১।
প্রাচীন বাংলার খুব কম সময়ই একই বংশের হাতে স্থিতিশীল ছিল।এই অঞ্চল একের পরে এক শাসকের করতলগত হয়েছে। কিছু কিছু ব্যতিক্রম বাদে। এদের অন্যতম শাসনামল গুপ্ত রাজবংশের। ধনে ধান্যে এসময় বাংলা খুব ঐশ্বর্যশালী হয়ে ওঠে। এই আমলের একটা বৈশিষ্ট্য - সম্পদ সৃষ্টির পেছনের প্রভাবক ও নিয়ন্ত্রক ছিল -শেঠ , উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আমলা , সওদাগর , ব্যবসায়ী ও কারিগর শ্রেনীর কাছে।
মুক্ত বিশ্ববাণিজ্যের ধারণা এখন আমদানী হয়েছে বলে মনে হলেও বাংলায় অনেক আগেই ব্যবসার প্রসারে দেশে বিদেশে এই তত্ত্বের সফল প্রয়োগ হয়েছিল।এককালীন সার্থক বেনিয়া পরিচয় থেকে যে তার অনেক অবনতি ঘটেছে, ব্যবসায়ীসুলভ সততা ও মূল্যবোধের অবক্ষয় এজন্য অনেকখানি দায়ী ।সামাজিক ভাবে যখন স্থায়ী লাভের চেয়ে ক্ষণস্থায়ী লোভের দিকে ঝোঁক চাপে তখন এমনই তার ফলাফল। প্রায় সর্বস্তরে যথেচ্ছা যার যার মুনাফা লুটে নেয়া সৎ ব্যবসার ধারায় কোনমতে পড়ে না, কিন্তু আমাদের এখনকার ব্যবসার চূড়ামণিরা এই অন্যায় ও তার কুফল সম্পর্কে প্রায় নির্বোধের মতো অচেতন।এত নীতি(?) শেষমেষ বুমেরাং হয় এবং গুডউইল ধ্বংসের মধ্য দিয়ে । তখন আবার বণিক শ্রেনীকেই এর সবচেয়ে বেশী মাশুল গুণতে হয়।একারণেই হয়তো যদিও বলা হচ্ছে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, নতুন নতুন ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠছে লক্ষণীয় মাত্রার কোন পরিবর্তন নাগরিক জীবনে দেখা যাচ্ছে কই?
আবার ফিরে যাই পেছনে।গুপ্ত শাসনের পড়ে প্রথাগতভাবেই চিরটাকাল রণক্ষেত্র হয়ে থাকা লোভনীয় এই ভুখন্ডে অনেক খানি সময় পর্যন্ত সংহত কোন রাজবংশ প্রতিষ্ঠা পায় নি। দৃশ্য পটের বদলে ক্ষমতায় আসে প্রভাবশালী পাল বংশ(৭৫০-১১২০)। চার শতকের লম্বা সময়কালে বাংলায় আরও অপার সমৃদ্ধি ও সম্পদে ভরপুর হয়ে ওঠে। আগের গুপ্ত যুগের সাথে এই যুগের তফাৎ ছিল এই যে, এই সময়ের অর্থনীতির মূল চালিকা বা প্রভাব ও সুবিধাভোগী -যাই বলা হোক তা হয় মূলত কৃষিজীবিদের দৌলতে। এই সময়সীমা ''বাংলার স্বর্ণযুগ'' হিসেবে কথিত হয়।এর আগে বাংলা কখনো এত উন্নতি ও সমৃদ্ধি লাভ করতে পারেনি। ''বাণিজ্য বসতে লক্ষী'' এই প্রবাদ বাক্যটি কে না জানে? যদিও কৃষিই এই সাম্রাজ্যের অর্থনীতির পিছনে মূল শক্তি ছিল, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ গুলো জুড়ে সওদাগরী লেনদেনে অন্যতম আধিপত্যকারী পাল ডাইনেস্টির সাফল্য উপরের বাক্যটির যথার্থতাই প্রকাশ করে।
