somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পর্দা পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য।

২২ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আল্লাহ নারীদের মত করে পুরুষদের হিজাব করতে বলেনি তার মানে এই নয় যে পুরুষদের হিজাব নেই। নারীদের যেমন সৌন্দর্য ঢাকার জন্য পর্দা ব্যবহার করতে বলা হয়েছে , ঠিক তেমনি পুরুষদেরকেও পর-নারীর সৌন্দর্য দেখা থেকে নিজের চোখ ও অন্তরের পর্দা করতে বলা হয়েছে।

সত্যি কথা বলতে পুরুষের জন্যই পর্দার আয়াত প্রথমে নাযিল হয়েছে। পরবর্তীতে নারীর পর্দার আয়াত নাযিল হয়েছে।

সুরা নূরের ৩০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ্‌ বলেছেন-
"মুমিন পুরুষদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে।"

এর পরের আয়াত অর্থাৎ সুরা নূরের ৩১ নম্বর আয়াত মহান আল্লাহ্‌ নাযিল করেছেন নারীদের পর্দার জন্য।

এখন কোন পুরুষের চোখ যদি কোন নারীর সৌন্দর্য দর্শন করার অনুমতি পায় , তাহলে তাহল একমাত্র নিজের স্ত্রীর। একজন পুরুষের জন্য নিজ স্ত্রী ব্যতীত অন্য কোন নারীর চেহারার সৌন্দর্য দেখা বা অন্য কোন নারীর দেহ আকৃতি অন্তরে অনুভব করা 'হারাম' ।
এ সম্পর্কে মহানবী [স:] বলেছেন , যদি কোন মহিলার দিকে হঠাৎ নজর পড়ে যায় , তাৎক্ষণিক দৃষ্টি সরিয়ে নেবে এবং তার দিকে আর দ্বিতীয়বার তাকাবে না।
আল্লাহ পবিত্র কুরানের সুরা আন-নুরের ৩০নং আয়াতে নারীদের পর্দার ব্যাপারে নিষেধ করার আগে পুরুষের চোখের পর্দা হেফাজত করার নির্দেশ দিয়েছেন । কেউ যখন তা জেনেও এই নিষেধ মান্য করা থেকে নিজেকে দূরে রাখলো না তখন সে যেন কুরআনে আল্লাহ প্রদত্ত নির্দেশ কে অবজ্ঞা করল।

সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌ বলেছেনঃ এতে কোন সন্দেহ নেই যে, যারাই আমার আয়াত সমুহকে অবজ্ঞা করবে, আমি তাদেরকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করব। তাদের চামড়াগুলো যখন জ্বলে-পুড়ে যাবে, তখন আমি সেখানে নতুন চামড়া দিব, যাতে তারা আযাব পূর্ণভাবে আস্বাদন করতে থাকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, মহাজ্ঞানী। (সুরা আন নিসাঃ ৫৬)

ঠিক একইভাবে ,
হিজাব পরা মানে মানুষকে দেখানো নয় যে আমি হিজাব পরছি। হিজাব পরা মানে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন আমার শরীরের সৌন্দর্য পর-পুরুষ থেকে ঢেকে রাখতে।
যা দেখার অনুমতি বা প্রদর্শন করার অনুমতি দিয়েছে একমাত্র আমার স্বামীর সামনে।

সুরা নূরের ৩১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ্‌ বলেছেন-
"ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে ও নিজেদের দেহ-সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে, কেবল সেসব অংশ ছাড়া যা আপনা আপনি প্রকাশিত হয়ে পড়ে; আর যেন তারা তাদের মাথার কাপড় দিয়ে বুকের ওপরটা ঢেকে রাখে এবং তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে শুধুমাত্র তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র,নিজ অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও বালক যারা নারীদের গোপন অংগ সম্পর্কে অজ্ঞ তারা ব্যতীত; আর তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। হে মুমিন লোকেরা ! তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর নিকট তওবা কর, আশাকরা যায় তোমরা কল্যাণ লাভ করবে। " (সূরা আন-নূরঃ ৩১)

আল্লাহ্‌ সুবানাহুতায়ালা আরো বলেছেনঃ
"হে নবী ! আপনি আপনার স্ত্রীগণ ও কন্যাদেরকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের ওপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না।" (সুরা আহযাবঃ ৫৯)

