বাংলাদেশে ধারা বিভক্ত শিক্ষাব্যবস্থার স্বরূপ ও তা সমন্বয়ের প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে
ডক্টর এ.বি.এম. রেজাউল করিম ফকির
অধ্যাপক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১.ভূমিকা
এ প্রবন্ধে বাংলাদেশে ধারা বিভক্ত শিক্ষা ব্যবস্থার স্বরূপ ও তা সমন্বয়ের প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোকপাত করা হবে। শিক্ষাব্যবস্থা রাষ্ট্রক্ষমতাধীনে প্রবর্তিত একটি ব্যবস্থা। বাংলাদেশে প্রচলিত বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা সরকার প্রবর্তিত ব্যবস্থা এবং সরকারী নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত বিভিন্ন আদর্শিক শ্রেণী কর্তৃক পরিচালি্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্রবর্তিত ব্যবস্থার সমন্বয়ে গঠিত। বাংলাদেশে প্রচলিত এ ব্যবস্থাটি বিভিন্ন ধারায় বিভক্ত। জাতীয় শিক্ষানীতিতে দুটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এ দুটি ধারার অস্তিত্ব রয়েছে বলে বিবৃত রয়েছে। একটি দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী শিক্ষাকে সাধারণ শিক্ষা, মাদ্রাসা শিক্ষা ও ইংরেজি শিক্ষা-এ তিনটি ধারায় বিভক্ত বলে দেখানো হয়েছে। অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে শিক্ষাকে সাধারণ শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা-এ দুটি ধারায় বিভক্ত বলে দেখানো হয়েছে। বাংলাদেশে প্রচলিত ধারা বিভক্ত এ শিক্ষাব্যবস্থা উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই সাধারণ শিক্ষাকে মূল ধরে অন্য শিক্ষাকে ভিন্ন বলে দেখানো হয়েছে।
এ বিভিন্নতাকে জাতীয় শিক্ষানীতিতে এভাবে দেখানো হয়েছে বটে, তবে একে অন্যভাবে দেখারও সুযোগ রয়েছ। যেমন শিক্ষাদানের মাধ্যমের ভিন্নতার কারণে সূচিত শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন ধারাগুলো হল-ইংরেজি মাধ্যম, বাংলা মাধ্যম ও আরবি মাধ্যম। মতাদর্শগত পার্থক্যের কারণে সূচিত শিক্ষাধারার বিভিন্ন শিক্ষাধারাগুলো হল-আধুনিক শিক্ষাধারা, কারিগরি শিক্ষাধারা ও ইসলামী শিক্ষাধারা। প্রচলিত বিভিন্ন ধারার শিক্ষার সমন্বয়ে একটি সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত হয়ে এসেছে। কারণ ধারাবিভক্ত শিক্ষাব্যবস্থার সমন্বয়ে একটি সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তিত হলে দেশে যেমন সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে দ্বন্দ্ব নিরসন হবে, তেমনিভাবে শিক্ষাখাতে অপব্যয়ও হ্রাস পাবে। উপরন্তু দেশ পাবে একটি গণমুখী শিক্ষাব্যবস্থা। তবে সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নের কাজটি দেশের স্বাধীনতার অব্যবহিত পর থেকে শুরু হলেও, অদ্যবধি সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা যায়নি, উপরন্তু অনিয়ন্ত্রিত প্রশাসনিক ব্যবস্থার কারণে শিক্ষাব্যবস্থার এ সমস্ত বিভিন্ন ধারা আরও অনেক উপধারায় পল্লবিত হয়ে উঠেছে। কাজেই এ সমস্ত শিক্ষা ধারার বর্তমানে যে কতগুলো উপধারা রয়েছে তার কোন হিসাব নাই। তবে জাতীয় ঐক্য সাধনের জন্য জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করা যে অতি জরুরী, সে বিষয়ে শিক্ষাবিদরা একমত।
২. জাতীয় শিক্ষানীতিতে (২০১০) বিধৃত সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থার ধারণা
