somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্লোগানে স্লোগানে সবাইকে আন্দোলনের সুতোয় গাঁথি: লাকি

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭ এর ৪ ধারা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছিল ছাত্র ইউনিয়ন। আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ও আক্রমন করে ছাত্রলীগ। এ সময় স্লোগান দেয়ার মতো কেউ ছিল না। গর্জে ওঠে শ্যামলা রংয়ের তেজোদীপ্ত লাকির কন্ঠস্বর। স্লোগানের মাধ্যমে সবাইকে আবারো আন্দোলনের সূতোয় গাঁথে সে।
কাদের মোল্লাসহ সকল চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিকে মঙ্গলবার থেকে রাজধানীর শাহবাগে চলমান আন্দোলনের সঙ্গে সারা জাতিকে এক সূতোয় গেঁথেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ৮ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী লাকি আক্তার। মেধাবী লাকী ক্লাশেও সেরা ছাত্রী।
শুক্রবার রাতে শাহবাগের গণজাগরণ চত্বরে স্লোগানের আর আয়োজনের শত ব্যস্ততার মাঝেও কিছুটা সময় দেন বাংলানিউজ টিমকে। বাংলানিউজের ক্যাম্পে আসেন লাকী। আড্ডায় আড্ডায় কথা হয় তার সঙ্গে। জানায় নিজের রাজনৈতিক আদর্শ, স্বপ্নের দেশ গড়া আর মিছিলে ভাল স্লোগান দিতে পারার পরিতৃপ্তির অনেক গল্প।
লাকি জানান, তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা আর তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পুরোটুকুই তিনি ধারণ করেন মনে ও প্রাণে।
প্রসঙ্গ শুরু হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের ২৭ এর ‍৪ ধারা বাতিলের দাবির আন্দোলন নিয়ে। বললেন, ‘সেদিন স্লোগান দিয়ে গলা ভেঙ্গে যায়। অবশ্য পরের দিনই আবার এসে স্লোগান দেই। ঠিক হয়ে যায়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে স্লোগানের জন্যে জনপ্রিয় লাকি। তিনি বলেন, ‘একটা সময় স্লোগান দিতে লজ্জা লাগত। স্লোগান দেয়ার সময় বন্ধুরা বলতো, তুইতো চিকার মতো আওয়াজ করিস। একটা জেদ কাজ করতো। ভাবতাম এক সময় আমি ঠিকই ভালো স্লোগান দেব। এরপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭ এর ৪ ধারার বিরুদ্ধে যখন আন্দোলন চলছে সে সময় ভাল স্লোগান দেই।’
টানা চারদিন স্লোগান দিয়েও কণ্ঠের তীব্রতা কমেনি লাকির। বলেন, স্লোগানের একটি বড় ব্যাপার হচ্ছে, আন্দোলনের ধরন। এর ওপর নির্ভর করে স্লোগানের গতি।
লাকীর স্লোগানে আন্দোলন গতি পায় তা এখন গোটা দেশের জানা হয়ে গেছে। তার স্লোগানে তীব্রতা, শক্তি, ঘৃণা, ব্যঙ্গ ও বিদ্ধেষ সব কিছুই আসে সমানভাবে। যেখানে যেটুকু প্রয়োজন।
রাজাকারদের ফাঁসির দাবিতে চলমান এ আন্দোলনে নিজের মধ্যে একটি গতি কাজ করে লাকির। কারন হিসেবে বলেন, আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তার কাছ থেকে আমি শুনেছি মুক্তিযুদ্ধ কি? রাজাকার কি? আমি এ আন্দোলনে নেমেছি রাজাকারকে এ দেশ থেকে বিতাড়িত করতে।
জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে ’৭২ এর সংবিধানের যে মূলনীতি সে আলোকে ৭১ এর চেতনা, মৌলবাদমুক্ত ও রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে আন্দোলনে নামেন তিনি।
আবারো স্লোগানের প্রসঙ্গে ফিরে আসেন লাকি। আন্দোলনের সময় স্লোগান দেয়ার সময় তিনি ভাবেন কোন কথাটা স্ফূলিঙ্গের মতো ছড়াতে পারে। ছোট কথায় সেটি কতো সহজে বলা যায়।
