"Film as dream, film as music. No form of art goes beyond ordinary consciousness as film does, straight to our emotions, deep into the twilight room of the soul."
সিনেমা......কাব্যিক আঙ্গিকে গল্পের উপস্থাপনা, কখনও গল্পের আঙ্গিকে কাব্য। সহজাত বৈশিষ্ট্যে মানুষ কল্পনা করতে ভালবাসে, সিনেমা সেই কল্পনারই চিত্ররূপ। গত ছয়মাস ধরে একটা ছোট্ট প্রয়াস করছি, দেখি তো...প্রিয় অভিনেতা অভিনেত্রীর সিনেমাগুলো বেছে বেছে এনে একটা বুক্যে বানানো যায় কিনা...যেখানে অর্কিড থাকবে, ডেইজি থাকবে সাথে থাকবে ওয়াইল্ড রোজও। ফাইভ গ্রেটেস্ট স্টারের এই সিরিজ শুরু করেছিলাম অভিনেতাদের নিয়ে, তারপরে এক পর্বে অভিনেত্রীরা আসে, পর্যায়ক্রমে আবারও অভিনেতা, পরের পর্বে পুনরায় অভিনেত্রী। গত পর্বে আলোচনা হয়েছিল অভিনেতাদের নিয়ে। এবারকার পর্ব পর্যায়ক্রমিক সূত্র অনুসারে পাঁচজন অভিনেত্রীকে নিয়ে। প্রথম পর্বে, জেমস স্টুয়ার্টের Vertigo, জ্যাক নিকোলসনের The Shining, শ্যেন কনেরির Entrapment,টম হ্যাঙ্কসের Cast Away এবং ব্রাড পিটের The Curious case of Benjamin Button নিয়ে আলোচনা করেছিলাম. দ্বিতীয় পর্বটি পাঁচজন অভিনেত্রীকে নিয়ে লিখেছিলাম যেখানে, অড্রে হেপবার্নের My Fair Lady, মেরিল স্ট্রিপের Sophie’s Choice, জোডি ফস্টারের The Silence of the Lambs, হিলারি সোয়াঙ্কের Million Dollar Baby এবং ক্যামেরন ডায়াজের My Sister’s Keeper ছিল. অভিনেতা কেন্দ্রিক তৃতীয় পর্বে, গ্রেগরী পেকের Roman Holiday, ড্যানিয়েল ডে লুইসের My Left Foot , জেফ ব্রিজেসের Arlington Road, শ্যেন পেনের I am Sam এবং রাসেল ক্রোর A Beautiful Mind নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। অভিনেত্রী কেন্দ্রিক চতুর্থ পর্বে আলোচনা করেছিলাম সোফিয়া লরেনের Two Women , ফে ড্যানাওয়ের Chinatown , জুলিয়া রবার্টসের Stepmom , অ্যাঞ্জেলিনা জোলির The Bone Collector এবং জেনিফার কনেলির Dark Water নিয়ে. পঞ্চম পর্বটি ছিল অভিনেতা কেন্দ্রিক যেখানে, হেনরি ফন্ডার The Grapes of Wrath , রবার্ট ডি নিরোর Raging Bull, রবিন উইলিয়ামসের Awakenings, ক্রিশ্চিয়ান বেলের Rescue Dawn এবং জেরার্ড বাটলারের Law Abiding Citizens আলোচনা করা হয়েছিল. আজকে এই সিরিজের ষষ্ঠ পর্বে পাঁচজন অভিনেত্রী থাকছে…প্রথম জন, অ্যাভা গার্ডনার>> The Killers…দ্বিতীয় জন, জেন ফন্ডা >> Coming Home….. তৃতীয় জন, জুলিয়ান মুর>> Vanya on 42nd Street…চতুর্থ জন, র্যাচেল উইজ>> Agora এবং পঞ্চম জন হলেন, নিকোল কিডম্যান>> The Railway Man. পাঁচজন অভিনেত্রীর এই পাঁচটি সিনেমা নিয়ে আজকে বিস্তর আলোচনা থাকছে।
প্রথম মুভি:
“It's hard to tell who has your back, from who has it long enough just to stab you in it....”