শিক্ষাব্যবস্থার এ সমস্ত বিভিন্ন ধারা সম্পর্কে জাতীয় শিক্ষানীতি(২০১০)-তে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য রয়েছে। ২০১০ সালে প্রবর্তিত এ জাতীয় শিক্ষানীতির অধ্যায়-২ থেকে অধ্যায়-১৯ পর্যন্ত মোট ১৮ ধরণের শিক্ষার কথা আলোকপাত করা হয়েছে। এগুলো হল-১)প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা, ২)বয়স্ক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা, ৩)মাধ্যমিক শিক্ষা, ৪)বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা, ৫)মাদরাসা শিক্ষা, ৬)ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, ৭)উচ্চশিক্ষা, ৮)প্রকৌশল শিক্ষা, ৯)চিকিৎসা, সেবা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা, ১০) বিজ্ঞানশিক্ষা, ১১)তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা, ১২)ব্যবসায়শিক্ষা, ১৩)কৃষিশিক্ষা, ১৪)আইনশিক্ষা, ১৫)নারীশিক্ষা, ১৬)কারুকলা ও সুকুমার বৃত্তি শিক্ষা, ১৭) বিশেষ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও শারিরীক শিক্ষা, স্কাউট ও গার্লসগাইড এবং ব্রতচারী ও ১৮)ক্রীড়াশিক্ষা। এ ১৮ ধরণের শিক্ষার মধ্যে প্রত্যেক ধরণের শিক্ষা অন্যধরণের শিক্ষার সাথে কীভাবে সংশ্লিষ্ট বা সম্পর্কিত তার কোন ব্যাখ্যা শিক্ষানীতি পুস্তিকার কোথাও বিবৃত নাই। ফলশ্রুতিতে এই একই শিক্ষানীতিতে শিক্ষা ব্যবস্থার সমন্বয়ের পক্ষেও যেমন বক্তব্য রয়েছে, বিপক্ষেও বক্তব্য রয়েছে। শিক্ষানীতি (২০১০)-তে এভাবে বিভিন্ন ধরণের শিক্ষাকে উপস্থাপন, শিক্ষানীতি প্রণয়নকারীদের শিক্ষাব্যবস্থার ধারা বিভক্তি সম্বন্ধে উপলদ্ধির ব্যর্থতাকে প্রকাশ করে। শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন ধারার পক্ষে ও বিপক্ষে পুস্তিকাটির বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছন্নভাবে যে বক্তব্যের উল্লেখ রয়েছে তা এখানে সন্নেবেশিত করা হল।
২.১. সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থার পক্ষে বক্তব্য
জাতীয় শিক্ষানীতি(২০১০)-তে সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থার পক্ষে নিম্নরূপভাবে আলোকপাত করা হয়েছেঃ
ক) “বিভিন্ন ধারার সমন্বয়ঃ একই পদ্ধতির মৌলিক শিক্ষা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার বাংলাদেশের সংবিধানে ব্যক্ত করা হয়েছে। সাংবিধানিক তাগিদে বৈষম্যহীন শিক্ষাব্যবস্থা চালু করার লক্ষ্যে সমগ্র দেশে প্রাথমিক স্তরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্ধারিত বিষয়সমূহে এক ও অভিন্ন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রবর্তন করা হবে। অর্থাৎ প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন ধারা যথা সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন (বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম), ইবতেদায়িসহ সবধরনের মাদরাসার মধ্যে সমন্বয় ঘটানোর জন্য এই ব্যবস্থা চালু করা হবে। নির্ধারিত বিষয়সমূহ ছাড়া অন্যান্য নিজস্ব কিংবা অতিরিক্ত বিষয় শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের অনুমতিসাপেক্ষে বিভিন্ন ধারায় সন্নিবেশ করা যাবে।” (জাতীয় শিক্ষানীতি,২০১০,পৃষ্ঠা-৫)
খ)“সমন্বিত শিক্ষাআইন প্রণয়নঃ শিক্ষা সংক্রান্ত সকল আইন, বিধি-বিধান ও আদেশাবলী একত্রিত করে এ শিক্ষানীতির আলোকে এবং এর যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সমন্বিত শিক্ষাআইন প্রবর্তনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।” (জাতীয় শিক্ষানীতি,২০১০,পৃষ্ঠা-৬২)
২.২. সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থার বিপরীতে যে বক্তব্য
জাতীয় শিক্ষানীতি (২০১০)-তে সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থার বিপরীতেও কিছু বক্তব্য নিম্নরূপভাবে সন্নিবেশিত করা হয়েছেঃ
ক) “মাদরাসা শিক্ষায় ইসলাম ধর্ম শিক্ষার সকল প্রকার সুযোগ ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে। ....... মাদরাসা শিক্ষার উদ্দ্যেশ্য ও লক্ষ্য হল-
-শিক্ষার্থীর মনে সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রাসূল (সাঃ)-এর প্রতি অটল বিশ্বাস গড়ে তোলা এবং শান্তির ধর্ম ইসলামের প্রকৃত মর্মার্থ অনুধাবনে সমর্থ করে তোলা।
