেলাম :
সকাল ৬:৩০ এ সায়দাবাদ থেকে মেঘনা পরিবহনে করে বিকাল ৫ টার দিক আমতলী ভারা ৩৫০ । আমতলী থেকে খেপুপাড়া ৩৫ টাকা । খেপুপাড়া থেকে সরাসরি কলাতলি অর্থাৎ কুয়াকাটা বীচ পর্যন্ত ১০০ টাকা ।
৫ টি ফেরি ও ৩ বার বাস বদলে মোট ১৪ ঘণ্টা লাগলো
কোথায় থাকবেন :
বেশ ভালো মানের হোটেল আছে । নন এসি ডবল ৭০০ থেকে শুরু । একটু খারাপ হোটেল ও আছে। হোটেল ঠিক করার সময় দেখবেন কোনটি সমুদ্র থেকে কাছে। কারণ বাতাস বেশি পাবেন।
সমুদ্রের কাছে - - হোটেল নিলাঞ্জনা 01829 44 00 44 , হোটেল গ্রেভার ইন ০১৭৪৮৭২৩৫৫৭ , হোটেল সৈকত, স্কাই কটেজ 01711-542881,
01552-331362 (৫০০ টাকা ডবল) ।
সমুদ্র থেকে একটু ভিতরে - - কুয়াকাটা ইন 01911-672135 01712-849373 , বীচ হেভেন , হোটেল মোহনা ০১৭৫০০৯৫৩৩৭, ০৪৪২৮-৫৬১৭৫ , পর্যটন মোটেল
নিম্ন মানের - - হোটেল উদয় অস্ত , হোটেল সাগর , সমুদ্র বিলাস ( ভাড়া ৩০০+ ডবল বেড)।
কি খাবেন :
খাওয়ার জন্য কোরাল মাছ খেয়ে মজা পাবেন। যাই খান না কেন , , খাওয়ার পূর্বে দাম জিজ্ঞাসা করে নিবেন , , নাইলে কোপা সামসুর কোপ খাইলে , পরের বেলা দুঃখে আর খাইতে চাবেন না ।
* পশ্চিম এ যখন সূর্যাস্ত দেখতে যাবেন , ছোট একটা দোকান আছে - তাজা ভেটকি,ইলিশ,চিংড়ি , কাঁকড়া, রূপচাঁদা সহ নানা সামুদ্রিক মাছ রাখা থাকে , পছন্দ মতো সাথে সাথে ভেজে দেয়া হয় ( দাম পুরা মারা খাওয়া)।
অনেক ভারী ভারী তথ্য দেয়া হল , , এইবার কিচ্ছা শুরু
সকাল ৬:০০ বাজে পৌঁছে গেলাম সায়দাবাদ , , আগের দিন মেঘনা পরিবহনের আমতলী পর্যন্ত টিকেট কেটেছি । কয় জন যাচ্ছি তা না হয় নাই বলি । ৬:৪০ এ আল্লাহ আল্লাহ করতে বাস ড্রাইভারের মর্জি হল বাস ছাড়তে।
সায়দাবাদ বাস স্ট্যান্ড
শুক্রবার হওয়াতে রাস্তা খালি , ,তাই তাড়াতাড়ি পৌঁছে গেলাম মাওয়া ঘাট । সকাল ৮ টা । খুশি খুশি লাগতেছিল যাক তাড়াতাড়ি মনে হয় পৌঁছে যাব । সহসাই উপলব্ধি করলাম ঠাডা পরতে যাচ্ছে এবং একে একে চা , পরটা , আরও হাবিজাবি খেতে খেতে ৯ :৩০ বাস এখন ফেরির উপর । দেশের যোগাযোগ ব্যাবস্থার কথা ভেবে আমি সত্যিই আবেগ তাড়িত , , "সো ফাস্ট আওয়ার সিস্টেম " , , , অথচ পদ্মার অপারেই কিন্তু যোগাযোগ মন্ত্রীর এলাকা এবং আমার গ্রামের বাড়ি
মাওয়া ফেরিতে
স্পিড বোট দেইখা কল্পনার জগতে চইলা গেলাম , , আহা !!!