ছোট্ট শহরতলীতে এক সন্ধ্যায় আগমন ঘটে দুজন প্রফেশনাল কিলারের... ম্যাক্স এবং অ্যাল। স্থানীয় এক ডাইনে ঢুকে তারা ‘সুইডি’ নামের একজনের খোঁজ করে এবং নির্দিষ্ট ব্যাক্তিটির খোঁজ না দেয়া পর্যন্ত বসে থাকা একজন কাস্টমার এবং ডাইনের শেফকে খুনি দুজনের একজন আটকে রেখে অপরজন মালিকের কাছ থেকে যাবতীয় তথ্য বের করে নেয়। খোঁজখবর নিয়ে আততায়ী দুজন সুইডির সন্ধানে বের হয়ে পড়লে ডাইনের মালিক কাস্টমার লোকটিকে বলে সুইডিকে সতর্ক করে আসতে। কাস্টমার লোকটি এবং সুইডি একইসাথে একই গ্যারেজে চাকরি করে, সহকর্মী তারা। সুইডিকে ধাওয়া করতে আসা খুনিদের ব্যাপারে অবগত করতে গেলে সে শুধুমাত্র নিশ্চিন্তমনে জানায়, ‘আমি আমার কৃতকর্মের ফল পেতে চলেছি!’ হতাশ হয়ে সহকর্মীটি ফিরে গেলে কিছুক্ষণ পর খুন হয় সুইডি এবং রহস্যময় এই খুনের তদন্ত শুরু হয়। লাইফ ইনস্যুরেন্স ইনভেস্টিগেটর জিম রিয়ারর্ডনের কাছে দায়িত্ব পড়ে সুইডির রেখে যাওয়া বীমার অর্থ হস্তান্তরের। সে এবং পুলিশ কর্মকর্তা স্যাম লুবিনস্কি (সুইডির ছোটকালের বন্ধু) মিলে নেমে পড়ে এক গভীর রহস্য উন্মোচনে। তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে জানতে পারে জিম, সুইডি একজন প্রফেশনাল বক্সার এবং ক্যারিয়ারের এক পর্যায়ে বক্সিং ছেড়ে দিয়েছিলো সে। সে সময়ে তার সাথে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল কিটি কলিন্স নাম্নী এক রহস্যময়ী নারীর। কেন খুন হয় সুইডি? রহস্যময়ী এই নারীর আসল পরিচয় কি? সুইডির মৃত্যুর পিছনে লুকিয়ে থাকে কোন রহস্য? নয়্যের গোত্রের এই মুভিটা অত্যন্ত পুরোনো শুধু সালে, গল্প বলার ধরণে তরতাজা......টানটান উত্তেজনার কমতি নেই এতে। আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ‘দ্য কিলারস’ নামের গল্পের এটি চিত্ররূপ মাত্র...যদিও নয়্যের বাদে এতে কিছুটা কেপারের বৈশিষ্ট্যও আছে। সুইডি চরিত্রে অভিনয় করেছেন বার্ট ল্যান্সেস্টার এবং রহস্যময়ী নারী কিটি কলিন্সের চরিত্রে অ্যাভা গার্ডনার। অভিনেতা কি করবে সেটা ব্যাক্তিনিরপেক্ষ ব্যাপার কিন্তু অভিনেত্রীর অংশটুকু হতবাক করবেই করবে….চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যের রহস্যময়ী নারী। সিনেমাটি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ১০০ টি নয়্যের সিনেমার মধ্যে অন্যতম একটি স্থান দখল করে আছে। না দেখলে চরম মিস।
If there's one thing in this world I hate, it's a double-crossing dame.
The Killers (1946)
IMDB rating: 7.9/10
Genre: Crime/ Thriller/ Mystery
Cast: Burt Lancaster, Ava Gardner, Edmond O'Brien
দ্বিতীয় মুভি:
“As if you were on fire from within.
The moon lives in the lining of your skin.”
