২০০৫ সালে বিরাট অসুখে পড়েছিলেন মাগুরার আমজাদ হোসেন। এখানে সেখানে নানা জায়গার ঔষধ খেয়েও সারছিলনা সে অসুখ। শেষে জার্মানির ওষুধ খেয়ে তিনি আরোগ্য লাভ করলেন। এখন তার প্রতিদানতো দিতে হয়। শুরু করলেন জার্মানির পতাকা বানাতে। ২০১৪ সালে স্বপ্নের পূর্ণতা পেল। আট বছর ধরে বানালের তিন কিলোমিটার দীর্ঘ জার্মানির পতাকা। খরচ হয়েছে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। ২০১৪ সারা দেশের মানুষ আমজাদকে অভিনন্দন জানাতে আর সে পতাকা দেখতে ছুটে গিয়েছিলেন মাগুরা স্টেডিয়ামে। স্টেডিয়ামে উপস্থিত হয়েছিলেন বাংলাদেশে জার্মানির ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ড. ফার্দিনান্দ ভেহে।
বাংলাদেশে জার্মানি দলের সমর্থক হাতেগোনা! আসল সমর্থক হলো ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার। মাতামাতিটা হয় এই দুই দেশের পতাকা নিয়ে। এক এক বিল্ডিং এর ছাদে অসংখ্য পতাকা। লাল, নীল, সাদা, হলুদ- নানা রঙের পতাকা…রীতিমত প্রযোগিতা শুরু হয়, কার পতাকা কত বড়! কে কার উপরে! গোটা দেশ তখন খন্ড খন্ড ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা অথবা স্পেন….!
সে সব দেশেও কী কখনো একই ঘটনা ঘটে? মাঠের কোনায়, বাড়ির ছাদে, কার্নিশে, জানালার গলুইয়ের ফাঁক গলে, বস্তির টিনের চালে, ছুটে চলা নৌকার পালে ওভাবে কী ওদের পতাকাও ওড়ে? অথবা ওরা কী জানে যে, দক্ষিণ এশিয়ার ছোট্ট একটা দেশে ওদের পতাকা নিয়ে কতই না মাতামাতি হয়?
ক্রিকেটই আমাদের জন্য উৎসব। গর্বের কারণ। এই একটা খেলায়ই আমাদের উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে। আমরা বিশ্বকাপ খেলছি। গোটা দুনিয়াকে অবাক করে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলবো ১৯ তারিখে। প্রতিপক্ষ নাকি এরই মধ্যে কাঁপাকাপিও শুরু করে দিয়েছে। সারাদেশে এখন সব আলোচনা কেন্দ্রীভূত হয় ক্রিকেটকে নিয়ে। প্রত্যেকটা সাপোর্টারই একাধারে খেলোয়াড়, নির্বাচক, বোর্ড প্রধান!!! রাজনীতিও গলে গেছে ক্রিকেটের উত্তাপে। ক্রিকেট বিশ্বেও আলোচনার কেন্দ্রে বাংলাদেশ।
অথচ এখনো, কোথাও বাংলাদেশের পতাকা চোখে পড়ছেনা। উঁচু ছাদের উপর মাথা তুলে, গাড়ির সম্মুখ অংশে, বাইসাইকেলের হ্যান্ডেলে, ছোট্ট শিশুর মাথায়, হাতের ব্যান্ড হয়ে, জানালার কুর্নিশে-কোথাও লাল সবুজ পতাকা নেই।
আমজাদ জার্মানির ঔষধের প্রতিদান দিয়েছে। নিজের সব সঞ্চয় নি:শেষ করেছে একটা পতাকা বানাতে। আমাদেরও প্রতিদানের সূবর্ণ সুযোগ এসেছে। পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা দেশটায় জন্মেছি বলে।
উড়ুক পতাকা! ১৯ তারিখে গোটা দেশটা লাল সবুজ হয়ে যাক…