somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পদ্মার বুক : পদ্মা রিসোর্ট, লৌহজং, মুন্সিগঞ্জ

০২ রা আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ জুলাই ২০১৬, Finance & Banking (2004-05), Tejgaon college, Dhaka. বিভাগের ইফতার পার্টি ছিল। ইফতার পার্টি শেষে আমার বন্ধু রবিণ আমাকে জানায় আমি যাতে একদিনের জন্য ঢাকার আশে পাশে ঘুড়তে যাবার প্রস্তাব রাখি। কথা মতো আমি প্রস্তাবটি তুলি এবং উপস্থিত সকলে যাবার কথায় রাজি হয়। আমারা জানাই কোথায় এবং কখন যাবো তা জানিয়ে দেওয়া হবে পরে।
গত ১৯ জুলাই ২০১৬ আমি রবিণ, আজম, সোহাগ, শিপলু এবং শুভর সাথে কথা বলে ঠিক করি আমরা যমুনা রিসোর্ট-এ যাবো। আমি আমার মোবাইল ফোন থেকে আমার আছে থাকা ৬০ জনকে বন্ধুকে মেসেজ এর মাধ্যামে তা জানাইয়ে দেয়।


কিন্তু পর দিন যমুনা রিসোর্ট-এ যোগাযোগ করে যানা যায় যে গত দেড় বছর ধরে এটি বন্ধ। সাথে সাথে আমি রবিণ, আজম, সোহাগ, শিপলু এবং শুভর সাথে যোগাযোগ করে স্থান পরিবর্তন করি। ঠিক করি পদ্মা রিসোর্ট যাবো। এরপর রিসোর্ট সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্যর জন্য ইন্টারনেটে বসে যায়।
সকল তথ্য নিয়ে গত ২২ জুলাই ২০১৬ বিকালে হঠাৎ আমি রবিণ, আজম, সোহাগ, শিপলু এবং শুভকে আমাদের এলাকায় ডাকি। সকলে সন্ধ্যা ৮টা নাগাদ মিটিং শুরু করি। প্রথমে খরচ নির্ধারণ করি মোট কত টাকা লাগবে। আমাদের সর্বমোট ২০ জনের জন্য ২৯০০০ টাকা নির্ধারণ করি। আমাদের জন প্রতি ১৩৫০ টাকা। এরপর শুভকে দায়িত্ব প্রদান করা হয় পরদিন মহাখালী ডিওএইচএস পদ্মা রিসোর্ট-এর ঢাকা অফিসে যাবার জন্য। যা শুভর অফিসের কাছে।
এর পর আবার মেসেজ এর মাধ্যামে সকলকে জানিয়ে দেয়। এবং শুভ পরদিন অফিসে যোগাযোগ করে। বিস্তারিত খবরা খবর নিয়ে আসে। আমাকে ফোনে বিস্তারিত যানাই।
এরপর সন্ধ্যায় আমি রবিণ, আজম, সোহাগ, শিপলু এবং শুভর সাথে মিটিং করি।


ঢাকা থেকে পদ্মা রিসোর্টের দূরত্ব ৫০ কিমি. সাথে গাড়ি থাকলে যেতে সময় লাগবে ২ ঘন্টার মতো। পদ্মা রিসোর্ট গড়ে উঠেছে মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার লৌহজং থানার নিকটবর্তী পদ্মা নদীর বুকে জেগে উঠা চরে।
আমাদের এবারের যাত্রা ছিল মাওয়া - পদ্মা রিসোর্ট। আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা ৬.৩০ মিনিটে থাকলেও সোহাগ এর অপচেষ্টায় আর আমাদের ড্রাইভার ভাইয়ের কল্যাণে সেটা শুরু হয় বেলা ৭ টায়।
২৯ জুলাই ২০১৬ যাত্রা শুরু করলাম সকাল ৭টায় মিরপুর লালকুটি বাজার থেকে আমি, সোহাগ, শিপলু এবং আমার বউ।


