somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টেকসই রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য যা করা প্রয়োজন

০৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টেকসই রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য যা করা প্রয়োজনগত ৫ই আগষ্ট ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ তারিখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের একটি প্রয়াস চলছে। এই প্রয়াসে যুক্ত হয়েছে সাধারণ ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে জনগণ ও বিভিন্ন চিন্তকবর্গ (থিঙ্কট্যাংক)। তাঁরা রাষ্ট্র সংস্কারের্ উপায় বের করতে আলোচনা, বাহাস ও সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। এই রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্দেশ্য হলো একটি বৈষম্যহীন আদর্শ রাষ্ট্র নির্মাণ করা। সে লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানকে সংস্কারে হাত দিয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান সংস্কার আর রাষ্ট্র সংস্কার এক কথা নয়। কাজেই এমনভাবে রাষ্ট্রের সংস্কার করা প্রয়োজন, যেনো রাষ্ট্রের টেকসই সংস্কার সম্পন্ন হয়। সেজন্য জানা প্রয়োজন যে, রাষ্ট্র হলো বহুসংখ্যক স্তরবিন্যস্ত প্রতিষ্ঠানে অধিষ্ঠিত ক্ষমতাসীন শক্তির পারস্পরিক সম্পর্কের মিথোষ্ক্রিয়ার সমন্বিত বন্ধোবস্তু বিশেষ। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিদ্যালয়, আদালত, ব্যাংক, হাসপাতাল ও জেলা প্রশাসন ইত্যাদি সরকার প্রতিষ্ঠিত বা সরকার নিয়ন্ত্রিত কিছু সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকে। কিন্তু অনুআনুষ্ঠানিক (যেমন- পরিবার, বাজার), আধা-আনুষ্ঠানিক (যেমন-পাঠাগার ও ইমাম সমিতি) প্রতিষ্ঠানের ওপর সরকারের কোনো কর্তৃত্ব থাকে না। কিন্তু রাজনৈতিক দলের সমর্থনে প্রতিষ্ঠিত সরকারের সবধরণের প্রতিষ্ঠানের ওপর প্রত্যক্ষ কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ থাকে। কিন্তু টেকসই রাষ্ট্র সংস্কার করতে হলে, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সংস্কার সাধন করতে হবে, যেনো সমস্ত প্রতিষ্ঠানের উত্তরোত্তর স্বয়ংক্রিয় সংস্কার সম্পন্ন হয়।

আমরা জানি যে রাজনৈতিক ক্ষমতা গড়ে ওঠে রাষ্ট্রীয়, আধারাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর ভর করে। এই রাজনৈতিক ক্ষমতা হলো রাষ্ট্রজুড়ে বিদ্যমান সমস্ত প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত সমস্ত নিয়ন্ত্রণকারী, স্বার্থবাদী ও চাপ প্রয়োগকারী অংশীজনের সাথে অলিখিত বন্দোবস্তু বিশেষ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত বিভিন্ন গোষ্ঠী বিদ্যমান রেওয়াজ, নিয়ম ও আইন-কানুন ভেঙ্গে সেই প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থনৈতিক বা অন্যান্য সুযোগ লাভে প্রয়াসী হয়। সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার অনুরূপ বন্দোবস্তুর মাধ্যমে দেশে জুড়ে ক্ষমতার বলয় বিস্তৃত করেছিলো। ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে ও ২০০১ খ্রিস্টাব্দে বিএনপি সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েও, অনুরূপ ক্ষমতার বলয় বিস্তৃত করেছিলো। কিন্তু গত দুই দশক ধরে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন কমিশনসহ সমস্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে কুক্ষিগত করে ক্ষমতার বলয় বিস্তৃতি ঘটিয়েছিলো। এর মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী ও কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলো। তাছাড়া গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব বিকাশের পথকে সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছিলো।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সমর্থনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক দেশজুড়ে বিস্তৃত এই ক্ষমতার বলয় ভাঙতে সচেষ্ট রয়েছে। তাঁদের নিকট নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের কথাও শুনা যাচ্ছে। তাঁদের প্রয়াস থেকে এটাও লক্ষণীয় যে, এই সংস্কারের অংশ হিসেবে তাঁরা সৎ, আদর্শবান, ন্যায়পরায়ণ ও ধর্মভীরু নেতৃত্ব সৃষ্টি করে, তাঁদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে যাচ্ছে। কিছু ক্ষমতা হস্তান্তেরের লক্ষ্যে এই সরকার ইতোমধ্যে গত ১৮ই আগষ্ট ২০২৪ স্থানীয় সরকার অধ্যাদেশ-২০২৪ জারী করেছে। কিন্তু টেকসই রাষ্ট্র সংস্কার করতে হলে, তা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায়ই করতে হবে। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্র সংস্কারের কথা রাজনীতি বিজ্ঞানে বিবৃত রয়েছে। লক্ষ্য যদি থাকে টেকসই রাষ্ট্র সংস্কার, তাহলে রাজনীতি বিজ্ঞানের দর্শন, তত্ত্ব ও সূত্রকে মেনে নিয়ে জাতীয় সংসদে রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার করতে হবে (পরের অনুচ্ছেদ দ্রষ্টব্য)। প্রস্তাবিত এই রাষ্ট্র কাঠামোর অধীনে সরকারের ধরণ হবে রাষ্ট্রপতি শাসিত প্রতিনিধিত্বশীল সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা। এই সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার পারস্পরিক তদারকী ও ভারসাম্য নিশ্চিত হবে। সেজন্য কিছু নির্বাহী ক্ষমতা প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি, জেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা চেয়ারম্যানের নিকট আনুপাতিক হারে বন্টন ও বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। এই বন্টন ও বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতিরক্ষা, নির্বাচন ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের দায়িত্ব, স্বায়ত্ত্বশাসিত জেলা সরকারের নিকট পুলিশ প্রশাসন, উচ্চমাধ্যামিক পর্যন্ত শিক্ষা প্রশাসন, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিভাগের পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব এবং উপজেলা সরকারের নিকট উপজেলাধীন প্রশাসনের ক্ষমতা ন্যস্ত করা যেতে পারে। এভাবে কিছু ক্ষমতার বন্টন ও বিকেন্দ্রীকরণ করা হলে, মন্ত্রীপরিষদ শাসিত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ রূদ্ধ হবে।

