somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই যৌবনজলতরঙ্গ রুধিবি কি দিয়া বালির বাঁধ?

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই যৌবনজলতরঙ্গ রুধিবি কি দিয়া বালির বাঁধ? কাজী নজরুল ইসলামের এই পঙিক্ত ১৯৬৯ সালে ইত্তেফাক-এর শিরোনাম করেছিলেন তখনকার বার্তা সম্পাদক সিরাজুদ্দীন হোসেন। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে তিনি আলবদর ও পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে শহীদ হন।
ওই লাইন বারবার মনে পড়ছে। আমি এক্ষুনি হেঁটে এলাম শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ বা প্রজন্ম চত্বর থেকে। তার আগে মঞ্চে দাঁড়িয়ে চারপাশে তাকাই। আমার সামনে ওই রূপসী বাংলা পর্যন্ত মানুষ আর মানুষ। ডান দিকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন পর্যন্ত শুধু মানুষের মাথা। বাঁ দিকে কাঁটাবন। আমার সামনের তরুণ-তরুণীরা আজ চার দিন ধরে এই চত্বরে মাটি কামড়ে পড়ে আছে। তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জায়গা ছাড়বে না।
প্রতি মুহূর্তে গগনবিদারী স্লোগান—তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, জয় বাংলা। বাঁশের লাঠি তৈরি করো, রাজাকারদের খতম করো।
আমি কি ১৯৭১ সালে ফিরে এসেছি? এই তো আমাদের খুব কাছে রেসকোর্স ময়দান, যেখান থেকে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিয়েছিলেন স্বাধীনতাসংগ্রামের। এই তো সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যেখান থেকে ১৪৪ ধারা ভেঙে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মিছিল নিয়ে বেরিয়েছিল ৫২-এর তরুণেরা। সেই চত্বরে তরুণেরা ডাক দিয়েছে প্রতিবাদী সমাবেশের। তাদের কোনো দল নেই। তাদের পকেটে টাকা নেই। তারা টেলিভিশনের পরিচিত মুখ নয়, বড় নেতা নেয়, তারকা নয়। তারা কেবল ফেসবুকে, ব্লগে ডাক দিয়েছে প্রতিবাদ সমাবেশের। তারা কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় মানে না, তারা চায় কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি।
কী যে টগবগ করছে এই বিশাল সমাবেশ। সবার মুখে স্লোগান—ফাঁসি চাই। অনেকের মাথায়, বুকে, হাতে জাতীয় পতাকা। শিশু কোলে এসেছেন মা, ক্রাচ নিয়ে এসেছেন বৃদ্ধ। এসেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। তাঁরা স্লোগান দিচ্ছেন—রগ কাটার রাজনীতি আইন করে বন্ধ করো। মুহম্মদ জাফর ইকবাল তাঁর বক্তৃতায় যা বললেন, আমার নিজেরও তা-ই মনে হচ্ছে, শেষ শীতের বিকেলের এই আকাশের টুকরো টুকরো সাদা মেঘের গায়ে ভর দিয়ে তাকিয়ে আছেন আমাদের ৩০ লাখ শহীদ, তাকিয়ে আছেন জাহানারা ইমাম, আজ তাঁদের মুখে হাসি। তাঁরা বলছেন, আমাদের প্রত্যাশার মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ তোমরা তাহলে আবার ফিরিয়ে এনেছ। নতুন প্রজন্ম, তোমাদের ধন্যবাদ, অভিনন্দন।
মঞ্চ থেকে নেমে টিএসসির দিকে হাঁটি। মানুষের ভিড়ে পা ফেলার জায়গা নেই। সমস্ত পথ হাঁটতে গিয়ে গায়ের লোম খাড়া হয়ে উঠছে। গোল হয়ে বসে ছেলেমেয়েরা স্লোগান দিচ্ছে, গান গাইছে। কেউ বা ফুল দিয়ে রাস্তায় এঁকেছে বাংলাদেশের মানচিত্র। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাকিয়ে দেখি, পুরোটা মানুষে ভরা। এরা সাধারণ দর্শনার্থী নয়, অনেকের মাথায় ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই’ লেখা পট্টি, অনেকের হাতে জাতীয় পতাকা। ট্রাক ভাড়া করে এদের আনতে হয়নি। এরা সবাই এসেছে নিজের গরজে। এ রকম স্বতঃস্ফূর্ত সমাবেশ আমি জীবনেও দেখিনি।
১৯৫২ সালে তরুণেরা যখন ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয়, তখন প্রবীণেরা তাতে সায় দেননি। কিন্তু তাদের আত্মদান পাকিস্তানের কবর রচনা করেছিল। ১৯৭১ সালে তরুণেরা বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে ধরেছিল স্বাধীনতা ছাড়া আর কিছু মানি না বলে, তারা জাতীয় পতাকা উড়িয়ে দিয়েছিল। আর একটা প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপরিণামদর্শী যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তাই তো পেয়েছি স্বাধীনতা। এই তরুণ প্রজন্ম যেন ১৯৫২ আর ১৯৭১-এর উত্তরাধিকার। তারা আবার ফিরিয়ে এনেছে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে। এরা কোনো রাজনৈতিক দলের নয়। এদের একটাই পক্ষ—বাংলাদেশ। এদের আমি কিছুটা দেখেছি স্টেডিয়ামে, বাংলাদেশের জয়ের দিনগুলোতে। আজ যা দেখছি, এত সুন্দর বাংলাদেশ আমি আর কখনো দেখেছি কি?
তরুণেরা যখন প্রতিবাদ করে, তখনই বাংলাদেশকে সুন্দর দেখায়। তরুণ প্রজন্ম, তোমাদের সালাম।
আর নীতিনির্ধারকদের বলি, এই যৌবনজলতরঙ্গ থামানো যাবে না। বাংলাদেশের হূদয়ের কথন শুনুন। তাদের চাওয়াকে ধারণ করুন। বাস্তবায়ন করুন।
Click This Link
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গিলে খাবো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা মে, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৯




