“Some people seem to fade away but then when they are truly gone, it's like they didn't fade away at all.”
‘কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল, সে মরে নাই’… রবি ঠাকুরের ছোটগল্প ‘জীবিত ও মৃত’ র একটি বিখ্যাত উক্তিকে কিছুটা পরিমার্জিত করে আজকের শিরোনাম দিলাম... ‘কাদম্বরী মরিয়া প্রমাণ করিল, সে মরে নাই’ । হ্যাঁ সেই কাদম্বরী দেবীর কথায় বলছি... রবি ঠাকুরের শৈল্পিক সৃষ্টিগুলোর প্রেরণা ছিলেন যিনি...জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহধর্মিণী। অনেকেই তার সাথে রবি ঠাকুরের সুপ্ত প্রণয়োপাখ্যান বর্ণনা করেছেন সাবলীলভাবে!! তার প্রণয়ের সম্পর্ক নিয়ে চর্চা চলে বেশি, যতটা না তার নিজ অস্তিত্ব ঘিরে...মানবসৃষ্ট প্রণয়োপাখ্যানের ট্রাজিডিক নায়িকা ছাড়া কাদম্বরী দেবী কি আর কিছুই ছিলেন না? কাদম্বরী দেবীর জীবনকাল রহস্যে ঘেরা না থাকলেও তার মৃত্যু অনেক বেশি রহস্যমণ্ডিত ছিল। অনেকে বলেন রবি ঠাকুরের বিবাহের চার মাসের মাথায় তার আত্মহত্যার ঘটনা নাকি নিছক অভিমান ছাড়া আর কিছু নয়। সত্যি কি তাই? না এর পিছনে লুকিয়ে রয়েছে আরও কোন ঘটনা। আজকের ব্লগ স্বয়ং কাদম্বরী দেবী এবং খুব সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কাদম্বরী’ মুভিটি নিয়ে...
কাদম্বরী দেবীর ইতিবৃত্ত :
১৮৫৮ সালের দিকে জন্ম নেয়া কাদম্বরী দেবী ছিল ঠাকুর বাড়ির কর্মচারীর মেয়ে। তার বাবা ঠাকুরদের বাজার হাট করে দেয়ার, ফরমায়েশ পূরণ করার কাজ করত। অনেকে প্রশ্ন রাখবে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে কর্মচারীর মেয়ে কিভাবে ঘরের বৌ হল? ঠাকুর পরিবার ব্রাহ্ম সমাজের অনুসারী বিধায় তাদের কোন ধরণের কূলভেদ প্রথা ছিল না মূলত কি তাই? এটা আংশিক সত্য, পুরোটা না। ঠাকুর পরিবার পিরালী ব্রাহ্মণ গোত্রীয় এবং এই শ্রেণীর ব্রাহ্মণেরা অতিশয় গোঁড়া মানসিকতা সম্পন্ন নয় আদিকাল থেকেই... ডোমের হাতে ভাত খেতে নেই, মেথরের ছোঁয়া লাগতে নেই এগুলো তৎকালীন সমাজের অন্ধ এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন নিয়ম কানুন তারা মানত না।কিন্তু তাদের প্রতিপত্তির কারণে তাদের সমপর্যায়ের উচ্চবংশীয় মানুষেরা তাদের বিরুদ্ধে কোন কথাও বলতে পারত না, পক্ষান্তরে তারা একটু সংকীর্ণ চোখে দেখত পিরালী ব্রাহ্মণ ঠাকুরদের। এসব কারণে উচ্চবংশীয় কোন পরিবার সাধারণত নিজেদের মেয়ের বিবাহের সম্বন্ধ ঠাকুর বাড়িতে করতে অপারগ হত। সেই ক্ষেত্রে ঠাকুর বাড়ির কর্মচারী কিন্তু বংশ পরিচয় ভালো, সম্বন্ধের ক্ষেত্রে এসব পরিবারের মেয়েদের একটা প্রাধান্য থাকত তাদের কাছে। কাদম্বরী দেবী সেরকম একজন ছিলেন এবং সে ছোটকালে ঠাকুরবাড়িতেই মানুষ হয়েছিলেন। তার বিবাহ সম্পন্ন হয় দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুপুত্র জ্যোতিরিন্দ্রনাথের সাথে, বয়সে যে তার থেকে দশ বছরের বড় ছিল। তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থায় ঠাকুর বাড়িতে মেয়েদের শিক্ষাব্যবস্থার উত্তম পরিবেশ ছিল। তারা নারীশিক্ষা, চিন্তার স্বাধীনতা, ব্যাক্তি পরিস্ফুটনের ব্যাপারে অন্যান্য অনেক উচ্চকূলশীল পরিবারের তুলনায় আলাদা ছিল। ১৮০০-১৯০০ শতকে বাঙালি উচ্চবিত্ত সমাজের নারীদের শিক্ষিত হওয়া যেখানে অচিন্ত্যনীয় ব্যাপার ছিল, নারীরা অসূর্যস্পর্শ্যা হয়েই জীবন পার করে দিত কোন কোন ক্ষেত্রে...