মুসাফির কে?
যে ব্যক্তি কমপক্ষে ৪৮মাইল(৭৭.২৪৬৪কিলোমিটার)সফর করার নিয়তে নিজ আবাদীর লোকালয় থেকে বের হয়েছে, সে শরীআতের পরিভাষায় মুসাফির হিসেবে গন্য হবে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৯,আসারুস সুনান পৃ: ২৬৩।
মাসআলাঃ ৪৮ মাইলের কম সফরের নিয়তে বের হলে মুসাফির হিসাবে গন্য হবে না।–প্রাগুক্ত
মাসআলাঃ কেউ ৪৮ মাইল সফরের নিয়তে বের হল না। অথচ নিয়ত ব্যতীত সারা দুনিয়া ঘুরে এল । সে মুসাফির হিসাবে গন্য হবে না।-রদ্দুল মুহতার ২/১২১।
মাসআলাঃ ৪৮মাইল রাস্তা যত কম সময়েই অতিক্রম করা হোক না কেন (এমনকি ১০মিনিটে অতিক্রম করা হলেও) তা অতিক্রম করার দ্বারা মুসাফির গন্য হবে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে দুরত্বই মুল। সময় বা ক্লান্তি আসা ধর্তব্য নয়।- রদ্দুল মুহতার ২/১২৩।
মাসআলাঃ কেউ বাড়ী থেকে কমপক্ষে ৪৮মাইল সফরের নিয়তে বের হল। কিন্তু পথিমধ্যে কোন একটি স্থানে প্রয়োজনের কারনে ১৫দিনের কম থাকার নিয়ত করল। সেখান থেকে আজ যায় কাল যায় করে (টানা ১৫দিন থাকার নিয়ত ব্যতীত) কয়েক বছর থাকলেও সে মুসাফির গন্য হবে। মোটকথা যতক্ষন সে কোন একটি স্থানে টানা ১৫ থাকার নিয়ত না করবে সে মুকীম গন্য হবে না।-হিদায়া ১/১৬৬।
অনুরূপভাবে কেউ ৪৮ মাইল বা তার চেয়ে বেশী দুরুত্ব সফর করে গিয়ে কোন স্থানে ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত করলে সেও মুসাফির হিসাবে গন্য হবে। তবে এক্ষেত্রে উল্লেখিত স্থানটি তার বসতের স্থান ( ওয়াতনে আসলী বা ওয়াতনে ইকামত) না হতে হবে। কেননা নিজস্ব বসতের স্থানে কেউ যত দুর থেকে সফর করে আসুক না কেন সে মুকীম গন্য হবে। -আদ্দুররুল মুখতার ২/১২৫।
মাসআলাঃকেউ কমপক্ষে ৪৮মাইল সফরের নিয়তে বের হল। কিন্তু পথিমধ্যে কোন জায়গায় ১৫ দিন বা তার বেশী থাকার নিয়ত করল বা রাস্তার মাঝে তার ওয়াতনে আসলী কিংবা ওয়াতনে ইক্বামত এসে গেল তবে সে মুকীম গন্য হবে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৯।
মুকীমের বসবাসের স্থান দুধরনের হতে পারে-
(১) ওয়াতনে আসলী।
(২) ওয়াতনে ইক্বামত।
ওয়াতনে আসলীঃ
মাসআলাঃ ওয়াতনে আসলী মানুষের এমন নিজস্ব বাসস্থানকে বলে যেখানে সে জন্মগ্রহন করেছে অথবা তার পরিবার বসবাস করে অথবা যেখানে সে চিরস্থায়ীভাবে বসবাসের নিয়ত করেছে।- আদ্দুররুল মুখতার ২/১৩১।
মাসআলাঃ ওয়াতনে আসলীর জন্য বাড়ী,জায়গা ও স্থায়ীভাবে বসবাসের নিয়ত জরুরী।–প্রাগুক্ত
মাসআলাঃ ওয়াতনে আসলী একাধিক হতে পরে। যেমন কেউ নতুন করে শহরে বাড়ী করল। আর পূর্ব থেকে তার গ্রামে বাড়ী রয়েছে। এখন সে যদি উভয় বাড়ীতে আসা-যাওয়া করে এবং উভয়টিতে স্থায়ীভাবে বসবাসের নিয়ত করে তবে উভয়টি তার জন্য ওয়াতনে আসলী হবে। -আল বাহরুর রায়েক ২/১৩৬।
মোটকথা ওয়াতনে আসলী নির্ধারনের ক্ষেত্রে ব্যক্তির নিয়তই মূল। সে যদি দুটি স্থানকে ওয়াতনে আসলী বানায় এবং উভয়টিতে স্থায়ীভাবে থাকার নিয়ত করে ( এখানে কিছু দিন ওখানে কিছু দিন) তবে উভয়টি তার জন্য ওয়াতনে আসলী গন্য হবে। -ফাতাওয়া উসমানী ১/৫৪৬।
মাসআলাঃ কেউ শহরে চাকুরী করে। সেখানে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে। তবে গ্রামে তার বাড়ী রয়েছে। ভবিষ্যতে সেখানে গিয়ে বসবাস করার নিয়ত করেছে । এবং মাঝে-মধ্যে গ্রামে বেড়াতে যায়। তবে তার গ্রামের বাড়ীটি তার জন্য ওয়াতনে আসলী হবে। পক্ষান্তরে যদি উক্ত লোকটি গ্রামের বাড়ীটি তার নিজ বাড়ী হিসাবে বহাল না রাখে এবং পরবর্তিতে সেখানে বসবাসের নিয়ত না থাকে এবং আসা-যাওয়া বন্ধ করে দেয় তবে গ্রামের বাড়ীটি তার জন্য আর ওয়াতনে আসলী থাকবে না। -রদ্দুল মুহতার ২/১৩১।
মাসআলাঃ কারো কোন স্থানে শুধু জমিন থাকলে এর দ্বারা তা ওয়াতনে আসলী গন্য হবে না। -আদ্দুররুল মুখতার ২/১৩১।
ওয়াতনে আসলীর হুকুমঃ
