বাংলাদেশে রেলওয়ের কার্যক্রম শুরু হয় ব্রিটিশ শাসনামলে, ১৮৬২ সালে। ঊনবিংশ শতাব্দিতে ইংল্যান্ডের বিভিন্ন রেল কোম্পানি ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশে ছোট ছোট রেলপথ সেকশন চালু করতে থাকে। প্রথমদিকে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক কাজের জন্য রেলপথ চালু করা হয়। ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে নামক কোম্পানি প্রথম বাংলাদেশে রেলপথ স্থাপন করে।
বাংলাদেশ রেলপথ সরকারি মালীকানা ও সরকার কর্তৃক পরিচালিত দেশের একটি মুখ্য পরিবহন সংস্থা। মোট ২৫০৮৩ জন নিয়মিত কর্মচারীসহ বাংলাদেশ রেলওয়ের মোট ২৮৭৭.১০ কি:মি: রুট রয়েছে। যেহেতু দেশের এক প্রান্তকে অন্য প্রান্তের সাথে সংযোজন করার জন্য রেলপথ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থল পরিবহন ব্যবস্থা, তাই রেলপথের সার্বিক উন্নতি দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
জুন ২, ১৯৮২ পর্যন্ত একজন চেয়ারম্যান ও চারজন মেম্বারসহ রেলওয়ে বোর্ডের নিকট রেলপথের ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন ন্যস্ত ছিল। তারপর প্রশাসনিক ও কার্যপরিচালনার সুবিধার্থে রেলওয়ে বোর্ডের বিলূপ্তি ৩ জুন ১৯৮২ সালে কার্যকর হয় এবং রেলওয়ে বোর্ডের কার্যক্রম যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের রেলওয়ে ডিভিশনের নিকট ন্যস্ত হয় এবং উক্ত বিভাগের সচিব বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করে। একই উদ্দেশ্যে দুই মহাব্যবস্থাপকের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ রেলওয়েকে পূর্ব ও পশ্চিম দুই অঞ্চলে ভাগ করা হয়। দুই অঞ্চলের দুইজন মহাব্যবস্থাপক বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালকের নিকট দায়বদ্ধ হয়। পরবর্তীতে ১২ আগস্ট ১৯৯৫ সালে রেলপথের দৈনন্দিন কার্যক্রম মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা হয়ে রেলওয়ে প্রফেশনালদের নিয়ে মহাপরিচালকের হাতে ন্যস্ত হয়। নীতি নির্ধারণের জন্য যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে চেয়ারম্যান করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট Bangladesh Railway Authority (BRA) গঠিত হয়। অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও যুগ্ম মহাপরিচালকগণ সমস্ত প্রশাসনিক ও নীতি নির্ধারণের কাজ সম্পন্ন করেন।
দুই জোনের মহাব্যবস্থাপককে সহায়তা করেন বিভিন্ন বিশেষায়িত দপ্তর, যারা কার্য পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার জন্য দায়িত্বশীল থাকেন। প্রত্যেক জোন আবার দুইটি প্রধান কার্য পরিচালনা বিভাগে বিভক্ত। এই বিভাগগুলো বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (DRM) এর অধীনে পরিচালিত হয় এবং সংস্থাপন, পরিবহন, বাণিজ্যিক, অর্থিক, যান্ত্রিক, ওয়ে এন্ড ওয়ার্কস, সংকেত ও টেলিযোগাযোগ, বৈদ্যুতিক, চিকিৎসা, নিরাপত্তা বাহিনীর মত বিভিন্ন বিশেষায়িত দপ্তরের বিভাগীয় কর্মকর্তারা তাকে সহায়তা করে থাকেন। এছাড়াও দুইজন বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (Divisional Superintendent) এর অধীনে পূর্বাঞ্চলের পাহাড়তলী ও পশ্চিমাঞ্চলের সৈয়দপুর কারখানা (Workshop) আছে। অধিকন্তু ব্রড গেজ ও মিটার গেজ লোকোমোটিভের জেনারেল ওভারহলিং এর জন্য পার্বতীপুর চীফ এক্সিকিউটিভের নিয়ন্ত্রণে একটি লোকোমোটিভ কারখানা আছে।
