নদীর নাম সাঙ্গু নদী। স্থানীয় ভাবে সঙ্খ নদী নামে পরিচিত । চারিদিকে দেখি শুধু সবুজ সবুজ ছোট ছোট গাছ , পরে বুজলুম এগুলান হল তামাক গাছ । তামাকের বাম্পার ফলনে আমি লুলায়িত। আমার ভার্সিটিতেও তামাক চাষ করতে হবে
এখান থেকে ওপার এ রুমা ঘাট । এইখান থেকে ইঞ্জিন নৌকা বা পাল তলা নৌকা করে যেতে হবে । নৌকা রিজার্ভ করলে ৮০০ টাকা , আর জনপ্রতি হিসেবে ৫০ টাকা , আর ইঞ্জিন নৌকা তে ১০০ টাকা জনপ্রতি ।
কোন নৌকাই পাচ্ছিলাম না , আর সেই কি গরম , ডিম থেকে মুরগির বাচ্চা নিমেষেই হয়ে যেত । আল্লাহর রহমতে আধা ঘণ্টা গ্রিল হওয়ার পর পেলাম একটা ইঞ্জিন নৌকা । ইঞ্জিন নৌকায় ওপারে যেতে ১ ঘণ্টা আর নৌকাতে ২ ঘণ্টা ।
এবার শুরু নৌকা যাত্রা , পানি নদীতে একেবারেই কম , হাঁটু সমান পানি , , ইচ্ছা করলে নৌকা থেকে নেমে কিছুদুর হাঁটলেন । তবে পানিতে নামতে হবেই , , পানি কম হওয়াতে নৌকা আটকে যায় , ঠেলা ঠেলি শুরু , ,
নতুন ব্রিজ হচ্ছে , এর পর আর এই মজাটা পাওয়া যাবে না
ব্রিজের তলা দিয়ে যাওয়ার সময় সাবধান
অনেকক্ষণ নৌকা ভ্রমণের পর এবার রুমা ঘাট , , সারি সারি নৌকা , , মানুষ জনে ভর্তি , , এই বিকাল বেলা পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে গসুল করিতেসে
এবার হোটেল খোঁজা শুরু , বেশ কিছু বোর্ডিং ও ২ টি ভালো হোটেল আছে । হোটেল হিলটন ০১৮২৩ ৯২২ ৬৯১ ও মং গেস্ট হাউজ । হোটেল হিলটন এ বিভিন্ন ধরনের রুম আছে ৪০০-১০০০ টাকা। যারা কমের মধ্যে ভালো থাকতে চান এখানে যেতে পারেন । আর রুমা'র রেডিসন হল মং গেস্ট হাউজ । ভাড়া একটু বেশি । আমাদের রুমটা ৮০০ টাকা , পরিষ্কার, টিভি , সোফা , ভালো টয়লেট ইত্যাদি ।
তানভীরের সাথে বেশ ঝগড়া হল , এই হোটেল থাকা নিয়ে , আমি ডবল ভাড়া দিয়ে থাকতে নারাজ , যেখানে একরাতের জন্য অর্ধেক ভাড়ায় হিলটনে থাকা যায় । কিন্তু তার এশিয়া কাপ খেলা দেখতে হবে । । রাগারাগি করে সবাই বসে আছি রাস্তার ধারে , , যাহ হোটেলেই থাকুম না , , অবশেষে গেলুম মং এ তেই , , ম্যানেজারের সেই কি ভাব
মং গেস্ট হাউজ - অন্দর মহল
ফ্রেস হয়ে বের হলুম খেতে , , হোটেল সাতকানিয়া , , ঢাকাতে পাড়া মহল্লার হোটেলের মতো হলেও রুমাতে এইটাই সবচেয়ে ভালো ।
মজার বেপার হল , হোটেলের মালিকের সাথে আমরা নৌকা দিয়ে এসেছি , সে অইপার থেকে একটা স্টোভ নিয়ে আসছিল , যা আমার খুব বিরক্ত লাগছিল । চাচা ও আমাদের দেখে খুশি । বিপদের কথা হল- এখানে সব জিনিসের দাম ডবল । পানির লিটার ৬০ টাকা , আর বাকি গুলান বুইজা লন । কারণ হল সব কিছু নৌকা দিয়ে ওপার থেকে নিয়ে আসতে হয় । তবে ভাত , মাছ , মাংস , ডাল ,সবজি এগুলান নরমাল । জনপ্রতি ১০০ টাকা হলেই হয় ।
গাইড ঠিক করা