স্যালি হাইড সশস্ত্রবাহিনী কর্মকর্তা বব হাইডের বিশ্বস্ত স্ত্রী...স্বামীঅন্ত্যপ্রাণ বলে যাকে। ববকে চাকরির সুবাদে মেরিন কর্পসের হয়ে ভিয়েতনাম যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়া হলে নিজের সুবর্ণ ক্যারিয়ারের জন্য সে যেতে রাজি হয়ে যায় স্ত্রীকে ফেলে। প্রথমদিকে স্যালি নিঃস্বঙ্গ জীবনের চিন্তাতে কিছুটা ভয় পেলেও,সশস্ত্রবাহিনীর আরেক সদস্যের গার্লফ্রেন্ড ভি ম্যানসনের সংস্পর্শে কিছুটা বদলায় তার চিন্তা। ভি এবং স্যালি একই বাড়িতে বসবাস করতে শুরু করে। ভি এর ভাই বিলি ম্যানসন ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে ফিরে আসে প্যারাপ্লেজিক হয়ে। স্থানীয় একটি হাসপাতালে সেচ্ছাসেবকের কাজ করে ভি, নিউট্রিশনিস্ট হিসেবে। তার দেখাদেখি স্যালিও নিজের অফুরন্ত সময় কাটানোর জন্য হাসপাতালটিতে সেচ্ছাসেবকের কাজে ঢুকতে আগ্রহ পোষণ করে। হাসপাতালটির রুগী মূলত যুদ্ধ থেকে ফেরত আসা পঙ্গু এবং মানসিক আঘাতের শিকার মানুষ। হাসপাতালে প্রথমদিন স্যালির সাথে ধাক্কা লাগে স্ট্রেচারে চলে ফিরে বেড়ানো বদমেজাজি লিউক মার্টিনের। বিলির মত লিউকও যুদ্ধ থেকে ফিরে এসেছিল আহত হয়ে এবং শরীরের নিম্নভাগ প্যারালাইজড তার। ধাক্কার লাগার পরে স্যালি নিজের একসময়ের সহপাঠী লিউককে চিনে ফেলে সহজেই...এবং তাদের সম্পর্ক এক নতুন আঙ্গিকে পৌঁছায়। স্যালির জীবনে লিউকের কি ভূমিকায় আসে নতুনভাবে? বব কি মেনে নিতে পারে স্যালির আকস্মিক পরিবর্তনগুলো? সিনেমার উল্লেখযোগ্য দিক মানবীয় সম্পর্ক হলেও, এর মাধ্যমে যুদ্ধের কিছু নেগেটিভ পয়েন্ট তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে সিনেমার মূল চরিত্র লিউকের কথাগুলো মনকে নাড়া দিবেই দিবে। যুদ্ধতে মানুষ যায় নিজের সবকিছু ফেলে রেখে, ফিরে আসে মানসিক শারীরিক ক্ষতবিশিষ্ট হয়ে......যা তাকে এবং শুধুমাত্র তাকেই বয়ে নিয়ে বেড়াতে হয় সারাজীবন। প্রভাব পড়ে তার ব্যাক্তিগত জীবনের প্রত্যেক দিকে। এরকমই ব্যাক্তিগত জীবনের এক ছোট্ট উপাখ্যান কামিং হোম। বাড়িতে ফিরে আসলেও, সাধের বাড়িটা, সম্পর্কগুলো যেন আর থাকে না আগের মত...চোখে আঙ্গুল দিয়ে এই বিষয়টা দেখিয়ে দেয় প্রত্যেক ধাপেই। লিউক মার্টিনের চরিত্রে আছে বিখ্যাত কন্যা অ্যাঞ্জেলিনা জোলির বিখ্যাত বাবা জন ভয়েট এবং স্যালি হাইডের চরিত্রে আছে বিখ্যাত বাবা হেনরি ফন্ডার বিখ্যাত কন্যা জেন ফন্ডা। জেন নিজেই এই সিনেমা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন, অ্যান্টি ওয়ার মুভমেন্টের অংশ হিসেবে। ভিয়েতনাম থেকে ফিরে আসা তারই এক প্যারাপ্লেজিক বন্ধু রন কোভিকের অনুপ্রেরণায় তৈরি করতে আগ্রহী হয়েছিল সে এই সিনেমা। রনের সাথে জেনের পরিচয় হয়েছিল অ্যান্টি-ওয়ার র্যালিতে। ১৯৭২ সালে ফেমিনিস্ট মুভমেন্টের সাথে জড়িত জেন তার এক বান্ধবী ন্যান্সি ডাউডকে অনুরোধ করেছিল সশস্ত্রবাহিনী কর্মকর্তার স্ত্রীর দৃষ্টিকোণে যুদ্ধের ফলাফলগুলো নিয়ে একটি চিত্রনাট্য লিখতে এবং এই চিত্রনাট্যই পরবর্তীতে পরিমার্জিত হয়ে আসল চিত্রনাট্যে পরিণত হয়েছিল ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরোধী মুভি তৈরিতে। হ্যাল অ্যাশবির পরিচালনায় নির্মিত এই মুভিটি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা জন ভয়েট এবং শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী জেন ফন্ডা সহ আরও কয়েকটি ক্যাটেগরিতে অস্কার জিতে নিয়েছিল সেই বছর। সম্পর্কগুলোর উপরে যুদ্ধের প্রভাব আরও একেবারে অন্যভাবে মুভিটি দেখাবে।
I wanted to be a war hero, man, I wanted to go out and kill for my country. And now, I'm here to tell you that I have killed for my country or whatever. And I don't feel good about it. Because there's not enough reason, man, to feel a person die in your hands or to see your best buddy get blown away. I'm here to tell you, it's a lousy thing, man. I don't see any reason for it.
Coming Home (1978)
IMDB rating: 7.3/10
Genre: Drama/ Romance/War
Cast: Jane Fonda, Jon Voight, Bruce Dern
তৃতীয় মুভি:
“The Play's the Thing, wherein I'll catch the conscience of the King.”
ভগ্নদশার থিয়েটারে এক বিকেলে সমাগম হয় বেশ কিছু মানুষের। উদ্দেশ্য অ্যান্টন চেকভের বিখ্যাত নাটক ‘আঙ্কেল ভানিয়া’ কে নতুনভাবে উপস্থাপন করা। ‘আঙ্কেল ভানিয়া’ নব্যরূপে উপস্থাপন সাথে জৌলুশহীন থিয়েটার...কম্বিনেশনটা কেমন হবে একটু ভাবুন তো? সাথে রয়েছে নাটকে অংশগ্রহণকারী মানুষগুলোর ক্যাজুয়াল পোশাক পরে নাটকে অংশ নেয়া!! হ্যা...ঘটনা কিছুটা হাস্যকর মনে হলেও, সিনেমার শুরুটা এমনই। ৯-১০ দশ জন লোক এক জায়গায় এসে জমায়েত হয়, বিখ্যাত একটি নাটককে নিজেদের মত করে নাট্যরূপ দিতে। ‘আঙ্কেল ভানিয়া’র নতুন রূপ...যেখানে সবকিছু এত সাবলীল ভাবে চলবে যাতে সেটাকে নাটক না নিজেদের জীবনের বাস্তবতা মনে হয়। চাকচিক্য নেই, নেই আতিসজ্জ্য, অলঙ্করণও নেই কোন। হয়ত এটাই কাহিনীর বিশেষত্ব। এবং সত্যি বলতে ‘আঙ্কেল ভানিয়া’ র নাটকের সেই প্লটটাই গল্প সিনেমার। উচ্চ শিক্ষিত একজন স্কলার প্রফেসর সেরিব্রায়াকোভ দ্বিতীয় স্ত্রী ইয়েলানাকে নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে দিন কাটানোর জন্য মফস্বলে চলে আসে। মফস্বলের জায়গা জমি দেখাশোনা করে প্রথম স্ত্রীর ভাই ভানিয়া এবং একমাত্র মেয়ে সোনিয়া। সেই জায়গায় যাওয়ার পরে প্রফেসরের সুন্দরী স্ত্রী ইয়েলানার সৌন্দর্যে প্রলুব্ধ হয় ভানিয়া এবং ভানিয়ার বন্ধু স্থানীয় ডাক্তার অ্যাস্ট্রভ। এরপর কি হয়??? বাকিটুকু সিনেমা দেখার জন্যই থেকে যাক। বিখ্যাত রাশিয়ান প্লেরাইট অ্যান্টন চেকভের ‘অ্যাঙ্কেল ভানিয়া’ র একধরণের ইনোভেটিভ উপস্থাপনা এই সিনেমা। প্রথম দশ-বিশ মিনিট প্রচণ্ড বিরক্ত লাগবে...