বাংলাদেশ রেলওয়েতে রেক্টরের অধীনে ‘রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমী (RTA)’, প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তার অধীনে ‘পরিকল্পনা কোষ’ (Planning Cell), প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের অধীনে ‘সরঞ্জাম শাখা’ (Stores Department), দুই জোনের হিসাব ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের সমন্বয় ও পরামর্শের জন্য অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অর্থ) এর অধীনে ‘হিসাব বিভাগ’(Accounts Department) আছে।
ট্রেন পরিচালনার সাথে সম্পর্কিত বাংলাদেশ রেলপথের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন এবং রেলপথে পরিবহনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রথমে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পৃথক রেলপথ বিভাগ ও পরে রেলপথ মন্ত্রণালয় গঠন করে।
বাংলাদেশে রেলওয়ের কার্যক্রম শুরু হয় ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে। সে সময় চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা হতে কুষ্টিয়া জেলার জগতী পর্যন্ত ৫৩.১১ কিলোমিটার ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি (১,৬৭৬ মি.মি.) (ব্রডগেজ) লাইন স্থাপিত হয়। এরপর ১৮৮৫ সালের ৪ জানুয়ারি ১৪.৯৮ কিলোমিটার ৩ ফুট ৩৩⁄৮ ইঞ্চি (১,০০০ মি.মি.) (মিটারগেজ) লাইন চালু হয়। ১৮৯১ সালে, ব্রিটিশ সরকারের সহযোগীতায় তত্কালীন বেঙ্গল আসাম রেলওয়ের নির্মাণকাজ শুরু হয়, তবে তা পরবর্তীতে বেঙ্গল আসাম রেলওয়ে কোম্পানি কর্তৃক অধিগৃহীত হয়। ১৮৯৫ সালের ১ জুলাই, চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত ১৪৯,৮৯ কিলোমিটার এবং লাকসাম থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ৫০.৮৯ কিলোমিটার মিটারগেজ লাইনের দুইটি সেকশন চালু করা হয়। উনিবিংশ শতাব্দির মাঝামাঝি এবং শেষ দিকে ইংল্যান্ডে গড়ে ওঠা রেলওয়ে কোম্পানিগুলো এই সেকশনগুলোর নির্মাণকাজের দায়িত্ব নেয়।[২] ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে জানুয়ারী মাসে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথে রেল চলাচল শুরু হয়। ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে জয়দেবপুর অবধি রেলপথ সম্প্রসারণ করা হয়। ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দের ১৫ নভেম্বর কলকাতা থেকে কুষ্টিয়া অবধি রেলপথ চালু করা হয়। সর্ব প্রথম ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড ডালহৌসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পরিচালক পর্ষদের কাছে ভারতবর্ষে রেলওয়ে স্থাপনের জন্য প্রস্তাব পেশ করেন। পরে ১৮৫৩ সালের ১৬ এপ্রিল গেট ইন্ডিয়ার পেনিনসুলার রেলওয়ে নামক কোম্পানি কর্তৃক নির্মিত মুম্বাই