somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টাকার কেরামতি

১৩ ই অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


টাকার কেরামতি ছাড়া জীবনের কোন গতি নাই। ছেলে ভালো, মেয়ে ভালো, বউও ভালো যদি টাকা থাকে, তা না হলে , কেউ ভালো মুখে কথা বলেনা| টাকা হলে পরের ছেলেকেও মানুষ বাবা বলে ডাকে,টাকা ছাড়া নিজের ছেলেও মুখ ঘুরিয়ে থাকে, টাকায় খেলে জোয়ার-ভাটা আর ভালোবাসার ঢেউও চলে টাকায়,টাকা দিলে পিতা মাতারা ছেলে, মেয়ে, বউয়ের আদর করে আর টাকা বেশী দিলে সন্তানকে পাগল বলে,টাকা ছাড়া এই যুগে কারো ভাল বাসা পাওয়া বড় কঠিন। আবার টাকাই কেড়ে নেয় মানুষের জীবন। টাকা হলে বন্ধু জুটে বাড়ে মনের মূল্য আর নিবরে বাড়ে শত্তুতা, তবে এ যুগে টাকা-পয়সা বাড়ে কিছুটা মানসম্মান। টাকা ছাড়া যেন এই পৃথিবীটাই ফাঁকা। টাকার কোনো বিকল্প আছে কি? মরতে টাকা, বাঁচতে টাকা, ঘরে বাইরে টাকা।অর্থহীন জীবনটাই অনর্থক। কে করলো টাকার আবিষ্কার? যার মূল্য এতো? যাকে ছাড়া চলা যায় না, মানবকল্যাণ, ব্যক্তি কল্যাণ, সামাজিক, দেশের উন্নয়নসহ সকল কাজে চাই টাকা।
** বিশেষ করে প্রবাসে যারা থাকে তাদের তো টাকা ছাড়া দামই নেই, মা বলেন, বাবা বলেন, স্ত্রী বলেন, সন্তান বলেন, আত্মীয় বলেন কারো কাছে টাকা ছাড়া দাম নেই, টাকা দিলে তার সব আছে আর টাকা না দিতে পারলে আপনার সাথে কেউ কথাই বলবে না, প্রবাস জীবন যে কতো কঠিন তা যিনি প্রবাস করেন তিনিই একমাত্র জানেন, কতো কষ্ট করে টাকা সঞ্চয় করে দেশে পাঠায়, পরিশেষে বিপদে পড়লে কেউ তাকায় না, যারা প্রবাসে আছেন, শুধু তারাই উপলব্ধি করতে পারবেন কথা গুলো।আবার অবিবাহিত ছেলে সংসারে অনেক টাকা দেওয়ার পরে যদি বিয়ে করে, তাহলে মা,ভাই,বোন,আত্নীয়রা পিছু লাগে কি করে অশান্তিতে রাখবে কারন যদি ছেলে আর ছেলের বউ মিলে টাকা পয়সা বন্ধ করে দেয়?
**অনেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে বেকার ঘুরে অর্থাভাবে কিছু করতে পারে না, আবার অনেক লোক আছে যারা নিজের নাম লিখতে পারে না, কিন্তু কাগজের ছাপা টাকা থাকায় তার সম্মান অনেক, টাকা থাকলে আজকাল শিক্ষার দরকার হয় না, জনগণের উন্নয়নের জন্য যে লোকগুলো বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্থান মহান সংসদে বসে দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের অধিকাংশই কলমহীন বা অল্প শিক্ষার অধিকারী, অথচ টাকার জোড়ে আজ এমপি, মন্ত্রী, আরো কতো কি, আর অনেকে আত্মিক শ্রম দিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করে কলমধারী হয়েও টাকা না থাকায় কেউ তাকে মূল্যায়ন করে না।তাকে কোনো কাজে ডাকতে চায় না। যে কোন মিটিং, আলোচনা সভা, পুরস্কারের অনুস্ঠানে অশিক্ষিত টাকাওয়ালাদেরই আমন্ত্রণ করা হয় আগে। সবার আগে যাকে দাওয়াত করা হয়, সে নিজেও জানে না অনেক সময়, কেন তাকে আমন্ত্রণ করা হলো। কিন্তু এটা পরিস্কার যে তাকেতো দাওয়াত করেনি, করেছে তার টাকাকে। কারণ, টাকাই তাকে দাওয়াতের অধিকারী করেছে।
**কবি শেখ সাদী খাঁর কথা, তার জীবদ্দশায় একবার তাঁকে রাজ্যের বাদশা রাজ দরবারে দাওয়াত করছিলো তাঁর কবিতা শুনবে বলে, শেখ সাদী খাঁর কোনো টাকা নেই, সাদামাটা জীবন, তেমন ভালো কোনো পোশাক নেই, স্বাভাবিকভাবে তিনি রাজ দরবারে রওনা হলেন, কিন্তু একি, রাজ দরবারে ঢুকতে যাবে এমন সময় গেটের প্রহরী তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, এই যে দাঁড়ান, আপনি কোথায় যাচ্ছেন? তাছাড়া আপনি কে? উত্তরে কবি বললেন, ভাই আমি শেখ সাদী খাঁ, যাবো বাদশার দরবারে, উনি আমাকে তলব করেছেন। পাহারাদার বলেন, তুমি শেখ সাদী খাঁ? মস্কারা করার জায়গা পাও না, তুমি শেখ সাদী খাঁকে চিনো না, তিনি হলেন বিখ্যাত কবি, তাঁর কথা সবাই জানে, আর তাছাড়া তোমার পোশাক দেখতো শেখ সাদী খাঁ মনে হচ্ছে না। যাও এখান থেকে, প্রহরী যথারীতি কবিকে তাড়িয়ে দিলেন। তিনি চলে গেলেন, তারপর বাদশা আবার শেখ সাদী খাঁকে আমন্ত্রণ করলো, তখন শেখ সাদী খাঁ ভালো পোশাক পরে এলেন, তাঁকে রাজদরবারে অনায়াসে ঢুকতে দেয়া হলো, যাক কবি মশাই বাদশার সাথে দেখা করলেন, তারপর মধ্যাহ্নভোজে বসলেন, নানা ধরনের খাবার টেবিলে সাজানো আছে, বাদশা বললেন, দয়া করে কবি মশাই শুরু করুন কিন্তু একি কবি মশাই খাবার মুখে না দিয়ে জামার পকেটে রাখছেন? উপস্থিত সবাইতো হতবাক, বাদশা শেখ সাহেবকে জিজ্ঞাস করলেন কি হয়েছে মশাই, কবি বললেন, আমি যখন গতকাল আপনার রাজ দরবারে ঢুকতে গেলাম প্রহরী আমাকে ঢুকতে দিলো না, আর আজ যখন ভালো পোশাক পরে এলাম আমার অনেক কদর, আসলে আমাকেতো কোনো কদর করা হয়নি, হয়েছে আমার গায়ের পোশাকের, তাই আমি না খেয়ে তাকেই খাওয়াচ্ছি। বাদশা লজ্জা পেলেন।