কি ভাঙ্গাচোড়া লক্করঝক্কর থিয়েটার, এরপরে আট-দশজন মানুষ এগুলো করছে কি, পাগল হয়ে যায়নি তো এই খেয়াল আসবে মাস্ট !! সিনেমার অর্থবহ দিক দেখার জন্য কিছুটা ধৈর্য ধরতে হবে...এর অন্য ধরণের বৈশিষ্ট্য আছে, যার সাথে অন্য সিনেমার মিল খুঁজতে যাওয়াও ভুল। সিনেমার নামটাই একটা মজার বিষয়, পরিচালক লুইস ম্যালে সবাইকে সিনেমাটার রিহার্সাল করিয়েছিল পরিত্যক্ত একটি থিয়েটারে, যার অবস্থান নিউ ইয়র্ক সিটিতে ৪২ নম্বর স্ট্রিটে এবং নাম ছিল ভিক্টোরিয়া থিয়েটার। পরবর্তীতে সিনেমাটি তৈরি করা হয়েছিল আরও একটি পরিত্যক্ত থিয়েটারে, যার নাম ছিল আমস্টারডাম থিয়েটার, যার অবস্থানও কাকতালীয়ভাবে সেই ৪২ নম্বর স্ট্রিট-ই। সিনেমাতে যে যে কথোপকথন শুনতে পাবেন, তা সত্যি—ইঁদুরে খেয়েছে চেয়ার টেবিল, এগুলো ঐতিহাসিক এই নাটকের সজ্জা ইত্যাদি ইত্যাদি । সাজসজ্জা, অঙ্গসজ্জা, ক্যামেরা, লাইটের কারসাজি কিছুই নাই এতে.....শুধু আছে আটজন কলাকুশলী এবং তাদের সাধারণ অঙ্গসজ্জায় অসাধারণ অভিনয়। ‘থিয়েটার দেখছি’ মনে হবে মাঝে মাঝে, কিন্তু বাস্তবিক অর্থে সিনেমা এটা। জুলিয়ান মুর প্রফেসরের দ্বিতীয় স্ত্রী ইয়েলেনার ভূমিকায় রয়েছেন। জুরাসিক পার্কের দ্বিতীয় কিস্তি দিয়ে প্রথম পরিচয় এই অভিনেত্রীর সাথে। অভিনেত্রী কি মাপের...যারা তার মুভি দেখছেন নিশ্চয় বুঝতে পারছেন। অভিনয়ে ভার্সেটাইল সেই পরিমাণে...খলনায়িকা থেকে পাগল, উদ্বিগ্ন মায়ের অভিনয় থেকে শুরু করে ডিটেকটিভ সব জায়গায় অনবদ্য। এই সিনেমাটি পরিচালক লুইস ম্যালের শেষ সিনেমা ছিল। সাধারণ সিনেমা এটা, কিন্তু আলাদা অনেক ক্ষেত্রেই।
We shall rest to the songs of the angels in a firmament arrayed in jewels and we'll look down... and we'll see evil... all the evil in the world... and all our sufferings bathed in a perfect mercy... and our lives grown sweet as a caress.
Vanya on 42nd Street
IMDB rating: 7.5/10
Genre: Comedy/ Drama
Cast: Wallace Shawn, Julianne Moore, Phoebe Brand, George Gaynes
চতুর্থ মুভি:
“Fables should be taught as fables, myths as myths, and miracles as poetic fantasies. To teach superstitions as truths is a most terrible thing. The child mind accepts and believes them, and only through great pain and perhaps tragedy can he be in after years relieved of them.”
