যৌনতা নিজেই একটা ট্যাবু (যে কথা যায় না বলা)। ব্যাপারটা এমন না যে, শুধু পাক-ভারত-বাংলাতেই ট্যাবু, বা মুসলিমপ্রধান এলাকাগুলোতেই ট্যাবু। বেসিকালি চিরকাল ট্যাবুই ছিল একেশ্বরবাদী সমাজগুলোতে। রক্ষণশীল ইহুদী সমাজে ও ক্যাথলিক সমাজে যৌনবিষয়ক খোলামেলা আলোচনা হত, এমন খবর চোখে পড়ে না। মূর্তিপূজারী এবং প্যাগানসমাজে যৌনতা খানিকটা খোলামেলা থাকায় আলোচনাও ট্যাবু ছিল না, কখনোসখনো সেক্স ছিল পূজারই অংশ। এজন্য বাৎসায়নের কামসূত্র, খাজুরাহোর মন্দির, শিবলিঙ্গপূজায় এর আঁচ করা যায়। পরবর্তীতে দীর্ঘ মুসলিম শাসনের প্রভাবে যৌনবিষয়ক আলোচনা ব্যাপকতা হারায় এতদাঞ্চলে। গ্রেকো-রোমান সমাজে সমকামের ব্যাপক প্র্যাকটিস প্রমাণ করে যে স্বাভাবিক যৌনতাও কতটা খোলামেলা ছিল।
পুঁজিবাদের উত্থানে যখন সামাজিক-পারিবারিক-ধর্মীয় মূল্যবোধগুলো বাধা হয়ে দাঁড়াতে থাকল, তখন ট্যাবুগুলোকে ভেঙে ব্যবসাবান্ধব করার প্রয়োজন দেখা দিল। বিংশ শতকের শেষভাগে এসে এমন এমন সব থিওরির দেখা মিলল, যা যৌনতার সংজ্ঞাকেই বদলে দিল। খুব ভালো করে দেখেন, যৌনতার সংজ্ঞা বদলে দিতে পারলে সামাজিক-পারিবারিক-ধর্মীয় মূল্যবোধগুলো সব ভেঙে দেয়া যায়। কারো মনে জেতা-ঘোড়ার উপর বাজি ধরতে পারলে, মানে বিজ্ঞানের মিশেলে যদি যৌনতার এইসব বিকৃত সংজ্ঞা বসিয়ে দিতে পারেন; তাহলে ধর্ম ও পরিবার থেকে তাকে বের করে আনা যায়। এখন সে পুঁজিবাদের সকল দোকানের সহজ শিকার, বান্ধা কাস্টমার। সেক্সুয়াল ফ্লুইডিটি, ট্রান্স-জেন্ডার, লাইফস্টাইলের নামে পশুকাম-সমকাম, ‘লিঙ্গ নাকি দৈহিক বিষয় না, সমাজ কর্তৃক আরোপিত’-ইত্যাদি কনসেপ্টের নামে সেই আয়োজনই করছে পুঁজিপতিরা। গে-জিনের আবিষ্কর্তা নিজে সমকামী, ‘জেন্ডার’ কনসেপ্টের পুরোধা জন মানি নিজে উভকামী। এগুলো না ধরতে পারলে আসেন মুড়ি খাই।
আমার স্বল্প পড়াশুনায় মনে হয়েছে, ইসলাম যৌনতাকে ঠিক সেভাবেই দেখে যেভাবে দেখা প্রয়োজন। এটা একই সাথে ট্যাবু (আলোচনা নিষেধ) এবং আলোচনা জরুরি। এর অবাধ আলোচনা যেমন নির্লজ্জতা, এর আলোচনা না থাকাটাও ঝুঁকিপূর্ণ। ঠিক ততটুকুই আলোচনা হওয়া চাই, যতটুকু ব্যক্তি-পরিবার-সমাজ ঠিক রাখতে দরকার। প্রয়োজনের সীমা ছাড়িয়ে ইয়ার্কি-ফ্যান্টাসির সীমায় গিয়ে পড়লে এটা অবশ্যই ট্যাবু। ‘সত্য বলতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল লজ্জা পান না’ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই কথাতেই বুঝা যাচ্ছে, যেটুকু প্রয়োজন সেটুকু যৌন-আলোচনা বা যৌন শিক্ষা দীনেরই অংশ, যেহেতু যৌনজীবন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। এজন্য ইসলামে রজঃচক্র, স্বামী-স্ত্রী সহবাস, জানাবাত, বালেগ হওয়া প্রভৃতি সংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনা এবং আরও বিস্তারিত আলোচনার সূত্র দেয়া হয়েছে। কুরআন-হাদিস-ফিকহের কিতাবাদিতে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয়তা ও প্রায়োগিকতার মাঝে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে, যা দীনী ইলমেরই অংশ।
