somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রসংগঃ কোরবানীর ঈদ।

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১০:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছোট বেলা থেকেই এই পাঁচ তলা বাড়িতে বড় হয়েছি আর বড় হতে হতে অনেকগুলো কোরবানীর ঈদও চোখের সামনে দেখলাম।রাস্তার উপর ১৫-৩০ টা গরুকে হাত পা বেঁধে আল্লাহ উয়াকবার ধ্বনী তুলে জবাই দেওয়া হচ্ছে।ফিঙ্কীদি য়ে বেরিয়ে আসছে তরতাজা রক্ত,মৃত্যু যন্ত্রনায় ছট ফট করছে অসহায় প্রানী।এমনো হয়েছে একদিন একটা গরুকে কাটা হয়েছে,কিন্তু তার জীবনটা তবু ফুরিয়ে যায়নি,জন্ম মৃত্যূ সবিতো আল্লাহ পাকের হাতে।তাই হয়তো সৃষ্টিকর্তা একটু খানি রেহাই দিয়েছিলেন তাকে পৃথিবির আলো বাতাস খেতে।এই সব পড়ে আবার কেউ ভেবে বসবেন না-আমি গরুর মাংস খাই না।খুব খাই,ভালো রাঁধতেও জানি।কিন্তু জনসম্মুখে ,বিশেষ করে বাচ্চাদের সামনে এই কোরবানীর পক্রিয়াটা আমার কাছে বেশ অস্ববাভাবিক ঠেকে।মনে হয় ছুড়ী বটি নিয়ে কি ভাবে হিংস্র হতে হয় তাই তাদের শেখানো হচ্ছে।কোরবানীর মাজেজা বোঝার বয়স তো ওদের নয়।
খুব ছোট বেলার একটা কোরবানী ঈদের গল্প বলি।বাবা আর বড় ভাইয়া আয়োজন করে ছাগল কিনে নিয়ে এলো।ওটা আমাদের গ্যারেজের সাথেই বাঁধা থাকতো।আর দিন রাত ভ্যা ভ্যা করতো।সেবার বৃষ্টিও ছিলো বেশ।ছাগলকে পাতা খাওয়ানো কিযে মজার একটা বিষয় তা বুঝেছিলাম তখনি,কাঁঠাল পাতা মুখের সামনে ধরলেই সে কপ করে খেয়ে নিতো,সাদা সাদা দঁত দিয়ে চাবাত।কিযে মায়া ভরা চোখ ছিলো ,ও কি বুঝতো কিছুক্ষনের মধ্যেই ওর হাত পা বেঁধে মাটিতে শুইয়ে গলায় ছুড়ি ধরা হবে ।মনে হয় বুঝতো-তা না হলে এমন চিৎকার করতো কেন?আমি মাকে প্রশ্ন কোরতাম-মা ,ও কি ওর মার জন্যে কাঁদছে?ধর্মের অন্ধ বিশ্বাসের বেরাজাল আমার মাকেও আটকে রেখেছিলো।তাই হয়তো তিনি চুপ ছিলেন।আমি ছাগলকে জড়িয়ে ঘরে আদর কোরলাম,পানি খেতে দিলাম।গায়ের উপর ছালা ফেলে দিলাম,যেন বৃষ্টির আঁচো তার গায়ে স্পর্শ না করে।আমরা দু ‘ভাই বোন প্রায় তিন দিন ছাগল তাকে নিজেদের খেলার সাথি বানিয়ে ফেললাম।
একদিন খুব সকালে বেশ হৈ চৈ আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো।বাবা ,ভাইদের তাড়া দিচ্ছেন পাঞ্জাবী পড়ে তৈরী হবার জন্যে,মা বড় বড় বল নামাচ্ছেন উপরের তাক থেকে।আমি গুটি গুটি পায়ে নীচে নেমে দেখি আমার ছাগলটা নাই।কিছু সময় পর ওকে আবিষ্কার কোরলাম সামনের মাঠে হাত পা বাঁধা নিথর পড়ে আছে,আর রক্তে ভেসে যাচ্ছে সবুজ ঘাস।আমি কতোক্ষন চিৎকার করে কেঁদেছিলাম তা আজ আর মনে নেই।কেবল মনে আছে নীরিহ প্রানীটার কালো কুচকুচে চোখ আজো আমার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে।ওর সেই আর্তচিতকার আজকের পশুদের চিতকারের সাথে একাকার হয়ে আমার চারপাশটা কেমন ভারী হয়ে যাচ্ছে।