যাত্রার শুরুতে সোহাগ বলল গাড়ি ট্যাকনিকেল হয়ে যেতে হবে। শিপলু বলল কেনো? বলল ২টা টিউব রাখা আছে মোহনা পাম্পে। সেখান থেকে নিতে হবে। আমরা মাজার রোড় হয়ে ট্যাকনিকেল গিয়ে টিউব ২টি গাড়িতে তুলি।
এরপর তুলা শুরু হলো -- মিরপুর ১ সনি হলের সামনে থেকে শুভকে গাড়িতে তুলাম। মিরপুর -১০ শাহ আলী প্লাজা সামনে থেকে উঠলো--- রবিণ, আজম, মিলন, রাসেল, রাসেলের বউ এবং রাসেলের ছেলে। বিজয় স্বরণীর মোড় থেকে উঠলো আনিক ও আনিকের বউ। ফার্মগেট খামার বাড়ি মোড়ে গিয়ে ১ ঘন্টা ব্রেক কারণ মিজান মিজানের বউ এবং হারিস হারিসের বউ এছে পৌছায় নাই। এর মধ্যে হিরণ আমাদের মাঝে এসে পরে। এরপর মিজান মিজানের বউ আসার পর মিজানকে উত্তম মধ্ম দেয়া হলো।


একই ভাবে সাড়ে ৮টায় হারিস ও হারিসের বউ আমাদের মাঝে পৌছালো। একই ভাবে তাকেও উত্তম মধ্ম দেয়া হলো।


যাওয়ার পথে আপনাকে এক জায়গায় মোট ১৬০ টাকা টোল দিতে হবে। পদ্মার অপলক সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য বর্ষার বিকল্প নাই আর সেজন্যই পদ্মা রিসোর্টে এই সময়ে ভিড় থাকে সবচেয়ে বেশী। তাই সরকারী ছুটির দিনে যাবার আগে অবশ্যই আগে থেকে কটেজ বুক করে যেতে হবে। বর্ষার মৌসুমে সরকারী ছুটির দিন ছাড়া অথবা অন্য কোন মৌসুমে কটেজ বুক ছাড়াই আপনি যেতে পারবেন পদ্মা রিসোর্টে।
লৌহজং থানার পাশের মসজিদ ঘাটে গিয়ে দেখতে পারবেন সেখানে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে ২-৩ টি ইঞ্জিন চালিত নৌকা পৌঁছে দিয়ে ওপারের রিসোর্ট এ।
রিসোর্টে গিয়ে তাদের অফিস কাজ শেষ করে আমাদের বুকিং দেওয়া ২ রুম দেয়া জোষ্ঠ্য ও আশ্বার।


সকাল ১০ থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সারাদিন বাবদ কটেজ ভাড়া ২৩০০টাকা (২০০০টাকা + ১৫%ভ্যাট) ৮জন করে আর রাতের জন্য ৩৪৫০ টাকা (৩০০০টাকা + ১৫%ভ্যাট)। প্রতিটি কটেজে থাকতে পারবেন ৪জন করে। প্রতিটি কটেজ সাজানো সুন্দর আসবাবপত্র দিয়ে৷ ঘরের চাল সুন্দরী পাতা দিয়ে তৈরি ৷ দেয়াল ও অন্যান্য জায়গায় বাঁশ ও তাল গাছের কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে ৷ ডুপ্লেক্স এই কটেজের নিচ তলায় আছে এক সেট সোফা ও টেবিল এবং একটি সিঙ্গেল বেড, দেড় তলায় অত্যাধুনিক ফিটিংসহ (কমোড, বেসিন, লুকিং গ্লাস, শাওয়ার) ইত্যাদি দিয়ে তৈরি বাথরুম আর বসার জন্য সুবিশাল বারান্দা, ২য় তলায় পাবেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সাজানো ২টি সিঙ্গেল বেড, মধ্যখানে সেন্টার টেবিল, ওয়ারড্রোব, লাইট, ফ্যান ইত্যাদি।


রুমে উঠেই হাত মুখ ধুয়ে খাওয়ার কথা মনে হতে পারে। চিন্তা নেই, পদ্মা রিসোর্টের সু-সজ্জিত রেস্টুরেন্ট যা ২০টি টেবিল চেয়ার দিয়ে সাজানো সেখানে আপনি ২০০ জন লোক নিয়ে লাঞ্চ বা ডিনারসহ যেকোন পার্টি আয়োজন করতে পারেন। রেস্টুরেন্টে যাবার আগে আপনাকে রিসোর্ট অফিস থেকে জনপ্রতি ৪৫০টাকা দিয়ে ফুড টোকেন সংগ্রহ করতে হবে। দুপুরের খাবার মেনুতে থাকছে ভাত, ডাল, ইলিশ ফ্রাই (১ পিস), মুরগীর মাংস (বড় ১ পিস), সবজি, সালাত।


