এক কী যেন একটা ঘটে গেলো হঠাৎ করে। ক্লান্ত আর চিন্তিত হাশিম নিজ ঘরে বন্দি। বারান্দার জানালার পাশে আটকে গেছে তার সারাটি দিন। বারান্দা ছেড়ে রুমে আসতেই ৪ বছরের মেয়ে আর ১১ বছরের ছেলে দৌড়ে ছুটে এলো তাদের বাবার কাছে। জীবনটা তাদের অতি কষ্টের। স্বাধীন হয়েও পরাধীন হয়ে আছে তারা। বাবার মুখে চিন্তার রেখা দেখে ছোট মেয়েটির হাসিমাখা মুখটি সহসাই চুপসে গেলো। আর ছেলেটিও হয়ে রইলো নিশ্চুপ বোবার মত।
হাশিমের দিকে অপলক তাকালো তার স্ত্রীও। কাঁদো কাঁদো নয়ন যেন তার জীবনসঙ্গীকে বলতে চাইছে, ঘরে কোন খাবার নেই। শুকনো রুটি যা ছিল তাও শেষ হয়ে গেছে। রাতে রান্না করার মত কিছু নেই।
তবে কি আমরা এভাবেই না খেয়ে মারা যাবো? আমাদের কি এভাবেই বন্দি করে রাখবে ওরা??
কোনো উত্তর খুঁজে পায়না হাশিম। চুপ করে বসে থাকে দীর্ঘক্ষণ। পিনপতন নীরবতায় তার ছেলে মেয়ে দুটির নয়নের পাতায় ঘুমের ছাপ দেখে সে। না খেয়ে জেগে থাকার চেয়ে ঘুমিয়ে পড়াটা যে তাদের জন্য বেশী সহজ তা খুব ভালোভাবেই বুঝে গেছে তারা।
বাইরে কারফিউ জারি করেছে আগ্রাসীরা। কী ঘটছে তা জানার জন্য মিডিয়াই এখন একমাত্র ভরসা। টিভির রিমোটটি হাতে নিয়ে একটি চ্যানেলে চোখ রাখলো হাশিম দম্পতি। কিন্তু হায়, কী অদ্ভুত!! টেলিভিশনে কী দেখাচ্ছে এসব ? যেখানে বাইরের পরিস্থিতির জানান দেওয়া হবে, আগ্রাসী শত্রুদের কার্যক্রম তুলে ধরা হবে সেখানে সব কিছু বাদ দিয়ে দেখানো হচ্ছে “হার্ডকোর পর্নোগ্রাফি! দ্রুত চ্যানেল পরিবর্তন করলো সে। কিন্তু শয়তানের চক্রান্ত যে পরিবর্তিত চ্যানেলকেও ছাড়েনি ! হতাশ আর নিস্তব্ধ হাশিম টেলিভিশন অফ করে দিয়ে অঝোর ধারায় কাঁদতে শুরু করল ।
দুই হয়তো অনেকের কাছে মনে হচ্ছে বানানো গল্প এটি। কিন্তু না। গল্পের চরিত্রগুলো কাল্পনিক ঠিক। কিন্তু বাস্তবে এমন ধরনের জঘন্য ঘটনাই ঘটেছিল ফিলিস্তিনি ভাইদের ঘরে ঘরে। দিনটি ছিল ২০০২ সালের ৩০শে মার্চ। ফিলিস্তিনির পশ্চিম তীর দখল করে নিজ দেশেই মুসলিম ভাইবোনদেরকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল ইসরাইলী সৈন্যরা। দখল করে নিয়েছিল রামাল্লা শহরের চারটি টেলিভিশন সম্প্রচার কেন্দ্রের তিনটিকেই। অসহায়, ভীত মানুষগুলো যখন বাইরের কারফিউ পরিস্থিতি জানার জন্য টেলিভিশন ওপেন করছিল তখনই তাদের চোখে ভেসে উঠছিল ইসরাইলী সৈন্য কর্তৃক প্রচারিত হার্ডকোর পর্নোগ্রাফির নোংরা দৃশ্য! ফিলিস্তিনি যুবকদেরকে সেই সংকটমুহূর্তে আরো বেশী ডিমোরালাইয করতে পর্নোগ্রাফির মত জঘন্য ওয়েপনও ব্যবহার করেছিল ইসরাইলী সৈন্যরা।