৩৯১ এ.ডি...আলেক্সজান্ড্রিয়া তখন রোমান সাম্রাজ্যের অংশ, মিসরীয় সাম্রাজ্যের নয়...অস্থির সেই সামাজিক প্রেক্ষাপটে হাইপেশিয়া নামের এক বিদূষীর উত্থান হয়েছিল অরাজক পরিস্থিতিতে। একাধারে সে ছিল গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ এবং দার্শনিক। পুরুষতান্ত্রিক গোঁড়া সমাজে হাইপেশিয়া সেই সময়ে নিও-প্লেটোনিক স্কুলের শিক্ষিকা ছিল যেখানে ভবিতব্য শাসকরা পড়তে আসত। হাইপেশিয়ার বাবা থিওন মিউজিয়াম অফ আলেক্সজান্ড্রিয়ার পরিচালক ছিল। বিজ্ঞানমনস্ক হাইপেশিয়ার আলেক্সজান্ড্রিয়াতে পাগানদের উপরে খৃস্টীয় শাসককূল নিজেদের প্রতিপত্তি চালানোর জন্য আক্রমণ চালাতে থাকে হরহামেশায়। হাইপেশিয়ার বাবা থিওন এবং ওরিসটিস বিষয়গুলো মেনে নিতে পারে না এবং শুরু হয়ে যায় অন্যরকম লড়াইয়ের...নিশ্চিহ্ন করতে হবে জ্ঞান, মুছে ফেলতে হবে সব তাত্ত্বিক বিষয়। এই সূত্রে আক্রমণ এসে বর্তায় স্বয়ং হাইপেশিয়ার উপরেও। কি হয় বিদূষী সেই নারীর সাথে? কি হয় তার বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তার? হাইপেশিয়া...ইতিহাসের হারিয়ে যাওয়া বিদূষী নারীদের অন্যতম। অনেকে জিজ্ঞেস করবে, কে ছিল সে? কি এমন করেছিল? অবদান কি তার? হাইপেশিয়া ছিল গণিতের বিভিন্ন শাখার উন্নয়নে অবদান রাখা প্রথম নারী। সে অনেকগুলো সূত্রের পুনর্বিন্যাস করেছিল তার পিতার সহযোগিতায়। হাইপেশিয়া অ্যালেক্সজান্দ্রিয়ার দার্শনিক এবং গণিতবিদ থিওনের কন্যা ছিল এবং তার পিতার আনুকুল্যে সে গণিতশাস্ত্রে অত্যন্ত দক্ষ হয়ে উঠেছিল। ৩৭০ এ.ডি তে জন্ম নেয়া হাইপেশিয়া অতি অল্প সময়ে- মাত্র ৩০ বছর বয়সে অ্যালেক্সজান্দ্রিয়ার প্লেটোনিক স্কুলের প্রধান পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিল। সে ঐ স্কুলে শুধু গণিতেরই শিক্ষক ছিল না, দর্শন শাস্ত্রের অংশ নিওপ্লেটোনিজম এরও শিক্ষক ছিল। ধারণা করা হয়, হাইপেশিয়ার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে ১১ ভাগ বিশিষ্ট টলেমির অ্যালমাগেস্টের বিস্তারিত আলোচনা, ইউক্লিডের এলিমেন্টেসের নতুন সংস্করণ, ডাইওফ্যান্টাসের অ্যারিথমেটিকার বিস্তারিত আলোচনা, অ্যাপোলোনিয়াসের কোনিক্সের বিস্তারিত বর্ণনা এবং টলেমির বিভিন্ন জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ক তত্ত্বগুলো। হাইপেশিয়া এই কাজগুলো করেছিল তার পিতা থিওন এর সহযোগিতায়। এছাড়া হাইপেশিয়া তরলের আপেক্ষিক ঘনত্ব মাপার যন্ত্র হাইড্রোমিটার আবিস্কার করে যার নাম হাইপেশিয়ার নামানুসারে হয়েছিল, আবার কারও কারও মতে হাইপেশিয়ার আবিষ্কারের অনেক আগে থেকেই এই যন্ত্র ব্যবহার করেছিল মিসরীয়রা। গণিতবিদ হাইপেশিয়ার অনেক কাজ নষ্ট করে ফেলেছিল তৎকালীন খ্রিস্টান শাসকেরা- হাইপেশিয়া যাদুবিদ্যা চর্চা করত, মানুষকে শয়তানের রাস্তায় নিয়ে যেত বলে!!! যে হাইপেশিয়া একাধারে দার্শনিক, জ্যোতির্বিদ, এবং গণিতবিদ ছিল তাকে চার্চের ক্রোধের কারণে অত্যন্ত বর্বরতার সাথে মেরে ফেলা হয়েছিল... কারণ সে সময়ে কুসংস্কারাছন্ন খ্রিস্টান সমাজ হাইপেশিয়ার দর্শন তত্ত্ব মেনে নিতে পারেনি। নিজের কাজ এবং জ্ঞানের মাধ্যমে কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া এই নারীটির প্রভাব এখনও রয়ে গেছে। আজকে আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে যা নিরূপণ করতে বসছি, শতাব্দী আগেই তা দিয়ে গেছে সে-ই..জ্যোতির্বিদ্যা থেকে গণিত কোনটাতে নেই সে? এই বিদূষী নারীর জীবনের সত্যিকার ঘটনা কিছুটা মডারেশন করে সিনেমাটি তৈরি করা হয়েছিল। র্যাচেল উইজকে প্রথম দেখেছিলাম দ্য মমিতে, কিন্তু এই আগোরাতেই সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে আমার। চমৎকার ঐতিহাসিক প্লট নির্ভর মুভি।
Ever since Plato, all of them - Aristarchus, Hipparchus, Ptolemy - they have all, all, all tried to reconcile their observations with circular orbits. But what if another shape is hiding in the heavens?