অনেক মুসলিম আপুই অমুসলিম, কাফির, বেদ্বীন নারীদের খোলা-মেলা পোশাক এবং অবাধ চাল-চলন দেখে আফসোস করেন। কিন্তু তাদের মোটেও আফসোস করা উচিৎ নয়।
আল্লাহ্‌ সুবানাহুতায়ালা আরো বলেছেনঃ
"পার্থিব জীবনের উপর কাফেরদিগকে উম্মত্ত করে দেয়া হয়েছে। আর তারা ঈমানদারদের প্রতি লক্ষ্য করে হাসাহাসি করে। পক্ষান্তরে যারা পরহেযগার তারা সেই কাফেরদের তুলনায় কেয়ামতের দিন অত্যন্ত উচ্চমর্যাদায় থাকবে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সীমাহীন রুযী দান করেন।" (সুরা বাকারাঃ ২১২)

আল্লাহ্‌ সুবানাহুতায়ালা আরো বলেছেনঃ
দেশে-বিদেশে কাফেরদের অবাধচাল-চলন যেন তোমাদিগকে মোহে না ফেলে দেয়। এটা হলো সামান্য দিনের প্রাপ্তি। এরপর তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম। আর সেটি হলো অতি নিকৃষ্ট স্থান। (সুরা আলেইমরানঃ ১৯৬-১৯৭)

ঐ সমস্ত বেদ্বীন নারীদের দেখাদেখি অনেক মুসলিম বোন স্টাইলিস্ট হওয়ার টাইট জামা ও জিন্সের প্যান্ট পরে কোনরকম উড়না দিয়ে পেঁচিয়ে মাথাটা মোড়ানোকেই হিজাব মনে করে। এভাবে সে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলে।
কেউ যদি ভেবে থাকে টাইট জামা ও জিন্সের প্যান্ট পরে কোনরকম উড়না দিয়ে পেঁচিয়ে মাথাটা মোড়ানো থাকলেই হিজাব পরা বলা হয় , তাহলে বুঝতে হবে তা নিছক ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয় ।
অনেকের মুখে কানা-ঘুষার মাধ্যমে শুনা যায়, "মেয়েটি হিজাব করলে সুন্দর লাগে! হিজাবি মেয়েরা বেশী সুন্দর!"

শুনে রাখুন,,,
কেউ যদি কারো হিজাবের প্রশংসা করে, তাহলে বুঝতে হবে তার হিজাব প্রকৃত হিজাব নয়!
কারন হিজাবের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে নিজের সৌন্দর্য্য কে ঢেকে বের হওয়া ! আর প্রকৃত হিজাব হচ্ছে যেমন পোশাকে তেমনি চালচলনেও এবং অপরের সাথে কথা বার্তায়ও!


একজন নারীর বেপর্দা ভাবে চলা-ফেরা করার পরিণতি খুব ভয়াবহ।
একটি মেয়ে যে কতটা সহজে একজন পুরুষের জীবনকেব ধ্বংশ করে দিতে পারে যা মেয়েটি কল্পনাও করতে পারেনা। গুনাহের শুরুটা অনেক মিষ্টি, কিন্তুশেষটা অনেক তিক্ত।ঘুড়ি যখন নাটাই থেকে ছুটে যায় তখন তাকে সামাল দেওয়া অনেক কষ্টকর হয়ে যায়। একজন মেয়ের হাসি, কান্না, চাহনী সব কিছুইরয়েছে পুরুষের জন্য আকর্ষণ। সেই আকর্ষণে মূগ্ধ হয়ে কখন যে তা পুরুষের অন্তরে ভালবাসার আল্পনাএকেঁ দেয় তা হয়ত মেয়েটি কল্পনাও করতে পারেনা। আর এভাবেই শুরু হয় দুটি নর নারীর গুনাহের পথে পথ চলা। আর সে পথ চলা, হাসি কান্নায় কখন যে একজন পুরুষের ভবিষ্যত কল্পনার সাগরে অন্ধকারে হারিয়ে যায়,আর তা বুঝে আসে অনেক পরে। তাই বলি নারীর পর্দা শুধু তার অঙ্গ প্রতঙ্গকে ঢাকার মাঝেই সিমাবদ্ধ থাকবে না। বরং একজন নারীর জন্য আবশ্যক তার কন্ঠ, কথা,লেখা, পুরুষের মনে আকর্ষণ তৈরী হয় এমন সব কিছু থেকে নিজেকে বিরতরাখা।যাতে একজন নারীর দ্বারা কখনো কোন পুরুষের জীবন,তার ভবিষ্যত গুনাহের সাগরে অন্ধকার হয়ে না যায়।''