আর এটা কোইনসিডেন্স কিনা জানিনা, বর্তমান দুনিয়ার যত পর্নোগ্রাফি ভিডিও তৈরিকারক, সাপোর্টার আর LGBT প্রচারকারী আছে তাদের বেশীরভাগই হলো ইহুদী বা যায়োনিস্ট! তিন দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের মুসলিম সমাজও আজকে সেই ইসরাইলী ওয়েপন পর্নোগ্রাফির ফাঁদে আটকে পড়েছে। দিন দিন পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়া মুসলিমদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
বাবা মায়ের দায়িত্বহীনতা, সন্তানকে ইন্টারনেট জগতে একা ছেড়ে দেওয়া, অপরিণত বয়সে ইন্টারনেট ব্যবহারে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া, সন্তান ইন্টারনেট ব্যবহার করে কী কী করছে তা যাচাই না করা, সন্তান কাদের সাথে মিশছে তা নিয়ে মাথা না ঘামানো ইত্যাদি কারণে বার তের বছর থেকেই আজকের সন্তানেরা পর্নোগ্রাফির নীল জগতে প্রবেশ করে বসছে। ফলে তাদের অপরিপক্ক মনে শয়তান সহজেই পর্নো আসক্তির বীজ বপন করে দিচ্ছে। দিন যাচ্ছে আর সেই বীজ থেকে আসক্তি কুঁড়ি মেলে ডালপালা ছড়িয়ে বৃহৎ গাছে পরিণত হচ্ছে। সেই গাছের মূল যত গভীরে প্রবেশ করছে তা উপড়ানো তত কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
যুবক বয়সী ছেলে-মেয়েরা সঠিক সময়ে বিয়ে না করে ক্যারিয়ার নিয়ে বড় বড় কথা বললেও তাদের অধিকাংশই আজ পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত। নিজেদের তাকওয়া ধ্বংস করা তাদের অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এখন তাকওয়া যাতে আর অন্তরে প্রবেশ করতে না পারে সেই স্টেজে এসে দাঁড়িয়েছে তারা। কেউ কেউ তো এই ব্যখ্যাও দেওয়া শুরু করেছে যে, একটু আধটু দেখলে সমস্যা কী? এই বয়সে একটু দেখবেই!
আমি বলি, এরা আসলে লেজকাটা শেয়ালের মত। অন্য সবাইকেও তারা তাদের মতই দেখতে চায়। পর্নোআসক্তি মানুষের জীবনে বয়ে আনে চরম হতাশা আর অশান্তি। সৃষ্টি করে নানা শারীরিক রোগ। জীবনকে করে তোলে দুর্বিষহ। দীর্ঘদিন ধরে পর্নো আসক্তির কারণে অনেকে নানাভাবে অবৈধ পন্থায় তাদের শারীরিক চাহিদা পূরণ করছে। ফলে তাদের পুরুষত্ব থেকে শুরু করে ব্যক্তিত্ব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সাংসারিক জীবনে তারা নানাবিধ সমস্যারও সম্মুখীন হচ্ছে।
তাই সময় এসেছে এই জঘন্য পর্নোগ্রাফির ভয়াবহতা নিয়ে মুখ খোলার। আসক্তি থেকে চিরতরে বেঁচে থাকার। দেরী করার কোন সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে মনে রাখা উচিত, যে যত বেশী দিন ধরে আসক্ত তাকে তত বেশী কষ্ট করতে হবে এই আসক্তি ঝেড়ে ফেলার জন্য। তবে আপনি চেষ্টা করুন। দেখবেন, আল্লাহ আপনাকে সাহায্য করবেন।