এরপরে সেন বংশ শাসনভার অর্জন করে , ২য় রাজা বল্লাল সেনের চালু করা বর্ণ প্রথা যার ড্রামাটিক প্রভাব তখনকার সমাজ , রাজনীতি , অর্থনীতির সাথে সাথে এখনও বিশেষ করে ভারতের প্রত্যন্ত হিন্দু অধুষ্যিত এলাকায় গেলে কিছু কিছু পরিমাণে এখনও পাওয়া যাবে। বলাবাহুল্য এই প্রথা সমাজের মাঝে শ্রেনীতে শ্রেনীতে কাল্পনিক মানবসৃষ্ট বিভেদ তৈরী ছাড়া তেমন কোন ভালো অবদান রাখতে পারে নি।
এট আগে পর্যন্ত এতকাল বৌদ্ধ ও হিন্দু মতের অনুসারী রাজাদের শাসনে চলেছিল ।এর প্রভাব প্রশাসনেরও পড়েছিল । অনেক ধর্মে বর্ণে জাতে ভাষায় রঙিন এই অঞ্চলে এর পরের সময়টা থেকে উপমহাদেশে ইসলামের প্রচারকগণের আগমনও শুরু হয়। এই সময়কার বারভূঁইয়াদের প্রতাপ এখন কিংবদন্তীর জায়গায় চলে গেছে।তাদের স্বাধীনচেতা বৈশিষ্ট্যও বীরত্বের পিছনের কারণটা ছিল বাংলার ঐশ্বর্য। যে নিজের অর্থে স্বনির্ভর স্বচ্ছ্ল তারই মাথা উঁচু করে চলার সামর্থ্য ও সাহস দেখানো সম্ভব। প্রবল ক্ষমতাধর মুঘল আমলেও এই কারণেই বাংলাকে ঠিক যাকে বলে কব্জা করে তোলা সেটা কিন্তু অনেক দিন পর্যন্ত সম্ভব হয় নি।
২।
মুঘলদের একাধিপত্যের আগে শের শাহ সুরি এই এলাকা দখল করলেও ১৫৪৫ সালে তার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত মাত্র পাঁচ বছরেই বাংলার ও সার্বিকভাবে তার পুরো সাম্রাজ্যের জন্যই অবিস্মরণীয় এক কীর্তি রেখে যান '' গ্রান্ড ট্যাঙ্ক রোড ''স্থাপনার মাধ্যমে।একটি রাষ্ট্রের সার্বিক সামরিক , প্রশাসনিক , আর্থিক সুব্যবস্থায় একটি সুপরিকল্পিত যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম।এখনও পর্যন্ত টিকে থাকা ২৫০০ কি.ম. ব্যাপী এই সড়কব্যবস্থায় যত রকমের সুবিধাদি কল্পনা করা যেতে পারে তৎকালীন সমাজের সম্ভবপর সবই ছিল। ছিল মাইলফলক, সরাই , পানির ব্যবস্থা, এমনকি রাস্তার দুপাশে ছায়াপ্রদানকারী গাছ পর্যন্ত। দূরদর্শী বাদশাহের করা তু্ল্য এইরকম আরেকখানা প্লানড সড়কসমষ্টি এখনকার স্বাধীন বাংলাদেশেও দুটি মিলবে না। সর্বত্রই উটকো এলোমেলো রাস্তা, মহাসড়ক,উড়ালসেতু , অগণিত চূড়ান্ত অলিগলির অব্যবস্থাপনা ছাড়া। মনে হয় এখনকার রাস্তাঘাটে তৈরীর সবচেয়ে বড় কারণ নির্বাচনী প্রচারে বলার মত কিছু একটা থাকা আর ক্ষমতাসীন অনুগত ঠিকাদারের শ্রীবৃদ্ধি। আচ্ছা, জানেন কি , গ্রান্ড ট্যাঙ্গ রোডের যাত্রা শুরু হয়েছিল কোথা থেকে? আমাদেরই প্রিয় চট্টগ্রাম এই সুবিখ্যাত রোডটার ওরিজিনেটিং পয়েন্ট!
