হযরত ইমরান ইবনে হুদাইর (রহঃ) আবু মুজলিজ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, আবু মুজলিজ (রহঃ) বলেছেন, যখন দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে, তখন মানুষ তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে যাবে। একটি দল তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। একটি দল যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে যাবে। একদল মানুষ তার সাথে যোগ দেবে। যে ব্যক্তি চল্লিশ রাত তার সাথে পাহাড়ের চূড়ায় তার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত থাকবে, সে আল্লাহর পক্ষ থেকে জীবিকা প্রাপ্ত হবে। যে সব নামাজী দাজ্জালের সহযোগীতে পরিণত হবে, তাদের অধিকাংশ সন্তান-সন্ততির জনক জননী হবে। তারা বলবে, আমরা দাজ্জালের গোমরাহি সম্পর্কে ভালভাবেই জানি। কিন্তু এর থেকে আত্মরক্ষা কিংবা এর সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য ঘর বাড়ি পরিত্যক্ত করতে পারি না। তো যারা এই নীতি অবলম্বন করবে, তারাও দাজ্জালের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবে।
দাজ্জালের জন্য দুটি ভূমিকে অনুগত বানিয়ে দেওয়া হবে। একটি ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের শিকার ভূমি, যাকে সে বলবে, এটি জাহান্নাম। অপরটি সবুজ শ্যামল ভূমি, যাকে সে বলবে, এটি জান্নাত। ঈমানওয়ালাদের আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা করা হবে। অবশেষে এক মুসলমান বলবে, এই পরিস্থিতি আমি সহ্য করতে পারব না। আমি সেই লোকটির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করব, যে মনে করছে, সে আমার রব। যদি প্রকৃতই সে আমার রব হয়, তা হলে আমি তার উপর জয়ী হতে পারব না। তবে এখন আমি যে অবস্থায় আছি, তার থেকে আমি মুক্তি পাব ( অর্থাৎ আমি তার কাছে পরাজিত হব, সে আমাকে হত্যা করে ফেলবে, আর আমি যে বিপজ্জনক অবস্থায় নিপাতিত আছি, তার থেকে রেহাই পেয়ে যাব)।
উক্ত মুসলমান তাকে বলবে, তুমি আল্লাহকে ভয় কর; এতো মস্ত এক বিপদ। এভাবে সে দাজ্জালের সঙ্গে বিদ্রোহের ঘোষণা দেবে এবং তার দিকে এগিয়ে যাবে। লোকটি দাজ্জালকে গভীরভাবে নিরীক্ষা করার পর তার বিরুদ্ধে গোমরাহি, কুফর ও মিথ্যার সাক্ষ্য প্রদান করবে। শুনে দাজ্জাল (তাচ্ছিল্যের সঙ্গে) বলবে, দেখো ব্যাপারটা; যাকে আমি সৃষ্টি করলাম ও পথের দিশা দিলাম, সে কিনা আমাকে মন্দ বলছে! লোক সকল, তোমরা কি মনে করছ, আমি যদি হত্যা করি, পরে আবার জীবিত করি, তাহলে এরপরও তোমরা আমার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করবে কি? জনতা বলবে, না। এবার দাজ্জাল যুবকের গাঁয়ে একটি আঘাত হানবে, যার ফলে তার দেহটি দুই খণ্ডে বিভক্ত হয়ে যাবে। তারপর আঘাত করবে, এবার সে জীবিত হয়ে যাবে। এর ফলে ঈমানওয়ালার ঈমান আরও বেড়ে যাবে এবং সে দাজ্জালের বিরুদ্ধে কুফর ও মিথ্যার সাক্ষ্য প্রদান করবে। এই যুবক ব্যতীত দাজ্জালের আর কাউকে হত্যা করে জীবিত করার ক্ষমতা থাকবে না। পরে দাজ্জাল বলবে, দেখো, আমি একে হত্যা করে আবার জীবিত করেছি, কিন্তু তারপরও এ আমাকে মন্দ বলছে।
বর্ণনাকারী বলেন, দাজ্জালের কাছে একটি ছুরি থাকবে। সে মুসলমান যুবককে সেটি দ্বারা কাটতে চাইবে। কিন্তু তামা তার ও ছুরির মাঝে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে। ছুরি মুসলমান যুবকের উপর কোন ক্রিয়াই করবে না। অনন্তর দাজ্জাল যুবককে ধরে তুলবে এবং বলবে, একে আগুনে নিক্ষেপ কর। ফলে তাকে সেই দূর্ভিক্ষকবলিত ভূমিতে নিক্ষেপ করা হবে, যাকে দাজ্জাল আগুন মনে করবে। অথচ বাস্তবে সেটি হবে জান্নাতের দরজাসমূহের একটি দরজা। আল্লাহ মুমিন যুবককে জান্নাতে পৌছিয়ে দেবেন।
(আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ১১৭৮)
কিছু নামাজী মুসলমানও সন্তান সন্ততির কারণে দাজ্জালের সঙ্গ দিতে বাধ্য হবে। মহান আল্লাহ সন্তানকে পরীক্ষা সাব্যস্ত করেছেন। মূলনীতি হল, পরীক্ষার জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হয়। কাজেই যে সব দ্বীনদার লোক ঈমানের অবস্থায় আপন রবের সঙ্গে মিলিত হওয়ার আশা রাখে, তাদের উচিত এখন থেকেই এই বিষয়টির অনুশীলন করা যে, আল্লাহর জন্য সন্তানদের পরিত্যাগ করতে পারবে কিনা। এই প্রস্তুতির সহজ পদ্ধতি হল, তারা সেই পথে যেতে প্রস্তুত হয়ে যাক, যে পথ সম্পর্কে সাধারণ ধারণা হল, ওখানে গেলে আর ফেরত আসা যায় না কিংবা যে ব্যক্তি ওখানে যায়, সে মৃত্যুবরণ করে। নিজেও বারবার এর অনুশীলন করুন এবং স্ত্রী-সন্তানদেরও এর জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করুন। এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে গোটা পরিবার পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে এবং আল্লাহর সাহায্যে দাজ্জালের সময় নিজের দ্বীন ও ঈমান বাচানোর জন্য যে কোন কুরবানি দিতে প্রস্তুত হয়ে যাবে।
দাজ্জালের কুফরি দেখে বহু মানুষ নীরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে। এক যুবক সে সব সহ্য করতে ব্যর্থ হবে এবং দাজ্জালের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসবে। তথাকথিত ‘শান্তিকামী সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবী’-রা তাকে বোঝাবেন, তুমি এমনটি কর না; বরং বাস্তবতাকে উপলব্ধি করে সে অনুপাতে কাজ করো। কিন্তু কিছু হৃদয়ের সম্পর্ক আল্লাহর আরশের সঙ্গে জুড়ে যায়, তারা পাগল হয়ে যায় এবং যে কোন তাগুতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাই তাদের ধর্মে পরিণত হয়ে যায়। এই যুবকও দাজ্জালের কুফরিকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ করে বসবে।
আমিন বেগ ভাইয়ের ব্লগ থেকে