ভয় (অনিলিখিতি হরর কাহিনি)-১ম পর্ব ১ম পর্ব
ভয় (অনুলিখিত হরর কাহিনি)-২য় পর্ব ২য় পর্ব
২য় পর্বের পর থেকে...
বাসার কাছে এসে দেখি গোটা এলাকায় ইলেকট্রিসিটি নাই।আমাদের এই এলাকায় আবার গ্রাম গ্রাম ভাব।ঝড় বৃষ্টি হলেই লাইন অফ থাকে।পরে লাইন আসতে দেরি হয়।তাই আমরা ডজন ধরে মোমবাতি কিনে রাখি।
অন্ধকারের মধ্যে কফিন ধরে দোতালায় তুলি।আর কোন ভাড়াটে না থাকায় অহেতুক প্রশ্নের হাত থেকে বেচে গেছি।
রুমে ঢুকে হাসান মোমবাতি ধরাতে ধরাতে বললো "বৃষ্টির সাথে সাথে ঝড় বাড়ছে।আজ আর কারেন্ট আসবে না"
"মোমের আলোয় স্যুটিং করবি নাকি?"
হাসান উত্তেজিত গলায় বললো ""সেইটাই একসেলেন্ট হবে।মোমের আলোয় পরিবেশ আরো ভয়ংকর মনে হবে।"
"আজ তো আর খাওয়া হবে না।তুই সব যন্ত্রপাতি বের কর।আমি হাত মুখ ধুয়ে আসি।আর মাংসের টুকরা যে করবি চাপাতি এনেছিস?"
হাসান মৃদু গলায় বললো "সব টেবিলের নিচে রাখা আছে।একদম নতুন !!"
বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখি হাসান সব রেডি করে রেখেছে।টেবিলের উপর সাদা কাপড়ে মোড়া লাশের পাশে লাল রংঙের মোমবাতি জলছে।আমি কালো পা দুটোর দিকে তাকিয়ে তোয়ালে দিয়ে হাত মুছতে মুছতে বললাম "শুধু পায়ের কাছে খুললি কেন?পুরো চাদরটাই সরিয়ে ফেল।"
"এখন পুরা চাদর সরানো যাবে না।পুরা লাশটারই ছাল ছাড়াব আমরা কিন্তু আস্তে আস্তে।পা থেকে ছিলতে ছিলতে মাথা পর্যন্ত উঠবো।প্রথমেই চাদর সরিয়ে ফেললে দর্শক মজা না পেয়ে উল্টা ভয় পেতে পারে।"
আমি শক্ত হয়ে যাওয়া পায়ে হাত দিয়ে বললাম "ঠিক আছে।এখন স্কালপেন আর টুইজারটা দে"
হাসান হা হা করে হেসে উঠে বললো "এখনই না।তোর পোশাক আশাক ঠিক করতে হবে।তোর জন্য একটা কালো আলখাল্লা ভাড়া করে এনেছি"
"এই গরমে আলখাল্লা পরতে হবে?"
"গরম কোথায় দেখলি,বাইরে তো বৃষ্টি।নে দোস্ত তাড়াতাড়ি পরে নে।আলখাল্লার সাথে টেবিলের উপর একটা সুচালো টুপিও আছে।আর কালো কাপড় দিয়ে মুখ বেধে নে।শুধু চোখ খোলা থাকবে।"
আমি আর কথা না বাড়িয়ে ও যা যা করতে বললো তাই করলাম।সব পরে ছুরি চিমটা নিয়ে লেগে পরলাম লাশের চামড়া ছিলতে।প্রথম প্রথম হাত কাপতে লাগলো।হাসান বললো "এডিটিং এর সময় এগুলো কেটে বাদ দিতে হবে"।
কালো আলখাল্লার মধ্যে ঘামের স্রোত বইয়ে আমি যন্ত্রের মত লাশের চামড়া ছিলি।যখন কষ্ট হয় বসে একটু জিরিয়ে নেই।পানি খাই।হাসানও ক্যামেরা বন্ধ করে বারান্দায় হাটাহাটি করে।
পা থেকে চামড়া ছিলে বুক পর্যন্ত আসতে রাত ৩টা বেজে গেলো।মোমবাতি সব ফুরিয়ে আসছে।আরও ঘন্টা খানেক লাগিয়ে বুকের দিকটা আর দুই হাত শেষ করলাম।এবার লাশ উল্টে পিঠের দিকে যাব আর সবশেষে মাথা।
