ভয় (অনুলিখিত হরর কাহিনি-১ম পর্ব)
১ম পর্বের পর থেকে...
অতবড় বাসায় অন্যদের সাথে বনিবনা হচ্ছিলো না দেখে হাসান আর আমি বাসা চেন্জ করেছি।বাসাটা নতুন,এখোনো কমপ্লিট হয়নি।নিচতালার দরজা জানলা কমপ্লিট হলেও আমরা দোতালায় উঠলাম।দোতালার জানলায় গ্রিল না থাকলেও কপাট আছে,তাই আমাদের কোনো সমস্যা হলো না।
ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যেয়ে শুনি হামিদ ভাই বর্তমানে ফেরারি আসামি।কবর থেকে লাশ চুরির সাথে যে সে জড়িত তা পুলিশ জেনে গেছে।কিছুদিন আগে যতিন খুড়োর আকস্মিক উধাও হওয়ায় পুলিশ ধারণা করছে হামিদ ভাই খুড়োকে মেরে হাড়গোড় ঢাকায় পাচার করেছে।খুড়োকে এখোনো পাওয়া যায়নি।
মনটা খারাপ হয়ে যায়।আমি পথ না দেখালে হয়তো হামিদ ভাই এর এই অধঃপতন হতো না।ঢাকায় ফিরে মনে মনে হামিদ ভাই কে খুজতে থাকি।কলেজের কর্মচারী মামার কাছেও খোজ নিলাম।নেগেটিভ উত্তর পেয়ে হামিদ ভাই এর আশা প্রা্য ছেড়ে দিলাম,এমন সময় একদিন বাসায় ফিরতেই হাসান বললো কে যেন আমার খোজে এসেছে।রুমে যেতেই দেখি হামিদ ভাই।
হামিদ ভাই কে কেমন চুপচাপ মনে হলো।জিজ্ঞেস করলাম "কোথায় পালিয়ে ছিলে এতদিন?"
"ঢাকাতেই ছিলাম এক বস্তিতে।"হামিদ ভাই কাচুমাচু মুখে উত্তর দিলো।
"তোমাকে আগেই নিষেধ করেছিলাম।শুনলে না।এখন আবার মানুষ খুন করে হাড় বেচা শুরু করেছো।"
"বিশ্বাস করো ছোটভাই যতিন খুড়োকে আমি মারি নাই।যতিন খুড়ো যখন হারিয়ে গেছে আমি তখন গ্রামে ছিলাম না।গ্রামের কেউ হারিয়ে গেলে আমার উপর দোষ পরবে নাকি?"
"যে কাজ করেছো তাতে তো পরবেই।এখন ঢাকায় কি কাজ করো?"
হামিদ ভাই মাথা নিচু করে জবাব দিলো "বস্তিতে আগে ডাইল এর ব্যবসা করতাম।বস্তি উঠে যাওয়ায় এখন বেকার।তাই তোমার কাছে এলাম।যদি কোনো কাজের খোজ দিতে পারো"
"আমি কাজের কি খোজ দেবো।নিজে থাকি পরাশুনায় ব্যস্ত।যাই হোক,থাকার যেহেতু জায়গা নাই,আমার এখানে থেকে কাজের খোজ করো।"
হামিদ ভাই কিছু বললো না।আমার এখানেই থেকে গেলো।সারাদিন খা্য় আর ঘুমায়।কাজ আর খোজে না।এর মাঝে আমাদের একদিন সুযোগ এসে গেলো।কলেজে নতুন বিভাগ খোলায় কিছু কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হবে।হাসান আর আমি মিলে চেষ্টা করলাম যদি হামিদ ভাই কে কোথাও ঢুকিয়ে দেয়া যায়।কিন্তু তার যে শিক্ষাগত যোগ্যতা তাতে রাতে মর্গে লাশ পাহারা দেয়া ছাড়া আর কোনো ক্যাটাগরিতে তাকে ঢোকানো গেলো না।অবশ্য এই চাকরী পেয়ে হামিদ ভাই মহা খুশি।
