somewhere in... blog

স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো প্রয়োজন

০৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো প্রয়োজন
দীর্ঘ ১৬ বছর শাসনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলের অবসান হলে, গত ৮ই আগষ্ট ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। এই নতুন সরকারের কাছে জনগণের চাওয়া-পাওয়া অনেক। তাঁরা চায় এই সরকার এমন এক বাংলাদেশ নির্মাণ করবে, যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না, যেখানে মানুষ সুখে-শাস্তিতে ও স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করতে পারবে। মানুষের চাওয়া-পাওয়ার কথা চিন্তা করে এই সরকার রাষ্ট্রের সংস্কার সাধনের জন্য কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সরকার সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, প্রশাসন বিভাগ, পুলিশ বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশন— এই ছয়টি বিভাগকে সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছে। সে লক্ষ্যে ৬টি সংস্কার সহায়ক কমিশন গঠন করেছে, যা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ১১ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণ থেকে স্পষ্ট হয়েছে। সংস্কারের উদ্দেশ্যে গৃহীত পদক্ষেপ থেকে সরকারের রাষ্ট্র সংস্কার সম্পর্কিত নীতি স্পষ্ট হয়েছে। সরকারের এই রাষ্ট্র সংস্কার নীতি থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, সরকার কেবলমাত্র রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণাধীন কিছু প্রতিষ্ঠানকে সংস্কারে আগ্রহী। এছাড়া বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে আসা খবরাখবর থেকে জানা যাচ্ছে যে, সরকার আর্থিক খাতকে ব্যাপক সংস্কারে আগ্রহী। কিন্তু জনগণ প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হবে, এমন কোনো খাতকে সংস্কারের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

জনগণ বিশেষ করে মধ্য ও নিম্নবিত্ত শ্রেণীর জনগণ প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হতে পারে এমন খাত হলো শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ধর্ম ও সংস্কৃতি ইত্যাদি। উল্লেখ্য যে, সম্পদের উৎপাদন, বন্টন ও বিতরণকে ঘিরে প্রতিষ্ঠিত জটিল রাজনৈতিক বন্দোবস্তের উপর নির্ভর করে সমাজ নামক সৌধ গড়ে উঠে। কাজেই সমাজ অত্যন্ত জটিল। এই জটিল সমাজকে ৬-৭টি রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানকে সংস্কারের মাধ্যমে মেরামত করা সম্ভব নয়। কাজেই জনগণ প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হয় এমন প্রতিষ্ঠানগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কার করা এই সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত। উল্লেখ্য যে, উচ্চবিত্ত শ্রেণীর মানুষজন বাদে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের জনগণের চাওয়া-পাওয়া সীমিত। তাদের চাওয়া-পাওয়া অতি সামান্য। তাদের চাওয়া-পাওয়া হলো অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান এবং স্বাস্থ্যসেবা। কিন্তু দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা খুবই নাজুক।

বস্তুত: একটি দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা যদি সুস্থ না থাকে, তাহলে সুস্থ সমাজ ও সুস্থ জাতি গড়ে উঠতে পারে না। বাংলাদেশে কাগজে-কলমে সরকারের অগ্রাধিকার খাত হলো স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা। দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা পরিচালনায় জন্য প্রতিবছর প্রচুর বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়। চলতি বছর এই খাতে বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণ ৩৮,০০০ কোটি টাকা, যা জাতীয় বাজেটের শতকরা ৫.১৯ ভাগ। কিন্তু স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় অব্যবস্থাপনা এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রশাসন, চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থকর্মীদের কর্তব্য কর্মে অবহেলা ও দুর্নীতির কারণে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা যথাযথভাবে পরিচালিত হয় না। সেজন্য দেশের মানুষ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পায় না। যে কারণে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কার করা প্রয়োজন।

এই স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা সংস্কার পরিকল্পনায় যে সব বিষয় লক্ষ্য হিসেবে নেওয়া প্রয়োজন, তার মধ্যে অন্যতম হলো বেসরকারী উদ্যোগে গৃহীত স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্পে সহজ শর্তে ঋণদান, স্বাস্থ্যসেবা প্রশাসনকে জবাবদিহিতার আওতায় আনয়ন এবং রাষ্ট্রীয় কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদেরকে রাষ্ট্র পরিচালিত হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণে বাধ্যবাধকতা আরোপ। দেশে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য বেসরকারী খাতে বৃহদাকার হাসপাতাল (২০০০ বা তদুর্ধ শয্যাযুক্ত) স্থাপনে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। সেজন্য রাজধানী থেকে শুরু দেশের বিভিন্ন স্থানে কমপক্ষে ১০০টি হাসপাতাল স্থাপন করা প্রয়োজন। বৃহদাকার হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগটিকে সফল করতে, হাসপাতাল স্থাপনে আগ্রহী উদ্যোক্তা ব্যক্তি বা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানকে সহজ শর্তে বড় অঙ্কের মূলধন সরবরাহ করা প্রয়োজন। অপরদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব হাসাপাতালসমূহে জনগণকে প্রদেয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে, প্রশাসনকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা প্রয়োজন। এই হাসপাতালগুলোর তদারকী সশস্ত্রবাহিনী বোর্ডের নিকট ন্যস্ত করার মাধ্যমে এই স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যেতে পারে। অন্যদিকে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত হাসপাতালসমূহের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে গণমূখী করতে রাষ্ট্রের সুবিধাভোগী সামরিক ও বেসামরিক কর্মচারী-কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধি ও তাঁদের পরিবারবর্গকে রাষ্ট্র পরিচালিত হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা প্রয়োজন। রাষ্ট্রের সুবিধাভোগী ব্যক্তিগণ ও তাঁদের পরিবারবর্গকে রাষ্ট্র পরিচালিত হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হলে, রাষ্ট্র পরিচালিত এ সব হাসপাতালের উন্নয়নে তাঁদের ভিতর একটি তাগিদ কাজ করবে। স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা উন্নয়নে তাঁদের এই তাগিদের একটি প্রতিফলন দেখা যাবে। ফলশ্রুতিতে দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়ন সাধিত হবে। এতে দেশের মানুষ সুষ্ঠু স্বাস্থ্যসেবা লাভের সুযোগ পাবে।