থেকে আনা পর্যন্ত ৩৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রেল লাইনটির উদ্বোধন করা হয়। এটিই ছিল ব্রিটিশ ভারতের রেলওয়ের প্রথম যাত্রা। বাংলার প্রথম রেলপথ চালু হয় ১৮৫৪ সালে পশ্চিম বঙ্গের হাওড়া থেকে হুগলি পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার রেলপথের উদ্বোধনের মাধ্যমে। ১৮৭৪ সাল থেকে ১৮৭৯ সালের মধ্যে নর্থ বেঙ্গল স্টেট রেলওয়ে নামে ব্রিটিশ সরকার একটি নতুন ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ মিটারগেজ রেললাইন স্থাপন করে। লাইনটি পদ্মার বাম তীর ঘেঁষে সারা(হার্ডিঞ্জ ব্রিজ) থেকে চিলাহাটি হয়ে হিমালয়ের পাদদেশস্থ ভারতের শিলিগুড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত। কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গ এবং আসামের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের জন্য পদ্মার উপরে সেতু নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়ে। তারই প্রেক্ষাপটে ১৯১৫ সালের ৪ মার্চ দুই লেনবিশিষ্ট হার্ডিঞ্জ ব্রিজ রেল চলাচলের জন্য উদ্বোধন করা হয়। এর ফলে উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে চিলাহাটি হয়ে কলকাতা ও ভারতের অন্যান্য স্থানে মালামাল সরবরাহ ও যাত্রী চলাচল গাড়ি বদল ছাড়াই সম্ভব হয়ে ওঠে। ১৯২০ সালে রেলওয়ে ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত করার লক্ষ্যে ময়মনসিংহ থেকে জগন্নাথগঞ্জ ঘাট পর্যন্ত ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে দ্বারা পরিচালিত ৮৮ কিলোমিটার বেসরকারি রেললাইন রাষ্ট্রীয়করণ করা হয়। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ভারত বিভক্তির পর বেঙ্গল-আসাম রেলওয়ে পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে বিভক্ত হয়ে যায়। পূর্ব বাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তান উত্তরাধিকার সূত্রে পায় ২,৬০৬.৫৯ কি.মি. রেললাইন এবং তা ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে (ইবিআর) নামে পরিচিত হয়। ইবিআর পায় ৫০০ কিলোমিটার ব্রডগেজ এবং ২,১০০ কিলোমিটার মিটারগেজ।বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর এদেশের রেলওয়ের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বাংলাদেশ রেলওয়ে, যা উত্তরাধিকার সূত্রে পায় ২,৮৫৮.৭৩ কিলোমিটার রেলপথ ও ৪৬৬টি স্টেশন। ৩ জুন ১৯৮২ সাল, রেলওয়ে বোর্ড বিলুপ্ত হয়ে এর কার্যক্রম যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের রেলওয়ে বিভাগের ওপর ন্যস্ত করা হয় এবং বিভাগের সচিব ডিরেক্টর জেনারেল পদপ্রাপ্ত হন। ১২ আগস্ট ১৯৯৫ সাল, বাংলাদেশ রেলওয়ের নীতিগত পরামর্শ দানের জন্য ৯ সদস্যবিশিষ্ট বাংলাদেশ রেলওয়ে অথরিটি (BRA) গঠন করা হয় এবং এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু সেতু উন্মুক্তকরণের ফলে জামতৈল থেকে ইব্রাহিমাবাদ ব্রডগেজ রেলপথের মাধ্যমে পূর্ব-পশ্চিম রেল যোগাযোগ শুরু হয় ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন থেকে। সর্বশেষ ১৪ এপ্রিল ২০০৮ তারিখে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন চালুর ফলে ঢাকা এবং কলকাতার মধ্যে সরাসরি রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়।