ভাত খেয়ে বের হলাম গাইডের খোঁজে । বাজার খুব ছোট , হাঁটাহাঁটি করলেই পেয়ে যাবেন গাইডের জন্য লাইন ম্যানের দোকান । বড় করে লিখা আছে । গাইডের ভাড়া দিনপ্রতি ৫০০ টাকা আর বগালেক - কেওকারাডং- জাদিপাই গেলে ২৫০০ টাকা । রেট করা । মুলামুলি করে লাভ নাই , , তারা সংঘবদ্ধ ।
গাইডের খাবার আর থাকার খরচ ও আপনার ।
সাদেক ( বেষ্ট অফ বেষ্ট ) - ০১৫৫৪৬০৬৬১২
কমল ( বেষ্ট ) - ০১৫৫৭৩৯৮৩৪৭
জামাল০১৫৫৩৭৪৮৫১
১৯ মার্চ ২০১২ ইং
গাইড সাদেক সকাল সকাল হাজির । ঘুম থেকে উঠেই হোটেলের বারান্দায় একটা ব্যানার দেখলুম
নাস্তা সেরে রউনা । গন্তব্য বগালেক হয়ে কেওকারাডং যাব , কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে জাদিপাই যাব ।
বগালেক পর্যন্ত চান্দের গাড়ি করে যেতে পারেন । আমরা রউনা দিলাম " আদার ট্রাক " এ করে , ,
ট্রাক ছাড়ার পরেই বুজালাম কত ধানে কত গম - -
রুমা থানাতে রিপোর্ট
যেতে লাগবে ৩ ঘণ্টার মতো , , এরপর হেঁটে কেওকারাডং।
প্রথম কিছুক্ষন বেশ মজাই লাগছিল । ইটের রাস্তা , ট্র্যাকের উপর আমরা কজন । উপজাতিদের গ্রাম গুলো বেশ সুন্দর , সাজানো গোছানো । দেখলে মনে হয় পুরো গ্রামটাই নিজের বাসা ।
ইটের রাস্তা ঘণ্টা খানিকের মধ্যে শেষ , আসল মজা শুরু
পাহাড়ের গা কেটে রাস্তা বানানো । আঁকাবাঁকা , একপাশে জঙ্গল অন্য পাশে খাঁদ । আল্লাহ না করুক , ট্রাক স্লিপ করলেই শেষ , আর রক্ষা নেই , তবুও ট্রাক চালকের উপর আছে আমাদের অগাধ বিশ্বাস , না থেকে উপায় ও বা কি
রাস্তার কিছু ছবি
পাহাড়ে জুম চাষ শেষে এভাবে পুড়িয়ে ফেলা হয়
কোন কোন জায়গায় রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ , মৃত্যু ফাঁদ । ট্রাক এর উপর দাঁড়ানো ও জানের ভয় , জঙ্গলের পাশে রাস্তা , কাটা ওয়ালা গাছ গুলোর সাথে যুদ্ধ করতে প্রতি নিয়ত । পুরো যাত্রা পথে একটু সময় জন্য অন্যমনস্ক হলেই বিপদ । আর ট্রাক এ বসে থাকবেন তার ও উপায় নেই , , কারণ রাস্তা কেবল উপর এর দিকে যাচ্ছে , , অর্থাৎ আমরা পাহাড়ের গাঁ বেয়ে উপরে উঠছি , , ট্রাক সর্বদাই ৩০ ডিগ্রি । বগালেকের আগে একটা খাড়া ঢাল আছে , , অত্তন্ত খাড়া , , একবার তো মনে হল ট্রাক কিনা স্পিড বোটের মতো উপরের দিকে উলটে যায় ।
সেই সময় অনেকটা টাইটানিকের কথা মনে পড়ছিল , , লাস্ট সিন খাড়া হয়ে ডুবে যাওয়া । দুহাত দিয়ে ট্র্যাকের সম্মুখ ভাগ ধরে ঝুলে আছি , কারণ ট্রাক প্রায় খাড়া হয়ে যাচ্ছে।
আল্লাহকে এত আন্তরিক ভাবে হয়তো কখন স্মরণ করিনি , , শুধু ভাবছিলাম আল্লাহ এ যাত্রায় বাঁচায় দাও , , দরকার হইলে আমি ঢাকা তেও ফিরুম না , এইখানেই থাকুম ।
বগালেক