কবর খুড়ে লাশ তোলায় অভ্যস্ত বলে রাতে একা মর্গ পাহারা দেয়া তার কাছে কোনো ব্যাপার না।শুরু হলো হামিদ ভাই এর লাশ পাহারা দেয়া।আমরা হামিদ ভাই কে অন্য কোথাও যেতে দিলাম না।আমাদের বাসায় রেখে দিলাম।রাতে লাশ পাহারা দেয় আর দিনে ঘুমায়।
মর্গে অর্থাৎ লাশ কাটা ঘরে হামিদ ভাই এর তেমন কাজ নাই।শুধু লাশের ড্রয়ার গুলার সাথে নাম্বার মিলিয়ে রাখা।মড়ার ঘরে আলো বেশ কম।তাতে তার সুবিধাই হয়।কোন খালি ট্রলিতে উঠে একটু ঘুম দিয়ে নেয়।ট্রলিগুলার নিচে চাকা লাগানো থাকে।বড় নড়াচড়া করে।তাই সে চার চাকার পাশে ইট দিয়ে রেখে ঘুমায়।মাঝে মাঝে এক ঘুমেই রাত পার করে দেয়।আর মাঝে মাঝে আজে বাজে চিন্তা মাথায় আসে।বেশি সমস্যা হ্য় ঘুমিয়ে গেলে।মরনঘুম এসে যেন ভর করে।ঘুমিয়ে গেলে নিজেকে তার মৃতদেহ মনে হয়।সামান্যতম নড়াচড়া নেই।যেমন মৃতদেহের থাকে না।
একদিন ক্লাশ শেষে হাসান বললো "ক্যামেরাটা তো বেকার পরে আছে।কিছু শ্যুটিং টুটিং করছি না "
"কি শ্যুটিং করবি আগে সাবজেক্ট বের কর।"
"আমাদের লাশ কাটার দৃশ্য শ্যুটিং করলে কেমন হয়?কিন্তু স্যার রা তো করতে দেবে না,তাই ভাবছিলাম যদি একটা লাশ জোগাড় করতে পারি। "
"লাশ এত সোজা জিনিস নাকি।বেওয়ারিশ গুলাও আন্জুমানে যায়"
হাসান উজ্জল চোখে বললো "আচ্ছা হামিদ ভাই কি একটা ব্যবস্থা করতে পারে না।লাশ নিয়েই তো তার কারবার"
"ওর চাকরী নিয়ে টানাটানি পরে যাবে।"
"আরে না।তুই যা ভাবছিস তা না,হামিদ ভাই অনেক তরিৎকর্মা লোক।তুই বললে ঠিক ম্যানেক করে দিবে।"
আমি কৌতুহলের সুরে বললাম "কিন্তু লাশ এনে ডিসেকশান করবি কোথায়?"
"সেটা কোনো সমস্যা না।আমাদের রুমেই করবো।আর করবি তুই"
"আমি করবো মানে?আমি এসবের মধ্য নাই।আর আমার মেধা তো তুই "জানিস জীবনে কোনোদিন প্রাকটিক্যালে ঠিকমতো হাত লাগাই নাই"
"আরে গাধা আমরা কি মেডিকেলের সিডি বানাচ্ছি নাকি।তুই কখনো কোরবানির ঈদে গরু ছাগল ছেলা দেখেছিস?তুই লাশটার চামড়া ঠিক সেইভাবে ধীরে ধীরে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ছিলবি।আমি ঐ দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করবো।চামড়া ছেলা হলে শুরু করবি মাংস ছাড়ানো।ঠিক কোরবানির গরুর মাংসের মত পিস পিস করবি পুরা বডি।চোখ,নাক,কান,মাথা,হাত-পা সব আলাদা আলাদা করবি"
"মাথা খারাপ হয়েছে তোর।লাশ কাটার দৃশ্য ধারণ!আমি পারবো না"
হাসান শীতল গলায় বললো "ঠিক আছে,তোকে লাশ কাটতে হবে না।তুই শুধু লাশের ব্যবস্থা করতে পারিস কি না দেখ"
"দেখি"
হামিদ ভাই কে লাশের কথা বলতেই একটু ভেবে বললো "কবে লাগবে ছোটোভাই?"