মাসআলাঃ ওয়াতনে আসলীতে কেউ মুসাফির হয় না।কেউ ওয়াতনে আসলীতে ১ ঘন্টার জন্য গেলেও মুকীম গন্য হবে। আর সে চার রাকাআত বিশিষ্ট ফরজ নামায চার রাকাআতই পড়বে। কসর জায়েয নেই।-আদ্দুররুল মুখতার ২/৬১৪ (যাকারিয়া)।
ওয়াতনে ইক্বামতঃ
মাসআলাঃ কেউ কমপক্ষে ৪৮ মাইল সফর করে কোন স্থানে গিয়ে কমপক্ষে ১৫দিন থাকার নিয়ত করলে তা তার জন্য ওয়াতনে ইক্বামত হিসাবে গন্য হবে। ১৫দিনের কম থাকার নিয়ত করলে ওয়াতনে ইকামত হবে না। -আল বাহরুর রায়েক ৪/৩৪১।
মাসআলাঃ ওয়াতনে ইক্বামত সফরের দ্বারা বাতিল হয়ে যায়। অর্থাৎ কেউ কোন স্থানে কমপক্ষে ১৫দিন থাকার পরে সেখান থেকে সফর করে (কমপক্ষে ৪৮মাইল দুরুত্ব অতিক্রম করে) চলে এলে তার ওয়াতনে ইক্বামত বাতিল হয়ে যায়। পরে কোন দিন উক্ত স্থানে পূনরায় গেলে ১৫ দিন থাকার নিয়ত ব্যতীত তা তার জন্য ওয়াতনে ইক্বামত হবে না। তবে নতুন করে আবার ১৫দিন থাকার নিয়ত করলে তা তার জন্য ওয়াতনে ইক্বামত হবে। -মারাকিল ফালাহ ১/১৮৭।
মাসআলাঃ কেউ কোন স্থানে সফর করে গিয়ে কমপক্ষে ১৫ দিন থাকল। অতঃপর তার সামানপত্র সেখানে রেখে গিয়ে উক্ত স্থান থেকে চলে গেল। এর পর সেখানে ১৫দিনের কম থাকার নিয়তে গেলেও সে মুকীম গন্য হবে। তবে তার সামানপত্র সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে গেলে কমপক্ষে ১৫ থাকার নিয়ত ব্যতীত সে উক্ত স্থনে মুকীম গন্য হবে না।-বাদায়েউস সানায়ে ১/১০৪, আহসানুল ফাতাওয়া ৪/১০৮-১১২।
মাসআলাঃ বিভিন্ন চাকুরীজীবী ও পেশাজীবীরা শহরে বাসা ভাড়া করে থাকে। তারা গ্রামের বাড়ীতে গেলেও বাসায় সামানপত্র রেখে যায়। কাজেই শহরে তারা মুকীম গন্য হবে। তবে এক্ষেত্রে একবার একটানা ১৫ দিন থাকা শর্ত। -আদ্দুরুরল মুখতার ১/১২৩।
মাসআলাঃ কেউ দুই স্থান মিলে ১৫ দিন থাকার নিয়ত করল। তবে প্রতিদিন রাতে সে এক জায়গাতে থাকবে এবং দিনে অন্যত্র অবস্থান করবে।এমতাবস্থায় সে রাতের স্থানে মুকীম হবে এবং পুরো নামায পড়বে।কিন্তু যদি দিনের কর্মস্থল রাতের স্থান থেকে ৪৮ মাইল দুরত্বে হয় তবে দিনের স্থনে সে মুসাফির হবে এবং কসর করবে। আর যদি উভয় স্থানের দুরত্ব কমপক্ষে ৪৮মাইল না হয় তবে উভয় স্থানে পুরো নামায পড়বে। মোটকথা রাতে থাকার স্থান ধর্তব্য হবে। -রদ্দুল মুহতার ২/৬০৭(যাকারিয়া)।
ওয়াতনে ইক্বামতের হুকুমঃ
মাসআলাঃ ওয়াতনে ইক্বামতে মুসাফির গন্য হবে না। বরং মুকীম গন্য হবে। এবং চার রাকাআত বিশিষ্ট ফরজ নামায চার রাকাআতই পড়বে। কসর জায়েয নেই। -আল বাহরুর রায়েক ৪/৩৪০-৩৪২।
মুসাফির কখন থেকে গন্য হবে?
মাসআলাঃ কেউ যখন তার নিজ আবাদীর লোকালয় থেকে (কমপক্ষে ৪৮ মাইল সফরের নিয়তে) বের হয়ে যাবে তখন থেকে সে মুসাফির গন্য হবে। অর্থাৎ তার নিজ আবাদী থেকে বের হওয়ার পূর্বে সে মুসাফির গন্য হবে না।-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৯,আসারুস সুনান পৃ: ২৬৩।
মাসআলাঃ ষ্টেশন যদি লোকালয়ের সাথে সংযুক্ত হয় তবে তা আবাদীর মধ্যে গন্য হবে। -আদ্দুরুরল মুখতার ২/৫৫৯-৬০০।
যে রাস্তা দিয়ে সফর করবে তা ধর্তব্য হবেঃ
মাসআলাঃ যদি কোথাও যাবার দুটি রাস্তা থাকে আর একটি সফরের দুরুত্বে হয় এবং অন্যটি তার চেয়ে কম হয় তবে সফরের দুরুত্বের রাস্তায় গেলে মুসাফির হবে। অন্যটিতে মুসাফির গন্য হবে না। মোটকথা যে রাস্তা দিয়ে গমন করবে তা ধর্তব্য হবে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৬
আবাদীর সীমানাঃ
মাসআলাঃ কোন আবাদীর সীমানা হল, যখন সংযুক্ত বাড়ী-ঘরের পরে ফসলী জমি এসে যায় অথবা বাড়ী-ঘরের মাঝে ১৩৭.১৬ মিটার বা তার চেয়েও বেশী ফাকা থাকে তখন সে ঐ সংযুক্ত ঘর বাড়ীর পর থেকেই মুসাফির গন্য হবে। যদি শহর ও ফেনায়ে শহরের(শহরবাসীর জন্য প্রয়োজনীয় স্থানসমূহ যেমন- কবর স্থান,ঘোড়দৌড় এর জন্য নির্দিষ্ট স্থান) মাঝে ফসলী জমি না থাকে অথবা উভয়ের মধ্যে ১৩৭.১৬ মিটার বা তার চেয়ে বেশী ফাকা না থাকে তবে উক্ত ফেনা অতিক্রম করার পর মুসাফির গন্য হবে। আর যদি উভয়ের মাঝে ফসলী জমি থাকে বা মধ্যবর্তি দুরুত্ব ১৩৭.১৬ মিটার বা তার চেয়ে বেশী হয় তবে উক্ত ফেনা আবাদীর মধ্যে গন্য হবে না। -রদ্দুল মুহতার ২/১২১-১২৩, আহসানুল ফাতাওয়া ৪/৭২
