রাজধানীতে সমাবেশ ডেকেও পিছু হটেছে আঠারদলীয় জোট। এ জন্য তারা পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি না পাওয়ার কথা বললেও পুলিশ জানিয়েছে বিরোধীদলীয় জোটের সমাবেশ করার অনুমতি ছিল।
তাহলে কেন সমাবেশ করল না আঠারদলীয় জোট-খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুক্রবার মানবতাবিরোধীদের ফাঁসির দাবিতে রাজধানীতে তরুণদের বিশাল সমাবেশের পর আপাতত জামায়াতের সাথে প্রকাশ্যে সমাবেশ করতে চায় না বিএনপি। স্বাধীনতাবিরোধী এই দলটির সাথে বিএনপির প্রকাশ্য মেলামেশায় জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে, এই আশঙ্কাতেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও জানায় বিএনপির সূত্র।
মঙ্গলবার মানবতাবিরোধী অপরাধী কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ঢাকার মিরপুরের আলুব্দী গ্রামে ৩৪৪ জনকে হত্যায় সহযোগিতাসহ পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে। এরপরও কাদের মোল্লার ফাঁসি না দেয়ার প্রতিবাদে সেই বিকালেই রাজধানীর শাহবাগ চত্বরে অবস্থান নেয় কয়েকশ তরুণ। এর আগে ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন এক্টিভিস্ট ফোরামের ডাকে মানববন্ধন করা হয়। এই খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে গোটা দেশ থেকে সব বয়সী, শ্রেণি পেশার মানুষ আসতে থাকে শাহবাগে। পাশাপাশি অন্য সব শহরেও শুরু হয় একই ধরনের কর্মসূচি। প্রথম দিকে বিএনপি এই কর্মসূচিকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। তবে শুক্রবার ঢাকাসহ দেশের প্রধান শহরগুলোতে সমাবেশে বিপুল পরিমাণ লোক সমাগমের পর বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে বিএনপি।
এই চিন্তা থেকেই বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা জামায়াতকে পাশে রেখে সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে বিএনপি প্রকাশ্যে বিষয়টি স্বীকার করতে চায় না। দলের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগর নয়াপল্টনে পুলিশ মঞ্চ তৈরির অনুমতি না দেয়ায় সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে। তবে মহানগর পুলিশের মুখাপত্র মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি না দেয়ার কথা সত্য না। সমাবেশের অনুমতি ছিল। কিন্তু বিএনপি নেতারাই তাদের জানিয়েছেন, সমাবেশের বদলে তারা গণমিছিল করবে।
আবার দুদিন আগে আঠারোদলীয় জোটে কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও শনিবার গণমিছিলে শরিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানায়নি বিএনপি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে আমাদের জোট আছে। তাদের সঙ্গে প্রকাশ্য সমাবেশ না করার বিষয়ে দলের কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না, তা আমার জানা নেই।’
বিএনপির এই নেতা শাহবাগের সমাবেশকে সরকারের সাজানো নাটক বলেছিলেন। এখনও তা মনে করেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমে এ বিষয়ে আমার বক্তব্য ঠিকভাবে আসেনি। আমি বলেছিলাম, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে সাজানো নাটক হচ্ছে’। শাহবাগের সমাবেশ থেকে জামায়াতকে বর্জনের ঘোষণা বিএনপির ওপর কোনো চাপ তৈরি করছে কি না, জানতে চাইলে এম কে আনোয়ার বলেন, ‘ওই সমাবেশে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান হচ্ছে। তাহলে বুঝতেই পারছেন এটা কারা করছে’।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু তো মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান, তরুণরা সেটাই বলছে, এতে কোনো দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব হয় কীভাবে-জানতে চাইলে এম কে আনোয়ার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, উত্তরবঙ্গের একজন নেতা সম্প্রতি খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ করেন। জবাবে ওই নেতাকে খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি জামায়াতকে ছেড়ে দিলে রাজনৈতিকভাবে লাভ হবে আওয়ামী লীগের। আর আওয়ামী লীগ সেটাই চায়। এরপর ওই নেতা চলে আসেন।
২০০৮ সালের নির্বাচনে ভরাডুবির জন্য জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোটবদ্ধতাকে দায়ী করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশে কোনো স্বাধীনতাবিরোধী নেই, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের এমন বক্তব্য, মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সংগঠন খোলা এবং জামায়াতপন্থী সেই সংগঠনের অনুষ্ঠানে এক প্রতিবাদী মুক্তিযোদ্ধাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার পর জামায়াতের প্রতি ব্যাপক ক্ষোভ জন্মে জনমনে। বিষয়টি বিএনপি গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসলে তরুণদের একচেটিয়া সমর্থন পায় দলটি। নির্বাচনের ভরাডুবির কারণ অনুসন্ধানে বিএনপি গঠিত কমিটিতে দলের তৃণমূল নেতারা জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরেন। এ নিয়ে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে প্রতিবেদনও দেন বিএনপি নেতারা। কিন্তু জামায়াতের চার থেকে পাঁচ শতাংশ ভোটের কথা ভেবে জোট ভাঙার ঝুঁকি নিতে রাজি নয় দলটি।
বিএনপির সঙ্গে জোটে স্বাধীনতাবিরোধী দল অবশ্য কেবল জামায়াতে ইসলামী নয়। মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলামী পার্টি, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামীর মতো দলের সঙ্গেও জোট করেছে বিএনপি। সবগুলো দলই মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষে অস্ত্র ধরেছিল।
Click This Link