- দ্বীন ও ইসলামের ঐতিহ্যের প্রচার ও প্রসারের জন্য অনুকরণীয় চরিত্র গঠণ এবং ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন দিক, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, সংস্কা্র সম্পর্কে জনগোষ্ঠীকে সচেতন করা ও ধর্ম অনুমোদিত পথে জীবন-যাপনের জন্য তাঁদেরকে উদ্বুদ্ধ করার উপযোগী করে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলা।
- শিক্ষার্থীরা এমনভাবে তৈরী হবে যেন তারা ইসলামের আদর্শ ও মর্মবাণী ভাল করে জানে ও বোঝে, সে অনুসারে নির্ভরযোগ্য চরিত্রের অধিকারী হয় এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে সেই আদর্শ ও মূলনীতির প্রতিফলন ঘটায়।” (জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০, পৃষ্ঠা-১৮)
খ) “মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থাপনার জন্য একটি পৃথক মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হবে।”(জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০,পৃষ্ঠা-৬৪)
৩. সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নের প্রক্রিয়া
রাষ্ট্র ক্ষমতাধীনে যেকোনো ব্যবস্থা প্রণয়নের পাঁচটি ধাপ রয়েছে। এগুলো হলো- ক)মতাদর্শগত ভিত্তি রচনা, খ)নীতি প্রণয়ন, গ)নীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে পরিকল্পনা প্রণয়ন, ঘ)পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সঠিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা সৃজন ও ঙ)সর্বশেষে প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে অভিষ্ট ব্যবস্থাটির প্রবর্তন। কাজেই একটি সমন্বিত শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য নিম্নরূপভাবে এই ৫ ধাপ-বিশিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করা দরকার।
৩.১. শিক্ষানীতির মতাদর্শগত ভিত্তি রচনা
একটি সুষ্ঠু শিক্ষানীতি এক বা একাধিক মতাদর্শের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশের সংবিধান অনুসরণে শিক্ষানীতি প্রণয়নের ভিত্তি হবে সংবিধানে বিবৃত রাষ্ট্র পরিচালনার ৪ মূলনীতিঃ বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। তবে ধর্মনিরপেক্ষতা রাষ্ট্র পরিচালনার ৪ মূলনীতির একটি হলেও, রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে ইসলাম ধর্মের স্বীকৃতি ও হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করার কথা সংবিধানে বিধৃত থাকায় রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসাবে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম মূলনীতি গণতন্ত্র হওয়ার সুবাদে জনগণের ব্যক্তিগতভাবে ও সম্মিলিতভাবে এবং দলগতভাবে মতাদর্শ প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। যে কারণে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ (এর অন্য রকমফের হল-বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ), ইসলাম ও সমাজতন্ত্র এই ৩টি মতাদর্শ ভিত্তিক বিভিন্ন দল দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ব্যক্তিস্বার্থ ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দল ভেঙ্গেছে-গড়েছে, কিন্তু মতাদর্শ টিকে আছে কাল-কালান্তর ধরে। তার সাথে বর্তমানে যুক্ত হয়েছে বিশ্বায়ন নামক পূঁজিবাদী হুজুগ বা মতাদর্শ। যার ফলশ্রুতিতে দেশে এখন ৪টি প্রধান মতাদর্শ প্রচলিত রয়েছে। এ ৪টি মতাদর্শের মধ্যে বাঙ্গালী/বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ হল দেশজ এবং বাকি ৩টি মতাদর্শ হল বৈদেশিক। ইসলাম, সমাজতন্ত্র ও বিশ্বায়ন-এ ৩টি বৈদেশিক মতাদর্শ হলেও এগুলো বাঙ্গালী/বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের চেয়ে অনেক পুরানো এবং সুব্যাখ্যাত, সে তূলনায় বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ নতুন ও অত্যন্ত অব্যাখ্যাত একটি মতাদর্শ। বাঙ্গালী বা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, ইসলাম, সমাজতন্ত্র ও বিশ্বায়ন যথাক্রমে সাধারণ শিক্ষা, ইসলামিক শিক্ষা, ধর্মশিক্ষা ব্যতীত বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ও ইংরেজি মাধ্যমে বিদেশি পাঠ্যক্রমে শিক্ষাকে সমর্থন করে। অনুরূপভাবে হেফাজতে ইসলাম, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি শিক্ষাকার্যক্রমে যথাক্রমে সবচেয়ে বেশি মাত্রা থেকে সবচেয়ে কম মাত্রায় ইসলামি শিক্ষা অন্তর্ভুক্তিকে সমর্থন করে।
