১।
সাবেরা জামান সেটে এসে ঢুকতে ইয়ং পরিচালক একমাত্র আসনটা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। এখানে আর সিট নেই। আরো চেয়ার আনতে বলা যেত, কিন্তু আসলে ছবির দৃশ্যে এখানে কোন আসবাবই থাকবে না, তাই শুদ্ধুমাত্র আপাতত তার বসায় জন্যে এই ফোল্ডিংচেয়ারটা পাতা হয়েছিল।
সাবেরা মনে মনে ভাবলেন - ছেলেটা বেশ ভদ্র আছে। তাঁর পায়ের পুরনো ব্যাথাটা ভোগাচ্ছে বড়, বসার জায়গাটায়গা আশেপাশে আর নেই , ছোঁড়াটা না ছাড়লে বেশ মুশকিল হতো। ভালো লাগলো বটে কিন্তু এভাবে আসন ছেড়ে চলে যাওয়ায় শারীরিক আরামের চেয়ে একটা কেমন যেন চাপা ভাব তার মনে জেঁকে বসে।
একটা সূক্ষ অদৃশ্য খোঁচা। বুড়ো হয়ে গেছেন তিনি। ঐ দিন আর তাঁর নেই।
আরাম করে একটু বসতে হঠাৎ ওঠা শশব্যস্ত শোরগোলে বোঝা গেল ছবির হিরোইন এসেছে। মিনিশার কালো কাঁচে মোড়ানো দামী মার্সিডিজের ফাঁকে বৃথা উঁকি দিতে চায় কতোশত কৌতুহলী চোখমুখ। পরিচালক, বয় , টেকনিশিয়ান, মেকাপম্যান সবাই হন্তদন্ত।এতক্ষণ ম্যাডামের না আসাতেই কাজ শুরু হতে পায়নি, অবশেষে সেই অনাকাঙ্খিত অবসর ভাঙলো।
তারকা নায়িকা বলে মিনিশার ভাবই আলাদা। নচেত দেড়ঘন্টা দেরী করে সেটে আসলে অন্যকারোর বেলায় ছবি থেকে পাক্কা ছুটি হয়ে যেত।
তবে সে ছবিতে থাকা মানে হচ্ছে ছবি নিশ্চিত হিট- এমন তুরুপের তাসের উপর বেজার হওয়া যায় না, উল্টো কিল খেয়ে কিল সোনামুখে হজম করে নিতে হয় -যেমন সবাই এখানে নিলো।
আমাদের সময় দিনকাল অন্যরকম ছিল-দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবলেন সাবেরা। পরিচালককে গুরু মানতাম আমরা, মনে আছে কিভাবে শমসের আলী, খলিল চৌধুরী, নাসরিন হায়দার তাকে ধরে ধরে সব শিখিয়েছিলেন। নিজের বাবামায়ের পরে তাঁদেরকে মান্য করে চলতেন তিনি। আর এখনকারগুলো তো উল্টো তাদের গুরুকে শেখায়- লাইট , ক্যামেরা , অ্যাকশনের সব পাঠ ওরা পেট থেকে শিখে এসেছে কিনা!
ডায়ালগ , কস্টিউম মায় ডান্স ষ্টেপটা পর্যন্ত ডিরেক্টর নয় , ওদের কথাতে হতে হবে। আদিখ্যেতা আর কাকে বলে?
অমুক না থাকলে ছবি পাবলিকে খাবে না, তমুক একজন ছবিতে না থাকলে বিপরীতে তমুক অন্যজনকে পাওয়া যাবে না। অভিনয়ের অ-ও জানা না থাকলেও মুখচন্দ্রিমাটা চাই।দিনকাল অনেক পাল্টে গেছে...
আজকাল অভিনেতা থেকে সবাই তারকা হয়ে উঠেছে....।
২।
নায়িকা মিনিশা সেটে আসলে কি হবে , কাজ এখনো শুরু করা যাচ্ছে না। কারন এসেই সে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে মোবাইলে।
'উফফ! জাহিদ ভাই, আপনি যে কি বলেন?'
'ওমা , ওই প্রোপিকটাতে আপনি এত সুন্দরের কি দেখলেন ? সবাই বলেছে ওতে আমাকে পচা লেগেছে, কালো কালো।'
ফোনটা রাখতে না রাখতেই...'আরে পিয়া, তুই তোর ঐ লাল পাথরের সেটটা কোথ থেকে কিনেছিস রে? আমি তো তোর কথামত ব্যাংককে শুট করতে গিয়ে তোর বলে দেওয়া মার্কেটটাতে কত খুঁজলাম , সেই পিস আর একটাও নেই।ইস!'