**আসলে এটা বর্তমান জীবন ব্যবস্থা, দিন বদলায়, মানুষ বদলে যাচ্ছে, টাকা আছেতো সম্মান আছে, দাওয়াত আছে, আবার দেখুন, আনেকের টাকাকড়ি, গাড়ি, বাড়ি সবই আছে, তবে শান্তি নেই, এদের বউ, বাচ্চা বা পরিবার হাঁটে উল্টো রাস্তায়। রাতভর ড্রিংক করা এটা এখন নিত্যদিনের ফ্যাশন হয়ে দাঁড়াচ্ছে, মানুষকে মানুষ বলে মনে করে না, টাকাওয়ালাদের সন্তানেরা কাঁটাছিড়া পোশাক পরলে হয়ে যায় ফ্যাশন, সমাজ হাততালি দিয়ে সাধুবাদ জানায়। কেউ কেউ এর তীব্র নিন্দা করতে চাইলেও পারে না, কারণ যাকে বলবে তার টাকা আছে। আবার অন্যদিকে নিম্নবিত্ত মানুষগুলোর সুখে-দুঃখে দিন কাটালেও মনে শান্তি আছে, কারণ তারতো কিছুই নেই, তাই হারাবার ভয় নেই। অন্যদিকে মধ্যবিত্ত মানুষগুলো আছে বেশী কষ্টে, একদিকে সম্মানের ভয়ে কারো কাছে হাত পাততে পারে না, অন্যদিকে কিছু বলতেও পরে না, বিপদে-আপদে কোনো রকম সংগ্রাম করে বেঁচে থাকে, টাকা থাকলেও জ্বালা, না থাকলেও জ্বালা। টাকার কামড় বড় কঠিন কামড়, নিঃশ্বাসে টাকা, বিশ্বাসে টাকা, টাকা আছে সব আছে, আর এই টাকার পেছনে ছুটতে গিয়ে কেউ হয় ফকির আবার কেউবা হয়ে যায় আমির, হায়রে টাকা তোমাকে ছাড়া পৃথিবীতে কারো কোনো হয় না চলা,টাকা আর টাকা।হায়রে টাকা।হায়রে টাকা।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাশ্চাত্যের তথাকথিত নারীবাদ বনাম ইসলাম: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৩ রা মে, ২০২৫ বিকাল ৪:২৪