আপনি রাবার বোটে ঘুরতে পারেন রিসোর্টের সীমানায়। নদীর শীতল পানিতে গোসল করতে পারেন অথবা স্পিডবোট (প্রতি ঘন্টা ২৫০০ টাকা + ১৫% ভ্যাট), সাম্পান নৌকা (প্রতি ঘন্টা ১২০০ টাকা + ১৫% ভ্যাট) অথবা ট্রলার (প্রতি ঘন্টা ৬০০ টাকা + ১৫% ভ্যাট) করে ঘুরতে পারেন পদ্মা নদী আর উপভোগ করতে পারেন পদ্মার অপার সৌদর্য্য

[img|http://s3.amazonaws.com/somewherein/pictures/Rubel1987/Rubel1987-1470275067-e929034_xlarge.jpg
এটি একটি চড় আর এখন বর্ষাকাল তাই চড়ে পানি এসেছে। এই দৃশ্য দেখে আমিতো মহা খুশি কেননা আমাকে গোসল নিয়ে আর ভাবতে হবে না আমরা রিসোর্টের উঠোনেই গোসল সারতে পারব। আমার মতো আরও কয়েকজনই ছিল যারা সাতার পারত না তারা সবাই খুশি। যাইহোক, ছেলেদের জন্য একটি কটেজ আর মেয়েদের জন্য একটি কটেজ নির্ধারিত হল। সবাই কটেজে উঠেই শুরু করে দিলাম ফতসেশন। ছবি তুলে, ড্রেস চেঞ্জ করেই নেমে পড়লাম পানিতে। শুরু হয়ে গেলো ঝাপাঝাপি, গোলাপকে নিয়ে মাতামাতি। আমাদের মাতামাতির শব্দ শুনে আশেপাশের কটেজ এর বাসিন্দারাও বাইরে বেরিয়ে এলেন আমাদের কাণ্ড দেখতে। বেশ কিছুক্ষণ ডুবাডুবি করে কটেজে গিয়ে গোসল করে, কটেজের দেয়া খাবার টোকেন নিয়ে গেলাম তাদের রেস্টুরেন্টে, পেট ভরে খেয়ে ফিরে আসলাম কটেজে একটু রেস্ট নিতে। আর রেস্ট গোলাপ যেখানে সফর সঙ্গী সেখানে কোনভাবেই রেস্ট হয় না। বাকিটা সবাই কষ্ট করে বুঝে নেন।

বিকাল ৫ টার দিকে সবাই ব্যাগ গুছিয়ে রওনা হলাম মাওয়া ফেরি ঘাটের দিকে। উদ্দেশ্য কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাড়ীর দিকে রওনা দেয়া। ১০ মিনিটেই পৌঁছে গেলাম মাওয়া ঘাট, ঘুরা-ফিরা, আড্ডা আর কিছু কেনাকাটা শেষ করে আমরা রওনা দেই বাড়ীর দিকে। মাঝে আরও একবার চায়ের বিরতি নিয়েছিলাম। ঢাকার ভিতরে ঢোকার সাথে সাথেই মনটা বিষণ্ণ হতে থাকে। সারাটা জীবন যদি এমন হতো! প্রতিটা দিন যদি এভাবেই বন্ধুদের সাথে থাকা যেত! যাইহোক, জীবনে টিকে থাকতে হলে কাজে ফিরতেই হবে এর মাঝেই বের করে নিতে হবে অমূল্য কিছু সময়ের। হয়তো আবারও আমরা সবাই একসাথে সেই সময় বের করে নিতে পারব... এই অপেক্ষায়।

সুন্দর গল্পের পিছনে যেমন একজন বিখ্যাত লেখক থাকেন তেমনি আমাদের এই ট্যুরের পিছনের কারিগরদের কৃতজ্ঞতা না জানালে খুবই অন্যায় হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৮:৩২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×