অথচ আজ মুসলিম সমাজেও যৌনশিক্ষা ট্যাবু কেন? যখন থেকে ব্রিটিশরা শিখিয়েছে ‘ইসলাম হল ধর্ম, জাস্ট ধর্ম’; সেদিন থেকে আমাদের ধ্বংস শুরু। নামাজ-রোযা-হজ্জের বাইরে আর কোথাও ইসলাম নেই। বাজার-অর্থব্যবস্থা-বিচার-আইন-লাইফস্টাইল সবখানে ইসলাম অপাংক্তেয় হয়ে গেছে সেদিন থেকে। ইসলাম মানে আর ‘আত্মসমর্পণ’ থাকেনি, ইসলাম মানে হয়ে গেছে ‘শান্তি’। স্বামী-স্ত্রীর মাঝখানেও যে ইসলাম আছে, আমার আর আমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাঝেও যে ইসলাম দাঁড়িয়ে আছে— তা আজ স্বীকারই করে না, এমন মুসলিমও আছে। এজন্যই শোনা যায়— ‘সবকিছুর মধ্যে শুধু ধর্ম টেনে আনিস কেন?’। টেনে আনব কেন, ইসলাম তো আছেই সবকিছুর মধ্যে। সবকিছুতে নিজের ইচ্ছাকে দমিয়ে আল্লাহর ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণকেই তো বলে ইসলাম।
ভূমিকা অনেক বড় হয়ে গেল, স্যরি। আপনি যদি সঠিক সময়ে সঠিক শিক্ষাটা তাকে না দেন, তবে বেঠিক সময়ে বেঠিক লোকে তাকে বেঠিক শিক্ষাটা দেবে। হয় সে বখে যাওয়া কোন বন্ধুর থেকে শিখবে, না হয় ইন্টারনেট তার শিক্ষক হবে, নয়তো কোন পর্নোম্যাগাজিন বা কলিকাতা হার্বালের পোস্টার থেকে সে যৌনতা সম্পর্কে একটা ভুল এবং অপ্রায়োগিক জ্ঞান পাবে, যার সাথে বাস্তবের কোন মিল নেই।
কোন ‘ইঁচড়ে-পচা’ বন্ধু তাকে শেখাবে ‘ডানহাতি স্ক্রু নিয়ম’। (সায়েন্সের পোলাপান বুঝবে)
ইন্টারনেট তার কাছে বমির-যোগ্য কিছু প্র্যাকটিসকে পবিত্র ও উপভোগ্য করে তুলবে।
ফুলবডি মেকাপ ও সিলিকন জেল ঢুকানো পর্নোস্টারগুলো স্বাভাবিক নারীদেহ সম্পর্কে তার মনে ভুল প্রত্যাশা গড়ে তুলবে।
সার্জারি করে বানানো অতিকায় পুরুষাঙ্গ তার মনে ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স তৈরি করবে।
ভায়াগ্রা খেয়ে ৭ দিন ধরে শুটিং করা ১০ মিনিটের ভিডিও বিয়ে নিয়ে তার মনে অমূলক অহেতুক আশঙ্কা তৈরি করবে।
আর বড় বড় করে ‘যৌন’ লেখা কলিকাতা হার্বালের পোস্টার তাকে বুঝাবে— তোমার শরীর থেকে কী না কী ইম্পর্টেন্ট জিনিস বের হয়ে যাচ্ছে, তু তো গ্যায়া।
আমি তো মনে করি প্রতিদিন যাদের বিয়ে হচ্ছে, ১% এরও সঠিক যৌনশিক্ষা নেই। সেদিনও এক রুগী পেলাম, ১০ মাস বিয়ে হয়েছে। দ্রুত বীর্যপাত হয়, দ্রুত নরম হয়ে যায়। ১০ মাস ধরেই এমন। স্ত্রী এখন ফোনে তার আরেক বন্ধুর সাথে বেশি বেশি সময় দিচ্ছে। অথচ সামান্য একটু যৌনশিক্ষা হয়ত জীবনটা সুখময় করতে পারত, যদিও সবই তকদীর, আমাদের সচেতন চেষ্টার কথাই বলছি।
