আমার কাছে যদি জানতে চাওয়া হয় , সর্বকালের সেরা ছবিগুলোর নাম বলোতো । আমার নির্দ্বিধায় প্রথম সেরা পাঁচটার একটি ছবির নাম হবে বিখ্যাত পরিচালক রোমান পোলানস্কি পরিচালিত জীবনসংক্রান্ত ছবি “ দ্য পিয়ানিস্ট ”। হয়তো অনেকের সাথে আমার মতের অমিল থাকতে পারে , কিন্তু আমার দেখা সেরা ছবি বললে ভুলে হবে না সেরা পরিচালনা বা ক্যামেরার অসাধারণ কাজ বা আনকোরা হিসেবে অভিনেতা অ্যাড্রিয়েন ব্রডির যে অসাধারন অভিনয় আর রোমান পোলানস্কি এর মতো পরিচালকের দক্ষ পরিচালনায় যা এই ছবিটাকে একবারে জীবন্ত ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে ।
দ্য পিয়ানিস্ট একটি জীবনসংক্রান্ত ছবি , যাহার কাহিনী ঘিরে উঠেছে পোলিশ ইহুদী পিয়ানোবাদক ও সুরকার ওলাদিস্লো ইযপিল্ম্যানের জীবনী নিয়ে করা আর এতে নাম ভুমিকায় অভিনয় করেছেন হলিউড অভিনেতা অ্যাড্রিয়েন ব্রডির । ছবিটি মোট ৭টি ক্যাটাগরি তে অস্কার নমিনেশন পায় এবং ৩টি পুরুস্কার লাভ করে , যার মধ্যে রোমান পোলানস্কি তাহার জীবনের প্রথম সেরা পরিচালক হিসাবে অস্কার পুরুস্কারটি পান , আর নায়ক অ্যাড্রিয়েন ব্রডির রেকর্ড সবচেয়ে কম বয়সে তিনি সেরা অভিনেতার পুরস্কার জয় করেন । এছাড়া দ্য পিয়ানিস্ট ছবিটিকে পৃথিবীর আরো অনেক নামি দামি পুরুস্কারে ভূষিত করা হয় । যাদের মধ্যে আছে গোল্ডেন গ্লোব , কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল , বার্লিন ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল আরো অনেক পুরুস্কার ।
কাহিনীর প্রেক্ষাপট হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এক পোলিশ ইহুদী পিয়ানোবাদক কে নিয়ে , যার নাম হলো ওলাদিস্লো ইযপিল্ম্যান ওরফে অ্যাড্রিয়েন ব্রডি যিনি ওয়ারশ রেডিও স্টেশন তে পিয়ানোবাদক হিসাবে কর্মরত ছিলেন , একদিন যখন তিনি রেডিওতে পিয়ানো বাজাতে ছিলেন ওই সময় পোল্যান্ডের ওয়ারশ রেডিও স্টেশন এ জার্মানরা বোমা হামলা করে । পর ওইখান থেকে তিনি পালিয়ে তার বাসায় চলে আসেন ।
পোল্যান্ড দখল এর পর নাৎসি বাহিনী , ইহুদিদের উপর অকথ্য ভাবে শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন শুরু করে । তাদের কে তাদের নিজ বাসা থেকে বের করে দিয়ে আলাদা ভাবে তাদের রাখার ব্যবস্থা করা হয় এবং তাদের টাকা পয়সা সহ যাবতীয় দামী সম্পদ তারা দখল করে নিয়ে নেয় । এবং নিয়ম ছিলো প্রত্যেক ইহুদী কে তাদের হাতে দাযূদের রাশি পরতে হবে , যাতে বোঝা যায় সে ইহুদী । এবং ইহুদী বসতিপূর্ণ একটা এলাকা আলাদা ভাবে ওয়াল করে বিভক্ত করে দেওয়া হয় , ইহুদীদের বাসস্থানের জন্য । তারপরও আবার মড়ার উপর ছিলো খাড়ার ঘা এর মতন যখন তখন এস এস অফিসাররা এসে অনর্থক হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠতো ।
এর মাঝে তাদেরই এক পারিবারিক বন্ধু যিনি ইহুদী ঘেটো পুলিশ হিসাবে কর্মরত ছিলেন তিনি ওলাদিস্লো ইযপিল্ম্যান ওরফে অ্যাড্রিয়েন ব্রডি ও তার ভাইকে ইহুদী ঘেটো পুলিশ হিসাবে চাকুরী করার প্রস্তাব দিলেন , তারা প্রস্তাব কে সসন্মানে ফিরিয়ে দেয় , এবং এর কিছুদিন পরে অ্যাড্রিয়েন ব্রডির ভাইকে পারিবারিক বন্ধু যিনি ইহুদী ঘেটো পুলিশ গ্রেফতার করে , পরে অ্যাড্রিয়েন ব্রডির অনেক অনুরোধের পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় । এরি মাঝে তাদের বাসস্থান আবারো পরিবর্তন করা হয় , দ্বিতীয় বার যখন তাদের বাসস্থান পরিবর্তন করার জন্য সবাইকে ট্রেনে উঠাচ্ছিলো , তখন পারিবারিক বন্ধু যিনি ইহুদী ঘেটো পুলিশ অ্যাড্রিয়েন ব্রডিকে তার পরিবারের সাথে ট্রেনে উঠতে দেয়নি । তখন সে সম্পূর্ণ নিসঙ্গ হয়ে পরে ।