বিভিন্ন মতাদর্শের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন দলের ভাঙ্গাগড়া ও উত্থানপতন হতে পারে, কিন্তু মতাদর্শ টিকে থাকে এবং তাদের পুনর্জন্ম হয়। কাজেই দুটি ভিন্ন পদক্ষেপ অনুসরণে সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করা সম্ভব। এর একটি পদক্ষেপ হল অপরাপর মতাদর্শগত দলগুলোকে উপেক্ষা বা দমন করে কর্তৃত্ববাদী রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতাসীন দলের মতাদর্শের ভিত্তিতে একটি শিক্ষা ব্যবস্থার প্রণয়ন করা। বর্তমানে চীন ও ইরানে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা এ প্রক্রিয়ায় প্রবর্তিত। এর অন্য একটি পদক্ষেপ হল বিভিন্ন মতাদর্শের ভিত্তিতে গঠিত দলগুলোর পারস্পরিক নীতিসংলাপের মাধ্যমে একটি সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থার প্রণয়ন। প্রথম পদক্ষেপ অনুসরণে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হলে হেফাজতে ইসলাম, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ইত্যাদি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বহির্ভূত দলগুলোকে উপেক্ষা বা দমন করে কর্তৃত্ববাদী রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় বর্তমানে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত দলের মতাদর্শের ভিত্তিতে একটি শিক্ষা ব্যবস্থার প্রণয়ন করা সম্ভব হবে। বিকল্প পদক্ষেপ অনুসরণে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হলে বাঙ্গালী/বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, ইসলাম ও সমাজতন্ত্র ও বিশ্বায়ন-এ ৪টি মতাদর্শের ভিত্তিতে গঠিত সমস্ত রাজনৈতিক দল, যেমন-হেফাজতে ইসলাম, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-এর সাথে জাতীয় সংলাপের মাধ্যমে একটি সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করা যাবে। গণতন্ত্র যেহেতু রাষ্ট্রের অন্যতম একটি মূলনীতি, সেহেতু বিভিন্ন মতাদর্শগত শ্রেণীর অংশগ্রহণে জাতীয় সংলাপের মাধ্যমে একটি সমন্বিত শিক্ষার মতাদর্শগত ভিত্তি সৃজন করা প্রয়োজন। কেননা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বহির্ভূত দলগুলোকে উপেক্ষা বা দমন করে কর্তৃত্ববাদী রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন, কোন গণতন্ত্র সম্মত প্রক্রিয়া নয়।
৩.২. শিক্ষানীতি প্রণয়ন
সমন্বিত মতাদর্শগত ভিত্তি সৃজন সম্ভব হলে, তার উপর নির্ভর করে শিক্ষানীতি প্রণয়নের পদক্ষেপ গহণ করতে হবে। তবে শিক্ষানীতি প্রণয়নের পূর্বে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন যে শিক্ষানীতি বলতে কী বোঝায়। শিক্ষানীতি হল জাতীয় কোন মতাদর্শের আলোকে কর্মক্ষম, মানবিক ও নৈতিক জাতি গঠনের লক্ষ্যে শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে অগ্রাধিকার ভিত্তিক ও বাধ্যতামূলক আদর্শ, জ্ঞান ও দক্ষতা সংশ্লিষ্ট পাঠ্যবিষয়সমূহ নির্ধারণ এবং তা শিক্ষাপ্রশাসন কর্তৃক নির্দিষ্ট কৌশল প্রয়োগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রসারিত করার বিবৃত নীতিমালা।