হাসান ক্যামেরা বন্ধ রেখে হাত লাগায় লাশের পাশ ফিরিয়ে দিতে।উল্টানোর সময় অসাবধানতার কারণে লাশের চাদর পুরোটা খুলে যায়।
মোমবাতির সল্প আলোয় মুখ থেকে কাপড় সরে যেতেই লাশের মুখটা খুব চেনা চেনা মনে হলো।
হাসানও দেখেছে মুখটা।সে কাপা কাপা গলায় আমার নাম ধরে ডাকলো।আর ঠিক সেই সময়ে জানলা দিয়ে আসা বাইরের দমকা বাতাসে মোমবাতি নিভে গেলো।আমরা ডুবে গেলাম অন্ধকার আর ভয়ের রাজ্যে।
হাসান কাপা কাপা গলায় বললো "লাশের মুখ দেখেছিস"
আমি একটু ধাতস্থ হয়ে বললাম "হু"।এর বেশি কথা জোগালো না মুখে।
"কেমন জানি হামিদ ভাই এর মত চেহারা।মনে হয় যেন হামিদ ভাই ই"
আমি ভয়ার্ত স্বরে বললাম "মোমটা জ্বালা দেখি ব্যাপারটা কী"
হাসান অনেকক্ষণ অন্ধকারে হাতড়াহাতড়ি করলো।মোম পেলো না।আমি ঝাঝাল গলায় বলতে চাইলাম,বের হলো চিচি স্বর "মোম না পেলে লাইটার টা তো জ্বালাতে পারিস"
"ওটাও পাচ্ছি না,কোথায় রেখেছি মনে নাই"
"আর কিছু না পেলে তোর ক্যামেরার লাইট টা অন কর"
হাসান খাটের উপর থেকে ক্যামেরা নিয়ে অন্ধকারে সুইচ টুইচ টিপছে।
এমন সময় বাইরে বিদুৎ চমকে ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঘরের ভেতর এক ঝলক আলো দেখা গেল।আর সেই আলোয় দেখলাম ডিসেকশান টেবিল শূণ্য।কেউ নাই।এমনকি সাদা চাদরটা পর্যন্ত।আমার গলা দিয়ে স্বর বের হলো না।
এরমধ্যে হাসান ক্যামেরার আলো জ্বেলেছে।সে আলোয় আগে যা দেখেছিলাম তা-ই দেখলাম।ডিসেকশানের লম্বা টেবিলটা শূণ্য।শুধু কালচেটে রক্তের দাগ লেগে আছে।ঘরের মধ্য দুজনে নীরব।হাসান আমার দিকে তাকিয়ে ক্যামেরার আলো ঘরের চারদিকে ঘুরায়।কোথাও কেউ নাই।কিচ্ছু নাই।হাসানের হাতের ক্যামেরার আলো কমে আসছে।বোধহয় ব্যাটারির চার্জ শেষ।
হঠাৎ মনে হলো জানালার পাশে কীসের জানি শব্দ হচ্ছে।বৃষ্টির শব্দ না।প্রচন্ড ব্যাথায় কারো গোঙানির শব্দ।
আমার বলার আগেই হাসান ক্যামেরার নিভু নিভু আলো ঘুরিয়ে জানলার দিকে নিলো।
যে দৃশ্য দেখলাম তাতে অজ্ঞান হয়ে পরে যাবার কথা।কিন্তু ডাক্তারী পরে পরে নার্ভ শক্ত হয়ে গেছিলো বিধায় আমাদের কিছু হলো না।আমরা স্বাভাবিকভাবে দেখলাম খোলা জানলা দিয়ে একটা চামড়া ছাড়ানো মৃতদেহ ভেতরে ঢুকছে।মৃতদেহের চর্বির স্তরের উপর দিয়ে টপ টপ করে পানি ঝরছে।
মৃতদেহের মুখটা হামিদ ভাই এর।চামড়া ছাড়ানো মৃতদেহটা টুপ করে জানলা গলে ভেতরে লাফিয়ে পরলো।গলা দিয়ে একটা আর্তনাদ ভেসে এল।আর তখনি ক্যামেরার লাইট পুরাপুরি নিভে গেলো।
আমরা ডুবে গেলাম অন্ধকারে।এখন আমাদের সাথে ঘরে আছে পিঠ বাদে বাকি শরীরের চামড়া ছিলানো একটা পরিচিত মৃতদেহ যে এতদিন এখানেই বাস করত।