Corruption On Bangladesh Railway
বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিম রাজশাহীর চীফ কমার্শিয়াল অফিসের সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এ,ও) মোত্তালেব হোসেন এর দূর্নীতির অজানা অনেক তথ্য প্রকাশ হয়ে পড়েছে। রেলওয়েতে চাকুরী করে তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। এমন দূর্নীতি ঠেকাতে তার গ্রামের বাড়ি সহ পশ্চিম রেলওয়ের বিভিন্ন স্থানে গড়ে তুলেছেন সন্ত্রাসী বাহিনী বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মোত্তালেব হোসেনের দূর্নীতির প্রকৃত উম্মোচনে সরেজমিনে তার দেশের বাড়ি বগুড়া জেলার হলিদা বাঘা গ্রামে গেলে তার সন্ত্রাসী বাহিনীর তান্ডব ও তার দূর্নীতি করে অগাধ সম্পত্তির মালিক বনে যাওয়ার তথ্য বেড়িয়ে আসে। রাজশাহী থেকে বাস যোগে বগুড়া রেলষ্টেশনে পৌছে মোত্তালেবের বাড়ির ঠিকানা বগুড়া ষ্টেশন মাষ্টারের কাছে জানতে চাওয়া মাত্র আমাদের অনুসন্ধানী দলটিকে ঘিরে ধরে ষ্টেশনে পোটার পয়েন্ট ম্যান সহ ইন্সপেক্টার নুরুল ইসলাম। তারা জানতে চাই মোত্তালেবের বাড়ি খোঁজার কারণ। আমরা মোত্তালেবের দূর্নীতির অনুসন্ধানে এসেছি জেনে আমাদের আদর সম্মানের সাথে বগুড়া ষ্টেশন সুপারেন্টেন্ডেন্ট এর রুমে বসিয়ে একে একে উপস্থিত ৮/১০ জন রেলের কর্মচারী বর্ণনা করেন মোত্তালেবের দূর্নীতি ও সন্ত্রাসী বাহিনী তান্ডবের কাহিনী।
বগুড়া রেলষ্টেশনের ষ্টেশন মাষ্টার ও ষ্টেশন ভারপ্রাপ্ত এস,এস বলেন, মোত্তালেব এক ধুরন্ধর ও চতুর প্রকৃতির মানুষ। অর্থ আয়ের জন্য এমন কোন কাজ নেই যা সে করতে পারেনা। রেলওয়ের লালমনিরহাট বোনার পাড়া সেকশনে সান্তাহার থেকে লালমনিরহাট এর মধ্যে চলাচলকারী আপ-ডাউনকারী বেসরকারী খাতে চলাচলকারী ২৬ টি ষ্টেশনের মধ্যে ৬ টি ট্রেন চলাচল করে। মোত্তালেব চীফ কমার্শিয়াল রাজশাহী অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত থাকার সুবাদে প্রতি ষ্টেশনের ট্রেনের টিকিট বিক্রয় বাবদ ১০% টাকা হিসেবে কমিশন নিয়ে থাকেন। এই কমিশন থেকে প্রতি মাসে অর্ধলক্ষ টাকা আয় করেন।
এছাড়া চাঁপাই নবাবগঞ্জ থেকে খুলনা গামী মহানন্দা এক্সপ্রেস রাজশাহী থেকে সিরাজগঞ্জ হয়ে জয়দেবপুর গামী মেইল ট্রেনের প্রতি ষ্টেশন থেকে ৮% এবং পশ্চিম রেলের মধ্যে জয়দেবপুর পর্যন্ত চলাচলকারী বে-সরকারী খাতে চলাচলকারী প্রতি ট্রেন থেকে মোত্তালেব প্রতিমাসে প্রায় ৫০ লক্ষাধিক টাকা অবৈধভাবে আয় করে আসছেন। এছাড়া পশ্চিমাঞ্চল রেলের বিভিন্ন ষ্টেশনে মোত্তালেব নামে বে-নামে জায়গা দখল করে ধান চাষ, দোকান ঘর বরাদ্ধ, গোদাউন ঘর নির্মান করে ভাড়া দিয়ে প্রতিমাসে আয় করেন প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা।
