somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

দিল মোহাম্মদ মামুন
আমি একজন সচেতন মুসলিম, খুব সাধারণ জীবনযাপন পছন্দ করি।প্রবাসের হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও দেশের ও দেশের মানুষের খবরা-খবর জানতে পছন্দ করি, তাদের সাথে মিশে যেতে চাই..... আমার সোনার বাংলা, আমি তোমার অনেক অনেক ভালোবাসি।

বাংলাসাহিত্য ও বাংলাভাষায় মুসলিমদের অবদান।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


"উষ্ণা উষ্ণা পাবত তহি বসই সবরী বালি মোরাঙ্গ" বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন, বৌদ্ধধর্ম তত্ত বিষয়ক এই চর্যাপদ গুলো থেকে শুরু হওয়া বাংলা সাহিত্যকে - "অনন্ত অসীম প্রেমময় তুমি...তথা মহান আল্লাহর গুণাবলী ও মহিমা বর্ণনা সংবলিত সাহিত্যের ধারায় যারা উন্নীত করেছেন সেই সমস্ত অবহেলিত কবি সাহিত্যিকদের নিয়ে আজ আমার কলম ধরা। সমাজ সংস্কারের মহান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টি। তাই সমকালীন সামাজিক রাজনৈতিক ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের সাথে বাংলাসাহিত্যের প্রত্যেকটি ধারা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই জন্য ইতিহাসকে সামনে রেখে বাংলা সাহিত্যের যুগকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে।

প্রাচীন যুগঃ অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত অর্থাৎ 'পাল রাজত্ব' থেকে 'সেন' রাজত্বের পতন পর্যন্ত সময়টাকেই প্রাচীন যুগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বৌদ্ধরা এই দেশেরই মানুষ ছিলেন তারা প্রায় চারশত বছর যাবত এই দেশ শাসন করেছিলেন। তাদের ধর্মীয় চিন্তায় জাতিভেদ ছিল না ঐসময় ভাষা ছিল পালি, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ। এই ভাষাগুলো ছিল সর্বসাধারণের জন্য তখন অবশ্যই কিছু কিছু সংস্কৃত ভাষাও ব্যবহৃত হতো।

পক্ষান্তরে হিন্দু সেনরা ছিলেন বহিরাগত, তারা এদেশে এসেছিলেন কর্ণাটক থেকে। তারা ছিলেন ব্রাম্মণ, তাদের ভাষা ছিল সংস্কৃত, তারা রাজন্য বর্গের সংস্কৃতি পোষণ করতেন, সাধারণ মানুষের নয়। কয়েকটা চর্যাগীতিই ছিল এই যুগের একমাত্র বাংলা সাহিত্য।
মধ্যযুগঃ ত্রয়োদশ শতক থেকে অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত অর্থাৎ ইখতিয়ারউদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজীর আগমন কাল থেকে ১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পতন পর্যন্ত তথা ১৭৬০ সালে ভারত চন্দ্রের মৃত্যুর মধ্য দিয়েই মধ্যযুগের অবসান ঘটে। এসময়ে এদেশের রাজভাষা ছিল ফার্সি। লর্ড বেন্টিং এর শাসনকালে লর্ড মেকলের সুপারিশক্রমে এদেশের রাজভাষা ফার্সির স্থলে গৃহিত হল ইংরেজী।

এইযুগের সাহিত্য সম্ভারকে মিশ্র সাহিত্য বলা যায়, এই যুগের প্রধান সাহিত্য ভান্ডার হচ্ছে কবিগান ও দোভাষী পুথি। ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য দোভাষী পুথির রচয়িতা হচ্ছেন "শাহ গরীবুল্লাহ ও সৈয়দ হামজা"।
শাহ গরীবুল্লাহর প্রধান সৃষ্টি- "ইউসুফ জোলায়খা" কাব্য যার ফার্সি লেখক শাহ মুহাম্মদ সগীর, অন্যান্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে 'আমির হামজা, জংগনামা, সোনাভানের পুথি ও সত্যপীরের পুথি' উল্লেখযোগ্য। আর সৈয়দ হামজার অন্যতম রচনাগুলো হলো, মধুমালতী, জৈগুনের পুথি ও হাতেম তাই' উল্লেখযোগ্য।
মধ্যযুগের আরেক আকর্ষণ বাউল সঙ্গীত, সেখানেও অবদান রেখেছেন পাঞ্জুশাহ, লালন শাহ সহ অসংখ্য মুসলিম বাউলগন।কবিগানের ক্ষেত্রে মির্জা হোসেন আলী, সৈয়দ জাপর খাঁ উল্লেখযোগ্য।