পিরিয়ড শুরু হয়ে গেলে আমাদের মেয়েরা বেসিক যৌনশিক্ষাটা মায়ের কাছ থেকে পেয়ে ফেলে। নারী-পুরুষ বায়োলজির কারণ, ক্রিয়া, পিরিয়ডের কারণ ইত্যাদি সম্পর্কে মেয়েরা জেনে নেয় মায়ের কাছে থেকে। এজন্য মেয়েদের জানাটা সেফ ও সঠিক হয়। যতটুকু আলোচনা মা-মেয়েতে হয়, দীনী সীমারেখাগুলো আলোচনা করা থাকলে তা যথেষ্ট। আমরা একটা ডেমো দেখব একটু পরে। আর বিয়ের আগে ভাবী/বড়বোন/ সমবয়েসী খালা-ফুপুদের কেউ সহবাস রিলেটেড আলোচনাগুলো করে দিলেই হয়ে গেল। তবে সমস্যা হল, সবাই এগুলো নিয়ে জোকস করে, কেউ সিরিয়াসলি কিছু আলোচনা করে দেয়া দরকার। অবশ্য যাঁরা আলোচনা করবেন, তাঁদের ক’জনারই স্পষ্ট ধারণা আছে।
সমস্যা হল ছেলেদের, ব্যাপক সমস্যা। মেয়েরা মায়েরও ক্লোজ থাকে, বাবারও আদর পায়, পারতপক্ষে বাবারা মেয়েদের বকুনি/পিটুনি দেয় না বললেই চলে, মেয়েদের অত শাসন লাগেও না। কিন্তু ছেলেরা মায়ের আহ্লাদ পায়, কিন্তু এসব বিষয়ে ফ্রী হওয়া সম্ভব না। আবার বাপের সাথে কিছুটা মার-পিটের সম্পর্ক থাকে বলে বাবার সাথে বেশ দূরত্ব নিয়েই বড় হই আমরা। বাপে-তাড়ানো মায়ে-খেদানো। একারণে মেয়েরা যতখানি সঠিক যৌনশিক্ষা নিয়ে বড় হয়, ছেলেদের মনে ততটাই বেঠিক শিক্ষা গেড়ে বসে। তবে ফাইনাল কথা হল, ছেলেরা যৌনশিক্ষা বাপের থেকেই পেতে হবে। কেননা বাপ ছাড়া আর যত সোর্স সে এই বয়সে পায়, সবাই তাকে ভুল শিক্ষাটাই দিবে। বাপ হয়ে কীভাবে সম্ভব? কেন, মা হয়ে মেয়েকে শেখাতে পারলে বাপ হয়ে কেন পারবেন না? এসব ন্যাকামো বাদ দেন, বিষয়টা কতখানি জরুরি এটা ফীল করি আসেন। ছেলে পর্নো-আসক্ত বা সমকামী হয়ে গেলে তখন তো হায় হায় করবেন। কিছু পয়েন্ট মনে রাখতে হবে—
- বিষয়টা বার বার আলোচনা করার মত না। বার বার আলোচনা করলে সন্তান আর ভয় পাবে না আপনাকে, ওয়েট লস হবে। এজন্য আলোচনা হবে একদিনই, মাইন্ড ইট।
- আলোচনাটা হবে ইয়ার-দোস্ত স্টাইলে না, শিক্ষক-ছাত্র স্টাইলে। শিক্ষক-ছাত্র আজকের কনটেক্সটে বুঝা যাবে না। ওস্তাদ-শাগরেদ স্টাইলে।
- বাপ-ছেলে বা রাজা-প্রজা স্টাইলে হলে সে আপনার কথাটা নিতে পারবে না, হুকুম টাইপ কিছু মনে করবে। এজন্য হয়ে পারে বাপ-বেটা কোথায় বেড়াতে গেলেন, সাথে নিয়ে মার্কেটে গিয়ে একসাথে কিছু কিনলেন, একসাথে মাকে ছাড়া কোন রেস্টুরেন্টে খেলেন। মূল কথা পাড়ার আগে এমন কিছু একটা করতে হবে। যাতে পরের আলোচনাটা ‘হুকুম’ আকারে না হয়ে ‘ট্রেনিং সেশন’ আকারে হয়।
- শুরুটা এমন হতে পারে:
বাবা শোনো, তোমার সাথে খুব জরুরি একটা বিষয়ে আলোচনা করব। তুমি আজকের এই আলোচনাটা জীবনে কোনোদিন ভুলবে না। এমনকি আমি যেভাবে তোমাকে বলছি, সেভাবে তুমিও তোমার ছেলের সাথে এভাবে আলোচনা করবে। তুমি এখন এখন বড় হচ্ছো। ভেবে দেখ, একসময় তুমি খেলনা গাড়ি কত পছন্দ করতে। এখন তুমি ক্রিকেট সেট, ফুটবল এসব পছন্দ কর। বড় হবার সাথে সাথে তোমার মনের কিন্তু পরিবর্তন হয়েছে, দেখেছো? একইভাবে তোমার দেহেও পরিবর্তন এসেছে/আসছে/আসবে। লম্বায় বড় হবার সাথে সাথে তোমার গলার স্বর মোটা হবে, যেমন আমার। তোমার শরীরের গাঁথুনি শক্তপোক্ত হবে… এরই অংশ হিসেবে প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে প্রস্রাবের বদলে আঠালো এক ধরনের তরল আসতে পারে। তুমি ভয় পাবে না, এটাই স্বাভাবিক, সবার হয়, তোমার মত বয়সে আমারও হয়েছে। কখনও দেখবে ঘুমের ভিতরে বেরিয়েছে, ভয়ের কিছু নেই, এটা কোন অসুখ না…
- স্বপ্নদোষ বেশি হওয়াও কোন অসুখ না, এটা বুঝাবেন। একটা গ্লাসে দেড় গ্লাস পানি রাখলে বাকিটুকু উপচে পড়ে। তেমনি একটা বিষয় স্বপ্নদোষ। উৎপাদন তো চলছেই, ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত হয়ে গেলে বেরিয়ে আসে। এখন তোমার করণীয়, বেশি বেশি ভাল ভাল খাবার খাওয়া। ফলমূল খাওয়া। ডিম-মাছ-মাংস খাওয়া। মন থেকে টেনশন দূর করে দেবেন।
- নারী-পুরুষ কেমিস্ট্রিটা খুব সংক্ষেপে বলে দেবেন:
দেখ, দুনিয়ায় দুই ধরনের মানুষ আছে। পুরুষ আর মহিলা। তোমার কি প্রশ্ন জাগে, কেন মানুষ এক ধরনের হল না? এটা হচ্ছে সিস্টেম। তোমার শরীরে যে আঠালো পদার্থ তৈরি হচ্ছে, সেটা হল বীজ। আর তুমি যে মেয়েকে বিয়ে করবে তার শরীরে এই বীজ পৌঁছালে, তোমাদের সন্তান জন্ম নেবে। এভাবে মানুষের জন্মের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেন আল্লাহ। এভাবে নতুন শিশু জন্ম নেয়।
- আবার আল্লাহর হুকুম জানিয়ে দিতে হবে:
তোমার দুষ্টু বন্ধুরা তোমাকে বিভিন্ন আজেবাজে বুদ্ধি দেবে। তুমি আমার কথা মনে রাখবে। সন্তানের জন্য বাবার চেয়ে ভালো আর কেউ চায় না। এই বীজ এমনিতেই উপচে বেরিয়ে গেলে সমস্যা নেই। কিন্তু তুমি স্বেচ্ছায় বের করলে আল্লাহ ভয়ংকর রাগ হবেন। তোমার শরীর ভেঙে পড়বে, তোমার বিবাহিত জীবনেও নানা অসুখবিসুখে অশান্তিতে আক্রান্ত হবে। এই বীজ কেবল তোমার স্ত্রীর জন্য, বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে নিজেকে শেষ করে দেবেনা। মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে হবে, ভালো লাগবে। কিন্তু আল্লাহ তোমাকে সেটা নিষেধ করেছেন, তোমার দৃষ্টিও কেবল তোমার স্ত্রীর জন্য। কোন খারাপ ছবি-সিনেমা থেকে সবসময় দূরে থাকবে, এগুলো যে বন্ধুরা দেখে বা দেয়, তাদের থেকেও দূরে থাকবে। নাহলে তোমার ভবিষ্যত কিন্তু অন্ধকার হয়ে যাবে, বাবা। সাবধান… বাবা হিসেবে তোমার কাছে আমার অনুরোধ। আর এ বিষয়ে যেকোন সমস্যা বা প্রশ্ন তুমি বন্ধুদের করবে না, আমাকে করবে, ঠিক আছে বাবা?