জাতীয় শিক্ষানীতির(২০১০) অধ্যায়-১ থেকে অধ্যায়-১৯ ‘শিক্ষার উদ্দেশ্য’ শিরনামাধীনে শিক্ষানীতি বিষয়ক ধারণাগুলো সন্নেবেশিত করা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে যে শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে তা ব্রিটিশ আমল থেকে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার সাথে কিছু সংযোজন ও বিয়োজনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত একটি ব্যবস্থামাত্র। কাজেই এটি কোন মতাদর্শগত সমন্বয়ের মাধ্যমে সৃষ্ট কোন শিক্ষানীতির ভিত্তিতে প্রবর্তিত কোন শিক্ষাব্যবস্থা নয়। কারণ একটি সম্পূর্ণ শিক্ষানীতিতে যা কিছু বিবৃত থাকে তা হল- ক)শিক্ষার অগ্রাধিকারভিত্তিক ও বাধ্যতামূলক বিষয়সমূহ, খ)শিক্ষার স্তর, গ)শিক্ষার ধারা, ঘ)শিক্ষার ধরণ, ঙ)শিক্ষা প্রদানের ভাষাগত মাধ্যম, চ)শিক্ষা প্রশাসন, ছ)শিক্ষা আইন ও নিয়ম, জ)শিক্ষাপ্রদানের কৌশল ও ঝ)শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা মূল্যায়ন ইত্যাদি, অথচ বাংলাদেশের শিক্ষানীতিতে এগুলো স্পষ্টভাবে বিবৃত নয়।
বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এ দেশে বিভিন্ন সময়ে যথাক্রমে ১৯৮৮ সাল, ১৯৯৭ সাল, ২০০২ সাল, ২০০৭ সাল ও ২০১০ সালে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু এ শিক্ষানীতি (২০১০)-তে শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নে আবশ্যকীয় বিষয়গুলো- মতাদর্শগত ভিত্তি, নীতি, পরিকল্পনা ও শিক্ষা প্রশাসন ইত্যাদি স্পষ্টভাবে বিবৃত করা হয়নি। তাছাড়া কী ভাষিক মাধ্যমে শিক্ষাদান বাধ্যতামূলক করা হবে, বা কোন ভাষা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাঠ্যক্রমভুক্ত বিষয় বলে বিবেচিত হবে তা ভাষানীতির এক্তিয়ারভূক্ত বিষয়। কিন্তু বাংলাদেশের কোন ভাষানীতি নাই। বাংলাদেশে কোন ভাষানীতিতো নাইই, উপরন্তু বর্তমান শিক্ষানীতিতে যা কিছুই বিবৃত থাকুক না কেন, আরবী ও উর্দু মাধ্যমে কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা ও ইংরেজি মাধ্যমে বিদেশি পাঠ্যক্রমে শিক্ষার মতো চরম বৈপরীত্যপূর্ণ দুটি শিক্ষাব্যবস্থা অনিয়ন্ত্রিতভাবে চালু রয়েছে। বিভিন্ন ধারার শিক্ষার মধ্যে, আরবী ও উর্দু মাধ্যমে কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা ও ইংরেজি মাধ্যমে বিদেশি পাঠ্যক্রমে শিক্ষা- এই উভয় ধরণের শিক্ষার অনুসারীগণ সংখ্যায় কম। তবে এ দেশে তাঁরা প্রত্যেকেই গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী সামাজিক শ্রেণি। ইংরেজি মাধ্যমে বিদেশি পাঠ্যক্রমে শিক্ষার অনুসারীগণ দ্বিচারী নীতিদর্শের অধিকারী। কেননা তারা মূলত দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে, যদিও তারা নিজেদের জন্য এ শিক্ষাব্যবস্থাকে অনুপযুক্ত মনে করে। কাজেই বাংলাদেশে বর্তমানে প্রচলিত বিভিন্ন ধারায় বিভক্ত শিক্ষাব্যবস্থার সমন্বয়ে আদর্শিক, নীতিগত ও সামাজিক শ্রেণিগত বাধা রয়েছে।
সেজন্য সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য জাতীয় শিক্ষানীতি সংলাপ প্রয়োজন। এ জাতীয় শিক্ষানীতি সংলাপের আলোচ্য বিষয়সমূহ হবে-ক)শিক্ষার অগ্রাধিকারভিত্তিক ও বাধ্যতামূলক বিষয়সমূহ, খ)শিক্ষার স্তর, গ)শিক্ষার ধারা, ঘ)শিক্ষার ধরণ, ঙ)শিক্ষা প্রদানের ভাষাগত মাধ্যম, চ)শিক্ষা প্রশাসন, ছ)শিক্ষা আইন ও নিয়ম, জ)শিক্ষাপ্রদানের কৌশল ও ঝ)শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা মূল্যায়ন ইত্যাদি। এ শিক্ষানীতি সংলাপের লক্ষ্য হবে অগ্রাধিকারমূলক পাঠ্য বিষয় ও শিক্ষাদানের ভাষিক মাধ্যম স্থির করে, সেই সমস্ত অগ্রাধিকারমূলক পাঠ্য বিষয়সমূহ সেই অগ্রাধিকারমূলক ভাষিক মাধ্যমে বাধ্যতামূলক পাঠের ব্যবস্থা করা যেন সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত হয়।
৩.৩. শিক্ষাপরিকল্পনা প্রণয়ন