মাসআলাঃ শহরের চার পাশে সংযুক্ত বস্তি গুলো শহরের হুকুমে।-রদ্দুল মুহতার ২/১২১
মাসআলাঃ ঢাকা শহরের সীমানা হল উত্তরে টঙ্গীব্রিজ, দক্ষিনে বাবু বাজার ব্রিজ,দক্ষিন-পূর্ব দিকে কাচপুর ব্রিজ এবং পশ্চিম দিকে গাবতলী ব্রিজ। অর্থাৎ উল্লেখিত ব্রিজগুলোর পূর্ব পর্যন্ত ঢাকা সিটির সীমানা। কেননা উল্লেখিত ব্রিজ গুলোর ভিতরের এলাকাগুলো আবাদী ও জনবসতি দ্বারা সংযুক্ত।
মুসাফিরের হুকুমঃ
মুসাফির ৪ রাকাআত বিশিষ্ট ফরজ নামায ২ রাকাআত পড়বে। এটাকে কসর নামায বলে। মুসাফিরের জন্য নামাজ কসর করা ওয়াজিব।- রদ্দুল মুহতার ২/১২১-১২৩
শরঈ সফররত অবস্থায় সুবহে সাদিক হয়ে গেলে মুসাফিরের জন্য রোযা না রাখার সুযোগ রয়েছে। সে পরে কাযা করে নিবে। -হিদায়া ১/২২১
মুসাফির তিন দিন তিন রাত মোজার উপর মাসেহ করতে পরে।- হিদায়া ১/৫৭
মুসাফিরের নামায সংক্রান্ত মাসায়েলঃ
মুসাফির নামায কিভাবে আদায় করবে?
মাসআলাঃ মুসাফির যোহর,আসর ও এশায় ৪রাকাআত বিশিষ্ট ফরজ নামায ২ রাকাআত করে আদায় করবে। ফজর ও মাগরিব যথা নিয়মে ২ও ৩ রাকাআত করে পড়বে। অনুরূপভাবে বেতর নামাযও তিন রাকাআত পড়বে।-রদ্দুল মুহতার ২/১২১-১২৩,ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৯।
মুসাফিরের জন্য জামাআতের হুকুমঃ
মাসআলাঃ মুসাফিরের জন্য জামাআতে নামায পড়া ওয়াজিব নয়। বরং মুস্তাহাব। তবে সফর অবস্থায় তাড়াহুড়া না থাকলে জামাআতেই নামায পড়া উচিত। আর ব্যস্ততা বা পেরেশানী থাকলে জামাআত ছেড়ে দেওয়র অনুমতি রয়েছে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮৩,আল বাহরুর রায়েক ১/৩৪৬।
মুসাফিরের জন্য সুন্নাতের হুকুমঃ
মাসআলাঃ মুসাফির ব্যস্ততা বা তাড়াহুড়ার সময় ফজরের সুন্নাত ব্যতীত অন্য সুন্নাত ছাড়তে পারবে। যেমন-সুন্নাত পড়লে ছফরের সাথীদের পিছে পড়ে যাবে বা গাড়ি না পাওয়ার আশংকা রয়েছে বা অন্য কোন ক্ষতি হতে পরে। এমতাবস্থায় সুন্নাতকে ছেড়ে দিবে। বড় ওযরের ক্ষেত্রে ফজরের সুন্নাতও ছেড়ে দিতে পারে। তবে কোন ব্যস্ততা না থাকলে সুন্নাত পড়ে নিবে। যেমন-কোথাও সফর করে ৮/১০দিনের জন্য বেড়াতে গেল অথবা গাড়ি ছাড়তে অনেক দেরি হবে অথবা সুন্নাত পড়লে সাথীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না। এমতাবস্থায় সুন্নাত পড়ে নিবে।রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফরে সুন্নাত পড়তেন। -জামে তিরমিজী হাদীস নং-৫৫১, আদ্দুররুল মুখতার ২/১৩১, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৯
মুসাফির ভুলে বা ইচ্ছায় চার রাকাআত নামায পড়ে ফেললেঃ
মাসআলাঃ মুসাফির ভুলে বা ইচ্ছায় (ফরজ নামায ) চার রাকাআত পড়ে ফেললে যদি সে ১ম বৈঠক করে থাকে তবে তার ফরজ আদায় হয়ে যাবে। প্রথম দুই রাকাআত ফরজ ও পরের দুই রাকাআত নফল গন্য হবে। এক্ষেত্রে তার জন্য সিজদায়ে সাহু করা ওয়াজিব। যদি সিজদায় সাহু না করে থাকে তবে উক্ত নামায পূনরায় পড়া ওয়াজিব। আর যদি ১ম বৈঠকে না বসে থাকে তবে পূরো নামায নফল গন্য হবে। ফরজ নামায পূনোরায় পড়তে হবে। উল্লেখ্য যে, ইচ্ছাকৃত চার রাকাআত নামায পড়লে সে গোনাহগার হবে।- আদ্দুরুরল মুখতার ২/১২৩-১৩০,আলবাহরুর রায়েক ২/২২৯,তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫১১,ফাতাওয়া দারুল উলূম ৪/৩১৫।
ইমাম মুাসাফির ও মুক্তাদী মুকীম হলেঃ
মাসআলাঃ মুসাফির ইমামের পেছনে মুকীমের এক্তেদা জায়েয আছে।মুসাফির ইমাম যখন দু-রাকাআতে সালাম ফিরাবে তখন মুক্তাদীগণ সালাম না ফিরিয়ে দাড়িয়ে যাবে। এবং বাকি দুই রাকাআত নামায একা একা পড়ে নিবে। তবে সে কোন কিরাআত পড়বে না। বরং সূরা ফাতেহা পরিমান দাড়িয়ে রুকু-সিজদা করবে কেননা সে লাহেক।- আদ্দুররুল মুখতার ২/১২১-১২৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪২।
