ডিসকভারি চ্যানেলের জনপ্রিয় শো ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড। এই শোতে দেখা যায়, বেয়ার গ্রেইল নামের একজন দুঃসাহসী মানুষ পৃথিবীর নানা ভয়ংকর ও দুর্গম জায়গায় যান একা। সেখানে মোকাবিলা করেন নানা বিপদ, প্রতিকূলতা। অতঃপর নিরাপদে ফিরে আসেন সেসব জায়গা থেকে। কেমন হতো, যদি দুঃসাহসী বেয়ার গ্রেইল আসতেন বাংলাদেশে? জানাচ্ছেন আলিম আল রাজিঃ
অনুষ্ঠান শুরু
আমি বেয়ার গ্রেইল। আমি আপনাদের দেখাব, পৃথিবীর দুর্গম জায়গাগুলো থেকে কীভাবে বেঁচে ফিরে আসতে হয়। আজ আমি এসেছি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ব-দ্বীপ বাংলাদেশে। পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর দেশ এটা। সুজলা-সুফলা-শস্যশ্যামলা বাংলাদেশ। তার পরও এখানে রয়েছে যানজট, ছিনতাইকারী, সন্ত্রাসী ইত্যাদি নানা ঝামেলা। আমি দেখাব এসব পরিস্থিতিতে কীভাবে টিকে থাকতে হয়। চলুন আমার সঙ্গে।
বুড়িগঙ্গার সামনে
আমার সামনে যে জিনিসটি দেখছেন এটা হলো একটা নদী। পানি কুচকুচে কালো দেখে সন্দেহ করবেন না। এটা আসলেই নদী। ময়লা-আবর্জনা মিশে এই অবস্থা হয়েছে এটার। এর স্বাদও একেবারে বিচ্ছিরি। ইয়াক!
আমি এই নদীটি পাড়ি দিতে চাই। চলুন, একটি ভেলা বানানো যাক। এখানে আশপাশে অনেক বোতল আছে। এসব বোতল দিয়ে আমরা একটা ভেলা বানাব। তারপর ভেলায় চড়ে নদীটা পার হব। চলুন যাওয়া যাক।
অতঃপর...
বেয়ার গ্রেইল ভেলা বানালেন। বোতল দিয়ে ভেলা বানানো দেখে আশপাশে কৌতূহলী জনতা জড় হলো। সবাই ধরে নিল, বেয়ার গ্রেইল একটা পাগল। যেই গ্রেইল ভেলা নিয়ে নদীতে নামলেন, বিচ্ছু ছেলেমেয়ে তাঁকে খেপানো শুরু করল। কয়েকজন তাঁকে উদ্দেশ্য করে ঢিল ছোড়া শুরু করল। ঢিলের আঘাতে মাঝনদীতেই ভেলাসহ উল্টে পড়ে গেলেন বেয়ার গ্রেইল। ময়লা-আবর্জনা মেশানো পানি খেয়ে তখনই অসুস্থ হয়ে গেলেন দুঃসাহসী বেয়ার।
ফাঁদ বানানো
খিদেয় পেট একেবারে চো-চো করছে। এভাবে আপনি কিছুক্ষণ না খেয়ে থাকলে আপনার ডিহাইড্রেশন হবে। হবে এনার্জি লস। ক্রমশ দুর্বল হয়ে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন আপনি। অজ্ঞান হয়ে আপনার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এ রকম অবস্থায় কিছু খাওয়া দরকার। চলুন, একটা ফাঁদ বানানো যাক। আমার ব্যাগে কিছু কাঠি আছে। এসব দিয়ে আমি একটি ফাঁদ বানাব। ফাঁদটা বসাব রাস্তার মাঝখানে। ফাঁদের ওপর দিয়ে যা-ই যাবে, সেটাই ধরা পড়বে। এই যে এভাবে...
অতঃপর
চমৎকার একটা ফাঁদ বানালেন বেয়ার গ্রেইল। চুপি চুপি ফাঁদটা রাস্তার ওপর বসাতে গেলেন, তখনই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলো র্যাব। নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য বানানো হয়েছে এই ফাঁদ—এমন অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হলো বেয়ার গ্রেইলকে। বিরোধী দলের প্ররোচনায় গ্রেইল ফাঁদ বানানোর মতো একটি রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করেছেন। তাই তাঁকে কিছুদিন কারাদণ্ড দেওয়া হলো।
শেষমেশ খাওয়াদাওয়া
কিছু খেতে হবে। এ রকম পরিবেশে না খেলে আপনি বেঁচে থাকতে পারবেন না। হাতের কাছে যা পাবেন তাই খাবেন। ওই যে দেখুন, রাস্তার পাশে চটপটি আর ফুচকা দেখা যাচ্ছে। আসুন আমার সঙ্গে, ওগুলো খাওয়া যেতে পারে। কারণ এতে আছে প্রচুর
কার্বোহাইড্রেট। খেলে আপনি প্রোটিনও পাবেন কিছুটা। আর সঙ্গে জলও আছে অনেক। এগুলো খেতেও দারুণ। একবারে অনেকগুলো খাওয়া যায়।
অতঃপর...