পাহাড়ের উপর লেক , প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট । সত্যি আজব ব্যাপার , চারিদিক বদ্ধ , পানি যাওয়া আসার কোন উপায় নেই । আর আয়তন ১৫ একর , সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ ফুট উপরে । সারাবছর এর পানির উচ্চতা একই থাকে । রুমা সদর থেকে এর দূরত্ব ১৫ কিমি । প্রতি বছর এপ্রিল থেকে মে মাসে ঘোলাটে হয়ে যায় ।
এখানে বমদের বসবাস , প্রথমে দিয়ে আর্মি কাম্পে রিপোর্ট করলাম । ট্রাক থেকে নেমে গেলাম , রিপোর্ট করে , কিছুদুর হাঁটলাম , কারণ আদার ট্রাকে যাত্রী নেয়া নিষিদ্ধ ।
থাকা খাওয়া
বগালেক বেশ সুন্দর জায়গা , চাইলে এখানে রাত্রি যাপন করতে পারেন , যদি জাদিপাই না যান তাহলে কেওকারাডং ঘুরে বগালেক ফিরে আসতে পারেন । তবে আমি বলব কেওকারাডং এর চূড়াতে থাকতে সে এক অন্যরকম রোমাঞ্চ ।
বগালেকের হেডোম হল লারাম বম ।
লারাম -০১৫৫২৩৭৬৫৫১
সিয়াম দিদি - ০১৫৫৩১০৮৫২৭
সিয়াম দিদি স্কুল শিক্ষিকা , বেশ ভালো , আর লারামের এক্সেল একটা বাইক আছে । বমরা বেশ অথিতিপরায়ণ। খরচ থাকা ১০০ , খাওয়া ১০০ ( প্রতিবেলা ) - জনপ্রতি ।
বগালেক নিয়ে একটি মিথ ( সংগৃহীত)
“অনেক অনেক দিন আগে একটি চোঙা আকৃতির পাহাড় ছিল। দুর্গম পাহাড়ে ঘন অরণ্য। পাহাড়ের কোলে বাস করত আদিবাসীর দল। ম্রো, বম, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা। পাহাড়ি গ্রাম থেকে প্রায়ই গবাদিপশু আর ছোট বাচ্চারা ওই চোঙ্গা আকৃতির পাহাড়টিতে হারিয়ে যেত। গ্রামের সাহসী পুরুষের দল কারণ অনুসন্ধানে গিয়ে দেখতে পায়, সেই পাহাড়ের চূড়ার গর্তে এক ভয়ঙ্কর দর্শন বগা বাস করে। বম ভাষায় বগা মানে ড্রাগন। কয়েকজন মিলে ড্রাগনটিকে আক্রমণ করে হত্যা করে ফেলে। ফলে ড্রাগনের গুহা থেকে ভয়ঙ্কর গর্জনের সঙ্গে আগুন বেরিয়ে আসে। নিমিষেই পাহাড়ের চূড়ায় মনোরম এক পাহাড়ি লেকের জন্ম হয়”
তবে প্রকৃত অর্থে বুৎপত্তিগত কারন বিশ্লেষন করতে গিয়ে বাংলাদেশের ভূ-তত্ত্ববিদগণ মনে করেন বগাকাইন হ্রদ (বগা লেক) মূলত মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ। তবে অনেকে ধারনা করেন এটি মহাশূন্য থেকে ছুটে আসা উল্কাপিণ্ডের পতনের ফলেও সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে। কেউ কেউ আবার ভূমিধ্বসের কারণেও এটি সৃষ্টি হতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছেন। তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় যে কোন না কোন প্রাকৃতিক পরিবর্তনের কারনে এই পাহাড় চুড়ায় এমন হ্রদের সৃষ্টি হয়েছে।
(চলবে )
* বানান ভুল ও গুরুচণ্ডালী দোষ মার্জনা করবেন
বাংলার পথে(পর্ব ১৬) -- বান্দরবানের ৬টি স্পট হয়ে জাদিপাই, ক
বাংলার পথে(পর্ব ১৭) -- বান্দরবান টু জাদিপাই, খ
বাংলার পথে(পর্ব ১৮) -- বান্দরবানের ৬টি স্পট হয়ে জাদিপাই, গ