বগুড়া রেল ষ্টেশনের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর এ,কে,এম নুরুল আলম জানায়, মোত্তালেব রেলওয়ে পশ্চিম জোনের প্রধান বানিজ্যিক কর্মকর্তার অফিসের সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা হওয়ার সুবাদে ক্ষমতার অপ-ব্যবহার করে বগুড়া রেল ষ্টেশনের পূর্ব প্রান্তে রেলের জায়গায় ১০ কাঠা জমি দখল করে গুদাম ঘর তৈরী করে সেই গুদাম ঘর রেলওয়ের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ৩০ লক্ষ টাকায় বিক্রয় করে দেয়। এছাড়া বগুড়া ষ্টেশনের প্লাট ফরমের উপরে তার স্ত্রীর নামে একটি পানের দোকান নিয়ে দোকানটি ভাড়া খাটাচ্ছে। ট্রাফিক ইন্সপেক্টর একেএম নুরুল আলম মোত্তালেবের সন্ত্রাসী বাহিনীর লোম হর্ষক কাহিনী বলতে গিয়ে বাকরূদ্ধ হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, মোত্তালেবের বাড়ী বগুড়া রেল ষ্টেশন সংলগ্ন হালিদা বাঘা গ্রামে। উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের নির্দেশে তিনি ভেলুর পাড়া রেল ষ্টেশনে অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদে গেলে সেখানে মোত্তালেবের ২ টি অবৈধ দোকান উচ্ছেদের সময় মোত্তালেব তাকে মোবাইলে হুমকী দেয় এবং তৎক্ষনাত তার নির্দেশে তার পেটুয়া বাহিনীর লোকজন তাকে শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত করে। কোন মতে বোনার পাড়া গামী একটি ট্রেনে প্রান ভয়ে উঠে পড়লে তার সন্ত্রাসী বাহিনী ট্রেন আটকিয়ে তাকে লাঞ্চিত করার সময় ট্রেনটি ছেড়ে দিলে তিনি প্রানে রক্ষা পান। তিনি বোলার পাড়া গিয়ে বোনার পাড়া রেলওয়ে জিআর থানায় মোত্তালেবের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডাইরি করেন।
সাংবাদিকেরা মোত্তালেবের দূর্নীতির সরেজমিনে জানতে এসেছে খবর পেয়ে তার সহোদর বড় ভাই বগুড়া রেলষ্টেশনের ষ্টেট অফিসের আমিন পদে মোকাররম হোসেন ছুটে এসে জানায় মোত্তালেবের অজানা আরো অনেক দূর্নীতির কথা। মোত্তালেবের ভাই মোকাররম জানায়, অর্থের জন্য মোত্তালেব আপন ভাই ও ভাবীকে চেনেনা। এমনকী ভাবীর সম্পত্তি আত্মসাতে কুন্ঠাবোধ করেনি মোত্তালেব। তিনি জানান, তার বড় ভাই অবসরপ্রাপ্ত ঢাকায় থাকেন। সে ভাইযের দুই স্ত্রী, বড় স্ত্রীর নাম মনোয়ারা বেগম এবং ছোট স্ত্রীর নাম সালমা বেগম। সুচতুর মোত্তালেব ছোট ভাবীর সাথে সম্পর্ক করে বড় ভাবী মনোয়ারা বেগমের সম্পত্তি জাল দলিল করে লিখে নিয়েছে।
এ বিষয়ে মনোয়ারা বেগম আদালতে ৪ টি মামলা দ্বায়ের করেন। মামলাগুলো হচ্ছে, জি,আর ১২৫/০৯/সোনা/মামলা নং ১৩৮ সি/০৯ সোনা / তারিখ ২৫/০৬/০৯ মোত্তালেবের বড় ভাই মোকাররম আরো জানায় পিতার পৈত্রিক সম্পত্তি ১ বিঘা করে জমি ভাগ পেলেও মোত্তালেব দেশের বাড়ীতে চাকুরী করে ১০ বিঘা ধানী জমি, ২ বিঘার ২ টি পুকুর এবং কোটি টাকা দিয়ে ১ টি ইট ভাটা করেছে। এছাড়া বগুড়া শহরের জামিল নগর এলাকায় তার স্ত্রীর নামে ২৫ কাঠা জমি ক্রয় করেছে যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা।
মোত্তালেবের বড় ভাবী মনোয়ারা বেগম ও তার বড় ভাই মোকাররম জানায়, মোত্তালেব শুধু অর্থ লোভী নয় নারী লোভী লম্পটও। ১৯৮৫ সালের দিকে মোত্তালেবের এমএলএস হিসেবে চট্টগ্রাম পাহার তলীতে যোগদান করে। সেখানে সোনালী পারভীন নামের এক মেয়েকে প্রলোভন দিয়ে দৌহিক মেলামেশার ফলে সোনালী গর্ভবতী হয়ে পড়ে। বিষয়টি প্রকাশ হয়ে পড়লে দেড় লক্ষ টাকা দিয়ে বিষয়টি মিমাংশা করা হয়। এরপর তাকে রাজশাহী বদলী করা হয়। ১৯৯৩ সালে রাজশাহীতে প্রধান বানিজ্যিক কর্মকর্তা অফিসে যোগদান করে এবং অদ্যবধি প্রায় ২৫ বছর ধরে একই অফিসে কর্মরত আছেন।