বর্তমান যুগের লোকেদের অবস্থা হচ্ছে -
একে তো তারা পরকাল বিমুখী, আমল খুব একটা নেই বললেই চলে, টুকটাক আমল যা-ই করে তাও আমার ভেজাল সমৃদ্ধ।
খাঁটি আমলদার পাওয়া মুশকিল। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বুঝিয়ে বললেও লাভ হয় না। নিজের খেয়াল-খুশি মত আমল করে। আল্লাহ্‌র খুশীর জন্য আমল করে না।
যে কেউ যে আমলই করুক না কেন, সে সেটার পূর্ণতা দেয়া না। একারনেই যারা হিজাব পালন করে কিন্তু সঠিক পদ্ধতিতে করে না। পুরুষের মধ্যে অনেকে হিজাব পালন করে কিন্তু সে সুযোগ পেলেই এদিক-সেদিক তাকাতে থাকে। পর-নারীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকে।
অথচ রাসুল [স:] বলেছেন , যদি কোন মহিলার দিকে হঠাৎ নজর পড়ে যায় , তাৎক্ষণিক দৃষ্টি সরিয়ে নেবে এবং তার দিকে আর দ্বিতীয়বার তাকাবে না।

আবার নারীদের মধ্যে যারা হিজাব পরিধান করে তারাও সঠিকভাবে টা পালন করে না। হয় তার চুল বেরিয়ে থাকে নয় সুগন্ধি মেখে চলা-ফেরা করে।
অথচ রাসুল (সাঃ) বলেছেন-“পুরুষেরা গন্ধ পাবে এমন উদ্দেশ্যে আতর বা সুগন্ধি মেখে কোন মহিলা যদি পুরুষদের মাঝে চলাফেরা করে তাহলে সে একজন যিনাকারী মহিলা হিসাবে গণ্য হবে” (আহমাদ ৪/৪১৮, ছহীহুল জামে হাদীছ ১০৫)।

অনেক মহিলা তো এ ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন, আর অনেকেই তো এ বিষয়টিকে খুব হালকাভাবে গ্রহণ করে। যে সমস্ত নারীরা সেজেগুজে বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি মেখে ড্রাইভারের সাথে গাড়ীতে চলাফেরা করছে, দোকানে যাচ্ছে, স্কুল-কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে যাচ্ছে, তারা শরী’আতের নিষেধাজ্ঞার দিকে সামান্যতমও খেয়াল করে না। মেয়েদের ঘরের বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে ইসলামী শরী‘আত এমন কঠোর বিধান আরোপ করেছে যে, বাড়ীর বাইরে যাওয়ার সময় মেয়েরা সুগন্ধি মেখে থাকলে ঐ সুগন্ধিকে নাপাকী মনে করে ফরয গোসলের ন্যায় ঐ মহিলাকে গোসল করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে রাসুল (সাঃ) বলেছেন-
অর্থঃ “যে মহিলা গায়ে সুগন্ধি মেখে মাসজিদের দিকে বের হয় এ জন্য যে, তার শরীরের সুবাস বা ঘ্রাণ পাওয়া যাবে, তাহলে তার নামায ততক্ষণ পর্যন্ত গৃহীত হবে না যতক্ষণ না সে নাপাকী দূর করার জন্য ফরয গোসলের ন্যায় গোসল না করবে” (আহমাদ ২/৪৪৪, ছহীহুল জামে হাদীছ নং ২৭০৩)।

বর্তমান যুগের মানুষেরা যে কোন একটি আমল পূর্ণাঙ্গ রূপে সঠিক পদ্ধতিতে করতে চায় না। তাদেরকে অবগত করলেও মানতে চায় না। এভাবে কি আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি পাওয়া যাবে। তাদের এই ধরা-বাধা আমল আল্লাহ্‌ নিকট কতটুকু গ্রহন হবে আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন। অথচ সাহাবারা (রাঃ) যে কোন আমল এত ইখলাসের সাথে করেও এত বিনয় ও আদবের সাথে করেও সব সময় ভয় করতেন আল্লাহ্‌ কবুল করেন কিনা? আল্লাহ্‌ পাকড়াও করেন কি না? এত আমল করার পরেও সব সময় আল্লাহ্‌র ভয়ে ভীত থাকতেন।