মাসআলাঃইমাম মুসাফির হলে তার জন্য উত্তম হল সে সালাম ফিরানোর পর এলান করবে আমি মুসাফির আপনারা আপনাদের অবশিষ্ট নামায পুরা করুন। -আদ্দুররুল মুখতার ২/৬১২ (যাকারিয়া)।
শুধু মাত্র মুক্তাদী মুসাফির হলেঃ
মাসআলাঃ ইমাম মুকীম এবং মুক্তাদী মুসাফির হলে সে ইমামের অনুকরনে চার রাকাআতই পড়বে।–আল-মাবসূত ২/৯৪।
মুসাফির ইমামের পিছনে মুকীম মাসবূক হলেঃ
মাসআলাঃ মুসাফির ইমামের পিছনে যদি কোন মুকীম মাসবুক হয় তবে তার ছুটে যাওয়া নামায আদায়ের পদ্ধতি হল প্রথমে ইমামের পরবর্তী রাকাআত গুলো একাকী লাহেকের ন্যয় আদায় করবে। কাজেই উক্ত রাকাআত গুলোতে সে কিরাআত পড়বে না।এরপর ইমামের সাথে ছুটে যাওয়া নামায মুনফারিদের ন্যয় আদায় করবে। অর্থাৎ কিরাআত সহকারে নামায পড়বে।
কাজেই কোন ব্যক্তি যদি ইমামর সাথে এক রাকাআত না পায় তবে ইমামের উভয় সাসালামের পর সে দাড়িয়ে যাবে। অতঃপর এক রাকাআত কিরাআত ব্যতীত পড়ে বৈঠক করবে। এরপর আবার এক রাকাআত কিরাআত ব্যতীত পড়বে। তারপর কিরাআত সহ এক রাকাআত পড়ে শেষ বৈঠক করে নামায শেষ করবে।
আর যদি দুই রাকাআতই না পায় তবে প্রথমে কিরাআত ব্যতীত দুই রাকাআত পড়ে বৈঠক করবে। অতপর কিরাআত সহ দুই রাকাআত পড়ে নামায শেষ করবে।-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯২,রদ্দুল মুহতার ১/৫৯৬,খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৬৬,হালবিয়ে কাবীর পৃ:৪৭৯,৪৭০।
মুসাফির পথিমধ্যে নিয়ত পরিবর্তন করলেঃ
মাসআলাঃ কেউ কমপক্ষে ৪৮ মাইল সফরের নিয়তে ঘর থেকে বের হল। মাঝে কোন একটি স্থানে কমপক্ষে ১৫দিন থাকার নিয়ত করল। এর দ্বারা সে মুকীম হয়ে যাবে এবং পূরো নামায পড়বে। এরপর যদি সে উক্ত স্থান থেকে ১৫দিনের পূর্বেই চলে যাওয়ার নিয়ত করে তবে শুধুমাত্র এ নিয়তের কারনেই সে মুসাফির গন্য হবে না। বরং উক্ত স্থান থেকে তার গন্তব্যস্থল যদি কমপক্ষে ৪৮মাইল হয় তবে উক্ত স্থানের আবাদী থেকে বের হওয়ার পর সে মুসাফির গন্য হবে। যদি তার গন্তব্যস্থল কমপক্ষে ৪৮মাইল না হয় বা ৪৮মাইল হয় কিন্তু এখনো সে উক্ত আবাদী থেকে বের হয়নি তবে এমতাবস্থায় সে পূরো নামায পড়বে কসর জায়েয নেই।–হিদায়া ১/১৬৬।
মুসাফির নামাযের নিয়ত পরিবর্তন করলেঃ
মাসআলাঃ মুসাফির নামায শুরু করার পর নামাযেই কমপক্ষে ১৫দিন থাকার নিয়ত করল। সে ঐ নামায এবং পরবর্তি সকল নামায পূরো পড়বে।- ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪১।
মুসাফির ওয়াক্ত চলে যাওয়ার পর অথবা নামাযের পরে নিয়ত পরিবর্তন করলেঃ
মাসআলাঃ মুসাফির নামাযের ওয়াক্ত চলে যাওয়ার পর ইকামতের (কমপক্ষে ১৫দিন থাকার) নিয়ত করল।এখন সে ঐ নামায কাজা পড়লে কসরই পড়বে। অনুরূপভাবে কোন নামায কসর পড়ার পরে ইক্বামতের নিয়ত করলে ঐ পূর্বোক্ত নামাযই যথেষ্ট হবে। তবে সামনে থেকে পূরো নামায পড়বে।–হিদায়া ১/১৬৭।
শশুর বাড়ীতে নামাযঃ
মাসআলাঃ বিবাহের পর স্ত্রীকে যদি বাপের বাড়ী থেকে তুলে আনা হয় এবং স্ত্রী স্বামীর বাড়ীতে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য চলে আসে তবে স্ত্রীর জন্য স্বামীর বাড়ী ওয়াতনে আসলী হবে। এবং সে সেখানে মুকীম হবে। স্ত্রীর বাপের বাড়ী যদি স্বামীর বাড়ী থেকে ৪৮ মাইল বা তদাপেক্ষা বেশী দুরুত্ব হয় তবে কমপক্ষে ১৫দিনের নিয়ত ব্যতীত স্বামী-স্ত্রী উভয়ে স্ত্রীর বাড়ীতে মুকীম হবে না। বরং উভয়ে মুসাফির গন্য হবে এবং কসর করবে। তবে কমপক্ষে ১৫দিন থাকার নিয়ত করলে উভয় মুকীম গন্য হবে। এক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের হুকুম একই। কজেই স্ত্রী বাপের বাড়ী থেকে স্বামীর বাড়ীতে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য চলে আসার পর কোন স্থান থেকে শরঈ সফরের দূরত্ত অতিক্রম করে বাপের বাড়ীতে এলে এবং ১৫দিনের কম থাকার নিয়ত করলে কসর করবে।