নতুন একটি স্লোগান দিয়েছেন তিনি এ আন্দোলনে। তিনি বলেন, আজ একটি নতুন স্লোগান দিয়েছি, ‘জামাতে ইসলাম....মেড ইন পাকিস্তান’। জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে এর আগেও ছাত্র ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রোগ্রামে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
লাখো জনতাকে এক আক্রমনাত্মক ‘তুই রাজাকার’ স্লোগানে মুখরিত করেছেন লাকি। এ সর্ম্পকে বলেন, এটি হুমায়ুন আহমেদের একটি বইয়ে ছিল। ময়না পাখি বলতো। আবার ময়মনসিংহে উদীচি তাদের একটি অনুষ্ঠানে স্লোগান দিয়েছিল, ‘সাঈদী...তুই রাজাকার।’ এখানে এসে একটি ফেস্টুনে দেখলাম এ স্লোগানটা রয়েছে।
কিন্তু হুবহু এই স্লোগান দিলেন না লাকি। জানান, ‘একটি পরিবর্তন করি। আমি বললাম, স-তে সাঈদী...তুই রাজাকার..তুই রাজাকার....।
জাহানার ইমামের গণ আদালত দেখেনি ২৩ বছরের মেয়েটি। কিন্তু সে আন্দোলনও বুকে ধারণ করেন। বলেন, সে সময়য়কার আন্দোলনে স্লোগান দেয়া হতো ‘জামাত ধর..শিবির ধর...ধইরা ধইরা..জবাই কর...।’ এখনও এসব স্লোগানই দিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
ইতিহাস সর্ম্পকে সচেতন লাকি বলেন, আমি অনেক ইতিহাস পড়েছি। সোস্যাল মিডিয়ার কল্যাণে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে পড়ার দিকে একটি ঝোঁক বেড়েছে।
এ আন্দোলনে নিজের সম্পৃক্ততা অনেক বেশি হওয়ার কারন হিসেবে বলেন, কারন আমি আমার স্বাধীনতা সর্ম্পকে অনেক বেশি পরিস্কার।
স্লোগান সর্ম্পকে তিনি বলেন, ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের দাবিতে আন্দোলনে প্রথম স্লোগান ধরি। এরপর ২৭ এর ৪ ধারা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন, ৫ হাজার টাকা উন্নয়ন ফি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে স্লোগান ধরি।
উন্নয়ন ফি বাতিলের দাবিতে যে আটজন আন্দোলনকারীকে বহিস্কৃত করা হয়েছিল লাকিও তাদের মধ্যে একজন।
আন্দোলনের দ্বিতীয় দিন বুধবার থেকেই দেখা যায় বিক্ষোভকারীদের মধ্যে অনেকেই লাকি’র মতো স্লোগান দিতে চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, এখন অনেকেই চেষ্টা করছেন ভালো স্লোগান দিতে। যদি আমার স্লোগান থেকে কেউ উজ্জীবিত হয় সেটা আমার জন্যে বড় সাফল্য।
টানা স্লোগান দিয়েও গলা না ভাঙ্গার কারন হিসেবে গানের রেওয়াজ করার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ্ করেন তিনি। তবে সবচেয়ে বড় বিষয়টি হচ্ছে অভ্যাস ও মনোবল।
লাকি জানান, এ আন্দোলনের প্রথম দিন থেকেই রয়েছেন তিনি। সোমবার রাত থেকেই মশাল মিছিল নিয়ে এ সমাবেশে অংশ নেয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়ন।
এ কয়দিন প্রতিদিন দু’ঘন্টার জন্যে সমাবেশ স্থলের বাইরে থেকেছেন লাকী, স্রেফ সামান্য বিশ্রামের জন্য। ছাত্র ইউনিয়নের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংগঠনিক সম্পাদক ছাড়াও কেন্দ্রীয় কমিটির সমাজকল্যাণ সম্পাদক তিনি।
গত ক’দিনে শাহবাগের আন্দোলনে এসে মুগ্ধ হয়েছেন প্রতিটি মানুষ। তার তেজোদীপ্ত কন্ঠের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বলেছে, ‘ক-তে কাদের মোল্লা...তুই রাজাকার..তুই রাজাকার.... বা ‘ফাঁসি...ফাঁসি..ফাঁসি...চাই’।
ফেনী জেলার সোনাগাজী থানার লাকি আক্তারকে লাল সালাম দিয়ে যান তারা সবাই। এই টুকুন মেয়ের এত শক্তি! বিষ্ময় তাদের কণ্ঠে।
Click This Link
বাংলাদেশ সময় ১৫০০; ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৩
এমএন/এমএমকে/এআর/মোরশেদ
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×