সফলভাবে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা সম্পন্ন হলে, তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। সেজন্য আগে থেকে প্রণীত শিক্ষানীতিটিকে পরিকল্পনায় ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন হয়। শিক্ষাপরিকল্পনা হল শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের কৌশল, কার্যক্রম ও প্রক্রিয়া। কাজেই শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে শিক্ষাপরিকল্পনা প্রণয়ন অপরিহার্য। শিক্ষাপরিকল্পনায় শিক্ষাক্রম পরিকল্পনা, পাঠ্যক্রম পরিকল্পনা, শিক্ষাপ্রশাসন পরিকল্পনা ও পাঠ্যপুস্তক পরিকল্পনা ইত্যাদি বিষয় সন্নেবেশিত করা হয়। শিক্ষাপরিকল্পনায় ত্রুটি থাকলে অথবা অপরিকল্পিতভাবে শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করা হলে শিক্ষাব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষানীতি(২০১০) ভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ কোন শিক্ষাপরিকল্পনা নাই। যেটুকু রয়েছে তা জাতীয় শিক্ষানীতির(২০১০) অধ্যায়-২ থেকে অধ্যায়-১৯-এ ‘কৌশল’ শিরনামাধীনে সন্নেবেশিত করা হয়েছে। কাজেই বর্তমানে শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের জন্য বিচ্ছিন্নভাবে যে সমস্ত পরিকল্পনা, যেমন- জাতীয় শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হয়েছে তা অপূর্ণাঙ্গ।
কাজেই ধারাবিভক্ত শিক্ষাব্যবস্থা সমন্বয়ের জন্য শিক্ষাপরিকল্পনায় পাঠ্যক্রম, পাঠ্যসূচী, মূল্যায়ন পদ্ধতি, শিক্ষক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষাপ্রশাসন ইত্যাদি বিষয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। সেজন্য বিভিন্ন মতাদর্শের অনুসারীদের অংশগ্রহণমূলক নীতিসংলাপের মাধ্যমে প্রণীত শিক্ষানীতির ভিত্তিতে শিক্ষাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা জরুরী। নীতিসংলাপের মাধ্যমে সমন্বিত শিক্ষানীতি প্রণয়ন না করেও কর্তৃত্ববাদী প্রক্রিয়াও ধারাবিভক্ত শিক্ষাব্যবস্থার সমন্বিত শিক্ষাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা সম্ভব। তবে এ প্রক্রিয়ায় প্রণীত শিক্ষাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভিন্ন মতাদর্শের অনুসারীদের নিকট থেকে বিরোধিতা আসবে এবং এ বিরোধিতা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
৩.৪. পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সমন্বিত প্রশাসনিক ব্যবস্থা সৃজন
ধারা বিভক্ত শিক্ষাব্যবস্থাকে সমন্বয় করতে হলে সমন্বিত শিক্ষা প্রশাসন সৃষ্টি করা প্রয়োজন, কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রশাসন বহুধাবিভক্ত। শিক্ষার বিভিন্ন স্তরঃ প্রাথমিক শিক্ষা, মাধ্যমিক শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা-এ বিভিন্ন ধারার শিক্ষার জন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রশাসন রয়েছে। যেমন- প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে সাধারণ শিক্ষা ও ইবতেদায়ী শিক্ষার জন্য আলাদা শিক্ষাপ্রশাসনের অস্তিত্ব রয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক স্বীকৃত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা নিয়ন্ত্রণের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড নামে আলাদ ৩টি প্রশাসন রয়েছে। উচ্চশিক্ষা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক পরিচালনার কথা বলা হলেও, এ শিক্ষা স্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাইভেট বাণিজিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানা প্রশাসনের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। কাজেই বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রশাসনের বাস্তব অবস্থা হল প্রাথমিক শিক্ষা স্তর থেকে উচ্চ শিক্ষা স্তরে পর্যায়ক্রমে শিক্ষাপ্রশান অধিকতর দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। অধিকন্তু বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক)-এর অধীনে পরিচালিত মাদরাসা শিক্ষা এবং ইংরেজি মাধ্যমে বিদেশী পাঠ্যক্রম ভিত্তিক শিক্ষাপ্রশাসনের অস্তিত্বও রয়েছে।