আর যদি স্ত্রী সর্বদা বাপের বাড়ীতে থাকার শর্তে বিবাহ হয় এবং স্বামী তাকে সেখানে রেখে দেয় তবে স্ত্রীর জন্য বাপের বাড়ী ওয়াতনে আসলী থাকবে।এবং পূরো নামায পড়বে। এমন কি স্বামীর জন্যও এক্ষেত্রে স্ত্রীর বাড়ী ওয়াতনে আসলী গন্য হবে। স্বামী যদি সফরের দুরুত্ব অতিক্রম করে স্ত্রীর বাড়ীতে আসে তবে ২/১ দিন থাকলেও পূরো নামায পড়বে। কসর জায়েয নেই। অনুরূপভাবে স্বামী সর্বদা স্ত্রীর বাড়ীতে ঘর জামাই থাকলেও স্বামীর -স্ত্রী উভয়ের জন্য স্ত্রীর বাড়ী ওয়াতনে আসলী গন্য হবে।- আল-বাহরুর রায়েক ৪/৩৪০-৩৪১(দারুল কুতুব,লেবানন)বাদায়েউস সানায়ে ১/৩১৭.৩১৮(দারুল কুতুব, বাইরূত) মারাকিল ফালাহ পৃ:২৪৯, ইমদাদুল আহকাম ১/৬৯৩-৬৯৮, ফাতাওয়া দারুল উলুম ৪/৩২০,ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ৭/৪৯৫-৪৯৯।
মাসআলাঃ অনেক সময় বিবাহের পর স্ত্রী কিছু দিন বাপের বাড়ীতেই থাকে। মাঝেমধ্যে কয়েক দিনের জন্যে শশুর বাড়ীতে বেড়াতে আসে। এরপর আবার বাপের বাড়ীতে চলে আসে। এমতাবস্তায় স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জন্য তাদের প্রত্যেকের শশুর বাড়ী ওয়াতনে আসলী গন্য হবে না। কাজেই যদি উভয়ের বাড়ী কমপক্ষে ৪৮মাইল দুরুত্বে হয় এবং তাদের প্রত্যেকে শশুর বাড়ীতে গিয়ে ১৫দিনের কম থাকার নিয়ত করে তবে কসর করবে। কিছু দিন পরে স্ত্রী স্বামীর বাড়ীতে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য চলে আসে তখন স্বামীর বাড়ীই স্ত্রীর জন্য ওয়াতনে আসলী হয়ে যায়। -আল-বাহরুর রায়েক ২/২৯৩(রশীদিয়া ) ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ৭/৪৯৮
চাকুরী বা ব্যবসার স্থানে নামাযঃ
মাসআলাঃ অনেকে চাকুরী বা ব্যবসার খাতিরে শহরে বা অন্য কোন ন্থানে অবস্থান করে। যদি কোন একটি স্থানে একটানা ১৫দিন বা তার বেশী থাকে তবে সে মুকীম হবে এবং পূরো নামায পড়বে। আর যদি উক্ত স্থানে কখনো ১৫দিন না থাকা হয় বরং ৮/১০দিন থেকেই সর্বদা বাড়ী চলে আসে তবে উক্ত স্থান বাড়ী থেকে সফরের দুরুত্ব হলে কসর করতে থাকবে। টানা ১৫দিন থাকার নিয়ত ব্যতীত মুকীম গন্য হবে না।-আল-বাহরুর রায়েক ৪/৩৪১।
রেলগাড়ী বা পানির জাহাজে চাকুরীজীবীর নামাযঃ
মাসআলাঃ যারা কোন গাড়ী বা জাহাজে চাকুরী করে এবং নিজের বসস্থান থেকে সফরের দুরুত্বে ভ্রমন করতে থাকে তারা সর্বাবস্থায় নামায কসর করবে। কেননা জাহাজে ইক্বামতের নিয়ত করলেও তা সহীহ হয় না। তবে যদি কোন জাহাজ বা নৌযান শহর বা উপশহরের কিনারাই ১৫দিন বা তদাপেক্ষা বেশী থাকার নিয়তে ভিড়ানো থাকে তবে তাতে অবস্থানকারী এর দ্বারা মুকীম গন্য হবে। এবং পূরো নামায পড়বে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া।১/১৩৯, বাদায়েউস সানায়ে ১/৯৮।
অনুগামীদের সফরের নামাযঃ
মাসআলাঃ স্ত্রী স্বামীর সাথে সফরে গেল। স্বামী যত দিন সফরে থাকবে সেও থাকবে। এক্ষেত্রে স্বামী যদি কোথাও ১৫ দিন থাকার নিয়ত করে তবে স্বামী মুকীম হওয়ার কারনে স্ত্রীও মুকীম বলে গন্য হবে এবং পূরো নামায পড়বে। ১৫দিনের কম নিয়ত করলে কসর করবে। অনুরূপ ভাবে মালিকের ১৫দিনের নিয়ত দ্বারা ড্রাইভার, কর্মচারীও মুকীম হবে। -আদ্দুরুল মুখতার ২/৬১৬।
সফরে নামায কাযা হলে বা অন্য সময়ের কাযা নামায সফররত অবস্থায় পড়লেঃ
মাসআলাঃ শরঈ মুসাফিরের সফররত অবস্থায় নামায কাযা হলে সর্বাবস্থায় কসরই পড়বে। চাই সফরেই পড়ুক অথবা সফরের পরে। আর বাড়ীতে থাকা অবস্থার কাযা নামায সফররত অবস্থায় পড়লে পূরো চার রাকাআতই পড়বে। –হিদায়া ১/১৬৭।
ড্রাইভার বা এমন কর্মচারী যারা সর্বদা সফরে থাকেঃ
মাসআলাঃ বাস,ট্রেন ইত্যাদির ড্রাইভার এবং এমন চাকুরীজীবী যারা সর্বদা সফরে থাকে তারা যদি কমপক্ষে ৪৮মাইল সফরের নিয়তে বের হয় এবং ১৫দিন থাকার নিয়ত না করে তবে কসর করতে থাকবে। তবে এক্ষেত্রে তার ১৫ দিন থাকার নিয়তের জন্য তার উর্ধ্বতন পর্যায়ের অনুমতি বিবেচ্য হবে। অন্যথায় তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা মালিকের নিয়ত ধর্তব্য হবে। আর যদি মালিক বা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ত জানা না যায় তবে তারা কসর করতে থাকবে। -তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫২১(বাইরুত ), আল বাহরুর রায়েক ২/২৪৩।