'আদিখ্যেতা আদিখ্যেতা, ভাবের শেষ নেই', চাপা স্বরে বহুক্ষণ বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত সাবেরা বলে ওঠেন।
কথা বলতে বলতে এদিকেই এসে ওনাকে দেখে মিনিশা , মোবাইল কানেই 'হাই আন্টি 'বলে হাত নেড়ে মেকআপ রুমে ঢুকে গেল।
মেকআপম্যান দুজন। পাশের সিটে মিনিশা বসে আছে। অনেকক্ষণ আগে থেকে রংচং লাগিয়ে বসে থাকতে সাবেরার ভালো লাগে না , তাই তাঁরটাও বাকি ছিল। মুখে পালিশরত অব্স্থায় থাকতে অভ্যাসমত একবার সামনে না তাকিয়ে পারলেন না। আজকাল দেখার আর কোন অর্থ নেই।চোখের কোলে, মুখের দুপাশে , চিবুকের কাছটাতে বয়সের সগর্ব অপ্রতিরোধ্য পদধ্বনি। চুলে পাক ধরেছে বহুদিন হয়, চামড়াটা নিজগুনে কিছুদিন টান বাঁচিয়ে চলেছিল , অবশেষে এখন শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছে।
এ মেনে নিতেই হয়, তিনিও নিয়েছিলেন। তবু আজ মনটা চিনচিন করে উঠলো কেন?
সেই অলক্ষ্য খোঁচাটা তার লুকানো কোন জায়গা থেকে তার অস্তিত্ব জানান দেয়?তাঁর মুখে যে মেকাপম্যান সযত্নে প্রসাধনরত সেও কি বৃথা পরিশ্রমে বিরক্ত বোধ করছে? সময়ের আক্রোশটা ঢেকেঢুকে রাখার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা- যাতে সফল হবার সম্ভাবনা সামান্যই। তাও একজন অভিনেত্রীকে-নারীকে -হোক না সে মা, নানী দাদী তাঁকেও সুন্দর প্রেজেন্টেবল তো হতে হবে-যথাসম্ভব।
আড়চোখে ঈষৎ মাথা ঘুরিয়ে একবার পাশে উপবিষ্ট মিনিশার দিকে তাকাতে চেষ্টা করলেন সাবেরা। মেকাআপম্যান মাথাটা আস্তে করে সামান্য উল্টোদিক করে দিল আবার- তার কাজের জন্য এই অ্যাঙ্গেলটা অসুবিধার।
তাই এবার সামনের দেয়াল জোড়া বড় আয়নাটাতে মিনিশার মুখের ছায়ায় চোখ রাখলেন তিনি। হ্যাঁ, এই পথে আর দেখতে কোন বাধা নেই। তাঁর বয়সের ভারগ্রস্ত ভাঙাচোরা মুখের পাশে ওকে কি অদ্ভূত সতেজ দেখাচ্ছে। ওর প্রায় সাজগোজ বিহীন অবস্থাতেও। হুম, সাবেরার সাজ প্রায় শেষ হয়ে আসলেও ওরটা এখনও পর্যন্ত অর্ধেকটাই হয় নি। কাজলের রেখাটা মেকাপ বয় দিয়েছে সরু করে, পছন্দ হলো না। 'আরে , এখন চলছে মোটা কাজলের ধাঁচ, রেট্রোলুক। 'একপর্যায়ে বয়ের হাত থেকে পেন্সিল ছিনিয়ে নিয়ে নিজেই দিয়ে দিল চোখের কোল ঘেষে।
লিপগ্লসের কালার পছন্দ হয়নি। 'একটু ডার্ক করে দাও না, এই আই ওয়ারের সাথে ভালো যায়...।'
বয়টি কমবয়সী হলেও মাথা ঠান্ডা রাখে, কিছুতে ধৈর্য হারায় না ,সেও জানে অভিনেত্রীদেরও টাকার মত টাইম ভ্যালু থাকে।.....এখন সময় মিনিশার।
কাজ শেষে ফিরতি পথে বিরক্তি ক্ষোভ ক্রমবর্ধমানহারে আরও বেশী করে গ্রাস করে সাবেরাকে ।অনেক কাজ পড়ে আছে তাঁর, বড় দেরী হয়ে গেল। কেন? মূল কারন তো সেই মিনিশাই, সুপারস্টার লাস্যময়ী মিনিশা।