চার ইউটিউবে অসংখ্য ভিডিও আছে পর্নোগ্রাফির ভয়াবহতা বর্ণনা করে, অনেক ভিডিও আছে কীভাবে এই আসক্তি দূর করা যায় তা নিয়ে। অনেক ইসলামিক ওয়েবসাইটের প্রশ্নোত্তর পর্বে পর্নোগ্রাফি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে ইহজাগতিক এবং পারলৌকিক দুই দৃষ্টিকোণ থেকেই। অনলাইনের এই রিসোর্সগুলোকে কাজে লাগান। মুক্ত হন এই আসক্তি থেকে। কিন্তু ব্যাপারটা যদি এমন হয় যে, অনেক লেকচার শুনেছেন, অনেক বই পড়েছেন, কিন্তু কাজ হচ্ছে না তাহলে আপনি অন্তত বেশী বেশী আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকুন।
আর আপনার এই আসক্তি যদি হয়ে ল্যাপটপে পর্নো ভিডিও দেখা,তাহলে আপনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ টিপস দিব আজকে।
এখনই আপনার ল্যাপটপে “Qustodio” ইন্সটল করুন। এর ফ্রি ভার্শন আছে। এটি খুব ভালো পর্নো ফিল্টার হিসেবে কাজ করে।ব্রাওজারের সকল ট্যাব বন্ধ রেখে এটি ইন্সটল করা শুরু করবেন। আপনি ভুলে ব্রাওজার ওপেন রাখলে আপনাকে তা ক্লোজ করার রিকুয়েস্ট আসবে। তখন আপনি ব্রাওজার ক্লোজ করে দিবেন। ইন্সটলের শেষ মুহূর্তে একটি ইমেইল এড্রেস ইনপুট দিতে হবে। যেটি qustodioআনইন্সটল করতে গেলে অবশ্যই লাগবে। তাই কেউ যদি অতিমাত্রায় আসক্তি ফিল করেন তাহলে “10 minutes email/ 20 minutes email” লিখে গুগলে সার্চ দিয়ে ১০ মিনিট বা ২০ মিনিটের জন্য একটি অস্থায়ী ইমেইল এড্রেস নিয়ে নিবেন। তখন ব্রাওজারের ট্যাব ওপেন করলে সমস্যা হবে না।ওয়েবসাইট থেকে ইমেইল এড্রেসটি জাস্ট কপি পেস্ট করবেন এবং ঐ ট্যাবটি বন্ধ করবেন না। কারণ সেখানে qustodio থেকে confirmation মেসেজ যাবে যেটি আপনি কনফার্ম করে ট্যাব বন্ধ করবেন। একটা পাসওয়ার্ড সেইভ করবেন হাবিজাবি কিছু দিয়ে। পাসওয়ার্ড ও ইমেইল এড্রেস কিছু সময়ের জন্য লিখে রাখবেন। পরে সফলভাবে qustodio ইন্সটল হয়ে গেলে পিসি রিস্টার্ট/ সাট ডাউন করে পুনরায় চালু করবেন। এরপর পাসওয়ার্ড আর ইমেইল এড্রেসটা নষ্ট করে ফেলবেন। ইনশা-আল্লাহ আপনি চাইলেও পরে আর খারাপ ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারবেন না।
তবে হ্যাঁ, আপনি যদি আসক্ত নাও হন তারপরেও আপনি আপনার ল্যাপটপে এই সফটওয়্যারটি ইন্সটল করে রাখুন। আপনি ইচ্ছে করলে আপনার সন্তান, ছোট ভাইবোন বা আত্মীয়ের ল্যাপটপে এটি ইন্সটল করে দিতে পারেন। এতে অন্তত তাদের এই ব্যাপারে সামান্য হলেও সাহায্য করা হবে। আর এক্ষেত্রে এই সামান্য সাহায্যই অনেক বড় কিছু। কেননা পর্নোগ্রাফি এমন এক আসক্তি শত উপদেশও যার সাথে পেরে উঠে না। তবে যাকে আল্লাহ সাহায্য করেন সে ব্যতীত।
লেখক: মেহেদী হাসান, পুরকৌশল বিভাগ, বুয়েট
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১০:২৪