আমারা ইসলামের অধিকাংশ বিধানকেই পরিপূর্ণ ভাবে মেনে চলি না।

তাই তো আল্লাহ্‌ আমাদের ধিক্কার দিয়ে বলেছেনঃ
"তবে কি তোমরা এই কিতাবের অর্ধেক মানো আর বাকি অর্ধেক মানো না? অতএব তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করো তাদের পার্থিব জীবনে দূর্গতি ব্যাতিত আর কিছুই নেই, এবং কেয়ামত দিবসে তারা কঠোর শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে, এবং তোমরা যা করছো আল্লাহ তদ্বিষয়ে অমনোযোগী নন"। [সূরা বাকারাহঃ আয়াত ৮৫]

মহান আল্লাহ্‌ আমাদের নির্দেশ দিচ্ছেনঃ
"হে ঈমানদার গন! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না। নিশ্চিত রূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সুরা বাকারাঃ ২০৮)

তাই আমরা যদি কল্যাণ লাভ করতে চাই তবে আমাদের উচিৎ
পরিপূর্ণ ভাবে ইসলামের বিধি-বিধান গুলো মেনে চলা।

হিজাবের নিয়ম-কানুন কোরআন ও সহীহ হাদীসে উল্লেখ আছে। প্রধানত: নিয়ম ৭ টি-

১। পুরুষের নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢাকতে হবে। মেয়েদের জন্য মুখ আর হাতের কব্জি ব্যতীত (কিছু কিছু স্কলারদের মতে মুখও ঢাকতে হবে) সমস্ত শরীর ঢাকতে হবে। কেননা মহানবী (সাঃ) বলেন, ‘মেয়ে মানুষের সবটাই লজ্জাস্থান (গোপনীয়)। আর সে যখন বের হয়, তখন শয়তান তাকে পুরুষের দৃষ্টিতে সুশোভন করে তোলে।’ (তিরমিযী, মিশকাত ৩১০৯ নং)

অন্য ৬ টি নিয়ম পুরুষ ও মহিলার জন্য একই।

২। যে পোশাক পরিধান করবে, সেটাই যেন বিপরীত লিঙ্গের প্রতি সৌন্দর্যময় ও দৃষ্টি-আকর্ষী না হয়। যেহেতু মহান আল্লাহ্‌ বলেন,
{وَلاَ يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلاَّ مَا ظَهَرَ مِنْهَا}
‘সাধারণতঃ যা প্রকাশ হয়ে থাকে, তা ছাড়া তারা যেন তাদের অন্যান্য সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।’ (সূরা নূর ৩১ আয়াত)
সুতরাং এখানে এটাও বুঝে নিতে হবে যে- বোরকা যেন নকশাখচিত না হয়।

৩। পোশাকটি যেন এমন পাতলা না হয়, যাতে কাপড়ের উপর থেকেও ভিতরের চামড়া নজরে আসে। নচেৎ ঢাকা থাকলেও খোলার পর্যায়ভুক্ত।
[একদা হাফসা বিন্তে আব্দুর রহমান পাতলা ওড়না পরে আয়েশা (রাযিয়াল্ল­াহু আনহা)-এর নিকট গেলে তিনি তাঁর ওড়নাকে ছিঁড়ে ফেলে দিলেন এবং তাঁকে একটি মোটা ওড়না পরতে দিলেন।](মুয়াত্তা মালেক, মিশকাত ৪৩৭৫ নং)

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- দুই শ্রেণীর জাহান্নামী এখনও আমি দেখিনি। (কারণ তারা এখন নেই, ভবিষ্যতে আত্মপ্রকাশ করবে) এক শ্রেণী হচ্ছে ঐ সকল মানুষ, যাদের হাতে ষাঁড়ের লেজের মতো চাবুক থাকবে, যা দিয়ে তারা মানুষকে প্রহার করবে।
আর দ্বিতীয় শ্রেণী হচ্ছে- ঐ সকল নারী, যারা হবে পোশাক পরিহিতা কিন্তু তারপরেও তারা থাকবে নগ্ন, তারা পর পুরুষকে আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও আকৃষ্ট হবে; তাদের মাথা হবে উটের হেলানো কুঁজের ন্যায়।
এরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং জান্নাতের সু-ঘ্রাণও পাবে না অথচ জান্নাতের সু-ঘ্রাণ তো এত এত দূর থেকে পাওয়া যাবে। (মুসলিম ২/২০৫, হাদীস: ২১২৮)