আধুনিক যুগঃ বাংলাসাহিত্যে আধুনিক যুগের সুত্রপাত হয় ১৮০১ সালে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে বাংলাবিভাগ চালুর মধ্যদিয়ে। ইংরেজরা তাদের ক্ষমতাকে স্থায়ী কল্পে এদেশে নানাভাবে চালিয়েছে সাংস্কৃতিক বিজয়ের অভিযান, খ্রিষ্টান মিশনারিজদের দিয়ে মানুষদের ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা চালিয়েছে ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই। এতে বেশ কিছু মুসলমান ও ধর্মান্তরিত হয়েছিল। সেই সময় মুসলিমদেরকে খ্রিষ্টান মিশনারিজদের আগ্রাসন থেকে বাঁচানোর জন্য অবিরাম চেষ্টা চালিয়েছিলেন মুন্সী মেহেরুল্লাহ। এই মহান ব্যক্তি সেইসময় বিভিন্ন বক্তৃতার মাধ্যমে মুসলমানদের জাতীয় চেতনা মূলক ইসলামের নিজস্ব পরিচয় বহনকারী সাহিত্য সৃষ্টিতে মুসলিমদেরকে উদ্বুদ্ধ করে তোলেন। তারই ফলস্বরূপ আমরা মীর মোশাররফ হোসেন, কায়কোবাদ, শেখ আব্দুর রহিম, মুন্সি রেয়াজুদ্দিন ও মোজাম্মেল হক সহ অনেক সাহিত্যিকদের আমরা পেয়েছি। এই সমস্ত সাহিত্যিকগন রেখে গেছেন তাদের কালজয়ী সাহিত্যকর্ম।
স্যার সৈয়দ আহাম্মদ এর প্রভাবে তৎকালীন হিন্দু লেখকেরাও মুসলমানদের প্রশংসা করেছিলেন, যেমন কেশবচন্দ্র যেমনি খ্রিস্টানুরাগী ছিলেন তেমনি ইসলামের মর্মকথা অধ্যায়নের জন্য তিনি গিরিশচন্দ্র সেনকে নিযুক্ত করেছিলেন। তাই গিরিশচন্দ্র সেনই সর্বপ্রথম কোরান-হাদিসের তরজমা শুরু করেন।
এছাড়াও সাহিত্যবিশারদ আব্দুল করিম, নওশের আলী খাঁ, আব্দুল হামিদ, নুরের রহমান খান, ওবায়েদুল হক, আজিম উদ্দিন চৌধুরী, আব্দুল লতিফ, চেরাগ আলী, আলতাফ হোসেন হালী, জাকাউল্লাহ, সালাউদ্দিন, খোদাবখশ, শেখ আব্দুর রহিম, মোহাম্মদ এয়াকুব আলী উল্লেখ্য।

মোহাম্মদ নঈম উদ্দিন (১৮৩৮-১৯০৮) বাঙ্গালী মুসলিমদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম কোরান শরীফের বঙ্গানুবাদ করেন, যা খন্ডে খন্ডে ৯পারা প্রকাশিত হয় এবং দশম পারা প্রকাশিত হয় তাঁর মৃত্যুর পর। বোখারী শরীফের প্রথম খন্ডের ও তিনি বঙ্গানুবাদক। উল্লেখ্য যে সম্পূর্ণ কোরান শরীফের প্রথম বাংলা তরজুমা করেন চব্বিশ পরগনা জেলার মোহাম্মদ আব্বাস আলী।
এছাড়াও বাংলাসাহিত্য ও সংস্কৃতির এক উজ্জল নক্ষত্র হচ্ছেন ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। তিনি ছিলেন বাংলা ব্যাকরণের রচয়িতা, আধুনিক বাংলার রুপকার, তিনি একাধারে ১৮ টি ভাষা ব্যাকরণ সহ জানতেন, অনর্গল কথা বলতে পারতেন। তাঁর পাণ্ডিত্য ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল মহলের নিকট উচ্চ প্রশংসিত।

