২৬ মার্চ গণআদালতে ঘাতক গোলাম আযমের বিচারের দাবিতে
দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হোন
আগামী ২৬ মার্চ গণআদালতে একাত্তরের ঘাতক বাহিনীর প্রধান, পাকিস্তানী নাগরিক গোলাম আযমের বিচার আজ সমগ্র জাতির দাবিতে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, মুক্তিযোদ্ধা, ছাত্র, যুব, নারী, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বুদ্ধিজীবীদের সমন্বয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটির নামে যে সংগঠন আত্মপ্রকাশ করেছে, তার নেতৃবৃন্দ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি এক সাংবাদিক সম্মেলনে আগামী ২৬ মার্চ গণআদালতে গোলাম আযমের বিচার শুরু করার কথা ঘোষণা করেছেন গত ২১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সমন্বয় কমিটির মঞ্চ থেকে সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা এই কর্মসূচির প্রতি একাত্মতা ঘোষণা এবং সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের অঙ্গীকার করেছেন। দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট, পাঁচদলীয় ঐক্যজোট, ঐক্য প্রক্রিয়া, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটসহ মুক্তিযুুদ্ধের পক্ষের সমূদয় শক্তি ঘাতক গোলাম আযমের বিচারের দাবিতে একমত হয়েছেন। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র ২৬ মার্চের এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য মিটিং, মিছিল, সমাবেশ হচ্ছে এবং গণস্বাক্ষর অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জনগণের এই অর্ভূতপূর্ব জাগরণে ভীত হয়ে জামাতে ইসলামীর চিহ্নিত ঘাতক নেতারা দিশেহারা হয়ে পড়ছে। আমরা বিশ্বস্তসূত্রে জানতে পেরেছি, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে মোকাবেলা এবং গণআদালতে গোলাম আজমের বিচার প্রতিরোধ করার জন্য তারা ভাড়া করে এনেছে একজন ইসরাইলীকে, যে কিনা ‘সন্ত্রাস দমনে’ বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত। এই ইসরাইলী বিশেষজ্ঞ জামাতকে বলেছে, মধ্যপ্রাচ্যে তারা যে কৌশলে নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রেখে শক্তি অর্জন করেছে, জামাতকেও বাংলাদেশের রাজনীতি করতে হলে অনুরূপ কৌশল গ্রহণ করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যে তাদের শক্তির প্রধান উৎস হচ্ছে আরব রাষ্ট্রগুলির অনৈক্য ও বিভেদ। বাংলাদেশে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিসমূহের বিভেদকে ব্যবহার করেই কেবল জামাত তার অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারে। এই বিভেদ টিকিয়ে রাখার জন্য উক্ত ইহুদী বিশেষজ্ঞ জামাত নেতাদের যে পরামর্শ দিয়েছে তা হচ্ছে (১) টাকা দিয়ে বুদ্ধিজীবী ও সংবাদপত্রের মালিক সম্পাদকদের বশীভূত করে তাদের দ্বারা জামাতবিরোধী নেতৃবৃন্দের চরিত্রহনন করা এবং জামাতবিরোধী যাবতীয় কর্মকান্ড সম্পর্কে দেশবাসীকে সন্দিহান করে তোলা। (২) যে সব রাজনৈতিক দল ও গণসংগঠনের লোকবল বেশি, তাদের নেতাদের যতজনকে সম্ভব গোপনে টাকা দিয়ে জামাতবিরোধী কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখা। (৩) জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মওদুদীর গুরু ইমাম ইবনে তাইমিয়ার ধর্ম সংস্কারের পথ থেকে সাময়িকভাবে সরে এসে পীর মুরশিদদের বিরুদ্ধাচারণ থেকে বিরত থেকে তাদের পক্ষে আনার চেষ্টা করা, সম্ভব না হলে তাঁদের নিরপেক্ষ রাখার চেষ্টা করা। এবং (৪) জামাতের পক্ষ থেকে সরকারকে চাপ দিতে হবে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষার প্রয়োজনে একুশ বছরের পুরোনো প্রসঙ্গ তুলে জাতিকে বিভক্ত করার সকল প্রয়াসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য। একই সঙ্গে যে কোন আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ এবং পাল্টা আক্রমণের জন্য জামাত শিবিরের কর্মীদের ‘শহীদ’ হওয়ার মনোভাব নিয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে।
