“Ordinary matter is much more complex stuff than dark matter.”
মানুষ...যতটা না জটিল এর বহির্ভাগ, তার থেকে অনেক বেশি জটিল এর অন্তঃস্থ সত্ত্বা। জটিল সংখ্যার সাথে মানুষের চরিত্রের কিছু সাদৃশ্য রয়েছে...কখনও মূলদ, কখনও অমূলদ আবার কখনও বাস্তব, অবাস্তব রূপে চিহ্নিত হয় সেটা... কিন্তু ‘জটিল’ তার বিশেষত্ব। চিন্তার সুবিশাল জগতে কেউ বিভ্রম সৃষ্টি করে, কেউ বিভ্রমে পড়ে। কি চিন্তা করলাম, কি হলো, আসল ব্যাপারটাই বা কি??? আমি যা বুঝেছি, ব্যাপারটা কি তাই? আজকে ঠিক এরকম একটা স্প্যানিশ সিনেমা নিয়ে আলোচনা থাকছে যার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এই ‘বিভ্রম’ নামের জিনিসটা থাকবেই।
স্পেনের শহরাঞ্চল থেকে অদূরবর্তী এক জায়গা যেখানে কারো পদচিহ্ন পড়ে না সহজেই, লোকালয় থাকলেও সেখানে গুটিকয়েক মানুষের বাস। সিনেমার মূল ক্ষেত্র এরকম একটি জায়গা...চারিদিকে যা ছোট ছোট মার্শল্যান্ড অর্থাৎ জলাভূমি দিয়ে বেষ্টিত। মার্শল্যান্ড...যেসব এলাকাতে একটু বৃষ্টি হলেই পানি জায়গায় জায়গায় আবদ্ধ হয়ে ছোট ছোট বিল জাতীয় অংশের সৃষ্টি করে, এরকম জায়গাতে এক গভীর রহস্যের সূত্রপাত ঘটে। ২০ সেপ্টেম্বর, ১৯৮০ গুয়াড্যালকুয়িভার মার্শ...এই জায়গাতে আগমন ঘটে দুইজন পরস্পর বিপরীতধর্মী ডিটেকটিভ জুয়ান এবং পেড্রোর...জায়গাটিতে দুইটি মেয়ের হঠাৎ করে নিরুদ্দেশ হওয়ার ঘটনা তদন্ত করতে আসে তারা। জুয়ান এবং পেড্রো একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা, যেখানে জুয়ান কিছুটা উদ্ধত স্বভাবের, পেড্রো ঠাণ্ডা মাথার ।একই হোটেলে উঠে তারা। পরের দিন নেমে পড়ে কাজে, দুই বোনের নিরুদ্দেশ হওয়ার ঘটনা তদন্ত করতে...প্রথমে মেয়ে দুইটির বাবা-মায়ের সাথে কথা বলতে তাদের বাসায় যায় তারা। বাসায় যাওয়ার পরে, তারা দেখে বাবা আর মা আলাদা তথ্য দিচ্ছে মেয়ে দুইটির নিখোঁজের ব্যাপারে। তার বাবা যেখানে মেয়েদের নিরুদ্দেশের ঘটনাকে বলে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে কাজের সন্ধানে, সেখানে তাদের মা বলে মেয়ে দুইটির নিখোঁজের পিছনে নিশ্চয় কোন রহস্য রয়েছে। তাদের বাবা এও বলে যাওয়ার সময় মেয়ে দুইটি নিজেদের আকাউন্টের কাগজপত্র এবং কাপড় চোপড় বেঁধে নিয়ে গেছে। মেয়ে দুইটির ঘর তল্লাশি করতে গিয়ে পেড্রো ‘লেবার মার্কেট’ এর একটি লিফলেট ব্যতীত আর কিছু পায়না। বাসা থেকে বের হয়ে আসার সময় তাদের মা জুয়ানের হাতে একটি ফিল্মের নেগেটিভ দেয় এবং বলে তাদের মেয়ে দুইজন তাদেরকে এমনিতেই অনেক লজ্জার মধ্যে ফেলে গেছে। তাদের নিরুদ্দেশের কারণ সেই নেগেটিভ হলেও হতে পারে। এদিকে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলে, মেয়ে দুইটিকে তারা তিনদিন আগে এক সন্ধ্যাবেলায় একটি সাদাটে গাড়িতে উঠে যেতে দেখেছে এবং তাদের কেউ জোরজবরদস্তি নিয়ে যাচ্ছিল না, বরং হাসতে হাসতেই তারা গাড়িটিতে উঠেছিল। গাড়িটির ধরণ জিজ্ঞেস করা হলে সে বলে, তা ভয়েস ছিল কিন্তু নম্বর প্লেট বা মডেল নম্বর বলতে পারবেনা সে। স্থানীয় একজন ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা জেলেনী বলে, তার মৃত মা তাকে আগের রাতে স্বপ্নে বলে গেছে যে মেয়ে দুইটির সন্ধান পুরাতন ফার্মহাউজে গেলে মিলতে পারে। সেখানে রাতের বেলা স্থানীয় পুলিশের সদস্য সহ ডিটেকটিভদ্বয় গেলে একটি পরিত্যক্ত কুয়াতে তাদের মধ্যে একজনের একটি ব্যাগ পায়। স্থানীয় দুইটি লোকের খবরের সাপেক্ষে, পরের দিন সকালে, মেয়ে দুইটির লাশ পরিখাতে (Ditch) পায় তারা। তাদের দুইজনকেই অস্বাভাবিকভাবে খুন করা হয়....