বাংলার নারী সমাজকে সর্বদিক থেকে জাগ্রত করতে যিনি সদা তৎপর ছিলেন তিনি আর কেউ নন, তিনি হচ্ছেন বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন।
যার লিখনিতে লক্ষ তরুণ-যুবকের হৃদয় স্পন্দিত হয়, জুলুম - শোষণের বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে বুকে সাহস যোগান, বাংলাসাহিত্য ও সংস্কৃতির সকল শাখা প্রশাখাকে যিনি সমৃদ্ধ করেছেন তিনি হচ্ছেন কাজী নজরুল ইসলাম।
এছাড়া বাংলাসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করতে আরোও যারা উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন তারা হলেন গোলাম মোস্তফা, সুফিয়া কামাল, পল্লী প্রকৃতির কবি জসীম উদ্দিন, মুসলিম রেনেসাঁর কবি ফররুখ আহমেদ আহসান হাবীব, শামসুর রহমান, মতিউর রহমান মল্লিক ও আল মাহমুদ উল্লেখযোগ্য। ভাষা মূলত আল্লাহ প্রদত্ত এক অমূল্য সম্পদ। একটি বর্বর জাতীকে সভ্য জাতীতে পরিণত করতে ভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষ তার মনের আবেগ ও অনুভূতিকে একমাত্র নিজের ভাষায় পরিপূর্ণভাবে ব্যক্ত করতে পারে। তাই-তো মুসলিম কবি-সাহিত্যিকগন বাংলাভাষাকে আপন আপন কর্ম শৈলী দ্বারা পরিপুষ্ট করেছেন।

কবি আব্দুল হাকিমতো আক্ষেপ করে বলেই পেললেন,
"যেজন বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী
সেজন কাহার জন্ম নির্ণয় না জানি।"

মহাগ্রন্থ আল কোরানের মর্মবাণীকে নিজের ভাষায় গভীরভাবে অনুধাবন করে কবি নজরুল গভীর হতাশার স্বরে বলেছিলেন - "আল্লাহতে যারা এনেছে ঈমান কোথা সে মুসলমান"
আমার প্রিয় কবিকে আশান্বিত করে তৌহিদী জনতার পক্ষ থেকে বলতে চাই -
"খেদমতে দ্বীন নহে আরাধনা
আরাধ্য মম ইকামতে দ্বীন,
নহে হতাশা ওহে কান্ডারী
আমরাই হবো সেই মুসলিম।"

সন্মানীত পাঠকবৃন্দ, ভাষার মাসে অনেকেই বাংলাভাষা ও সাহিত্য নিয়ে খুব সুন্দর লিখেন কিন্তু সেখানে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে মুসলিমদের অবদান তরুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হয়না। তাই আমি প্রবাস জীবনের হাজারো ব্যস্ততার মাঝে বেশ কিছুদিন ধরে আমার এই লিখাটা সাজানোর চেষ্টা করলাম। জানিনা কোন অদৃশ্য কারনে দিন দিন বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তক থেকে এই সমস্ত কবিসাহিত্যিকদের পরিকল্পিতভাবে বাদদেওয়া হচ্ছে। তবে আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি লিখাটা সংক্ষিপ্ত করতে, তাই বাংলাভাষা ও সাহিত্যে যে সমস্ত মুসলিমেরা অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যথেকে উল্লেখযোগ্য কিছুসংখ্যক নামকে সামনে নিয়ে আসলাম।
আমি ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি যেই সমস্ত ভাইয়েরা নিজের জীবন দিয়ে মাতৃভাষার সন্মান রক্ষা করেছেন, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। উল্লেখ্য তারাও মুসলিম ছিলেন, তাই একজন মুসলিম হিসেবে আমি গর্বিত।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৯
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×