যারা ফেনি এলাকা নিয়ে শংকিত তাদের জন্য এই পোস্ট। ইনশাআল্লাহ্‌ সেই ভুল করার মত সাহসও উনাদের হবে না। কেউ শিকার করতে গিয়ে নিজে শিকার হতে চায় না। আর সেনাবাহিনী এত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামে শ্রমিকের অধিকার: কুরআন ও হাদীসের আলোকে একটি সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ

লিখেছেন নতুন নকিব, ০১ লা মে, ২০২৫ দুপুর ১:১৬

ইসলামে শ্রমিকের অধিকার: কুরআন ও হাদীসের আলোকে একটি সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ভূমিকা

আজ ১ মে, মহান মে দিবস—শ্রমিক দিবস। এটি শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য অধিকার, মর্যাদা ও সংগ্রামের প্রতীকী দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবিক করিডোর: অযথাই ভয় পাচ্ছি সম্ভবত

লিখেছেন হাবিব ইমরান, ০১ লা মে, ২০২৫ দুপুর ২:১৬

ড.ইউনূসের ভালো কাজগুলোর সমর্থন করি। কিন্তু রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি এমন কাজ সমর্থন করি না।

আমার চিন্তাভাবনায় ভুল থাকতে পারে। কিন্তু ভয় কাটানোর কোন বাস্তবিক উপায় আছে?

রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।।চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা মে, ২০২৫ বিকাল ৪:০৮







চীনা বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সরকার চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ৮০০ একর জমিতে একটি চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য একটি ফাস্ট-ট্র্যাক প্রকল্প হাতে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বোকা শহীদ

লিখেছেন অধীতি, ০১ লা মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩০

হাসনাত, সার্জিসদের নতুন রাজনীতি করনের বয়ান মাটি চাপা পড়ে গেছে তাদের শুভাকাঙ্খীদের দানের গাড়ি আর উপহার সামগ্রীর ব্যবহারে। ফলে, তারা তাদের নৈতিক দিকটি হারিয়ে ফেলেছে। বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ ছড়িয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×