Agora (2009)
IMDB rating: 7.2/10
Genre: History/ Adventure/Drama
Cast: Rachel Weisz, Max Minghella, Oscar Isaac
বাস্তবের হাইপেশিয়ার চিত্র
পঞ্চম মুভি:
“Stab the body and it heals, but injure the heart and the wound lasts a lifetime.”
এরিক লোমাক্স...আর দশটা সাধারণ মানুষের মত তার জীবন গড়পড়তা...থোড়-বড়ি-খাড়া, খাড়া-বড়ি-থোড় পন্থার। পেশায় অবসরপ্রাপ্ত সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য এই মানুষটি প্রত্যেকদিন নিয়ম করে আসে ভেটেরান ক্লাবে এবং বন্ধু ফিনলের সাথে দু একটা কথা বলে আবারও নিজ গন্তব্যে ফিরে যায়। সখ একটাই তার, রেলওয়ে। সে উৎসাহী এই সেক্টরের বিভিন্ন ব্যাপারে...স্টেশনের গন্তব্য, ট্রেনের লাইনের ধরণ, কোনদিক দিয়ে কোন ট্রেন যায়, ট্রেনের সকল ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মুখস্ত তার। এভাবে একদিন ভুল ট্রেনে উঠে পরিচয় হয় তার প্যাটির সাথে...এবং এক দেখাতেই দুজনের সম্পর্ক গন্তব্যস্থল আচমকাই পেয়ে যায়। বিয়ে করে এরিক এবং প্যাটি। একদিন ঘুমন্ত এরিক হঠাৎ করে এক দুঃস্বপ্নের রাজ্যে চলে যায়...যে রাজ্যে তার মত অনেকেই বন্দি, অকথ্য নির্যাতন চলে তাদের উপর, সর্বোপরি নির্দিষ্ট একটা মানুষের চেহারা তাকে তাড়া করে ফেরে বারবার...তাকাশি নাগেসে। বাহ্যিক পরিবেশের যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলেও নিজের মনের সাথে যুদ্ধটা প্রতিনিয়তই করতে থাকে সে। সদ্য শুরু করা সংসার জীবনেও এমনকি প্রভাব পড়ে তার। পোস্ট ওয়ার ট্রমাতে আক্রান্ত এরিকের সাথে কি ঘটে? মানসিক এই আঘাত থেকে বের করতে পারে কি প্যাটি তাকে? তাকাশি নাগেসে কে? এই সিনেমা এরিক লোমাক্সের বেস্ট সেলিং অটোবায়োগ্রাফি ‘দ্য রেলওয়ে ম্যান’ অবলম্বনে তৈরি হয়েছে। এরিক লোমাক্স দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ১৯৪২ সালে সহকর্মীদের সাথে জাপানী বন্দিশিবিরে আটক হয়েছিল সিঙ্গাপুর আত্মসমর্পণের ঘটনার সময়। তাদেরকে প্রথমে চ্যাঙ্গি জেলে রাখা হলেও, পরবর্তীতে থাইল্যান্ডের কাঞ্চনাবুড়িতে নিয়ে গিয়ে রেললাইন বসানোর কাজে জোরপূর্বক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। ১৯৪৩ সালে সে সহ পাঁচ জন বন্দী কেম্পেতাইয়ে অকথ্য নির্যাতনের শিকার হয়েছিল এবং এরিক এই নির্যাতনের মানসিক আঘাত থেকে সহজে মুক্ত হয়নি পরবর্তীতে। তার নির্যাতনকারীদের অন্যতম ছিল তাকাশি নাগাসে।