২৬ মার্চ গণআদালতে গোলম আযমের বিচার প্রতিহত করার জন্য জামাতীরা যে সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে কোন কোন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে আমরা তার জন্য সাময়িকভাবে কতটুকু প্রস্তুত আছি। এ বিষয়ে আমরা সুস্পষ্ট ভাষায় বলতে চাইÑ জনগণই হচ্ছে আমাদের শক্তির উৎস। একাত্তরের ২৫শে মার্চ নৃশংস পাক হানাদার বাহিনী যখন নিরস্ত্র, অসহায় বাঙালী জনগোষ্ঠীর উপর হিংস্র হায়নার মত ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তখন অস্ত্র সংগ্রহ করে পাল্টা আক্রমণ চালানোর জন্য আমাদের সময় লেগেছিল চব্বিশ ঘণ্টারও কম। প্রতিপক্ষ যতই সশস্ত্র হোক না কেন, সমগ্র জাতিকে সঙ্গে নিয়ে তাদের উপর আমাদের ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। একাত্তরে আমাদের কোন সামরিক ট্রেনিং ছিল না। বিরানব্বই সালে আমাদের প্রধান শক্তি হচ্ছে একাত্তরে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অমিতসাহসী সেই মুক্তিযোদ্ধারা এবং তরুণ প্রজন্মের সেই শক্তি যারা পতন ঘটিয়েছে স্বৈরাচারী এরশাদের। আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে আমাদের নৈতিক বল। আমরা লড়ছি আমাদের মাতৃভূমিকে ঘাতক, লুটেরা, নারী নির্যাতনকারী এবং নৃশংস ফ্যাসিস্ট শক্তির হাত থেকে মুক্ত করার জন্য।
রাজনৈতিক দলসমূহের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, আসুন আমরা গত বিশ বছরের সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে দেশ ও জাতির বৃহত্তর প্রয়োজনে সাময়িকভাবে দলীয় কর্মসূচি ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ স্থগিত রেখে নিজেদের সমূদয় শক্তি সংহত করি জাতীয় সমন্বয় কমিটির প্ল্যাটফর্মে, যাতে করে আগামী ২৬শে মার্চ গণআদালতে ঘাতক গোলাম আযমের বিচার বিশ্বের ইতিহাসে নুরেমবার্গ ট্রায়াল ও বার্টান্ড রাসেল ট্রাইব্যুনালের মত চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে।
বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সকল মুক্তিযোদ্ধার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছিÑ দলীয় সংকীর্ণতা ও ব্যক্তিগত ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হাই কমান্ডের পতাকাতলে সমবেত হোন। মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ‘ডেমলিশিং এক্সপার্ট’ মুক্তিযোদ্ধারা আগামী ১৫ই মার্চের ভেতর সরাসরি কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। দ্রুত শাখা গঠন করে কেন্দ্রে রিপোর্ট প্রেরণ করুন এবং ২৬ শে মার্চের কর্মসূচি সফল করার জন্য ঢাকা অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।
সরকারের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি, আমাদের আন্দোলন সরকার পরিবর্তনের জন্য নয়; গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে অঙ্গীকার নিয়ে আপনারা ক্ষমতায় এসেছেন সেই গণতন্ত্রকে সংহত ও নিরাপদ করার জন্যই ফ্যাসিস্ট ঘাতকদের বিরুদ্ধে আমাদের এই আন্দোলন পরিচালিত হবে। আপনারা ভালভাবেই জানেন এই ফ্যাসিস্টরা কিভাবে সারা দেশে গৃহযুদ্ধের প্রস্তুতি চালাচ্ছে। আপনাদের গোয়েন্দা বিভাগ নিশ্চয়ই জানে জামাতের ইহুদি পরামর্শদাতা কেন বাংলাদেশে এসেছে। সব কিছু জেনেও যদি এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে দেশ ও জাতিকে গৃহযুদ্ধের অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করেন, তার হাত থেকে আপনারাও রেহাই পাবেন না। একজন মন্ত্রী পত্রিকান্তরে বলেছেন ২৬ শে মার্চ গণআদালতে গোলাম আযমের বিচার করতে দেয়া হবে না। যারা করবে তাদের বিরুদ্ধে নাকি তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্যতম অপরাধে অভিযুক্ত ও বাংলাদেশে বেআইনীভাবে বসবাসরত পাকিস্তানী গোলাম আযমের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে আপনাদের অপরাধের পাল্লা যথেষ্ট ভারি হয়ে গিয়েছে। এরপরও যদি এই ঘাতককে জনতার আদালত থেকে রক্ষা করতে চান কিংবা তাদের জনগণের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে তামাশা দেখেন, আপনাদের জন্য তার পরিণতি হবে খুবই মারাত্মক। আমরা আবারও বলছি ২৫ শে মার্চের ভেতর আপনারা যদি গোলাম আযমকে দেশ থেকে বহিষ্কার না করেন ২৬ শে মার্চ গণআদালতে এই ঘাতকের বিচার কোন শক্তিই রুখতে পারবে না।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৭