সেখানে ঠাকুর পরিবার তাদের ঘরের নারীদের জন্য শিক্ষা, সংস্কৃতির পরিবেশ কিছুটা হলেও উন্মুক্ত করেছিল। কাদম্বরী দেবী তার স্বামীর তত্ত্বাবধানে শিক্ষালাভ করেছিল বিবাহ পরবর্তী জীবনে। কিন্তু সে কিছুটা নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে ঠাকুর বাড়ির বৌ হওয়ায় সেই পরিবারের অনেকেই সেটা স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখেননি এবং মেনেও নিতে পারেননি বিশেষত সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তার পত্নী জ্ঞানদানন্দিনী দেবী। অত বড় বাড়িটিতে স্বামী ভিন্ন তার কথা বলার একমাত্র সাথী হিসেবে এগিয়ে আসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথের অসংখ্য সাহিত্যকর্ম এমনকি শেষ বয়সের চিত্রকর্মের প্রেরণা এবং আধার সেই কাদম্বরী দেবীই ছিল। ‘তোমারেই করিয়াছি জীবনেরই ধ্রুবতারা...এ সমুদ্রে আর কভু হব নাকো পথহারা ’ কথাটি যেন রবি ঠাকুরের সাথে তার বৌঠানের আত্মিক এবং পারলৌকিক সম্পর্ককে নির্লিপ্তভাবে ব্যাখ্যা করে। রবীন্দ্রনাথ রচনা করতেন, কাদম্বরী নিজের জীবদ্দশাতে তা পরিমার্জন। তাকে সংশোধনের দায়ভার, সাহিত্যের ভুলত্রুটির অভিভাবকত্ব কাদম্বরীই যেন নিয়েছিলেন। অনেকে বলে থাকেন ‘নষ্টনীড়’ এর ছোটগল্প নাকি রবি ঠাকুর আর কাদম্বরী দেবীর জীবনেরই গল্প... একাকিনী চারুশশী যেমন অমলকে নিজের মনস্তত্ত্বের সঙ্গী এবং সুখ দুঃখের অবলম্বন বানিয়েছিল, কাদম্বরীও ঠিক তাই। অনেকে তাদের ঘিরে রগরগে প্রেমের উপাখ্যান তৈরি করেছেন বছরের পর বছর ধরে...... মেনে নিতে পারেনি রবি ঠাকুরের জীবনে আরেক মানুষের আগমন, এই কারণে কাদম্বরী মরেছিল !! সে আগেও বিতর্কে ছিল, এখনও... তাকে নিয়ে তত্ত্বের কমতি নেই... কিন্তু সত্যি তার জীবন যদি খুব খতিয়ে দেখা হয় অনেক বেশি দুঃখজনক ছিল তার পরিণতি। নষ্টনীড়ের ঘটনাটিও যদি দেখা যায় তাদের সম্পর্কের উপাখ্যান রূপে ,সেখানে কি কোন রগরগে প্রেমের চনমনে বর্ণনা আদৌতে রয়েছে? অপেক্ষা আর দীর্ঘশ্বাস এর মাধ্যমে চারুর দিন শেষ হয়... কাদম্বরীর পরিণতিও কি তাই নয়? কাদম্বরী দেবী বিহারীলাল চক্রবর্তীর অত্যন্ত গুণগ্রাহী ছিল এবং বিহারীলালও তাকে খুব স্নেহের চোখে দেখতেন। সারদামঙ্গল প্রকাশের পর কাদম্বরী দেবী বিহারীলালকে এক খানি আসন বুনে দিয়েছিলেন দুই ছত্র পঙক্তি সহ--
‘হে যোগেন্দ্র! যোগাসনে ঢুলু ঢুলু দু-নয়নে
বিভোর বিহ্বল মনে কাঁহারে ধেয়াও? ’
সেই বিহারীলালের-ই কিছু কিছু কথার সাথে কাদম্বরী দেবীর জীবন যেন দৈবিকভাবে মিলে যায়—
‘হা নাথ! হা নাথ! গেল গেল প্রাণ,
মনের বাসনা রহিল মনে!