নাতি তমালকে স্কুল থেকে আনতে হবে, রান্নাটাও আজ হয়ে ওঠে নি। একটা অনুষ্ঠান আছে -সেখানে তিনি প্রধান অতিথি। টিভিতে একটা বৈঠকীটাইপ টকশো -তাঁর সময়ের আরো আরো কয়েকজনকে নিয়ে- ওখানে যাওয়া লাগবে। আর আছে তাঁর নিজের হাতে গড়া একাডেমীর ক্লাস। ওটা তিনি ইচ্ছে করলে পেছাতে পারেন অবশ্যি কিন্তু ওর সাথে তাঁর প্রাণের টান, এই পরিণত বয়সের জীবনীশক্তি দেয় ঐ ক্লাসগুলো।
না, এখন মিনিশার মুখেটা মনে পড়তেই কোন ঈর্ষার কাঁটা নয়, আপাদমস্তক কেজো পেশাদার মানুষ সাবেরা জামান নিখাদ সেন্ট পার্সেন্ট বিরক্তি বোধ করছেন।
মেজাজ খারাপ লাগছে খুব। নিজের কাজে তাঁর নিবেদন একেবারে ষোলআনা , এসবের কারনেই তো তিনি আজ আইকনিক সাবেরা জামান হতে পরেছেন। আজও ভারতীয় উত্তম-সুচিত্রা জুটি যেমন তেমনি তাঁর-আমজাদের ছবিগুলো চলে সমান তালে। তিনি তাঁর কমিটমেন্টে পাকা , কথায় খাঁটি । যত অসুবিধাই হোক আজকের সব কাজগুলো তো ঠিকঠাকভাবে হতে হবে, শুধু কেমন করে কোনটা ম্যানেজ করবেন এই চিন্তাটা তাঁর মাথা পুরো দখল করে রাখে।
৩।
আয়োজনটা সচরাচর তিনি কখনো বাদ দেন না। কিন্তু এবার জাতীয় পুরষ্কারের আমন্ত্রণপত্রটা পেয়ে কিন্তু দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গিয়েছিলেন সাবেরা। বয়স হতে নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে। শরীরটা ভালো যাচ্ছে না কদিন ধরে। তাছাড়া বয়সের সাথে সাথে মানুষের একধরনের শৈথিল্য চলে আসে।তাঁরও এসেছে।আর তিনি তো এখন নায়িকা নন- কোন নতুন ট্রফি-ক্রেস্টের আকর্ষন এখন তাঁকে এই আয়োজনে যাওয়ার মত যথেষ্ট প্রলুব্ধ করতে অক্ষম। গেলে যান, মূলত বাকি পরিচিত মিতালীদের সাথে দেখা হবে -এই সুযোগে। সবাই ব্যস্ত এখন- কারোর জন্য কারোর চাকা থেমে যায় না। কিন্তু গতিশীলতার মাঝে জ্বালানি হয়ে এই অনুষ্ঠান গুলো ওদের গেটটুগেদারের মত কাজ করে। বন্ধু দূরে থাকলেই চোখের আড়াল ,মনের তো নয়। সাবেরার মূল আগ্রহের দিকটাও এইখানে।
তাই যাব -যাব না'র দোলাচলে থেকে থেকে একসময় হ্যাঁসূচক পাল্লাই ভারি হল।
বিশেষ দিনটিতে নিয়মমত আগেই পৌঁছেছেন সাবেরা। বাঙালীর স্বভাবমতো এখনও অভ্যাগতদের ততটা সমাগম হয়নি। অনেক গুলো সিট খালি। বিশেষ করে সামনের দিক তো পুরোই খালি।ওসব এড়িয়ে একটু পিছনের দিকের একটা সিটের দিকে এগিয়ে যেতে বিনয়ের সাথে ঝলমলে এক উঠতি মডেল -সায়কা ওকে সবিনয়ে সামনের সারিতে নিয়ে যেয়ে বসিয়ে দেয়। আজকের অভ্যর্থনা সিটিং এরেঞ্জমেন্টটা ঠিকঠাক রাখার দ্বায়িত্ব ওরই ওপর। সামনের দিকে ভিআইপির মত বসতে বিশেষ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করলেও সায়কার জোরাজুরিতে একরকম বাধ্য হয়েই তাঁকে সামনে গিয়ে বসতে হল।
এতক্ষন লোক জনের তেমন আনাগোনা ছিল না। অল্পসময়ের মাঝে হুট করে আবার একগাদা অতিথি চলে এসে মুহূর্তের মাঝে জায়গাটা গমগম করতে লাগলো। ক্ষণিকের মাঝে জায়গাটা ভোল পাল্টে জমজমাট হয়ে উঠলো।অনুষ্ঠানও শুরু হয়ে গেল কিছুক্ষণের মাঝে।
