বিশ্বের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন শহরের মধ্যে আবুধাবি একটি। এখানে রাস্তার প্রতিটি মোডে এবং পাবলিক প্যালেসের প্রতি ১০০ মিটারের মধ্যে ডাস্টবিন রাখা হয়। তারপরও প্রতি ২০০ বর্গমিটার জায়গার জন্য একজন করে ক্লিনার রাখা হয়। রাস্তাগুলো প্রতিদিন একবার করে মেশিনের সাহায্যে ঝাডু দেওয়া হয়। যেই যেই জায়গায় ডাস্টবিন বসানো থাকে, সেই জায়গাগুলো প্রতিদিন জীবানু নাশক মেডিসিন দিয়ে ওয়াস করা হয়। তাদের উদ্দেশ্য আবুধাবি শহরকে পরিস্কার রাখা।
নির্দিষ্ট জায়গা ছাডা রাস্তায় ময়লা পেললে, পাবলিক প্যালেসে থুতু পেললে, লুংগী পরে রাস্তায় বের হলে, জেব্রা ক্রসিং ও পেডেস্টাইন ছাডা অন্য জায়গায় দিয়ে রাস্তা পার হলে, রাস্তায় দাডিয়ে মোবাইল ব্যালেন্স বিক্রি করলে, পান খেলে ও পান বিক্রি করলে সি.আই.ডি দেখা মাত্র ন্যুনতম ২০০ দিরহাম জরিমানা করে।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এখানে বাংলাদেশি ছাডা অন্য কোন জাতীর লোকেরা পান খায় না, পান বিক্রি ও করেনা, লুংগী পরে রাস্তায় বের হয়না, রাস্তায় দাডিয়ে মোবাইলের ব্যালেন্স বিক্রি করেনা, পাবলিক প্যালেসে বসে বসে নাকের কাছরা পরিস্কার করেনা, কথায় কথায় ঝগড়া করেনা এবং গলায় ফাটানো আওয়াজ করে মোবাইলে কথাও বলেনা।
অন্যান্য অপরাধ গুলো সব জাতীর লোকেরা করলেও এখানকার ইন্ডিয়া পরিচালিত মিডিয়াগুলো শুধুই বাংলাদেশিদেরকেই হাইলাইটস করে। বাংলাদেশিরা সামান্য কোন অপরাধ করলে ইন্ডিয়ানদের পরিচালিত মিডিয়া গুলো গুরুত্বের সাথে তা প্রকাশ করে, কিন্তু অন্য জাতীর লোকেরা অনেক বড় অপরাধ করলেও তা তেমন মিডিয়াতে আসেনা। কখনো আসলেও ভেতরের পাতায় খুব ছোট করেই আসে!!
এইসমস্ত বিষয় গুলোর কারণে আরব-আমিরাতের শ্রমবাজারে বাংলাদেশিদের যথেষ্ট চাহিদা থাকা সত্বেও আজ ৩.৫ বছর ধরে ভিসা বন্ধ হয়ে আছে। আরব-আমিরাতে প্রতিদিন ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, নেপাল ও ফিলিপাইন থেকে স্রোতের মতই জনশক্তি আসতেছে। আমার কোম্পানিতে গত ২ মাসে প্রায় ২৫০০ জনের মত নতুন জনশক্তি এসেছে সম্পুর্ণ কোম্পানির খরচে! আর আমি অফিসে বসে বসে শুধুই আফসোস করতেছি, কারণ বাংলাদেশের ভিসা চালু থাকলে আমিও কিছু বাংলাদেশি ভাইদের নিয়ে আসতে পারতাম।
বড় আশায় ছিলাম, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাছিনা আরব-আমিরাতের নতুন ভিসা চালু অথবা ট্রান্সফারটা হলেও চালু করবেন। কিন্তু আশার জায়গায় এখন হতাশাই বসবাস করতেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাছিনা রাশিয়াকে ভোট না দিয়ে যদি দুবাই এক্সপোকে ভোট টা দিতেন, তাহলে হয়তো বাংলাদেশের রেমিটেন্স আগের চেয়ে দ্বিগুণ হত।
শুধু সরকারের দোষ দিয়ে লাভ কি??? আমরা প্রবাসিরা যদি ভাল না হই, তাহলে কেউ ভিসা খুলতে পারবেনা............
পরিশেষে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলতে চাই, যতদিন পর্যন্ত আমাদের মাঝে পরিপূর্ণ ইসলামিক মূল্যবোধ না আসবে, ততদিন পর্যন্ত আমাদের মাঝে ন্যায়-অন্যায়ের বোধ আসবেনা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অংগ হওয়া সত্বেও তা আমাদের অভ্যাসে পরিনত হবেনা। তাই আসুন, ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে বুঝার ও মেনে চলার চেষ্টা করি, বিশ্বের দরবারে একটা আদর্শ জাতী হিসেবে নিজেদের তুলে ধরতে চেষ্টা করি।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:০১