এই রোড নেটওয়ার্ক সেসময়কার অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছিল। এরপরের মুঘল আমল-রাজ্যবিস্তারের পালায় আগেই বলা হয়েছে, বাংলাকে দখল করাটা ওদের জন্য মোটেই সোজা কিছু ছিল না যথেষ্ট শৌর্যশালী হবার পরেও। ১৫৭৫ থেকে ১৭১৭ পর্যন্ত লম্বা সময় খোদ মুঘল কোর্ট নিযুক্ত গভর্নররা এ ই সময়ের বাংলার স্বায়ত্বশাসিত কার্যত প্রায় -স্বাধীন নবাবদের কাছ থেকে নামেমাত্র আনুগত্য নিয়ে তুষ্ট থাকতে বাধ্য ছিলেন।
এই আমলের শানশওকত জাঁকজমকের কথা সুবিদিত। বাংলা তার ঐশ্বর্যের ভান্ডার নিয়ে সেই মুঘলদেরও যথেষ্ট ''ইম্প্রেস'' করতে সক্ষম হয়েছিল।মোহিত মুঘলেরা একে '' প্যারাডাইস অব নেশনস '' নাম দেয়।
মুঘল সালতানাত মুসলিম শাসিত হওয়ায় এবং যেহেতু ইসলামে জীবনের প্রতিটি ব্যাপারেই কিছু না কিছু নির্দেশ জারি রেখেছে তাই এই পিরিওডটা পূর্বতন আমলের থেকে অনেকখানি আলাদা ছিল । বৌদ্ধ ও হিন্দু রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বর্ণ অ্যারিস্টোক্রেসি ভেদে উঁচু সমাজ যে সুবিধা পেত সেটা বিভেদ এই পর্যায়ে দূর হয় অনেকটা। একটা অন্যতম পার্থক্য ছিল ক্ষেত্র বিশেষে যারা সক্ষম ও স্বচ্ছল হওয়ার পরেও সামরিক বাহিনীতে শ্রম দিতো না , সেই সব অমুসলিমদের উপরে নামেমাত্র জিজিয়া কর।আকবরের আমলে এই প্রথাও তুলে দেয়া হয়।মুসলিমদের সাথে সাথে হিন্দুরাও উচ্চপদে নিযুক্ত হতে থাকে। একই বাহিনীতে ধর্ম ভেদ ভুলে হিন্দু সৈনিক মুসলমান সেনার সাথে মিলে অস্ত্র ধরতো শত্রু হিন্দু রাজার বিরুদ্ধে-এই ঘটনা মুঘল আমলে খুব স্বাভাবিক ছিলো। বিজ্ঞ ও রাজ্য চালানোর জন্য সহজাত দক্ষতার অধিকারী বাদশাহ আকবরের আমলেই বাংলার চূড়ান্ত বিকাশ ঘটে, এরপরে কাহিনী শুধুই সার্বিক পতনের ইতিহাস।বলাবাহুল্য অধিকতর আয়কৃত সম্পদ হিন্দু শ্রেনীর কাছেই রয়ে যাওয়ায় ধর্মভেদে অনেকখানি অর্থনৈতিক সাম্য বজায় ছিল এলাকাগুলো মুসলিম শাসিত ও ইসলামী শাসনতন্ত্র নির্ভর হলেও। বাংলার সম্পদের উপমা দিতে একটা ছোট্ট উদাহরণ দেয়া যায়, এই বিশ শতকের শুরু পর্যন্তও বর্ধমানের রাজা কেন্দ্রে বার্ষিক ৩.৩ মিলিয়ন রূপি করে খাজনা দিত।এটা বিচ্ছিন্ন একটা এস্টেটের হিসাব মাত্র।
ধর্মভীরু মুসলিম আওরঙজেবের সময়ে আবার হিন্দু তথা অমুসলিমদের সাথে টানাপোড়েন সৃষ্ট হয়। এনাকে বলা হয় শেষ '' গ্রেট'' মুঘল সম্রাট। ১৭০৭ এ তার শাসনকালের অবসানের পরে থেকেই মুঘল শাসনের ক্রমিক অধঃপতন ঘটতে থাকে।বাংলার সমৃদ্ধি পূর্ণতা বা যতটুকু অগ্রসরতা পাওয়া শেষ পর্যন্ত তা শেষের শুরুটাও আরম্ভ হয় মুঘল আমলে।