রাফলি এমন। এখন, কোন সময়ে আপনি তাকে এই সেশনটা নেবেন? কখন? ১১-১২ বছরে ছেলেরা বালেগ হয়। তবে এখন পর্নোর যুগে ৯-১০ বছরের বাচ্চারাই সব বোঝে। যদি সন্দেহ উদ্রেককারী লক্ষণ না পান তবে ১১-১২ বছরেই আলোচনাটা হবে। আর সন্দেহের কিছু পেলে, তখনই। আর মায়েরা মেয়েদের সাথে যথেষ্ট আলোচনা তো করেনই। বাকি আরেকটু জিনিস স্পষ্ট করে দেবেন:
- নারী-পুরুষ কেমিস্ট্রিটা:
মেয়েদের প্রতিমাসে একটা ডিম আসে, ডিম্বাণু বলে তাকে। একটাই পরিপক্ব হয়। ওটার প্রভাবে জরায়ুর (যেখানে বাচ্চা থাকে) জমিনটা উর্বর হয়, বীজ নেবার মত উপযুক্ত হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে বীজ পেলে তো বাচ্চা তৈরি হবে। আর যদি না পায়, তবে পুরো জমিনটা চাকা চাকা রক্তের আকারে বেরিয়ে আসে। এটা স্বাভাবিক, তুমি যেহেতু এখন বড় হয়েছো। এই বীজটা কোথায় আছে? বীজ আছে তোমার স্বামীর দেহে…
- আর আল্লাহর হুকুমগুলো:
আর এখন তুমি বড় হচ্ছ। মেয়েদের শরীরে যে সৌন্দর্য সেটা তোমার মাঝে এখন আসছে। ছেলেরা তোমার দিকে তাকাবে, তোমার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইবে। তুমি কারো দিকে তাকাবে না। কোন ছেলের সাথে কথা বলবে না… তোমার স্বামীর সাথে বিয়ে হবার আগ পর্যন্ত নিজেকে হেফাজত করে চলতে হবে…খারাপ বান্ধবী যারা ছেলেদের সাথে সম্পর্ক করে, আজেবাজে গল্প করে তাদের এড়িয়ে চলবে।
এখন কিশোর-কিশোরীদের নাকি আবার যৌনশিক্ষা দেয়া হচ্ছে সরকারি-বেসরকারিভাবে। সেখানে যৌন-তারল্য (তুমি যা ভাবো তাই তোমার যৌনতা, লিঙ্গের উপর না) শেখানো হয়। পারস্পরিক সম্মতিতে যৌন অনুভূতি প্রকাশ নাকি দোষণীয় না। সমকামিতাকে ইনিয়েবিনিয়ে স্বাভাবিক করে তোলা হয়। এরকম জঘন্য পরিস্থিতিতে আপনি যদি তাকে সঠিক শিক্ষা দিতে লজ্জা করেন, তাহলে আল্লাহ মাফ করুন অনাকাংক্ষিত কোন ঘটনায় কাকে দোষ দেবেন। আরেকটা বিষয়, তাকে ছোট করে না রেখে, এ বয়সেই তাকে আদর্শ স্ত্রী বা স্বামী হবার মানসিক শিক্ষা দেয়া শুরু করুন। মানসিক শিক্ষাগুলো বার বার দেয়া যাবে, সমস্যা নেই। পুঁজিবাদ যদি এ বয়সে তাকে সেক্সের জন্য ফিট মনে করে যৌনশিক্ষার জন্য উপযুক্ত মনে করে, তাহলে আপনি কেন তাকে সংসারশিক্ষার জন্য উপযুক্ত মনে করছেন না? বড় হয়ে ওঠা বয়সের দ্বারা নির্ধারণ হয় না, শিক্ষার দ্বারা হয়, মানসিক পরিপক্বতার দ্বারা হয়। আগের যুগে দেখেন ১৭-২৫ বছরেই তাদের কত কত অ্যাচিভমেন্ট, এখন কেন হচ্ছেনা। মনের বয়সকে আমরা আটকে দিয়েছি বলে। খেলাধুলা-কার্টুনের মাঝে তার সত্তাকে সীমাবদ্ধ ভাববেন না। এগুলোর বাইরে আরেকটা জগত তার মনে গড়ে উঠা শুরু হয়ে গেছে— যৌনমনোজগত। শুরুতেই সেই জগতে একটা টীকা (ভ্যাক্সিন) দিয়ে দেয়া আপনারই কাজ, যাতে পরে কোন রোগজীবাণু ঢুকতে না পারে। সঠিক ধারণাটা দিয়ে দিলে, ভুল ধারণাগুলো জায়গা পাবে না।
# সংগ্রীহিত
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ৯:৩৪