আর একটু বড় হবার পর কোরবানী দেওয়ার তাতপর্য আমি বুঝে গেছি।তবে কেন এমন খোলা ময়দানে রাস্তা ঘাট অপরিষ্কার করে পশু হত্যা করা হয় তা আজো বুঝিনি।বুঝতে পারবো না কোন দিন।এই অতি পবিত্র কাজ টাতো একটা নির্দিষ জায়গায় সম্পন্ন করে ওখানেই বর্জ্য পদার্থ মাটি চাপা দেওয়া যায় ।তাহলতো সি টি কর্পোরেশনের কষ্ট খানিক টা হলেও কমে।আর আমার মতোন মানুষের পশুর বুক ফাটা আর্তনাদ শুণতে হয় না।
কোরবানী ইদে উল্লেখ কোরবার মতোন আসলে ঝুড়িতে তেমন কিছু নেই,কেবল একবার দেখলাম আমার বাবা গরু জবাই করা বাদ দিয়ে তার পাঞ্জাবীর রক্ত তোলা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।এখানে উল্লেক্ষ্য যে ওই পাঞ্জাবী খানা আমার টাকায় কেনা ছিল।কলেজে পড়ার সময় প্রথম টিউশনীর টাকায় বাবাকে প্রথম পাঞ্জাবী খানা দিয়েছিলাম।বাবা অদি আহ্লাদে ওটা পড়ে নামাজে গেলেন আর মসজিদ সুদ্ধ লোকদের বলে বেড়ালেন –এটা আমার মেয়ে এবার আড়ং থেকে কিনে দিয়েছে।অতি আনন্দে পাঞ্জাবী খানা পড়েই গরুর গলায় ছুড়ি ধরতেই ফিঙ্কী দিয়ে রক্ত সোজা বাবার বুকেই গিয়ে পড়লো।কিসের কি,বাবা ওই অবস্থায় কসাইয়ের কাছে দায়িত্ব দিয়ে সোজা চলে এলেন বাথরুমে।যতোই সাবান ঘষুক,রক্তের দাগ কি আর মোছা যায়?
বাবা সেদিন মন খারাপ করেই পুরো ঈদ কাঁটিয়ে দিয়েছিলাম।এমন নরম একটা মানুষ কি করে এতো কঠিন কাজটা অনায়াসে করে ফেলতন তা ভাবতেই খুব অবাক লাগে।আজ স্টিলের আল্মারীতে সাদা পাঞ্জাবীটা তার পুরনো দাগ নিয়ে ঝুলছে।কেবল তা পো্রবার জন্যে আমার ববা আর জীবিত নেই।আমি মাঝে মাঝে ওগুলোর ভাঁজ খুলি হয়তো বাবার শরীরের গন্ধ পাবো বলে।শুধু কোরবানী কেন,কোন ঈদি আমার জন্যে বিশেষ কোন আনন্দ বয়ে আনে না।কেবল ইনবক্স আর টেক্স দিয়ে মোবাইল ভরে উঠে।আমি পড়ি,সবার শুভেচ্ছা পড়তে ভীষন ভালো লাগে।কিন্তু উত্তরে কি লিখব আজো তা খুঁজে পেলাম না।শুধু ভাবি-এই পৃথিবীটাকে সুন্দর –পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব তো মানুষেরি।আমারা ইচ্ছে করলেই সব পারি,তবে কেন তা করি না??
এতোদিন কেবল রাস্তা ঘাটকে নোংড়া করা হতো,এখনতো প্রযুক্তি ভরে উঠেছে গরুর গলা কাটা ছবিতে।ফেইসবুকের দেওয়াল জুড়ে গরু-ছাগলের পদার্পন।বিঞ্জাপনের পাতা জুড়ে গরু হাসছে।যে কার্টুন বানায় সে কেনো গরুর হাসিমাখা মালা পড়া ছবি আকলো কে জানে।মরতে কার এতো ভালো লাগে?কারো কারো মুখের সেলফি গরুর মুখের পাশে।নে খা বাবা তোর আদরের সেলফীর পার্টনার রে তুই জবাই করে খা ,আনন্দের সাথে খা আর ছবি তুলে আপলোড দে।তা তে কার বা কি ক্ষতি।
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×