ট্রেনে নামাযঃ
মাসআলাঃ ট্রেনে নামায পড়া জায়েয আছে চাই ট্রেন স্টেশনে দাড়িয়ে থাকুক অথবা চলমান। এক্ষেত্রে শর্ত হল কিবলামুখী হয়ে এবং দাড়িয়ে যথা নিয়মে রুকু সিজদার মাধ্যমে নামায আদায় করবে। তবে যদি দাড়ানোর কারনে মাথায় চক্কর দেয় অথবা পড়ে যাওয়ার আশংকা হয় তবে বসে রুকু সিজদার মাধ্যমে নামায আদায় করবে। নামায রত অবস্থায় ট্রেন ঘুরে গেলে নামাযীও সাথে সাথে ঘুরে যাবে।
আর যদি ভিড় বা অন্য কোন করনে কিবলমুখী হয়ে নামাজ পড়া না যায় অথবা কিয়াম সম্ভব না হয় অথবা যথানিয়মে সিজদা না করা যায় এবং ওয়াক্তের মধ্যে সামনে কোন স্টেশনে নেমে নামায আদায় সম্ভব না হয় তবে যে কোনভাবে নামায পড়ে নিবে। এবং পরবর্তিতে উক্ত নামায দোহরিয়ে নিবে।- রদ্দুল মুহতার ২/৪১, ১/২৩৫, আদ্দুরুল মুখতার ১/৪২৭,৪৪৫,আল-বাহরউর রায়েক ১/৪৯৩,২৪৮।
বাসে নামাযঃ
মাসআলাঃ বাস ও ট্রেনে নামাযের হুকুম একই অর্থাৎ বাসে যদি উপরে উল্লেখিত নিয়মে (কিবলামূখী হয়ে কিয়াম ও রুকু সিজদা করে) নামায পড়তে না পারে এবং বাস থামানো সম্ভব না হয় অথবা গন্তব্যস্থল পর্যন্ত পৌছাতে নামাযের ওয়াক্ত চলে যায় তবে ইশারায় যে কোন ভাবে নামায পড়ে নিবে এবং পরে দোহরিয়ে নিবে। আর যথানিয়মে নামায পড়তে পারলে উক্ত নামাযই যথেষ্ট হবে। – রদ্দুল মুহতার ২/৪১, ১/২৩৫, আদ্দুরুল মুখতার ১/৪২৭,৪৪৫,আল-বাহরউর রায়েক ১/৪৯৩,২৪৮।
বিঃদ্রঃ দুর-দুরান্তে সফর করতে হলে সকাল সকাল বের হওয়া উচিত। যাতে দুপুরের মধ্যে গন্তব্যস্থানে পৌছা যায়। এতে নামায আদায় সহজ হয়ে যায়। আর বিকালে সফর শুরু করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আসর ও মাগরিবের নামায আদায় ঝুকিপূর্ণ হয়ে যায়।
তবে একান্ত যদি দুপুরের পরে সফরে বের হতে হয় তবে বাসের সফর হলে নামাযের সময় গুলোতে বাসা থামিয়ে নিচে কোন স্থানে কিয়াম ও রুকু-সিজদার দ্বারা নামায আদায় করবে। যে দেশে অন্তত ৯২শতাংশ মানুষ মুসলমান সে দেশে বাস থামিয়েই নামায পড়া উচিত। আসলে আমাদের জযবার অভাব। আমরাই মনে করি বাস থামিয়ে নামায পড়লে অন্যান্য ভাইদের সময় অপচয় হবে। অথচ এর দ্বারা যেমনিভাবে নিজের ফরজ আদায় হয় তেমনিভাবে অন্যান্য ভাইদের জন্য দাওয়াতও হয়। আর বাস্তবতা ও অধমের অভিজ্ঞতা এটাই যে, নিজের সদ্বিচ্ছা থাকলে বাস থামিয়ে নামায পড়া যায়।
তাছাড়া বাসে নামায পড়লে সাধারনত তা সহীহ হয় না। কেননা কিয়াম, কিবলামুখী হওয়া এবং সিজদা এগুলো ঠিকভাবে আদায় করা যায় না। তাই যদি নিচে নেমে নামায আদায করা না যায় অথবা নেমে গেলে নিজের জান,মালের ক্ষতি হওয়া আশংকা থাকে তবে বাসে যে কোন ভাবে নামায পড়ে নিবে এবং পরে দোহরিয়ে নিবে।
এক্ষেত্রে আরেকটি সংশোধনযোগ্য বিষয় হল অনেক সময় পুরুষেরা বাস থামিয়ে নামায পড়লেও মহিলারা পর্দার দোহাই দিয়ে অথবা লজ্জার কারনে নামায পড়ে না। অথচ এটা চরম অন্যায় ও গোনাহের কাজ। বরং তারা যথা নিয়মে ওযু করে মসজিদের এক কিনারায় বা অন্য কোন স্থানে বোরকা পরিহীত অবস্থায় নামায আদায় করবে।
নৌকা,জাহাজ ও ষ্টীমারে নামাযঃ
মাসআলাঃ নৌযানে নামাযের কয়েকটি সূরত হতে পারে। নিম্নে প্রত্যেকটি সূরত হুকুমসহ বর্ননা করা হল-
(১) নৌযানটি কিনারে বাধা থাকবে এবং তার কোন অংশ মাটির সাথে লেগে থাকবে। এমতাবস্থায় তার উপর নামায পড়া জায়েয।তবে দাড়িয়ে নামায পড়া জরুরী। বসে পড়লে তা সহীহ হবে না।
(২) কিনারে বাধা থাকবে তবে নৌযানের কোন অংশ মাটির সংঙ্গে লেগে থাকবে না। এমতাবস্থায় যদি তা থেকে বের হয়ে নামায পড়া সম্ভব হয় তবে বের হওয়া জরুরী। আর যদি বের হওয়া সম্ভব না হয় তবে তার উপর দাড়িয়ে নামায পড়বে।