রাস্তার পাশের পচা জীবাণুযুক্ত খাবার খেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়লেন বেয়ার গ্রেইল। ডায়রিয়াতে কাহিল হয়ে গেলেন বেচারা। বাধ্য হয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে হলো দুঃসাহসী বেয়ারকে। ডাক্তার তাঁকে ঘরে বসে স্যালাইন বানানোর উপায় শিখিয়ে দিলেন। আর বলে দিলেন, ঘরে বসে প্রচুর পরিমাণ স্যালাইন খেতে হবে।
রাত্রি যাপন
এ রকম এলাকায় বেশ দ্রুত রাত নামে। তাই আমাকে দিন থাকতে থাকতেই ঘুমানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তার জন্য আমাকে একটা আস্তানা বানাতে হবে। আমি আস্তানা বানাব এই ফুটপাতে। এই জায়গাটা আস্তানা বানানোর জন্য বেশ ভালো। আমার ব্যাগটা মাথার নিচে দিয়ে ঘুমিয়ে থাকব সারা রাত। ভালো একটা ঘুম হবে তাহলে।
অতঃপর...
গভীর ঘুমে ছিলেন বেয়ার গ্রেইল। মাঝরাতে হঠাৎ ছিনতাইকারীর আক্রমণ। তারা জোরে ধমক দিয়ে বেয়ারের ঘুম ভাঙাল। পেটে ছুরি ঠেকিয়ে বলল, ‘কী আছে, সব দে। নাইলে ছুরি পেটে হান্দায়ে দেব।’ বেচারা বেয়ারের সঙ্গে একটা ব্যাগ ছাড়া আর কিছুই নেই। বাধ্য হয়ে ওটাই দিয়ে দিলেন। টাকা-পয়সা না পেয়ে ক্ষুব্ধ হলো ছিনতাইকারীরা। গালে দু-একটা আঘাত করে তারা চম্পট দিল।
একমাত্র সম্বল ব্যাগ হারিয়ে নিঃস্ব বেয়ার রাস্তায় দাঁড়িয়ে রইলেন।
আগুন জ্বালানো
আগুন শীতকালে জীবন বাঁচায়। কারণ আগুন ছাড়া থাকলে আপনার ঠান্ডা লাগবে। ঠান্ডা লাগলে আপনার হাইপোথার্মিয়া হয়ে যেতে পারে। মারাও যেতে পারেন আপনি। তা ছাড়া আগুন দেখলে জন্তু-জানোয়ার কাছে আসে না। তারা সব সময় দূরে থাকে।
আমি এখন আগুন জ্বালাব। আগুন জ্বালানোর জন্য আমি ব্যবহার করব একটি টায়ার। এই টায়ারে আগুন জ্বালালে এটি সারা রাত জ্বলবে। আমাকে তাপ দেবে। নিরাপদও রাখবে। চলুন, আগুন জ্বালানো যাক।
অতঃপর...
অনেক কষ্টে টায়ার পুড়িয়ে আগুন জ্বালালেন বেয়ার গ্রেইল। টায়ারটা রাস্তার কাছে রাখলেন। কিন্তু আশপাশের মানুষ মনে করল, এখানে টায়ার পুড়িয়ে নিশ্চয়ই কোনো আন্দোলন করা হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে আগুনের পাশে নানা রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা জড়ো হলেন। তাঁরা আরও টায়ার পোড়ালেন। ঘটনাস্থলে এল পুলিশ। এসে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করল। ঘটনাস্থল হয়ে উঠল রণক্ষেত্র।
গ্রেপ্তার করা হলো অনেককে। ঘটনার হোতা বেয়ার গ্রেইলকে ব্যাপক প্যাঁদানি দিয়ে ধরা হলো। পরদিন বেয়ারের ছবিসহ পত্রিকায় খবর এল, ‘দুষ্কৃতকারী বেয়ার গ্রেপ্তার!’