মোত্তালেবের অফিস গিয়ে সাক্ষাতে তার বিরূদ্ধে উত্থাপিত দূর্নীতি ও নারী কেলেংকারী বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বড় বড় অফিসাররা রাঘব বোয়াল শিকার করে আর আমিতো চুনোপুটি। তবে তার জমি জমা বিষয়ে জানান, এগুলো তার স্ত্রী জহুরা বেগমের। তার স্ত্রী ব্যবসা করে এই সব সম্পত্তি করেছেন। বে-সরকারী ট্রেনের টিকিট থেকে ৮% কমিশনের বিষয়টি তিনি সুকৌশলে এড়িয়ে যান এবং নারী কেলেংকারীর বিষয়টি অস্বীকার করেন।
রেলওয়ে পশ্চিম রাজশাহীর অনেক রেল কর্মচারী জানান, মোত্তালেব খুব ধুরন্ধর প্রকৃতির লোক। যে দল ক্ষমতায় থাকে সে সেই দলের চামচাগিরী করে ফায়দা লুটে। মোত্তালেব ৪ দলীয় জোট সরকারের সমর্থনকারী এবং গত ১৯৯৭ সালে রেলওয়ে পশ্চিম আর বি আর শাখার যুগ্ন সম্পাদক থাকলেও বর্তমানে তিনি নিজেকে শ্রমিক লীগের লোক বলে পরিচয় দিয়ে আসছে। দলীয় পরিচয় দিয়ে বিএনপি জোট সরকারের আমলে রেলওয়ের নিয়োগ বানিজ্য করে কয়েক কোটি টাকা নিয়োগ বানিজ্য করে। বাংলাদেশ রেলওয়ের আইন অনুযায়ী কোন কর্মচারী একই স্থানে ৩ বছরের অধিক থাকার নিয়ম না থাকলেও অর্থের দাপটে একই জায়গায় ২৫ বছর ধরে চাকুরী করে আসছে। মোত্তালেবের দূর্নীতির বিষয়টি উর্দ্ধতন অনেক কর্মকর্তা জানলেও অজ্ঞাত ইশারায় উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা। সচেতন মহলের দাবী, যথাযথ তদন্ত পূর্বক অতি শিঘ্রই এই দূর্নীতিবাজ মোত্তালেবকে চাকুরী থেকে বহিষ্কার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হোক।
রেলে নিয়োগ-বাণিজ্য - প্রথম আলো ঢাকা, রোববার, ৩১ মার্চ ২০১৩, ১৭ চৈত্র ১৪১৯, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৩৪ রেলে নিয়োগ-বাণিজ্য জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন রেলে নিয়োগ-বাণিজ্য | তারিখ: ১২-০৯-২০১২ পরের সংবাদ» কোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রেই যদি দুর্নীতি হয়, তবে সেই প্রতিষ্ঠান যে দুর্নীতিগ্রস্তদের আখড়ায় পরিণত হবে, তাতে সন্দেহ নেই। বাংলাদেশ রেলওয়ে সে পথেই হাঁটছে। এমনিতেই বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতির অভিযোগের অন্ত নেই। এখন ঘুষ-বাণিজ্যের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া আরও হাজার খানেক কর্মী যোগ হবেন এই প্রতিষ্ঠানে। দুর্নীতি না করলে নতুন নিয়োগ পাওয়া এই কর্মীরা চাকরির জন্য দেওয়া ঘুষের টাকা তুলবেন কীভাবে! কী ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে এই প্রতিষ্ঠানের সামনে! দুর্নীতি দমন কমিশনের দুদক তদন্তে এটা পরিষ্কার হয়েছে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ছয় বিভাগে এক হাজার ৬৯টি পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে অবৈধ বাণিজ্য হয়েছে। এর সঙ্গে যেমন রেলওয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন খাতা মূল্যায়নকারী