৪।
আজকে মিনিশাকে যা লাগছে না! ভারত থেকে আনা ওর স্পেশাল নেটের শাড়িতে চকচকে পাথরের টুকরো গুলোর চেয়েও বেশী চমকাচ্ছে ওর রূপের জৌলুস। শাড়িটাতে কিংবা গলাকে আলগোছে জড়িয়ে থাকা সরু হীরের নেকলেসটাতে ওকে সাজায় নি , ও -ই তাদেরকে অঙ্গে ধারন করে বাধিত করেছে। থেকে থেকে বহুজনের প্রশংসামিশ্রিত বাক্য ও চাহনী ছুঁড়ে যাচ্ছে ওর দিকে। এখানে সুন্দরীর অভাব নেই। এ বলে আমাকে দেখ তো ও বলে আমাকে-এই অবস্থা।এর মাঝেও সবচেয়ে দ্যুতি ছড়িয়ে ছাপিয়ে উঠেছে মিনিশা।
সাবেরা সপ্রশংস পলকহীন তাকে দেখেন, কেবলই দেখেন । নিজের সাথে অতুল তুলনাটা করে চলে তাঁর অবাধ্য মন। ঠিক যেন মিনিশার উল্টোটা তিনি। সাদা সফেদ একরঙা জামদানিতে কানে ছোট্ট টব আর গলায় একছড়া মুক্তোর মালাতে সজ্জিত সাবেরা- মিনিশা আর তিনি যেন গোলাপের ধারালো উজ্জ্বলতার পাশে একটা ছোট্ট লুকিয়ে থাকা ঘাসফুল সদৃশ, অনাদৃত অবহেলিত। আহ! এসব কি ভাবছেন সাবেরা আজকাল? কোথায় মিনিশা আর কোথায় তিনি ! সে হচ্ছে মধ্যগগনে থাকা নক্ষত্র আর তিনি হলেন অস্তাচলের সূর্য।
সব কিছুর পরেও মিনিশাকে দেখলে একটা কাঁটা কীটের মত তাঁকে তালকাটা সুরে সমাপ্তির গ্লানি জাগিয়ে তোলে কেন? জেনে নেওয়া মেনে নেওয়া বিষয়টা অনুরণন তোলে মনে বড় অশান্তিকর উপায়ে। এ যেন পঙ্গুকে নিজের অক্ষমতা মনে করিয়ে দেয়া। রক্তকরবীর নন্দিনী কিংবা চোখের বালির বিনোদিনীর মত কত কত স্বপ্নের চরিত্র করার আশা তাঁর অপূর্ণতায় রয়ে গেছে, আর হবেও না এ জীবনে। যা মিনিশার অনায়াসরদ্ধ তার দ্বার যে তাঁর জন্যে চিরদিনের জন্য রুদ্ধ হয়ে গেছে- এক দারুন সফল স্বীকৃতিভরা জীবনের পরেও মিনিশাকে দেখলে বারে বারে তাঁর এসব মনে পরে।
৫।
অভ্যাসবশত দেরীতে আসলেও আপাতত সে মহাতারকা। সবকিছুতেই সামনের সারিতে সবচেয়ে বেশী ওজনদার জায়গায় বসার অভ্যেস তার। আজকেও পা বাড়িয়ে ছিল কিন্তু বিনয়ের সাথে একটু ভেতরেরর দিকে একটা সারিতে তাকে দেখিয়ে দেয়া হলো- সামনের সারিটা সিনিয়রদের জন্যে।
কিছু উষ্মা হয়তো ছিল মনে, বাইরে অপ্রকাশ রেখে অত সাজগোজের উপরেও একটু ম্লান হয়ে ওঠে মিনিশা। মুখে জমে ওঠা লালচে হালকা আভাটা লোকের অগোচরে থাকে। অহমে আঘাত লাগলেও ক্ষেত্র বিশেষে তা চেপে রাখতে জানে সে। এই কান্ড ছবির সেটে হলে পরিচালকের রক্ষা ছিল না, কিন্তু এখন সামলে যায়। ঐ সব বুড়ো হাবড়া ফুরিয়ে যাওয়া আঙ্কেল আন্টিদের সামনে বসিয়ে রাখাটা শুধু তার একার না, পুরো অনুষ্ঠানের জন্যেই একটা বেমানান বিষয় বলে তার কাছে মনে হয়। এখন সময় আমাদের।ওনাদের যা দেবার নেবার পালা সব শেষ -এখনও কেন বাপু জায়গা দখল করে রাখা? কোন মুভিতে থাকলে কেউ ওদের পোঁছে?