মিউটিলেশন বা অঙ্গহানির চরম পর্যায় বলে যাকে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। জুয়ান এবং পেড্রো খেয়াল করে, একই ধরণের ঘটনা বছরের পর বছর ধরে ঘটছে ঐ এলাকাটিতে এবং স্থানীয় কারোও কোন মাথা ব্যথা নেই তাতে। স্থানীয় ফেয়ারের সময়টাতে যখন শহর থেকে কিছু লোকের আগমন ঘটে সেই অঞ্চলে, সেপ্টেম্বর মাসেই একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর কৈশোর উত্তীর্ণ মেয়েদের নিরুদ্দেশ হওয়ার ঘটনাগুলো ঘটে থাকে। তারা শিকারে পরিণত হয় বিকৃত মানসিকতার কোন নারীবিদ্বেষীর। এদিকে মেয়ে দুইটির লাশ পাওয়ার সময় এক ফটোগ্রাফার জুয়ানকে দেখে পেড্রোকে তার অতীত সম্পর্কে কিছু একটা ইঙ্গিত দেয়ার চেষ্টা করে। কি উদেশ্য খুনির? কে সেই নারীবিদ্বেষী ব্যাক্তি? জুয়ান আর পেড্রো নিজেদের বিপরীতধর্মী স্বভাব এক ধারে রেখে কি পারে এই ভয়াবহ অপরাধীকে খুঁজে বের করতে? জুয়ানের অতীতই বা কি? সিনেমার সব থেকে মনোমুগ্ধকর দিক, এর সিনেমাটোগ্রাফি..... প্রকৃতির রহস্যময়তার সাথে গল্পের অপরাধটা কোথায় যেন সুন্দরভাবে নিজেকে মিশিয়ে ফেলেছে। সিনেমা শুরু হয়, কিছু বিক্ষিপ্ত মার্শল্যান্ডের স্যাটেলাইট ভিউ দিয়ে...যার সাথে অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের মস্তিষ্কের স্নায়ুসমূহের জটিল পথগুলোর সাদৃশ্য রয়েছে...অসম্ভব সুন্দর উপস্থাপন। মানব চরিত্রের গোলকধাঁধাঁ যেন মিলে যায় প্রকৃতির নিম্নভূমি তথা জলাভূমির নিজস্ব সজ্জার সাথে...যেন ব্যক্ত করে ‘আমরা কেউ সহজবোধ্য নই’!!! অস্তাচলে যাওয়া সূর্যটার সাথে ঘটনাটাও যেন দিনের পর দিন একই নিয়ম মেনে চলে...ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়...সকাল বেলা উদিত হয়ে, সন্ধ্যা বেলা মিলিয়ে যায়!!! সিনেমাটি ৯০ দশকের প্রেক্ষাপটে তৈরি, পোস্ট ফ্রাঙ্কো যুগ বলে যেটাকে। নিও-নয়্যের গোত্রের মুভি হওয়াতে খুব স্লো পেসে এগোয়। কিন্তু থ্রিলারের এই সাব ডিভিশনের নিজস্বতা বরাবরই আলাদা মাপের, একটা আলোছায়ার মত বিভ্রান্তিকর রহস্য রেখেই দেয় শেষ পর্যন্ত !!! দেখে মনে হতে পারে হতে পারে, True Detective এর সাথে মিল রয়েছে তো..!!! ওরকমই মনে হবে প্রথম প্রথম চরিত্রগুলো...কিন্তু দুইটা দুই মেরুর, কিছু কিছু দিক ব্যাতিরেকে। প্রধান দুইটি চরিত্রকে আলাদা আলাদা ভাবে ভালো লেগেছে, বলতে দ্বিধা নেই। যেখানে জুয়ান রগচটা...সেখানে পেড্রো সূক্ষ্ম মনস্তত্ত্বের, ঠাণ্ডা মাথার মানুষ। জটিল সংখ্যার সংখ্যারেখাটা কোথায় গিয়ে মিলবে...জানতে হলে দেখতে হবে মার্শল্যান্ড। অনেক অনেক পুরষ্কারে ভূষিত এই সিনেমা সময় নষ্ট করবে না আর কিছু হলেও...ক্রাইমের সেই মাপের ট্রিট। A great neo-noir movie which may enchant you not only by its story but also by its entice cinematography.
“Marshland 2014 (Original Title: La Isla Minima)”
IMDB rating: 7.4/10
Genre: Crime/ Thriller
Cast: Javier Gutiérrez, Raúl Arévalo, María Varod
Country of Origin: Spain
**** এই লেখা সম্পূর্ণ রূপে আমার… পূর্বের কোন লেখার সাথে মিলে গেলে তা একান্তই co-incidence….no resemblance. আশা করি পোস্টটি ভালো লাগবে !!!! Happy Movie Watching !!!
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৮