মানুষটা তার জীবনে দুঃস্বপ্ন হিসেবে আসত প্রতিনিয়ত। পরবর্তীতে এরিক কি করেছিল, নিজের সাথে চলতে থাকা যুদ্ধ সমাধানে... জানতে হলে সিনেমাটা দেখতে হবে। বহিরাগত যুদ্ধ থেমে যায় একসময়, কিন্তু অন্তঃস্থ সত্ত্বাতে তার প্রভাব যুগের পর যুগ থেকেই যায়...তুলির অসমাপ্ত টানের মত। এখানেও ঘটনা তাই। এরিকের চরিত্রে আছে দ্য কিং স্পিচের সেই তোতলা রাজা কলিন ফার্থ...এবং হতাশ করবেনা সে। এরিকের স্ত্রী প্যাটির চরিত্রে আছে নিকোল কিডম্যান...এরিকের বাস্তবজীবনের বেটার-হাফ প্যাটি অনস্ক্রিনেও অনবদ্য। অনেকগুলো অচিন্ত্যনীয় ব্যাপার আছে এই সিনেমাতে। সাথে মুক্তি, অনুতাপের এক অনন্য দৃষ্টান্তও।
At the beginning of time, the clock struck one. A drop of dew, and the clock struck two. From the dew grew a tree, and the clock struck three. Then the tree made a door, and the clock struck four. Then man came alive, And the clock struck five. Count not, waste not, the hours of the clock. Behold I stand at the door and knock.
The Railway Man (2013)
IMDB rating: 7.1/10
Genre: Biography/ Romance/ Drama
Cast: Colin Firth, Nicole Kidman, Stellan Skarsgård
বাস্তবের এরিক লোমাক্স (যখন আর্মিতে ছিল)
এরিকের দুঃস্বপ্নের মানুষ---তাকাশি নাগেসে
এরিক লোমাক্স এবং প্যাটি লোমাক্স
এই সিরিজের আগের পর্বগুলোর লিঙ্ক:
ফাইভ গ্রেটেষ্ট স্টার পর্ব ১—যে পাঁচটি ভিন্ন ঘরানার সিনেমা দেখে তাদের উপর ভালো লাগা আরও পাঁচ গুণ বেড়ে গিয়েছিল
ফাইভ গ্রেটেস্ট স্টার পর্ব ২—যে পাঁচটি ভিন্ন ঘরানার সিনেমা দেখে তাদের উপর ভালো লাগা আরও পাঁচ ধাপ বেড়ে গিয়েছিল
ফাইভ গ্রেটেস্ট স্টার পর্ব ৩—যে পাঁচটি ভিন্ন ঘরানার সিনেমা দেখে তাদের উপর ভালো লাগা আরও পাঁচ ধাপ বেড়ে গিয়েছিল
ফাইভ গ্রেটেস্ট স্টার পর্ব ৪—যে পাঁচটি ভিন্ন ঘরানার সিনেমা দেখে তাদের উপর ভালো লাগা আরও পাঁচ ধাপ বেড়ে গিয়েছিল
ফাইভ গ্রেটেস্ট স্টার পর্ব ৫ —যে পাঁচটি ভিন্ন ঘরানার সিনেমা দেখে তাদের উপর ভালো লাগা আরও পাঁচ ধাপ বেড়ে গিয়েছিল
**** এই লেখা সম্পূর্ণ রূপে আমার… পূর্বের কোন লেখার সাথে মিলে গেলে তা একান্তই co-incidence….no resemblance. আশা করি পোস্টটি ভালো লাগবে !!!! Happy Movie Watching !!!