ভ্রমণ বাংলাদেশের সাথে ট্যুরে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও সাধ ও সুযোগের সমন্বয় এই প্রথমই । ফেবু গ্রুপ থেকেই জানতে পারলাম ট্যুরের বিস্তারিত।
সময় মতো ভোর ৬ টায় হাজির হলাম হকি স্টেডিয়ামের গেটে। এর আগে - - ঘুম থেকে উঠে দ্বিধাদণ্ডে ছিলাম যাব কিনা , , প্রথমত কাওকেই চিনি না , যদিও এরকম অনেক অভিজ্ঞতা আগেও ছিল , মনের সাথে অনেক যুদ্ধ করে , , জয় বাংলা বলতে বলতে চলেই গেলুম
গেটের সামনে কিছু মানুষ যাদের প্রস্তুতি দেখেই বোঝা যায় , তারাই ভ্রমণ বাংলাদেশের দল । একে একে পরিচিত হলাম (সৌদ বজলু রুবেল মনা তারেক বকর ফারুক সামিম বদী চন্দন ) ভাই ও প্রেসিডেন্ট টুটুল ভাই ও তার ভাতিজা । সৌদও সামিম ভাইয়ের বউ ও ছিল।
তারা সকলেই একে অপরের সাথে পূর্বপরিচিত হলেও আমি পুরাই নতুন তাই বাঁদরামি একদমই করি নাই , , পাকনামি তো নাই ই ই ই, ,আর টুটুল ভাইকে ভয় ভয় লাগলো কারণ উনি আমার চেয়ে কয়েকগুণ বেশ দুষ্ট তবে উনি একটা অস্থির মানুষ
গুলিস্তানের নবাবপুরের ট্রাফিক সিগন্যাল থেকে বারদীর বাসে উঠলাম। ভাড়া সম্ভব ৩৫ টাকা। বাসটি বলাকার ক্লোন , সিট পুরাই মার্কা মারা। দেড় ঘণ্টার মতো সময় লাগলো বারদী বাজার পৌঁছাতে । সিট না থাকায় পুরো পথই প্রায় বকর ভাই দাঁড়িয়ে ছিলেন। বাস থকে নেমে একটু হাঁটলেই মন্দিরের কাছে গিয়ে নাস্তা সারতে বসলাম। পূজার মৌসুম , , সকাল সকাল সবাই হাজির , , হৈ হাই , ধাক ঢোল , নাচ গান। এক্সপেনসিভ (১০ টাকা পরটা) নাস্তা সেরে মন্দিরে গেলুম , , ভিতরে নাচানাচি হচ্ছিল , , ইচ্ছা থাকলেও করলাম না মন্দিরে এক জায়গায় দেখলাম সবাই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কাছে গিয়ে দেখলাম এক মহিলা প্রায় মৃত্যু পথ যাত্রী , , পাপ মুক্তির জন্য কয়েকদিন ধরে এখানে শুয়ে আছে কিছু ফটু দেখুন
মন্দির থেকে আবার আমাদের হাঁটা শুরু । বৈদ্দের বাজার যাব ।
ঠাস ঠাস ঠাস , , , জয় বাংলা হাঁটা দাও ।
প্রথমে গেলাম কাছেই জ্যোতি বসুর বাড়ি দেখতে । বাড়ির অবস্থা বড়ই খারাপ । কিছুই নাই ভিতরে , , ,
আমাদের একটা গ্রুপ ফটু
এবার হাঁটার পালা শুরু , , জ্যোতি বসুর বাড়ি দেখে এবার বারদী হয়ে মেঘনার পার ধরে হাঁটা । চারপাশে সবুজ আর পানি। খুব বেশি পানি না । হাঁটু সমান , জেলেরা মাছ ধরছে। আর প্রচণ্ড বাতাশ । আমরা দল বেধে হাঁটছি । কেও আবার ছবি তুলছে , কেও জিরিয়ে নিচ্ছে। সোজা রাস্তা , অনেকক্ষণ পর তারেক ভাই বলাতে বুঝতে পারলাম এই রাস্তাটা বানানো হয়েছে বাধের উপর। এত সুন্দর যে আপনি বুজতেই পারবেন না এটা বাধ
পরিত্যাক্ত মন্দির
হঠাৎ টিপটিপ বৃষ্টি। মেঘনার বাতাসের সাথে বর্ষাধারা । চায়ের দোকানে আমরা আশ্রয় নিলাম ,,, সামনেই একটা ব্রিজ , নিজে বেশি পানি নেই ১০ ফিট এর মতো , গ্রামের ছোট ছোট ছেলেরা ব্রিজের উপর থেকে লাফ দিয়ে অস্থির মজা পাচ্ছে। আমরাও বা কেন এই মজা থেকে বঞ্চিত হবো , (তারেক বকর ফারুক আর সউদ ) ভাই কোন কথা নেই , , আগে লাফ সউদ ভাই লাফ দেয়ার পর জানতে পারলাম উনি সাঁতার জানেন না প্রথম ডুবের পর মাথা উপরে তুলে যখন তাকালেন , বোঝা যাচ্ছে পানি খেয়েছেন পেট পুড়ে । বৃষ্টি একটু থামলে চা খেয়ে আবার হাঁটা শুরু করলাম , , কিছুক্ষন পর পৌঁছে গেলুম বৈদ্দের বাজার । এখানেই বেস ক্যাম্প ।