মুঘলের সময়ে বাংলার অনেক উন্নতি হয়েছে ঠিকই , বাবর ও হুমায়ুনের মূলত ঝঞ্ঝামুখর রাজ্যদখল ও প্রতিষ্ঠার কালটা বাদ দিয়ে এটা অনেক বড় একটা এলাকাকে অনেক লম্বা সময়সীমার মাঝে একধরণের স্থিতিশীলতা দিতে পেরেছিল। কিন্তু বাদশাহদের প্রাসাদী বিলাসী অপব্যায়ের স্বেচ্ছাচারিতার জীবন ক্রমেই সাধারন জনতার সম্পদকে শুষে নিচ্ছিল। যত বড় জয়গাঁথা করেই বলা হোক না কেন, পুরোপুরি প্রজাবান্ধব বা নিবেদিত বিশেষ করে আওরঙ্গজেবের অক্ষম উত্তরসূরীদেরকে মোটেই বলা যায় না।অতএব বাংলা অবনতি ব্রিটিশদের সময় থেকে' যেরকম অপবাদ শোনা যায় তা না , ক্ষয়পর্ব আরও আগের থেকেই আরম্ভ হয়।
৩।
বাংলার প্রাচূর্যের যে ইতিহাস তা মূলত এখানেই শেষ। কিন্তু যা কিছু প্রগতির কারণ ছিল এবার তার একটা পর্যালোচনা করা যাক।
যেকোন অঞ্চলে সমৃদ্ধির পিছনে কিছু নির্দিষ্ট ই্উনিক প্রোডাক্ট থাকে যা কিনা শুধু ঐ অঞ্চলেরই শ্রেষ্ঠত্ব ও বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। কস্ট লিডারশীপ ও ডিফারেন্শিয়াল ষ্ট্রাটেজী দুটার মধ্যে অন্তত একটা গুণ থাকতেই হবে যদি প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে হয়। উর্বরা বাংলায় কৃষিপণ্যের উৎপাদনের প্রাচুর্য একে সস্তা কাঁচামালের সরবরাহ দিত।কৃষিনির্ভর হলেও এর আবার ছিল কিছু ইউনিক পণ্য, যা গুণে অনন্যতার কারণে দুনিয়ার আর দ্বিতীয়টার জোড়া ছিল না। এরকম কিছু প্রোডাক্টও এর অর্থনৈতিক অবস্থানকে সুদৃঢ় করায় অবদান রেখেছিল। এর মাঝে মসলিনের গরিমা কীর্তন কিংবদন্তীর পর্যায়ে চলে গেছে,এর খ্যাতি খ্রিষ্ট জন্মের আগ থেকে।২০০০ বি.সি.তে মিসরের আবিষ্কৃত মমির গায়েও মসলিন মোড়ানো পাওয়া গেছে জেনে বিস্মিত হলাম।মসলিনের সম্বন্ধেই সেই সুবিখ্যাত আরব সওদাগর সুলাইমানের উক্তিটা নানাভাবে বিকৃত হয়ে অনেক লোকে এখনও জানেন, '' এমন একটা বস্তু এই দেশে তৈরী হয় যা পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যাবে না;এত সূক্ষ ও নমনীয় এই জিনিস যাতে পোশাক তৈরী হলে ৩ ফিট চওড়া ও ২৯ ফিট দৈর্ঘ্যওয়ালা সেকাপড়খানা একটা সিগনেট আংটির মাঝে দিয়েই পার করা যায়।'' সে এটাও যোগ করেছিল , যে একথা সে শোনা কথা বা গুজবে না, নিজের চোখে কটন থেকে তৈরী একটুকরা মসলিন দেখেই মন্তব্য করছে।
কিন্তু মূলত মসলিন আর সিল্ক , কালেভদ্রে খাদির কথাই আমরা জানি। কিন্তু এখানে সুতি, লিলেন ও এদের মাত্রাভেদের মিশ্রনে আরও অনেক ধরনের বস্ত্র এখানে উৎপাদিত হতো।তাঁতও ছিলো যার মধ্যে জামদানীই মূলত এখনও আগের অনেকখানি আকর্ষন ধরে রাখতে পেরেছে।প্যাথেটিক বটে,এখন দোকানে গেলে আমরা দেশী শুনলেই নামিয়ে রাখি ,কোরীয় , পাকিস্তানি, চীনে, ভারতীয় কাপড় খুঁজি আর একসময় আমাদের বস্ত্র না হলে রাজারাজড়ারও আভিজাত্যে ঘাটতি রয়ে যেত। কি অাশ্চর্য তাই না?