হাসান বলে উঠলো "আমাদের তাড়া নাই।আপনি যখন সুবিধে করতে পারেন"
"ঠিক আছে।কোন সমস্যা নাই।শুধু লাশ যারা বাসায় পৌছায় দিবে তাদের কিছু টাকা দিলেই হবে"
হাসান বললো "টাকা নিয়ে আপনি ভাববেন না।শুধু দেখেন লাশটা যেন ফ্রেশ হয়।মেয়ে হলে সবচেয়ে ভালো"
"মেয়েদের লাশ পাওয়া কঠিন।মেয়েরা সহজে মরে না"
আমি বললাম "পুরুষ লাশ হলেই হবে।মেয়েদের স্কীনের নিচে প্রচুর ফ্যাট থাকে।কাটতে তো হবে আমাকেই।চর্বিতে মাখামাখি হয়ে যাবে"
হাসান কৃতজ্ঞ চোখে আমার দিকে তাকালো।হামিদ ভাই বললো লাশ পাঠানোর আগে জানাবে।
তিনদিন পর হামিদ ভাই জানালো "আজ রাতে একটা লাশ আসবে মর্গে।আপনাদের পছন্দমত।কিন্তু লাশ আনতে আপনাদের কিছু কাজ করতে হবে।"
"কী কাজ?"
"মর্গে যে আজ থাকবে সে হলো সালাম ভাই।তাকে বলা আছে।চাদর দিয়ে লাশ ঢাকা থাকবে।নাম্বার না থাকায় লাশ ড্রয়ারে ঢুকানো হবে না।কাঠের একটা সস্তা কফিনে লাশটা আপনাদের নিয়ে আসতে হবে"
"আমাদের?আপনি থাকবেন না?"
"থাকার চেষ্টা করবো।যদি না থাকি তাহলে আপনারা গেলেই হবে।ওদের বলা আছে।"
"কিন্তু আপনি যাবেন কই?"
"লাশের খবরে একা জায়গায় যেতে হবে।পরে এসে আবার লাশ পাহারা দিবো।আপনাদের সমস্যা হবে না।আর রাস্তায় মেডিকেলের আইডি দেখালে পুলিশ ঝামেলা করবে না"।
হামিদ ভাই এর কথামত একটু বেশি রাতেই বের হলাম।মেডিকেলে এসে হামিদ ভাই এর দেখা পেলাম না।নতুন লোকটা দেখি ভয়ে অস্থির।লাশকাটা ঘরের ভয় নাকি অবৈধ কাজের ভয় ঠিক বুঝলাম না।লোকটা চাবি দিয়ে দরজা খুলে বাইরে দাড়িয়ে রইলো।
আমি লোকটা দিকে তাকিয়ে ঝাঝাল কন্ঠে বললাম "বাইরে দাড়িয়ে থাকবা নাকি?ভিতরে ঢুকে লাশটা আমাদের দেখাও।ধরে কফিনে ঢুকাও"
লোকটা পায়ে পায়ে ভিতরে ঢুকে একটা ট্রলির পাশে দাড়ায়।এই ট্রলিটা একটু অন্যরকম।চাকার কাছে ইট দেয়া।নষ্ট ট্রলির ব্যাপার স্যাপার হয়তো!ও নিয়ে মাথা ঘামালাম না।লোকটা সাহস করে সাদা কাপরে ঢাকা লাশটা মুড়িয়ে বেধে ফেলল।তারপর তিনজনে ধরে লাশটা বারান্দায় রাখা কফিনে ঢুকালাম।
তারপর চলবে....পরের পর্বে
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:০৬