পাশেই মেঘনা নদীর একটি শাখা , এখন পানি কম । আমরা একটা ভাতের হোটেলে সবাই ঢুকে ব্যাগ রেখে কাপড় বদলালাম চা সিঙ্গারা খেলুম । নদীতে গসুল কইরাম গত বছর এই সময় পদ্মাতে গসুল করতে ভাগ্যকুল গিয়েছিলাম।
পানিতে আমরা লাইন ধরে , ,
ছবি ক্রেডিট - সামিম ভাই
বুক সমান পানি , পানিতে নামার মজাই আলাদা যদিও স্রোত ছিল না। তারপর ও আলাদা একটা শান্তি আছে। বেশ কিছুক্ষন দাপ্রাদাপ্রি করে উঠে গেলাম । জুম্মা বার , নামায আছে । তাড়াতাড়ি কাপড় বদলে মসজিদের খোঁজে বের হলাম , , হোটেল গুলোর মতই পানির উপরে মসজিদ। আর অজু করতে হয় মসজিদের নিচে
এবার খাবার পালা , , খিদা ভালই লেগেছিল । মেঘনার পারে , , ইলিশের আকাল না হলেও পর্যাপ্ত না , , তাই ইলিশের পরিপূরক হিসেবে রুই মাছটা ছিল অসাধারণ । সাথে ডাল ভাজি , ছোট মাছ । প্রচণ্ড খিদা আর সব কিছু তাজা হওয়ার জন্য অত্যন্ত তৃপ্তি নিয়ে খেলাম।খাওয়ার পর দীর্ঘদিনের অভ্যাস ঝিমানো , , উফ ফ ঘুম ঘুম ভাব , , মনে হচ্ছে থাক
এবার ট্রলার ভ্রমণ । মেঘনার বুকে শীতল বাতাসে ট্রলারে ঘুরা।যদিও সূর্যের তাপ এখনও আছে কিন্তু উত্তেজনার কাছে তা অনুভূত হচ্ছে না। মেঘনার বুকে ১০-১২ বছর হয়েছে একটা নতুন দ্বীপ জেগেছে নাম " মায়া দ্বীপ" - - স্থানীয়দের দেয়া নাম । সেই দ্বীপের উদ্দেশ্যেই আমাদের যাত্রা ।
রুবেল ও বজলু ভাই , , সেই কি ঘুম , , ইচ্ছে হচ্ছিল একটু পানি মারি
বাতাস খেতে খেতে অবশেষে , , মায়া দ্বীপ - -
দ্বীপটা বেশি একটা বড় না , সবুজ আর সবুজ । সাথে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি। অসাধারণ এক বিকেল । ধান ক্ষেতের মাঝে মাঝে হাটতে বেশ মজাই লাগছিল । ফারুক আর রুবেল ভাইয়ের ফটোসেশন চলছে । মাটির ডিবির উপর কিছুক্ষন বসে রইলাম।
তবে এর নাম মায়া দ্বীপ কেন হল বুজতে পারলাম না । তেমন কোন মায়া জাগেনি আবার যাওয়া জন্য তবে , , হ্যাঁ , , কাম্পিং করার জন্য বেশ ভালো একটি জায়গা তবে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত ।
শেষ বিকেলের দিকে এবার ফেরার পালা। সূর্য প্রায় ডুবে যাচ্ছে , মেঘার বুকে এক অপরূপ দৃশ্য ।
ফিরে এলাম আবার বৈদ্দের বাজার । আবার একটু হালকা চা পানি খেয়ে হাঁটার কথা থাকলেও ফিরতে দেরী হয়ে যাবে তাই সিএনজি ভাড়া করেই রউনা দিলাম মুগরাপাড়া। ২.৫ কিমি পরেই মুগরাপাড়া। এতক্ষণ পরে বুজতে পারলাম আসলে আমি কই । সোনারগাঁ লোক শিল্প জাদুঘরে যাওয়ার পথেই হল এই মুগরাপাড়া।
বাসে উঠে শরীরটা এলিয়ে দিয়ে একটু চোখটা লেগে আসতেই দেখি , , বাসের ফ্যান চলছে , অর্থাৎ বাস থেমেছে। দিন শেষে অনাবিল আনন্দ শেষে , ক্লান্ত শরীরে হয়তো এই বাঁশটা খাওয়াই বাকি ছিল - বাসের চাকা নষ্ট। প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে বাস থেকে নামলাম ও অবশেষে সন্ধ্যার পরে গুলিস্থান এসে নামলাম।
শেষের বিচ্ছিন্ন ঘটনাটা ছাড়া ১০ কিমি হাঁটার সুন্দর একটি দিন গিয়েছিল। নতুন কিছু মানুষের সাথে পরিচিত হয়েছি , , যারা একজনের চেয়ে একজন অস্থির। তবে মজার ব্যাপার হল বাসায় এসে বুজতে পারলাম "তারেক ভাই" হল সেই তারেক ওবায়দা ভাই , , যার রাতারগুল অভিযান পরে যোগাযোগের চেষ্টা করছিলাম তার সাথে ।
*বানান ভুল ও গুরুচণ্ডালী দোষ মার্জনা করবেন ।