তারপর সে দাস শ্রমিক হিসাবে জার্মানদের ক্যাম্পে অন্যান্য ইহুদীদের সাথে কাজ শুরু করে , পরে ওইখান থেকে পালাতে তার ক্যাম্পের এক বন্ধু সহযোগিতা করে , পালিয়ে তার কিছু বন্ধু ছিলো যারা তার এক সময়ের সহকর্মী ছিলো তাদের আশ্রয়ে চলে যায় এবং তার বন্ধুরা তার জন্য একটা বাসস্থানের ব্যবস্থা করে যেখানে বাহিরে থেকে সবসময় তালা ঝুলতো , এবং সময় সুযোগ পেলে তারা তাকে সপ্তাহের জন্য অল্প কিছু খাবার দিয়ে যেত । এতে এতে দিনে দিনে সে অনেকটা অসুস্থ হয়ে পরে এবং জণ্ডিস এ আক্রান্ত হয় ।
১৯৪৩ সালে তার বাসার সামনের বিল্ডিং এ ওয়ারশ ঘেটো বিদ্রোহীরা জার্মান সৈনিকদের আক্রমন করে , এবং সে যে ফ্লাটে লুকিয়ে ছিল ওই একই বিল্ডিং এর অন্য ফ্লাট থেকেও রকেট হামলা চালানো হয় জার্মানদের উপর । এবং তিনি ওইখান থেকে অনেক কষ্টে পালিয়ে যান , ওইদিকে রাস্তার অবস্থা ভয়াবহ । জার্মান সৈনিকরা লাশের স্তুপ একে একে করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে এবং আসে পাশের সব কিছু পুড়িয়ে দিতে থাকে ।
একটা দৃশে একটা শটটা ছিলো, তা এক কথায় অসাধারণ । জার্মানরা যখন সব কিছু পুড়িয়ে দিচ্ছিলো তখন বাঁচার তাগিদে অ্যাড্রিয়েন ব্রডি ওয়াল টপকিয়ে পালিয়ে অন্য প্রান্তে চলে যায় , তখন তার সামনে লম্বা এক রাস্তা আর চারিদিকে যতদূর চোখ যায় দুপাশের সব বাড়িগুলো যেনো মৃত্যু উপত্যকার ধ্বংসের স্তুপে পরিনিত হয়েছে ।
অবশেষে সে খাবারের খোঁজে একটা পরিত্যাক্ত বাড়িতে আশ্রয় নেয় । কিন্তু কপালের ফের ওই বাড়িটা তে জার্মানদের ক্যাম্প করার কথা ছিলো এবং অ্যাড্রিয়েন ব্রডি এক জার্মান ক্যাপ্টেন এর কাছে ধরা পরে । ক্যাপ্টেন তার পরিচয় জানতে চাইলে সে নিজেকে একজন পিয়ানিস্ট হিসেবে পরিচয় দেয় ,ক্যাপ্টেন নিজেও একজন পিয়ানোর ভক্ত ছিলো এবং ওই বিল্ডিং এ একটা পিয়ানো ছিলো , ক্যাপ্টেন তাকে তার সাথে আসতে বলে এবং রুমে নিয়ে গিয়ে পিয়ানো বাজাতে বলে এবং তার পিয়ানো বাজানো শুনে ক্যাপ্টেন মুগ্ধ হয়ে যায় এবং সে ইহুদী জানা সত্ত্বেও তাকে হত্যা করেনা এবং তাকে কিছু খাবার প্রদান করে ।
এর কিছুদিন পর রাশিয়ান রেড আর্মিরা যখন শহরটা দখল করে নেয় , তখন ওই জার্মান অফিসার তার পুরো ক্যাম্প নিয়ে চলে যাচ্ছিলো , যাওয়ার সময় তাকে কিছু খাবার আর শীতের জন্য তাকে তার গায়ের কোটটা দিয়ে দেয় ।
রাশিয়ান সৈনিকরা যখন শহরটি দখল করে নিলো , তখন অ্যাড্রিয়েন ব্রডি ওই পরিত্যাক্ত বাসাটিতে থাকতো , রাশিয়ান সৈনিকরা যখন তাকে প্রথম দেখে তখন তাকে এক জার্মান অফিসার হিসেবে ভুল মনে করে গুলি করে কারন তার শরীরের জার্মান অফিসারের দেওয়া কোটটা ছিলো , পরে সে বুজাতে সক্ষন হয় সে আসলে একজন ইহুধি জার্মান না ।
তারপরের শেষ দিকের গল্প জার্মানরা পরাজিত , আর ওলাদিস্লো ইযপিল্ম্যান ওরফে অ্যাড্রিয়েন ব্রডি একটা বড় অনুষ্ঠানে পারফর্ম করছে ।
ছবিটির ক্যামেরার কাজ এককথায় অসাধারন , দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কালীন ছবি রোমান পোলানস্কি এমন ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তা দেখে বোঝার উপায় নই , আর অসাধারন সব শট এ ভরপুর ছবিটা । যদিও ছবিটি পুরানো , আশা করি যারা আপনারা ছবিটি দেখেননি তারা এই ছবিটি দেখবেন ।
বিদ্রঃ যারা যারা ছবিটি দেখেননি তাদের জন্য ডাউনলোড লিংক দিয়ে দিলাম । প্রথম আপনাকে বিট টরেন্ট নামে একটি সফটওয়্যার নামাতে হবে এরপর মুভি নামানোর জন্য দ্য পিয়ানিস্ট এখানে ক্লিক করুন ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:৩৯