(৩) নৌযান নদী বা সাগরের মাঝে বাধা থাকবে। যদি তার কোন অংশ মাটির সাথে লেগে থাকে তবে এর হুকুম কিনারায় বাধা ঐ নৌকার মত যার কোন অংশ মাটিতে লেগে আছে। অর্থাৎ তার উপর দাড়িয়ে নামায পড়া জায়েয।
(৪) নৌযান নদী বা সাগরের মাঝে বাধা থাকবে অথবা চলমান থাকবে এবং তার কোন অংশ মাটিতে লেগে থাকবে না। এমতাবস্থায় যদি নৌযান থেকে বের হেয়ে নামায পড়া সম্ভব হয় তবে বের হয়ে নামায পড়া জরুরী। আর যদি বের হওয়া বা কিনারায় ভিড়ানো সম্ভব না হয় এবং গন্তব্যস্থলে পৌছা পর্যন্ত ওয়াক্ত না থাকে তবে নৌযানের উপরেই দাড়িয়ে নামায পড়ে নিবে।
উপরে উল্লেখিত কোন সূরতে মুসল্লীর দাড়িয়ে নামায পড়লে যদি মাথা চক্কর দেয় অথবা বাতাস কিংবা ঢেউয়ের কারনে পড়ে যাওয়ার আশংকা হয় তবে বসে নামায পড়বে।- আদ্দুরুরল মুখতার এর সাথে রদ্দুল মুহতার ২/৫৭২-৫৭৩(যাকারীয়া), আল-বাহরুর রায়েক ৪/২৮৯-২৯০(দারুল কুতুব), এমদাদুল আহকাম ১/৭১২-৭১৪।
মাসআলাঃ নৌকা বা অন্য কোন নৌযানে নামাযের মধ্যে যদি নৌকা ঘুরে যায় তবে মুসল্লীও সাথ সাথে ঘুরে যাবে। কিবলামুখী হয়ে নামায না পড়লে নামায সহীহ হবে না। পূনরায় পড়তে হবে। -আদ্দুরুল মুখতার ২/৫৭৩ (যাকারিয়া)।
প্লেনে নামাযঃ
মাসআলাঃ প্লেন জমিনের সাথে লেগে থাকলে তার উপর নামায সর্বসম্মতিক্রমে জায়েয। আর উড়ন্ত প্লেনে উযরের কারনে নামায জাযেয। যদি দাড়িয়ে পড়া সম্ভব না হয় তবে বসে পড়বে। এক্ষেত্রেও কিবলামুখী হওয়া ফরজ। যদি প্লেন ঘুরে যায় তবে মুসল্লীও ঘুরে যাবে।- কিতাবুল ফিক্হ আলাল মাযাহিবিল আরবাআহ ১/২০৬,আহসানুল ফাতাওয়া ৪/৯০।
দ্রুতগামী প্লেনে উঠার কারনে পূর্বোক্ত ওয়াক্ত পূনরায় দেখা দিলেঃ
মাসআলাঃ কেউ মাগরিবের নামায পড়ে প্লেনে উঠল। অতঃপর প্লেন পশ্চিম দিকে এত দ্রুত বেগে ছুটল যে পূনরায় সূর্য দেখা দিল। এখন তার জন্য পূনরায় মাগরিবের নামায পড়তে হবে না। আর রোযা থেকে থাকলে তারও কোন ক্ষতি হবে না। তবে এখন থেকে দ্বিতীয় বার সূর্য ডোবা পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকবে।-রদ্দুল মুহতার ১/৩৩৪।
হায়েয অবস্থায় সফর শুরু করলে অথবা সফরের মাঝে হায়েয চলে এলেঃ
মাসআলাঃ কোন মহিলা হায়েয অবস্থায় কমপক্ষে ৪৮মাইল সফরের নিয়তে বের হল। অতঃপর সে পথিমধ্যে পবিত্র হয়ে গেল। এখন যদি সে ঐ স্থানেই অবস্থান করে অথবা ঐ স্থান থেকে তার গন্তব্যস্থান ৪৮মাইলের কম হয় তবে সে মুসাফির গন্য হবে না। পূরো নামায পড়বে। আর যদি উক্ত স্থান থেকে গন্তব্যস্থান ৪৮মাইল বা তার বেশী হয় তবে সে কসর করবে।-রদ্দুল মুহতার ২/১৩৫,আহসানুল ফাতাওয়া ৪/৮৭,৮৮।
মাসআলাঃ কোন মহিলা পবিত্র অবস্থায় কমপক্ষে ৪৮মাইল সফরের নিয়তে বের হল। পথিমধ্যে তার হায়েয এলো। এর দ্বারা সে মুসাফিরই থাকবে এবং কসর করবে। -আদ্দুররুল মুখতার ২/১৩৫,হাশিয়ায়ে ত্বাহতাবী ১/৩৩৭।
সফরে পানি না পেলেঃ
মাসআলাঃ কেউ সফররত অবস্থায় পানি না পেলে এবং ওয়াক্তের মধ্যে গন্তব্যস্থলে পৌছাতে না পারলে অথবা ওয়াক্তের মধ্যে পানি ব্যবহারের সক্ষমতা অর্জন না হলে তায়াম্মুম করে নামায পড়বে। পরে ওয়াক্তের মধ্যে পানি পাওয়া গেলেও নামায দোহরাতে হবে না।- ফাতাওয়া হিন্দীয়া ১/২৮, রদ্দুল মুহতার ১/২৩৫।
মাসআলাঃ অনেক সময় ট্রেনে বা বাসে তায়াম্মুমেরে জন্য মাটি পাওয়া যায় না। তবে বাস বা ট্রেনের গায়ে এত পরিমান ধুলা বালি জমা হয়ে যায়, যা দ্বারা তায়াম্মুম করা যায়। যদি ধুলা বালি জমা হওয়ার স্থান পাক হয় তবে তা দ্বারা তায়াম্মুম করে নিবে।
সফরে পানি ও মাটি জাতীয় জিনিস কোনটিই না পেলেঃ
মাসআলাঃ অনেক সময় ওযুর জন্য পানি এবং তায়াম্মুমের জন্য মাটি জাতীয় জিনিস কোনটিই পাওয়া যায় না। প্লেনে,বাস ও ট্রেনে প্রায়ই এমন হয়ে থাকে। এমতাবস্থায় নামাযীর মত সূরত এখতিয়ার করবে। অর্থাৎ নামাযের নিয়ত ব্যতীত নামাযীর ন্যয় উঠাবসা করবে। পরে যথানিয়মে নামায কাজা করে নিবে। আর যদি ওয়াক্তের মধ্যে পানি বা মাটি জাতীয় বস্তু পেয়ে যায় তবে ওয়াক্তের মধ্যে তা পূনরায় দোহরিয়ে নিবে। -আদ্দুররুল মুখতারের সাথে রদ্দুল মুহতার ১/১৮৫.১৮৬(যাকারিয়), সুনানে তিরমিজী হা: নং ১।