আরো একটা অবাক করা জিনিস জানলাম , চীনে পর্যটক Chao-Ju-Kuaর বয়ানে, এখানে নাকি উৎকৃষ্ট মানের তরবারিও উৎপাদন করা হতো।
এছাড়াও ছিল নানা রকম হাতের কাজ- কাঠ, পাথর, ধাতু , মৃৎ ও অলংকার ও অস্ত্র শিল্প।
কৃষিজগুলো খোদ মানুষের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য যা উর্বর ভূমি বাংলার একটি আদিতম পণ্যের মাঝেই পড়ে। এছাড়াও সেকেন্ডারী যা কিছু উৎপাদন তারও কাঁচামাল কৃষিজাত পণ্য থেকে আসতো। তাছাড়া বাংলা সহ গোটা ভারতীয় উপমহাদেশ ছিল খনিজে সমৃদ্ধ - হীরা তো ছিলই, ছিল মুক্তা, রূপা, কপার, লোহা ও কিছু অনুন্নতজাতের সোনাও। লবনও হতো যদিও অত বড় মাপে না।
শষ্যে ধান ও পাট ছিলো অন্যতম কৃষিজাত পণ্য।পাটের আগের সোনালী সুদিনের অবস্থা এখন অনেক ক্ষীয়মান ।চিনি যা উৎপন্ন হতো তা বাংলা তো বটেই , দক্ষিণ ভারতের সাথে প্রতিযোগিতা করে ভারতের অন্য অংশ, পারস্য, আরব,সিলনে রপ্তানি হতো।তাছাড়া ছিল জাহাজ নির্মান শিল্প।এই তথ্যটা চমকপ্রদ । এখন মাঝে সাঝে ফিচার দেখি বাংলাদেশে অমুক জাহাজ তৈরী হয়েছে , তা নিয়ে পেপারে বড় আকারের লেখা , সাক্ষাতকার। অথচ সেই কোন যমানায়ই তো এখানে এ সংশ্লিষ্ট শিল্প ছিল!
ঐসময়ের বাংলায় স্থানীয় যা উৎপাদন তা থেকে দেশীয় চাহিদা মেটানো হতো অনেকাংশে। রপ্তানি করার মতো উদ্ধৃত্ত ছিলো। এখন যা রপ্তানি হয় তার চেয়ে আমদানী নির্ভর আমাদের অর্থনীতি। সুতরাং বাণিজ্যের ভারসাম্য ঘাটতি বেড়েই চলেছে। এখনকার যা কিছু উৎকৃষ্ট তা ''এক্সপোর্ট কোয়ালিটি''র তকমা লাগিয়ে সোজা বাইরে চলে যায় দেশবাসীর ভাগ্যে জোটে না , আমরা পাই যত নিম্নমানের দেশী লেফটওভার বা বাইরের ইমপোর্ট মাল। যে দেশ নিজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা হারিয়েছে তার অবনতির কারণটা ত সহজেরই বোঝা যায়। পরের উপর নির্ভরশীলতায় নিজের পায়ের জোর কমবেই।
Manouchi সম্রাট আওরঙ্গজেবের চিকিৎসক লিখেছেন, “Bengal is most known in France among all parts of huge Mughal Empire.The huge wealth, which flows to Europe, is a proof of this country's fertility. In fact the productivity of this country in silk, cotton, sugar and indigo surpassed Egypt. Everything is in plenty here. Here is plenty of fruits fertile, food grain , Muslin, golden textile and silk ( Majumdar,R.C.) .