সবাই দেখতে আসে তাদের-এই মিনিশাদেরকে।ওরা এখনকার বাংলাদেশের উজ্ঝল প্রতিনিধি, জেনারেশন নেক্সট ।এসব বাতিল মালেরা নয়।
এসব কথা ভাবা যায়, বলা যায় না, দেখানোও যায় না। তাই মনের ক্ষোভ মনেই রেখে হাসিমুখে পারঙ্গম অভিনেত্রী মিনিশা স্টেজের চমৎকার পারফর্মেন্সে সবাইকে মোহিত করে তুলতে পারে। সবার সাথে সাথে উচ্ছসিত করতালিতে সাবেরার মুগ্ধ তালির শব্দ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।
ঢালিউডের এক নবতম সংযোজন ছোকরা নায়ক বেমক্কা একটা শিষ দিয়ে ফেলে। সফল মঞ্চ কাঁপানোর শেষে মিনিশার জন্যে আজকে আরও আনন্দ অপেক্ষা করে ছিল। সেরা অভিনেত্রীর পুরষ্কারটা নিয়ে কারোরই সন্দেহ ছিল না, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও শেষমেষ বিজয়ীর হাসিটা অনুমিত ভাবেই ওর।
পুরষ্কারটা পাওয়ার পড়ে নানা রসিক মন্তব্য, কো-স্টারের সাথে উচ্ছ্বসিত আলিঙ্গনের পরে সুস্থির হয়ে বসতে নানা আরও আরও আয়োজনের শেষে কিছুক্ষনের মাঝে এল সেই বিশেষ ঘোষনা। শেষদিকের রুটিন এক বিশেষ আবেদনের এ ঠিক পুরষ্কার না- মর্যাদা।
৬।
আজীবন সম্মাননার ঘোষনাটা যখন এলো নিজের কানে শুনেও বিশ্বাস হতে চায় নি সাবেরার। হায়াত মাহমুদ, আমরিনা সামাদ, সুবের ঘোষদের মত কিংবদন্তীদের কাতারে তাঁর নামটাও এবার যোগ হতে যাচ্ছে তাহলে? সেই সব লোকদের- যাদের পায়ের কাছে গুরুমর্যাদায় কাজ শিখে শিখে তিনি আজকের সাবেরা তাদের নিচে নয়,পাশে- একই পঙ্কতিতে আজ থেকে উচ্চার হবে সাবেরা জামানেরও নাম?
এতো তাঁর আজীবনের সাধনা ছিল।কল্পনায় দিনশেষে বেলার সমাপ্তিতে শোকেসে এই বিশেষ প্রাপ্তিটুকু জমা করবার জন্যই মিডিয়া জগতের মানুষ নিয়ত অধ্যবসায় নিয়ে লেগে থাকে- আজ সেই অধরা তাঁর - সাবেরা জামানের ঝুলিতে ধরা দিয়েছে।তাঁর এত দিনের এত এত কাজগুলোর স্বীকৃতি। এই আনন্দ এই গৌরব যে অবিশ্বাস্য!
সাবেরা জামানের মনে হয় তিনি স্বপ্ন দেখছেন। ছেলেমানুষের মত নিজের গায়ে চিমটী কেটে দেখতে ইচ্ছে জাগে তাঁর। ঘোরলাগা ধীর পায়ে মঞ্চের মাঝখানে কখন পৌঁছে যান তিনি। সবাই উঠে দাঁড়িয়ে যায়- বেহিসেবী হাততালিতে যেন ফেটে পড়ছে বিশাল হলটা। এ তালির জাত আলাদা- মিনিশার পুরষ্কারপ্রাপ্তির মত এতে কোন চটুল রসিকতা কানে আসে না।টিপ্পনী, উপস্থাপকের মজাদার মন্তব্যেরও এতে প্রকট অভাব। সবচেয়ে বড় কথা কোন চটুল বেমক্কা অসাবধানী শিষ এর গম্ভীর সশ্রদ্ধতার ধ্যান ভাঙিয়ে দেয় না। সাবেরাও এর কোন অভাব বোধ করেন না।এখনও প্রবল ঘোর আচ্ছন্নে আপ্লুত - উপস্থাপকের বাড়িয়ে দেয়া মাইক্রোফোন হাতে প্রস্তুত হন ধন্যবাদ বক্তব্য দেবার জন্যে। চোখটা একটু জ্বালা জ্বালা করছে , জীবনের শ্রেষ্ঠ অভিনয়টা আজ করতে যাচ্ছেন তিনি।
রেজওয়ানা আলী তনিমা
মার্চ ১২, '১৪ ইং