ফেরিটা যদি এভাবে যেত
ঘাটে ভাত , , একবার ভাবলাম খাই , , পরে টাকার কথা মনে পড়িল , , অনেক ট্যুরেই আজাইরা খাওয়ার জন্য টাকার সঙ্কটে পরেছি , , তাই কন্ট্রোল মাই সেলফ - - বাছা সবুর করো লেবু খালিতে হবে
এপারে এসে , , বাস চলিতে লাগিল , , বৃষ্টি পড়িতেছে, , বাস ভাঙা হয়ে বরিশালের পথে । বাস খানা আমাদের পুরাই মার্কা মারা। আর যাত্রীরাও , , বেশির ভাগই বরিশাল আর পটুয়াখালীর । যেই জেলারই হোক না কেন , , তারা সবাই একই বৈশিষ্ট্য বহন করে। সারা রাস্তাই ঝগারা বিবাদে আছে । সামনে সিট হওয়াতে একটু আরামে ছিলাম , তবে বেশি না ।
এক সময় দেখলাম , পিছনের মানুষ গুলো সামনে এসে এসে কি যেন দেখে আবার চলে যাচ্ছে। পরে বুজলাম তারা দেখে যাচ্ছে বাস কে চালাচ্ছে - ড্রাইভার না হেল্পার !!!
তারও বেশ কিছুক্ষন পর - - বাইরে তুমুল বৃষ্টি , , আনুপ লক্ষ্য করল হেল্পার একটু পর পর সামনের কাঁচটা গামসা দিয়ে মুছে দিছে , , অর্থাৎ বাসের উইপার নাই , , একি বাস এ উঠলাম , আল্লাহকে আবার মনে পড়ল , , মনে হল এক লেবারের রিক্সাতে করে টিলাতে উঠার সময় তার কথা - - দয়াল তুমি জান !!!
আর রাস্তার সেই কি হাল
বরিশাল নথুল্লাবাদ , বরিশাল ক্যাডেট কলেজ হয়ে যাচ্ছি ।
অনেকক্ষণ কোন ফেরি নাই , , ভাবলাম , , একটা দুইটা কমে গেল নাকি ৫ টা থেকে । আল্লহর কি দান , , ভাবতে ভাবতেই লেবুখালি এসে পড়লাম , ,
খিদায় অবস্থা খারাপ , , আগে ভাত খেতে হবে , আর ফেরির যা হাল , , আমি ১০ সাজিদ ভাত খেলেও ফেরির দেখা মিলবে না ।
আগে ফেরি ঘাটের চেহারা দেখেন , , কাদায় কাঁদাময়। কাঁদা একবারে কাঁদিয়ে ছাড়বে এমন অবস্থা । আর ঘাটের কুল কিনা কই , তা ও বুজতে বেগ পেতে হবে , ,
ঘাটে ঘুরে ফিরে পছন্দ মতো একটা দোকানে গেলাম , , খুদার জ্বালায় দাম না করেই খাওয়া শুরু , , আমি আর আনুপ বিশাল দেহী হলেও খেতে বেশি একটা পারলাম না । তবে খাবারের দাম কম , , নিচের ফটুতে ২ টা করে - ভাত , ঝাটকা অর্ধেক , সবজি , পিঁয়াজ ভাজি , ডাল মোট ১২০ টাকা
অনুপের আপ্রাণ চেষ্টা দেশ ও মানুষের কল্যাণে ব্রিজ খানা টানিয়া উপরে তোলার
হাসিনা আপার ওয়াদা পানির জলেই ভাসিয়া জাইতেসে , , তিনি হয়তো পদ্মা সেতুর জ্বালায় ভুলেও গেছে এই অবলা সেতুটার কথা
আরও কিছু ফেরি
রাত হয়ে গেছে প্রায় , , আরও ২ টি ফেরি বাকি
এটা সর্বশেষ ফেরি , , এটা ফেরার দিন তোলা , ঐ দিন রাত হয়ে যাওয়াতে আর তুলতে পারি নাই , , যদিও চেষ্টা করেছিলাম , , ডেসলার না হওয়াতে আন্ধারে কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না । অর্ধেক ব্রিজ নাকি অনেক দিন ধরেই , এই ব্রিজ দেখে উপলব্ধি করলাম , এই এলাকাতে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি একটু বেশি , , তাই এলাকার মানুষের জুতা এখনও হাতে উঠতে পারছে না
একটু এই দিকে দেইখেন :
* ক্ষমা চাই, গুরুচণ্ডালী দোষের জন্য ও বানান ভুল করলে ।
* যারা কুয়াকাটা দেখতে এসে হতাশ হয়েছেন তারা একটু সবুর করেন আগামী পর্বের জন্য।
* ঈদের পরে ঘুরে আসতে পারেন , পরিবার নিয়ে । (ফারজুল ভাইয়ের আইডিয়া) ।