মুসাফিরের জন্য জুমআ ও ঈদের নামাযঃ
মাসআলাঃ মুসাফিরের উপর জুমআ ও ঈদের নামায ফরজ নয়। সুযোগ হলে জুমআ পড়ে নিবে নতুবা যোহর পড়বে।-আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৫,আল মাবসূত ১/২৫৩।
মাসআলাঃ মুসাফিরের উপর জুমআ বা ঈদ ফরজ না হলেও সে জুমআ বা ঈদের ইমামতি করলে তা সহীহ হবে।–হিদায়া ১/১৫২।
মুসাফির কিবলা নির্নয় না করতে পারলেঃ
মাসআলাঃ কেউ যদি কোন স্থানে কিবলার দিক নির্নয় করতে না পারে এবং এমন কোন মানুষও না পায় যার নিকট জিজ্ঞাসা করে নিতে পারে তবে সে অন্তর দ্বারা চিন্তা করবে। যেদিকে কিবলা হওয়ার ব্যপারে প্রবল ধারনা হবে সে দিকে ফিরে নামায পড়বে। যদি সে কোন চিন্তা ফিকির ছাড়াই কোন একদিকে ফিরে নামায পড়ে তবে তার নামায সহীহ হবে না। পূনরায় পড়তে হবে। তবে পরবর্তিতে যদি জানতে পারে যে সে যেদিকে ফিরে নামায পড়েছে কেবলা সে দিকেই ছিল তাহলে তার নামায হয়ে যাবে। -রদ্দুল মুহতার ১/৪৩২,আল বাহরুর রায়েক-১/৪৯৯।
মাসআলাঃ কেউ জিজ্ঞাসা করার কোন লোক না পেয়ে চিন্তা ফিকির করে প্রবল ধারনার ভিত্তিতে কোন এক দিকে নামায পড়ল । পরবর্তিতে প্রকাশ পেল কিবলা অন্য দিকে ছিল। উক্ত নামায তাকে পূনরায় পড়তে হবে না। বরং পূর্বোক্ত নামাযই সহীহ হবে। -আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৩১।
মাসআলাঃ যদি কিবলার দিক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্য কাউকে পেয়েও জিজ্ঞাসা না করে চিন্তা করে কোন একদিকে ফিরে নামায পড়ে তবে তার নামায সহীহ হবে না। তবে নামাযের পর যদি প্রকাশ পায় যে সে কিবলার দিকেই নামায পড়েছে তবে তা সহীহ হবে। -রদ্দুল মুহতার ১/৪৩২আহসানুল ফাতাওয়া ২/৩১৮-৩১৯।
মহিলাদের জন্য একাকী সফরঃ
মাসআলাঃ মহিলাদের জন্য তার মাহরাম পুরুষ ব্যতীত ৪৮মাইল বা তদাপেক্ষা বেশী দুরুত্বের সফর করা জায়েয নয়। এর কম হলে জায়েয আছে । তবে সর্বাবস্থায় মাহরাম পুরুষের সাথে সফর করাই উত্তম। আর গাইরে মাহরামদের সাথে সফর করা মারাত্তক গোনাহ।হাদীসে মাহরাম ব্যতীত মহিলাদের সফরের ব্যপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। -বুখারী শরীফ হা: নং১০৮৬,ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪২।
মাসআলাঃ মাহরাম হওয়া সত্তেও যদি কারো সাথে সফরের দ্বারা ফেতনার আশংকা হয় তবে তার সাথেও সফর করা জায়েয নেই। -আলা বাহরুর রায়েক ২/৩১৫।
রমযানে সফর সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ন কয়েকটি
মাসআলাঃ মুসাফিরের জন্য সফররত অবস্থায় রোযা না রাখার অনুমতি রয়েছে। তবে যদি রোযা রেখে ফেলে তাহলে তা ভাঙ্গা জায়েয নয়। ভেঙ্গে ফেললে গুনাহ হবে। তবে এক্ষেত্রে তার উপর শুধু কাযা ওয়াজিব হবে।
মাসআলাঃকেউ যদি রোযা রাখার পর সফর শুরু করে তবে তার জন্যও রোযা ভাঙ্গা জায়েয নেই। ভেঙ্গে ফেললে গুনাহগার হবে। অবশ্য এক্ষেত্রেও তার উপর শুধু কাযা ওয়াজিব হবে কাফফারা নয়।
উল্লেখিত মাসআলা দুটি খুব ভালভাবে বুঝে নেওয়া দরকার। অনেকেই মনে করে সফররত অবস্থায় মুতলাক্বভাবে (সর্ববস্থায়)রোযা ভেঙ্গে দেওয়া যায়। বরং শরঈ সফররত অবস্থায় যদি সুবহে সাদিক এসে যায় তবে সেই কেবল রোযা না রাখতে পারে । তবে যদি রোযা রাখার পর সফর করে অথবা সফর শুরু করার পর রোযা রেখে ফেলে তাহলে তা আর ভাঙ্গা জায়েয হবে না।
মাসআলাঃ মুসাফির যদি সূর্য উঠার আগে মুকীম হয়ে যায় আর তার থেকে রোযা ভঙ্গ হওয়ার কোন কারন প্রকাশ না পায় তবে তার জন্য রোযার নিয়ত করা জরুরী । অন্যথায় সে গুনাহগার হবে।তবে রোযা না রাখলে তার জন্য শুধু কাযা ওয়াজিব হবে কাফফারা নয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৮:৫৪