কয়েকজন শিক্ষকও। নিয়োগ নিয়ে যে বাণিজ্য হয়েছে, তা বাংলাদেশ রেলওয়ে ও রেল মন্ত্রণালয়ের আলাদা তদন্তেও নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিয়োগের ক্ষেত্রে ঘুষ-দুর্নীতির প্রমাণ মিললেও তা বাতিল করা হচ্ছে না কেন—এ ধরনের প্রশ্নের জবাবে রেলওয়ের মহাপরিচালক যা বললেন, তা স্রেফ দায়িত্বহীনতা ছাড়া কিছু নয়। যদি এ বিষয়ে তাঁর কিছু না জানা থাকে, তিনি রেলওয়ের এই দায়িত্বশীল পদে রয়েছেন কেন? জনগণের টাকায় বেতন-ভাতা নিচ্ছেন কেন? বিভিন্ন পদে যে নিয়োগ হয়েছে, তার মধ্যে ট্রেড অ্যাপ্রেন্টিস পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৩৬৯ জনকে। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, এই পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রার্থীপ্রতি চার লাখ থেকে সাত লাখ টাকা ঘুষ নেওয়া হয়েছে। পুরো প্রক্রিয়ায় কী পরিমাণ ঘুষের লেনদেন হয়েছে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। বস্তাভর্তি লাখ সত্তর টাকা নিয়ে রেলমন্ত্রীর এপিএস, এক মহাব্যবস্থাপক ও রেল পুলিশের কমান্ড্যান্ট ধরা পড়ার ঘটনায় শেষ পর্যন্ত মন্ত্রীকে সরে যেতে হয়েছে। সে সময়ই অভিযোগ উঠেছিল, নিয়োগ-বাণিজ্য থেকে পাওয়া অর্থই উদ্ধার হয়েছিল গাড়ি থেকে। দুদক, রেলওয়ে ও মন্ত্রণালয়ের তদন্তে নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ায় শুরুতেই যে কাজটি করা প্রয়োজন, তা হচ্ছে এই প্রক্রিয়ায় নিয়োগপ্রাপ্তদের নিয়োগ বাতিল করা এবং এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া। এ ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণের কোনো সুযোগ নেই। কারণ, ঘুষ দিয়ে বা দুর্নীতির মাধ্যমে যাঁরা নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁরা কোনোভাবেই বৈধ হতে পারেন না। দুদক সূত্রে জানা গেছে, নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির ব্যাপারে তারা শিগগিরই মামলা করতে যাচ্ছে এবং রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ২৫ জনসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা আশা করব, দুদক সর্বোচ্চ সক্রিয় হয়ে মামলাটি পরিচালনা করবে এবং রেলওয়ের এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করবে। এ ধরনের দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করাও আমাদের দেশ ও সমাজের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে। পাঠকের মন্তব্য পাঠকদের নির্বাচিত মন্তব্য প্রতি সোমবার প্রথম আলোর সম্পাদকীয় পাতায় প্রকাশিত হচ্ছে। Twohedul Azam ২০১২.০৯.১২ ০৩:৩৪ Further to your comment about 70 lakhs taka being rescued from the car of Rail Ministers APS, I would like to know what happened to the driver Azam of that car, now I do not see any follow up news about that. I think it is important that we find out about Azam becuase he can give us important information about high level corruption in rail ministry. It is a mystery why Azam never came to media . If Azam is lost then who has kidnapped him? How powerful are they? Please give us some follow up reports on this. shihab ahmed ২০১২.