ধেয়ায়ে ধেয়ায়ে সে শুভ বয়ান,
বিরহিণী তব মরিল বনে।
এস এস অয়ি এস এক বার,
জনমের মত দেখিয়ে যাই;
এ হৃদয়-ভার নাহি সহে আর,
দেখে ম’লে তবু আরাম পাই।
হা হতভাগিনী জনমদুখিনী!
শিরোমণি কেন ঠেলিনু পায়;
মাণিক হারালে বাঁচে না সাপিনী,
শুনেছিনু তবু হারানু হায়!
অয়ি! নাথ তুমি দয়ার সাগর,
আনি মাতাপিতা-বিহীনা বালা;
আহা! তবু কত করিয়ে আদর
খুলে দিলে গলে গলার মালা।
আবোধিনী আমি কেহ নাই মোর,
কেন শুনে কান ভাঙানো কথা
ফিরে দিনু তব প্রেম-ফুল-ডোর;
বুঝিতে নারিনু ব্যাথীর ব্যাথা!
সেই তুমি সেই সজল নয়ানে,
কাতর হইয়ে গিয়েছ চলি;
যে বিষম ব্যাথা পেয়েছি পরাণে,
এ বিজন বনে কাহারে বলি।
খেদে অভিমানে চলি চলি যায়,
ফিরে নাহি চায় আমার পানে;
দেহে থেকে যেন প্রাণ লহে ধায়,
যাই যাই আমি, যায় যেখানে।
পিছনে পিছনে তোমার সহিতে,
ধেয়েছিনু নাথ আনিতে ধোরে;
মান লাজ ভয় আসি আচম্বিতে,
ধোরে বেঁধে যেন রাখিল মোরে।
হাঁপায়ে উঠিল প্রাণের ভিতর
বিঁধিতে লাগিল মরম-স্থান;
ডুবিল তিমির ধরা চরাচর,
ঘোর অন্ধকার হইল জ্ঞান। ’
অবশেষে এই কাদম্বরী দেবীই আত্মহত্যা করেছিলেন ১৮৮৪ সালের ২১ শে এপ্রিল মাত্রাতিরিক্ত আফিম সেবনে। প্রবঞ্চনায় সে নিজের প্রাণ সমর্পণ করেছে নাকি প্রণয়ে, অভিমানে মরেছে নাকি পারিবারিক অশান্তির শিকারে কোনটারই স্বচ্ছতা ঠিকভাবে নাই এটা যেমন সত্যি তেমন আরেকটি ব্যাপারও লক্ষণীয়, তার আত্মহত্যা সম্পর্কে ঠাকুর পরিবার আগাগোড়াই নির্বিকার এবং নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছিল। হাজারো বিতর্কের সূচনা তার পর থেকেই...রবি আর কাদম্বরীর সম্পর্ক যেন শুধু গুপ্ত প্রণয়ের সুপ্ত উপাখ্যান হয়ে পড়ল...এর বেশি আর কিছু নয়। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকর্মের অন্যতম প্রেরণাদাত্রী এই অনন্য মানুষটি হয়ে পড়ল ঠাকুর পরিবারের বিতর্কিত সদস্যা। এবং সেই সাথে কাদম্বরী মরিয়া প্রমাণ করিল যে সে মরে নাই।
কাদম্বরী সিনেমার সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ
সিনেমা শুরু হয় নতুন বৌঠান কাদম্বরীর মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে। কি কারণে, এবং ঠিক কেন সে নিজের এমন পরিণতি টানতে বাধ্য হয়েছিল সেই ঘটনা উন্মোচিত করেছেন পরিচালক মহাশয় সর্বশেষে। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে এই নতুন বৌঠানের আগমন ঘটেছিল ১২৭৫ বঙ্গাব্দের আষাঢ় মাসের এক রবিবারে। দশ বছর বয়সী কাদম্বরী দেবীর বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল উনিশ বছর বয়সী জ্যোতিরিন্দ্রনাথের সাথে। ঠাকুর বাড়িতে তার বয়সী বলতে আর কেউ ছিল না সেই সময়... শুধুমাত্র তার দুইবছরের ছোট ঠাকুরপো রবীন্দ্রনাথ বাদে। কাদম্বরী ছিল ঠাকুর বাড়ির কর্মচারীর মেয়ে...ঠাকুর বাড়ি খুব একটা রক্ষণশীল এবং জাত-কূল ভেদাভেদ সম্পন্ন না হলেও উচ্চ-নিম্ন কূল জ্ঞান তাদের বাড়ির কিছু কিছু মানুষের মধ্যে ভালো ভাবেই ছিল। বিবাহের পর থেকে কাদম্বরী বুঝতে পারে তার বাবা আর কিছু হলেও উচ্চবিত্ত এই পরিবারের আত্মীয়ের সম্মান পাবে না। সব কিছু মেনে নিয়ে সংসার করতে থাকে সে। স্বামী জ্যোতিরিন্দ্রনাথ অনেক বড় মানসিকতার মানুষ হলেও সঙ্গী হিসেবে তাকে কখনই সময় দিতে পারতেন না বিভিন্ন অজুহাতে। তার ব্যবসা, প্রিন্টিং শিল্প তার কাছে মুখ্য বিষয় ছিল,আর কাদম্বরী দেবী সুসজ্জিত আসবাব স্বরূপ। ঠাকুরবাড়ি খুব একটা রক্ষণশীল এবং গোঁড়া পরিবার না হওয়ায় এই বংশের মেয়ে, বৌরা সাহিত্য, শিল্প, সংস্কৃতি চর্চার জন্য পুরুষদের মতই সমান সুযোগ পেত। ঘরের বৌ রান্নাও করবে, বঙ্কিমচন্দ্রের বঙ্গদর্শনও পড়বে... বিভেদ ছিল না। নতুন বৌঠানের বিশেষত্ব ছিল তার সংস্কৃতিমনা চিন্তা চেতনা। যখন থেকে সে ঠাকুর বাড়িতে আসে তার পর থেকে সে সারা বাড়ি ঘুরে ঘুরে এর ওর সাথে কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে নিজের জ্ঞানের সীমিত ভাণ্ডারকে ব্যাপ্ত করতে থাকে। আর তার খেলার, খুনসুটি করার, মনস্তত্ত্বের সঙ্গী হয়ে পড়ে ঠাকুরপো রবি। রবি কিছু একটা লিখলে প্রথমেই দেখাতে নিয়ে আসত তার নতুন বৌঠানকে। কাদম্বরী নিজের গভীর দৃষ্টিকোণে তার ভুলগুলো সংশোধনে কখনও ত্রুটি করত না। তার অন্দরমহল শূন্য থাকলেও, অন্তরমহল পরিপূর্ণ ছিল। তার এই বৈশিষ্ট্যের কারণে তাকে এমনও শুনতে হয়েছে ‘ঠাকুর বাড়ির বৌ হয়েছ বলে কি রান্না ঘরে আসতে নেই, সারাদিন সাহিত্যচর্চা নিয়ে থাকলেই হবে’...সবার মাঝে থেকেও কাদম্বরী কোথায় যেন একা ছিল। যে মানুষটি অভিভাবকত্ব নিয়ে কাদম্বরীকে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে নিয়ে আসে, এক সময় তার কাছেই সে মূল্যহীন হয়ে পড়ে। তাকে বরণ করে নিতে হয় নিয়তির অসীম পরিহাস। ঠিক কি কারণে কাদম্বরী আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়? রবির সাথে প্রণয়ঘটিত সম্পর্ক মূখ্যত দায়ী না অন্য কিছু? যদি প্রণয়ঘটিত কোন কারণে