পাশ্চাত্যের তথাকথিত নারীবাদ বনাম ইসলাম: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ

ছবি কৃতজ্ঞতা এআই।

ভূমিকা

নারীর অধিকার নিয়ে আলোচনা ইতিহাসের এক দীর্ঘ অধ্যায়। পাশ্চাত্যে নারী আন্দোলন শুরু হয় ১৮শ শতকের শেষভাগে, যার ফলশ্রুতিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি স্মার্ট জাতির অন্তঃসারশূন্য আত্মজৈবনিক !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩৪


একটা সময় ছিল, যখন জাতির ভবিষ্যৎ বলতে বোঝানো হতো এমন এক শ্রেণিকে, যারা বই পড়ে, প্রশ্ন তোলে, বিতর্কে অংশ নেয়, আর চিন্তা করে। এখন জাতির ভবিষ্যৎ মানে—ইনফ্লুয়েন্সার। তারা সকাল ১০টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতায় যাবার আগেই নারী বিদ্বেষ শুরু

লিখেছেন অপলক , ০৩ রা মে, ২০২৫ রাত ১০:১১

সংবাদ সম্মেলন থেকে বের করে দেওয়া হলো নারী সাংবাদিককে, যা বললেন মুফতি ফয়জুল করিম

বরিশালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের এক নারী সাংবাদিক মনিকা চৌধুরীকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামী দলগুলো নারী বিদ্বেষী - এটা একটি মিথ্যা প্রোপাগান্ডা

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ০৩ রা মে, ২০২৫ রাত ১১:২৯

আরবের দেশগুলোকে আমাদের দেশের নারী আন্দোলনের নেত্রীরা দেখতে পারেন না হিজাব ইস্যুর কারণে। অথচ, আরব দেশ কাতার বি,এন,পি'র চেয়ারপারসনকে চার্টারড প্ল্যানে করে দেশে পাঠাচ্ছে। আরো কিছু উদাহরণ দেই। আওয়ামী লীগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারীনীতি ইস্যুতে তথাকথিত চুশীলদের নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৪ ঠা মে, ২০২৫ সকাল ৮:৫৩

নারীনীতি ইস্যুতে তথাকথিত চুশীলদের নিয়ে কিছু কথা



ইদানিং নারীনীতি নিয়ে দেশে নানা তর্ক-বিতর্ক চলছে। আলেম-ওলামা এবং ইসলামপন্থীরা যখন পাশ্চাত্যঘেঁষা নারীনীতির সুপারিশকে দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রত্যাখ্যান করলেন, তখনই মূলত এই আলোচনার বিস্তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×