আমি মনে করিঃ
যে সমস্ত মেয়েরা নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ করে, আঁকা-বাঁকা ভঙ্গিতে, অর্ধনগ্ন অবস্থায় পুরুষের সামনে দিয়ে চলা ফেরা করে তাদের মুল উদ্দেশ্য আল্লাহ্‌ রাসুল (সাঃ) ঐ বানী মোতাবেক অপর পুরুষকে আকৃষ্ট করা, একারনেই ঐ সমস্ত নারীরা বিভিন্ন কসমেটিক দিয়ে ঘষে-মেজে নিজেদেরকে পুরুষের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে চায়। তারা চায় পুরুষরা তাদের প্রতি আকর্ষিত হোক। তাদের রূপের প্রশংসা করুক। এবং এভাবে এক পর্যায়ে তাদের মাঝে প্রেম হয়। এটাই হচ্ছে হাদিসের দ্বিতীয় অংশের বাস্তবতা যে তারাও আকৃষ্ট হবে। এই কার্যকলাপ গুলো তারা তাদের জন্য জীবন সঙ্গী নির্বাচনের একতা মাধ্যম হিসেবে ব্যাবহার করে থাকে।

কিন্তু যে বিষয়টা আমি বুঝি না, তা হল-
যখন তারা জীবন সঙ্গিনী পেয়ে গেল তখন তো আর নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ করার, আঁকা-বাঁকা ভঙ্গিতে, অর্ধনগ্ন অবস্থায় পুরুষের সামনে দিয়ে চলা ফেরা করে অপর পুরুষের কাছে নিজেকে আকর্ষণীয় করার প্রয়োজন নেই। তাহলে বিবাহিত নারীরাও কেন বিভিন্ন কসমেটিক দিয়ে ঘষে-মেজে নিজেদেরকে অপর পুরুষের কাছে নিজেকে আকর্ষণীয় করার তুলে।
উল্লেখ্য যে, নারীদের সুগন্ধি মেখে বাইরে বের হওয়া নিষেধ। মহানবী (সাঃ) বলেন, ‘সুগন্ধি ছড়ানোর উদ্দেশ্যে কোন মহিলা যদি তা ব্যবহার করে পুরুষদের সামনে যায়, তবে সে একটি বেশ্যা মেয়ে বলে পরিগণিত হবে।’ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত নং ১০৬৫)

৪। পোশাক যেন এমন আঁট-সাঁট (টাইটফিট) না হয়, যাতে দেহের উঁচু-নিচু গড়ন ব্যক্ত হয়। এটা পুরোপুরি নগ্নতার চেয়ে আরো বেশি দৃষ্টি-আকর্ষী।

৫। পোশাকটি যেন কোন অবিশ্বাসী/কাফেরদের অনুকৃত না হয়। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য অবন (লেবাসে-পোশাকে, চাল-চলনে অনুকরণ) করবে, সে তাদেরই দলভুক্ত।’ (আবূ দাঊদ, মিশকাত ৪৩৪৭)

৬। পোশাকটি তা যেন বিপরীত লিঙ্গের পোশাকের অনুরূপ না হয়। মহানবী (সাঃ) সেই নারীদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন, যারা পুরুষদের বেশ ধারণ করে এবং সেই পুরুষদেরকেও অভিশাপ দিয়েছেন, যারা নারীদের বেশ ধারণ করে।’ (আবূ দাঊদ ৪০৯৭, ইবনে মাজাহ ১৯০৪ নং)

৭। পোশাকটি যেন জাঁকজমকপূর্ণ প্রসিদ্ধিজনক না হয়। কারণ, বিরল ধরনের লেবাস পরলে সাধারণতঃ পরিধানকারীর মনে গর্ব সৃষ্টি হয় এবং দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাই মহানবী (সাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে প্রসিদ্ধিজনক লেবাস পরবে, আল্লাহ্‌ তাকে কিয়ামতে লাঞ্ছনার লেবাস পরাবেন।’ (আহমাদ, আবূ দাঊদ, ইবনে মাজাহ, মিশকাত ৪৩৪৬ নং)



হিজাব বলতে শুধু পোশাক বোঝায় না। বরং মানুষের আচার-আচরণ,ব্যবহার, দৃষ্টিভঙ্গি এমনকি অভিপ্রায়কেও বোঝায়। পোশাকের পাশাপাশি চোখ, মন, চিন্তা এমনকি হৃদয়েরও হিজাব থাকতে হবে।


তাই আসুন আমরা নারী-পুরুষ প্রত্যেকে হিজাব মেনে চলি এবং একটি সুন্দর সমাজ গড়ে তুলি।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৮
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×