সে আত্মহত্যা করেই থাকে তাহলে তার ময়নাতদন্ত কখনও হয়নি কেন? ঠাকুরবাড়ির সদস্যরা মৃত্যুর সম্পর্কে কোন মাথা ব্যথা আর করেনি কেন? এই সিনেমা দেখার আগ্রহ সৃষ্টি হয় একটা কারণেই, এর শিরোনাম---‘কাদম্বরী’… এই একটা চরিত্র নিয়ে বছরের পর ধরে এত বেশি বিতর্ক হয়েছে যে বলতে বাধা নেই ‘কাদম্বরী মরেও বাঁচে নি’। সিনেমার ভুল ভ্রান্তি প্রচুর চোখে পড়বে, বিশেষ করে ১৯০০ শতকের আন্দাজে তাদের জীবনযাত্রার প্রণালী। তিন তলা কেক থেকে গ্লসি পেপারের বঙ্গদর্শন...অনেক কিছুরই অসম বিন্যাস রয়েছে এতে। কিন্তু এসব কিছু বাদ দিলে যদি সিনেমার দিকে তাকানো যায় তাহলে বলব, একবার হলেও দেখা উচিত। একা কাদম্বরী নিজের মৃত্যুর জন্য দায়ী যে নয় তা কিছুটা হলেও বুঝতে সক্ষম হয়েছি এই সিনেমা দেখার পর। মানুষের অবজ্ঞা, সম্মানের নামে প্রবঞ্চনা বেশিদিন চিত্তে সয় না... ১৯০০ সালের কাদম্বরী আর ২০০০ সালের আলেয়া বিবির মধ্যে খুব একটা বেশি যে পার্থক্য নেই তা দুর্বোধ্য ব্যাপার মনে হয়না এটা দেখার পর। জন্ম থেকে জন্মান্তরে মেয়ে মানুষ দোষী ছিল, দোষী থাকবে... প্রবঞ্চনা সইতে না পেরে আত্মহত্যা করলে মানুষ বলবে ‘কুলটা ছিল হয়ত, যা হয়েছে ভালোই হয়েছে’! কাদম্বরী দেবীর চারিত্রিক ব্যবচ্ছেদ এর বাইরে কেউ তার একটা আলাদা মনস্তাত্ত্বিক দিক নিয়ে ভালভাবেই বিশ্লেষণ করেছে সিনেমাটাতে। সুমন ঘোষের পরিচালনা ত্রুটিপূর্ণ হলেও যুক্তিশূন্য মনে হবে না।
“কাদম্বরী ২০১৫”
অভিনয়: কঙ্কনা সেনশর্মা, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, শ্রীকান্ত আচার্য, কৌশিক সেন।
কাদম্বরী দেবীর জীবনাবসানের পর বিহারীলাল চক্রবর্তী তাকে উৎসর্গ করে ‘সাধের আসন’ নামের একটি কাব্যগ্রন্থ লেখেন যার কয়েক লাইন উদ্ধৃত করে আজকের পোস্টের ইতি টানব—
‘হা দেবী! কোথায় তুমি
গেছ ফেলে মর্ত্যভূমি?
সোনার প্রতিমা জলে কে দিল রে বিসর্জন?
কারো বাজিল না মনে,
বজ্রাঘাত ফুল-বনে!
সাহিত্য-সুখের তারা নিবে গেল কি কারণ?
ওই যে সুন্দর শশী,
আলো করে আছে বসি!
চিরদিন হিমালয়,
কি সুন্দর জেগে রয়!
সুন্দরী জাহ্নরী চির বহে কলস্বনে;
সুন্দর মানব কেন,
গোলাপ-কুসুম যেন-
ঝ’রে যায়, ম’রে যায়, অতি অল্পক্ষণে!’
**** এই লেখা সম্পূর্ণ রূপে আমার… পূর্বের কোন লেখার সাথে মিলে গেলে তা একান্তই co-incidence….no resemblance. আশা করি পোস্টটি ভালো লাগবে !!!!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১৫ দুপুর ২:১৩