দেশের বিদ্যমান স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা নাজুক বিধায় এই স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা দিন দিন কমে এসেছে। সেজন্য মানুষ চিকিৎসা গ্রহণের উদ্দেশ্যে্ নানা দেশে চিকিৎসা ভ্রমণে গিয়ে থাকে। বিত্তশালীরা চিকিৎসা গ্রহণের উদ্দেশ্যে সিঙ্গাপুর, লণ্ডন বা ব্যংকক যাচ্ছেন। আর মধ্যবিত্ত শ্রেণী ভারতের বিভিন্ন শহরে যাচ্ছেন। কিন্তু যারা নিম্নবিত্ত তাঁরা বাধ্য হয়ে দেশের এই অসুস্থ হাসপাতালসমূহ থেকে অপচিকিৎসা গ্রহণে বাধ্য হচ্ছেন। স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার অসুস্থতার কারণে দেশের মানুষ চিকিৎসা গ্রহণের জন্য বিদেশে মানুষের বিদেশমুখী হওয়ায়, একদিকে দেশের অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে, অন্যদিকে দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা উন্নয়নের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কাজেই দেশে এমন একটি সুষ্ঠু স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন, যেনো দেশের মানুষের দেশীয় স্থাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা ফিরে আসে। এভাবে যদি মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশমুখীনতা কমে আসে, তাহলে বিদেশে অর্থপাচার রোধ হবে এবং দেশের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেশের স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।

স্থাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কিত উক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, মানবিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণে দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার সংস্কার করা প্রয়োজন। কাজেই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রাধিকার সম্পন্ন সংস্কার উদ্যোগের একটি হওয়া উচিত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার সংস্কার। এই সংস্কার সাধনের লক্ষ্যে একটি স্বাস্থ্যসেবা সংস্কার কমিশন গঠন করা প্রয়োজন, যেনো এই কমিশন বিদ্যমান স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ত্রুটি মূল্যায়ন করে, একটি সংস্কার পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করতে পারে।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৫৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিদ্যা যদি অন্তরে ধারণ করা না যায় তবে সেটা কোনো কাজে আসে না।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১২:২৮


ঘটনাটি যেন দুঃস্বপ্নের চেয়েও নির্মম। ধর্মের পথপ্রদর্শক একজন ইমাম, যার কাজ মানুষকে সহনশীলতা, দয়া ও ন্যায়বিচারের শিক্ষা দেওয়া — তিনি নিজেই স্ত্রীর সামান্য বাকবিতণ্ডায় মত্ত হয়ে উঠলেন হত্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কবি দাউদ হায়দার আর নেই

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:৪৫






‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’- পংক্তিমালার কবি দাউদ হায়দার চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ৭৩ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

শনিবার রাতে জার্মানির রাজধানী বার্লিনের একটি বয়স্ক... ...বাকিটুকু পড়ুন

অপার্থিব ইচ্ছেরা (তসলিমার “কারো কারো জন্য” থেকে অনুপ্রাণিত)

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:৪৬


কেন যে, কেন যে হঠাৎ
কোন নাম না জানা ভোরে
কারো মুখ খুব মনে পড়ে,
মনে পরে অকারণ স্পর্শের,
কাছে বসার এক তিব্র বাসনার।

কতটা পথ, কতটা জীবন বাকি,
তারপরও,
অচেনা হাসি মনে হয় বড্ড চেনা,
অচেনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

---প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৪৫---(কন্যার প্রথম বই এর প্রচ্ছেদ আঁকা)

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৭







আব্বু আমার নতুন রং লাগবে ?


কেন ?

রং শেষ।

আর কিনে দিব না, তুমি শুধু শুধু নষ্ট করো।

আমি শুধু নষ্ট করি ..............। তাহলে এই দেখেন ? অফিস... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামে নারীর মর্যাদা (পর্ব :৪)

লিখেছেন আরোগ্য, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩

বিবাহ



বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নারীকে কখনো পশুর পালের সাথে তুলনা করা হত আবার কখনো পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট মনে করা হত। যুগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×