আমরা জানি যে, মন্ত্রীপরিষদের সদস্যরা আইনসভা তথা জাতীয় সংসদেরও সদস্য বটে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচন পদ্ধতিতে ত্রুটির কারণে প্রতিনিধিত্বশীল সংসদ গড়ে উঠতে পারে না। সেজন্য রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কারে জাতীয় সংসদ কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না। উল্লখ্য যে, রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ একটি চলমান প্রক্রিয়া, যেখানে রাষ্ট্রের সমস্ত অংশীজনের অবিরাম দ্বন্দ্ব, বাহাস ও সংলাপ চলতে থাকে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সর্বদাই রাজনৈতিক দর্শন, তত্ত্ব ও সূত্র সম্পর্কে চর্চা চলে। তাছাড়া তাদের রয়েছে অনুসারী বিদ্যোৎসাহী চিন্তকবর্গ। এসব দলের মধ্যে রয়েছে জাতীয় পার্টি, জামাআতে ইসলামী, জাসদ, কমিউনিষ্ট পার্টি ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও গণফোরাম ইত্যাদি। যেহেতু নির্বাচন পদ্ধতির ত্রুটির কারণে জাতীয় সংসদে এসব আদর্শবাদী দলগুলোর প্রতিনিধিত্বের সুযোগ থাকে না, সেহেতু এমন একটি নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন যেখানে জাতীয় সংসদে ছোট বড় সমস্ত মতাদর্শ সম্পন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়। সেজন্য এক নির্বাচনী অঞ্চল এক প্রতিনিধি নির্বাচন পদ্ধতি এবং আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বশীল নির্বাচন পদ্ধতি— এই দ্বিবিধ নির্বাচন পদ্ধতির সমন্বয়ে মিশ্র নির্বাচন পদ্ধতির প্রচলন করা প্রয়োজন। প্রস্তাবিত এই মিশ্র নির্বাচন পদ্ধতির প্রথম পদ্ধতি এবং দ্বিতীয় পদ্ধতিতে যথাক্রমে ৩০০জন করে মোট ৬০০ জন জাতীয় সংসদ প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ থাকবে। প্রথম প্রকার নির্বাচন পদ্ধতিতে মূলত: একটি নির্বাচনী অঞ্চলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা দল নিরপেক্ষ প্রার্থীদের মধ্যে প্রত্যক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ থাকবে, যেখানে সর্বোচ্চ ভোট প্রাপ্ত প্রার্থী নির্দিষ্ট নির্বাচনী অঞ্চল থেকে জাতীয় সংসদের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হবেন। অন্যদিকে, দ্বিতীয় প্রকার নির্বাচন পদ্ধতিতে প্রত্যেক রাজনৈতিক দল নির্বাচনের পূর্বেই প্রার্থীদের অনুক্রমিক তালিকা প্রকাশ করবে এবং নির্বাচন শেষে ৩০০টি নির্বাচনী অঞ্চলে মোট প্রাপ্ত ভোটের হিস্যা অনুসারে অনুক্রমিক তালিকা থেকে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধি প্রেরণের সুযোগ পাবে। এই প্রক্রিয়ায় জাতীয় সংসদ গঠিত হলে, সংসদ কেন্দ্রিক রাষ্ট্র সংস্কারে সহায়ক অবিরাম রাজনৈতিক সংলাপের সূযোগ সৃষ্টি হবে। এভাবে জাতীয় সংসদ কেন্দ্রিক রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কার সম্পন্ন করা হলে বিপ্লবের পুনরাবৃত্তি রোধ হবে। ফলে ভবিষ্যতে বিপ্লবী সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য ছাত্রজনতাকে পুন:পুন: রক্ত দিতে হবে না।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতী এখন পুরোপুরিভাবে নেতৃত্বহীন ও বিশৃংখল।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩



শেরে বাংলার নিজস্ব দল ছিলো, কৃষক প্রজা পার্টি; তিনি সেই দলের নেতা ছিলেন। একই সময়ে, তিনি পুরো বাংগালী জাতির নেতা ছিলেন, সব দলের মানুষ উনাকে সন্মান করতেন। মওলানাও জাতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন বিপ্লবী নেতা হাদী

লিখেছেন আরোগ্য, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৬



ওসমান হাদী অন্যতম জুলাই যোদ্ধা, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র, স্পষ্টবাদী কণ্ঠ, প্রতিবাদী চেতনা লালনকারী, ঢাকা ৮ নং আসনের নির্বাচন প্রার্থী আজ জুমুআর নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর গুলিবিদ্ধ হয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×