০৯.১২ ০৪:১৩ সুশাসনের অভাবে আওয়ামী লীগের দিন বদলের স্বপ্ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন ভেস্তে গেছে। গত তিন বছরের অপশাসনে দেশ আজ রসাতলে যেতে বসেছে।পদ্মা ব্রীজ দুর্নীতি থেকে শুরু করে অতি সম্প্রতি সোনালী ব্যাংক ও রেলওয়েতে নিয়োগ বাণিজ্যের দুর্নীতি - একের পর এক কেলেঙ্কারী আওয়ামীলীগের ভাবমূর্তিকে বিনষ্ট করছে। এখনই সচেতন না হলে আগামী নির্বাচনে আওয়ামীলীগের জন্য নিশ্চিত এক করুণ পরিণতি বয়ে আনবে। Mahtaf Hossain ২০১২.০৯.১২ ০৭:১২ ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ-প্রাপ্ত সকলকে চাকরি থেকে terminate করে নতুন স্বচ্ছ্ব নির্বাচনী পরীক্ষার মাধ্যমে রেলের লোকবল নিয়োগ দিতে হবে এবং এ প্রক্রিয়াটা মামলা করার আগেই করতে হবে, কেননা মামলা করা হলে তখন মামলার রায়ের অজুহাত দিয়ে এ-সব অবৈধ নিয়োগকে প্রলম্বিত করার পায়াতারা করা হবে। Abdul Salam ২০১২.০৯.১২ ১০:১৮ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যারা দূর্নীতিতে জড়িত তাদের এমন শাস্তি দিন যাতে যাতে ভবিষ্যত সোনার বাংলা গড়তে আর কেউ বাধা হয়ে দাড়াতে না পারে। Mofassel Uddin Ahmed ২০১২.০৯.১২ ১১:৫৪ এমন নির্লজ্জ দূর্নীতি করলে একসময় একদল জনগন একমত হবে যে তারেক জিয়া খুব বেশী খারাপ ছিলেন না। তিনি দূর্নীতি করলেও প্রিয় নেতার সন্তান হিসেবে তার পকেটে কিছু টাকা এসেছে, মন্দ কি? আওয়ামী মহাজনেরা যেভাবে সার্বজনিন দূর্নীতি করছে তাতে কার আম কার ছালায় যাচ্ছে কে জানে। Farhan ২০১২.০৯.১২ ১১:৫৯ আমি বলে দিচ্ছি কি হবে!!! রেলওয়ের কিছু লোক বলির পাঁঠা হয়ে চাকুরী হারাবে। যারা অপেক্ষাকৃত ছোট চাকুরীজীবী শুধু তারা এই পরিস্থিতির শিকার হবে। অবশ্য তাদের কোন জেল জরিমানা হবে না। যারা রাঘব বোয়াল চাকুরীজীবী তাদের কিচ্ছু হবে না। Masudur ২০১২.০৯.১২ ১২:০৮ যারা ঘুষের বিনিময়ে চাকরী পেয়েছে, তাদের নিয়োগকে অবশ্যই বাতিল করতে হবে। কিন্তু আমার প্রশ্ন যারা ঐ ঘুষের টাকা নিয়েছে তাদের কাছথেকে কি ঘুষের টাকাগুলি আদায় করে যারা ঘুষ দিয়েছিল তাদেরকে ফেরত দেওয়া হবে কি না? এই দায়িত্বটা যদি সরকার না নেয় তাহলে তো বেচারাদের আম ও ছালা দুটিই গেল। যদিও তাদের আম ও ছালা দুটিই যাওয়া উচিৎ। Khan Motiur Rahman ২০১২.০৯.১২ ১২:১৯ corruption in recruitment is not a new issue... we, the applicant of the posts know it . But we cant derive from applying for the post. Because , we r helpless. We need job for food. we just act in comedy.. Masudur ২০১২.০৯.১২ ১২:৪৪ কখনই আমি আমার পূর্ণ কমেন্ট দেখতে পাই না। আমার পরের অংশটুকু ছিল যারা ঘুষের টাকা নিয়েছে তাদেরকি কি লঘু শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দিলে তো তারা আম ঠিকই খেতে পারবে কারন যারা ঘুষ দিয়েছে তাদের এমন কোন খুটির শক্তি নেই যে ঘুষের টাকা আদায় করবে। "
রেলে নিয়োগ-বাণিজ্য
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৩৩