হযরত ওবায়েদ ইবনে উমায়ের আল-লায়াছি বলেছেন, দাজ্জাল আত্মপ্রকাশ করবে। তখন কিছু মানুষ তার অনুসারী হয়ে যাবে। তারা বলবে, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি, দাজ্জাল নিঃসন্দেহে কাফের; তবে তার খাদ্য ভাণ্ডার থেকে খেতে এবং তার বাগানে পশুপাল চড়াতে তার অনুসারী হয়েছি। পরবর্তী সময়ে যখন আল্লাহর গজব নাজিল হবে, তা তাদের সকলের উপর নাজিল হবে।
(আল ফিতান, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৫৪৬)
আজ মুসলমান এই হাদিসগুলোতে চিন্তা করে না। যদি আমরা চিন্তা করি, তা হলে গোটা সুরতহাল স্পষ্ট হয়ে যাবে। আজও কি এমনটি হচ্ছে না যে, বাতিলের পরিচয় জানা সত্বেও অর্থনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারের জন্য মুসলমান বাতিলের সঙ্গ দিচ্ছে, বাতিলকে সহযোগিতা দিচ্ছে কিংবা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে?
হযরত শাহ্র ইবনে হাওশাব (রাঃ), আসমা বিনতে যায়ীদ আনসারিয়া থেকে বর্ণনা করেছেন যে, আসমা (রাঃ) বলেছেন, একদিন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার ঘরে অবস্থানরত ছিলেন। তখন তিনি দাজ্জাল সম্পর্কে কিছু কথা বললেন। তিনি বলেছেন, তার ফেতনাসমূহের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ফেতনাটি এই হবে যে, সে এক গ্রাম্য লোকের নিকট আসবে এবং বলবে, তোমার খেয়াল কি; আমি যদি তোমার মৃত উটটি জীবিত করে দেই, তাহলে কি তুমি মেনে নিবে আমি তোমার রব? গ্রাম্য লোকটি বলবে, হ্যাঁ। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তারপর শয়তানরা তার মৃত উটটিকে ঠিক আগের মতো বরং তার চেয়েও উত্তম – যেমন দুগ্ধদায়িনী ভরাপেট ছিল – বানিয়ে দিবে।
অনুরূপভাবে দাজ্জাল এমন এক ব্যক্তির নিকট আসবে, যার পিতা ও ভাই মারা গেছে। তাকে বলবে, তোমার ধারণা কি; আমি যদি তোমার বাপ ভাইকে জীবিত করে দেই, তাহলে কি তুমি মেনে নিবে আমি তোমার রব? উত্তরে সে বলবে, কেন নয়। ফলে, তারপর শয়তানরা লোকটির পিতা ভাইয়ের আকৃতিতে এসে হাজির হবে।
এ পর্যন্ত বলে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন এক কাজে বাইরে বেরিয়ে গেলেন। কিছুক্ষন পর ফিরে এলেন। তখন লোকেরা এঘটনায় বিষণ্ণ ও বিচলিত ছিল। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দরজার চৌকাঠ দুটো ধরে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বললেন, কি হয়েছে আসমা? উত্তরে আসমা (রাঃ) বললেন, দাজ্জালের আলোচনা করে আপনি আমাদের কলিজাটা বের করে দিয়েছেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ও যদি আমার জীবদ্দশায় আত্মপ্রকাশ করে, তা হলে আমি তার জন্য বাঁধা হয়ে যাব। অন্যথায় আমার রব প্রতিজন মুমিনের হেফাজতকারী হবেন। তারপর আসমা (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা যখন আটা খামির করি, তখন ততক্ষণ পর্যন্ত রুটি তৈরি করি না, যতক্ষণ না আমদের ক্ষুধা লাগে। তো সে সময় ঈমানদারদের অবস্থা কি হবে? উত্তরে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তাদের জন্য সেই তসবীহ তাহমীদই যথেষ্ট হবে, যা আকামের অধিবাসীদের জন্য যথেষ্ট হয়ে থাকে।
(আল ফিতান, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৫৩৫)
এই বর্ণনাটি ইমাম আহমাদও বর্ণনা করেছেন। তবে উভয় বর্ণনায় শব্দের কিছু তারতম্য আছে। তাতে অতিরিক্ত এই কথাটিও আছে যে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যারা আমার মজলিসে উপস্থিত হয়েছ এবং আমার বক্তব্য শুনেছ, তোমরা এই কথাগুলোকে সেই লোকদেরও কানে পৌঁছিয়ে দিও, যারা এই মজলিসে উপস্থিত নেই’।
মুসনাদে তায়ালিসিতে এই বর্ণনাটি শাহ্র ইবনে হাওশাব এর সনদ ব্যতীত অন্য সনদে উল্লেখিত হয়েছে।
আবু উমামা থেকে বর্ণিত দীর্ঘ হাদিসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“দাজ্জাল বেদুইনের কাছে এসে বলবে- “ওহে বেদুইন! আমি যদি তোমার মৃত পিতা-মাতাকে জীবিত করে দিই, তবে আমাকে প্রভু বলে মেনে নিতে তোমার কোন আপত্তি থাকবে? বেদুইন বলবে- না!! অতঃপর দু’-জন শয়তান তার পিতা-মাতার রূপ ধরে তাকে বলবে- ওহে বৎস! একে অনুসরণ কর! সে তোমার প্রভু!”
(ইবনে মাজাহ # ৪০৬৭, সহিহ আল-জামি আল-সগীর # ৭৭৫২, মুস্তাদরাকে হাকিম)
হযরত হুজায়ফা (রাঃ) দাজ্জাল বিষয়ক বর্ণনা উদ্ধৃত করার পর বলেছেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“আমি এ বিষয়টি বারবার এজন্য বর্ণনা করছি, যেন তোমরা বিষয়টিতে গভীর মনোযোগ সহকারে চিন্তা গবেষণা কর, সজাগ সচেতন হও, সে মোতাবেক কাজ কর এবং বিষয়টি তোমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আলোচনা কর। কারণ, দাজ্জালের ফেতনা ভয়াবহতম একটি ফেতনা"।
(আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান)
আমিন বেগ ভাইয়ের ব্লগ থেকে।