বাংলা অভ্যন্তরীণ বানিজ্য সরবরাহের সুব্যবস্থা আসে সুপ্রচুর নদী ও অন্যান্য জলপথে থেকে, যা সংকুচিত হতে হতে এখন আর আগের মত নেই। লোভীমানুষের খপ্পরে পড়ে এই প্রাকৃতিক সুবিধা ক্রমেই হ্রাস পেয়ে চলেছে।বর্হিবাণিজ্যিক লেনদেনের সুবিধা ছিল পোর্টগুলো থাকায়।
বিখ্যাত পর্যটক হিউয়েন সাং লিখেচেন, '' Wonderful articles of value and gems are collected here in abundance and therefore the people of the country are in general very rich''.( Beal-Records, 200-201)
আমাদের প্রাচীন গৌরবের আরও অনেক প্রমাণ আছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক বই ও পত্রে,এখনকার অনুন্নত, আনকালচার্ড , এক অর্থে এই গোটা উপমহাদেশ যেখানে এমনকি সন্ত্রাসী অনিরাপদ জাতগুলোর মধ্যেও অন্যতম হিসেবে বিশ্বে পরিচিত হয়ে উঠেছে।এমন এক জাতির অতীত অহংকারের দলিল পাওয়া যাবে ইতিহাসের পাতায় পাতায়।
Lord Verelest, while discussing the condition of Bengal on the eve of Palassey’s war states, '' Farmers are well off and workers were enthusiastic , Businessmen were wealthy and Bureaucrats were satisfied. ''
শেষ উক্তিটা সেই চতুর শৃগাল দুমুখো বিশিষ্ট '' ভদ্রলোক '' ক্লাইভ মহাশয়েরই দেয়া যাক, বাংলার প্রাচীন রাজধানী মুর্শিদাবাদে প্রবেশ করার পরে তার উক্তিটা ছিল, '' The city ( Murshidabad) was as wealthy as London and populous. However the difference is that there are some citizens of this ( Murshidabad ) who were infinitely greater wealthy that the citizens of London'' .
ভাবা যায় ! আমাদের সম্পদ লুন্ঠন করে ইংল্যান্ড ইউরোপের এবং বলতে গোটা পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ , একজন্য গণ্যমাণ্য মাতব্বর দেশ , ওরা বলে এবং আমার মেনে নিই, আমরা অসভ্য অনুন্নত মেধাহীন হোপলেস এক জাতি। একসময় বাইরে থেকে ওরা এখানে এসেছে ভাগ্যঅন্বেষণে এখন অশেষ দূর্ভোগ নিয়ে আমরা ওদের এম্বেসী গুলোতে লম্বা লাইন দিই, আর তাও কেবল কোনরকমে বিলেতে গিয়ে মাটি কামড়ে মানবেতর জীবন যাপন করার জন্য, আমাদের সবুজ পাসপোর্ট বিমানবন্দরগুলোতে বাড়তি পরীক্ষার ভোগান্তি, লজ্জা আর অপমানের কারণ হয়। আনুষ্ঠানিক ওদের শাসন ও শোষনের শেষ হয়েছে অনেক দিন কিন্তু অনানুস্ঠানিক ভাবে এখনও চলছে এবং মানব সৃষ্টির মহান কারিগরই জানেন আরও কত দিন চলবে।
সূত্র:
https://en.wikipedia.org/wiki/History_of_Bengal
https://en.wikipedia.org/wiki/Grand_Trunk_Road
http://www.bangladesh.com/blog/grand-trunk-road
http://www.beingtraveler.com/2013/04/Grand-Trunk-Road.html
http://www.newworldencyclopedia.org/entry/Mughal_Empire
http://www.srtmarketing.com.au/insights/cost-leadership-or-differential.html
http://www.cdrb.org/journal/2005/3/1.pdf
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:০০