কাজেই সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হলে শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে শিক্ষাপ্রশাসনকে সমন্বয় করতে হবে। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ইত্যাদি ভিন্ন ভিন্ন বোর্ডকে একটি অভিন্ন প্রশাসনিক বোর্ডের অধীনে ন্যস্ত করতে হবে। এ বোর্ডের অধীনে কওমি মাদরাসা শিক্ষা ও ইংরেজি মাধ্যমে বিদেশী পাঠ্যক্রম ভিত্তিক শিক্ষাও ন্যস্ত করতে পারলে শিক্ষাপ্রশাসনের সমন্বয় সম্ভব হবে। অনুরূপভাবে কওমি মাদরাসাসহ সমস্ত উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা একটিমাত্র প্রশাসনের আওতায় ন্যস্ত করতে পারলে, দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায়ও সমন্বয় সাধন সম্ভব হবে।
৩.৫. প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে অভিষ্ট সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তন
সমন্বিত শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন শিক্ষানীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়ার সর্বশেষ ধাপ হলেও, এ প্রক্রিয়ার পূর্ববর্তী ধাপগুলোর প্রত্যেকটি ধাপেই সমন্বয় করে পর্যায়ক্রমে পরের ধাপে অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন। পূর্ববর্তী সবগুলো ধাপে পর্যায়ক্রমে সমন্বয় সাধন না করে, এমনকি শিক্ষানীতি একেবারেই প্রণয়ন না করেও একটি শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করা সম্ভব, তবে শিক্ষানীতি ও শিক্ষাপরিকল্পনা দ্বারা অসমর্থিত সেই শিক্ষাব্যবস্থা টেকসইপূর্ণ হওয়ার কথা নয়। সেজন্য সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন প্রক্রিয়ার পূর্ববর্তী সব ধাপে সমন্বয় সাধন করে ৩.২. অনুচ্ছেদে বর্ণিত সমন্বিত শিক্ষাপরিকল্পনাগুলো অনুসরণে ৩.৪. অনুচ্ছেদে বর্ণিত সমন্বিত প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারলে অভিষ্ট সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করা সম্ভব হবে।
৪. উপসংহার
বর্তমান জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা যে প্রক্রিয়ায় প্রবর্তিত হয়েছে, শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য তার চেয়ে ভিন্নতর ৫ ধাপ বিশিষ্ট একটি প্রক্রিয়ার অস্তিত্ব রয়েছে। কাজেই শিক্ষানীতি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের বর্তমান অনুশীলন থেকে বেরিয়ে এসে, শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের পাঁচটি ধাপঃ ক)মতাদর্শগত ভিত্তি রচনা, খ)নীতি প্রণয়ন, গ)নীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে পরিকল্পনা প্রণয়ন, ঘ)পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সঠিক প্রশাসনিক ব্যবস্থার সৃজন ও ঙ)প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে অভিষ্ট ব্যবস্থাটির প্রবর্তন-এর প্রত্যেকটি ধাপ অনুসরণ করে সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। সেজন্য প্রক্রিয়ার প্রত্যেক ধাপের কার্যক্রম আলাদা আলাদা বিশেষজ্ঞ দলের কাছে ন্যস্ত করা প্রয়োজন, যেন তারা প্রত্যেক ধাপের সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা, বিশ্লেষণ ও গবেষণা করতে পারে এবং তাঁরা তাঁদের দায়িত্বপ্রাপ্ত ধাপের কার্যক্রমের জন্য সুপারিশগুলো বের করে আনতে পারে। সবশেষে সবগুলো ধাপের সুপারিশসমূহ সুষ্ঠুভাবে সমন্বয় সাধনের ব্যবস্থা করতে পারে। এ সমন্বয় সাধন প্রচেষ্টা সফল হবে, যদি সমন্বয় সাধন কার্যে নিয়োজিত হয় প্রত্যেক ধাপ থেকে বাছাইকৃত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত একটি কেন্দ্রীয় কমিটি। এ প্রক্রিয়া অনুসরণে অগ্রসর হলে অভিষ্ট সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।