দুজনের মধ্যে ভয় আবার ফিরে এসেছে।দুজন খাটের উপর পাশাপাশি বসে আছি।ঘরের মধ্যে আহ উহ করতে করতে হামিদ ভাই হাটাহাটি করছে।একসময় তার পরিচিত গলা পা্ওয়া গেল "বড় যন্ত্রণা।ছোটভাই বড় যন্ত্রণা শরীর জুড়ে।একটু পানি খাওয়াতে পারেন? "
আমাদের মুখ থেকে কথা বের হয় না।
"ওহ হো,বাইরের বাতাস শরীরে লাগলেও জ্বলে যাচ্ছে।পুড়ে যাচ্ছে গোটা শরীর।ওহ!!" হামিদ ভাই এর গলা দিয়ে একজাতীয় জান্তব আওয়াজ বের হয়।
"ছোটভাই চামড়া দিতে পারেন?ওহ অসহ্য যন্ত্রণা"
হাসান বলে উঠে "তুমি হাসান ভাই নও।তুমি আমাদের চোখের ভুল।কাজ করতে করতে আমাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।"
ঘরের কোণা থেকে অতিকষ্টে হাসির শব্দ ভেসে আসে।এই হাসি আমরা চিনি।হামিদ ভাই এর হাসি।
হামিদ ভাই টেনে টেনে অতিকষ্টে বলে "লাশকাটা ঘরের ট্রলির উপর আমি ছিলাম।ঘুমানোর আগে ট্রলির চাকায় ইট দিয়ে রেখেছিলাম যাতে না নড়ে"
হঠাৎ আমার ইটের কথা মনে পরলো।আমি বললাম "ইট গুলো আমি দেখেছি।"
হামিদ ভাই টেনে টেনে বলতে থাকে "লাশ না পেয়ে তাড়াতাড়ি মেডিকেলে ফিরে আসি।কোন কাজ না থাকায় মর্গে ঢুকে আমার ট্রলিতে শুয়ে পরি।চোখে আলো লাগছিলো দেখে সাদা চাদরে মুরি দেই।ঘুমিয়ে পরি।আর ঐ মরা ট্রলিতে ঘুমালে আমার যেন কি হয়,ঠিক মরার মত হয়ে যাই।সকালে আবার ঠিক হয়ে যায়।আজ ওখানে ঘুমানোর কথা না আমার।কিন্তু ঘুমিয়ে গেছিলাম।মড়ার ঘুম।ঘুম ভাঙতেই দেখি আমি এই অন্ধকার ঘরে।শরীরে অসহনীয় ব্যাথা।কিছু বুঝে উঠার আগে জানলা দিয়ে লাফিয়ে পড়ি।বৃষ্টির ফোটা চামড়া ছিলা গায়ে পরতেই ব্যাথা আরো বেড়ে গেলো।আবার ফিরে এলাম পানি খাবো বলে।"
আমি ঢোক গিলে কোনমতে বললাম "হামিদ ভাই আমার টেবিলে জগ আছে।নিয়ে খাও"
অন্ধকারে কিছু সরে যেতে থাকে।পা টেনে টেনে হাটার শব্দ হয়।তারপর পানি খাওয়ার শব্দ।
পানি খাওয়া শেষ হলে তৃপ্তির শ্বাস নিয়ে বলে "ছোটভাই আমার চামড়াটা আমারে দিয়া দেন।চামড়া ছাড়া বড় কষ্ট।"
তারপর অন্ধকারে ছায়ামূর্তিটা কিছু খুজতে থাকে।এঘর থেকে ওঘর করতে থাকে।
একসময় বৃষ্টি থামে।আবার বিদুৎ চমকের আলোতে আমরা দেখি চামড়াবিহীন মূর্তিটা জানলা দিয়ে "বড় কষ্ট বলে লাফ দেয়"।তার হাতে কি যেন ধরা।
এই সময় ফজরের আযান দেয়।ইলেকট্রিসিটি চলে আসে।ঘরের মধ্যে তাকিয়ে দেখি গোটা ঘর বিধ্বস্ত।তন্নতন্ন করে কিছু খুজেছে কেউ।এখানে ওখানে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ।আমি উঠে যেখানে ছাড়ানো চামড়া রেখেছিলাম সেই বাস্কেটের মধ্যে উকি দেই।কিছু নেই।কেউ সব কুড়িয়ে নিয়ে গেছে।
হাসান উঠে ক্যামেরার ব্যাটারি চার্জ দিয়ে ভিডিওকৃত অংশ দেখে।
পুরা রিল ফাকা।কিছুই উঠেনি তাতে।
তারপর থেকে হামিদ ভাই কেও আর দেখে যায় নাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১২ রাত ৯:৫৯