♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)
(ছবি নেট হতে)
আমার কোনো দোষ নাই!
জ্বী আপনি ঠিকই পড়েছেন। ”আমার কোনো দোষ নাই। চারিপাশে যা হচ্ছে তাতে আমার কোনো দায় নাই। সারা দুনিয়ার সবাই যদি আমার মনের কথা বুঝে সেভাবে চলে তবেইতো কোনো সমস্যা থাকে না।"-এই ভাবনাটা প্রতিটি মানুষের মনেই রয়েছে। আর এটাই সবচেয়ে বড় দোষ। এই দোষের জন্যেই চরিপাশে এতো অশান্তি।
সবাই নিজের মত করে চলতে চাই। সবাই নিজে ঠিক আর আশেপাশের সবাই ভুল। নিজের ভুল কারো চোখে পরে না। নিজের সব যুক্তিই যেহুতু নিজের কাছে ঠিক, সুতরাং এসব অন্যের কাছেও ঠিক হতে হবে। নিজের সবই যুক্তি আর অন্যের সবই অযুক্তি বা কুযুক্তি। নিজের কোনো সংশোধন প্রয়োজন নাই। অন্যকে সংশোধন করে নিজের মত করাই মূল ব্রত। আর এই ব্রত বাঁধাগ্রস্থ হলেই যতো বিপত্তি, বিক্ষোভ, ক্ষোভ, আন্দোলন, ঝগড়া, ফ্যাঁসাদ, মারামারি, কাটাকাটি ইত্যাদি ইত্যাদি। আর দিন শেষে সব পক্ষই, "আমার কোনো দোষ নাই!"
আরে ভাই, আমি কে যে আমার ধ্যান-জ্ঞাণ সবাই ধারণ করবে? আমি কে যে আমায় নিয়ে না ভাবলে লোকের দিন কাটবে না? আমি সমাজে এমন কি পরিবর্তন করে ফেলেছি যে সবাই আমার অন্ধ অনুকরন করবে?
উপরের প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে নিজের বেকুবী কিছু ধরা পরে, যদিও আমার কোনো দোষ নাই। তাই যদি আমি মাত্রাতিরিক্ত বেকুব হই তবে দেশ ও জাতি উদ্ধারের অনেক উত্তর খুঁজে পাবো। আর যদি মিনিমাম জ্ঞাণ থাকে তবে থেমে যাবো। তো অতি উচ্চ শ্রেণির বেকুব হিসেবে আমার অবদানের একটা উদাহরণ দেই।
যেমন এখন যেই ডিভাইসটি দিয়ে লিখছি তা কিনেছি আমার পছন্দ হবার আর প্রয়োজন হবার কারণেই। কিন্তু বেকুবীয় যুক্তি অনুসারে, এই ডিভাইসটি কেনার আমার কোনো প্রয়োজন ছিলো না। কিন্তু শুধু দেশ আর জাতির কথা ভেবেই কিনেছি। আমার এই ডিভাইস কেনাতে দোকানির লাভ হয়েছে। ফলে তার সংসার খরচে, বউ-বাচ্চার মুখে আনন্দ ফুটানোতে আমার অবদান রয়েছে। এই ডিভাইস যে সপ হতে কিনেছি তার মালিক ভাড়া বাবদ যা পাবে তাতে আমার কন্ট্রিবিউসন আছে। ফলে তার সংসারে আমি হাসি ফুটিয়েছি। আবার যে এটি আমদানি করেছে তার লাভেও আমার কন্ট্রিবিউসন আছে। এমন করে এই ডিভাইস তৈরীর উদ্যোগ হতে শুরু করে যতো মানুষ এর পেছনে আছে সব পরিবারে আমার কন্ট্রিবিউসন আছে! যেনো আমি এই ডিভাইস না কিনলে লাখ-লাখ পরিবার না খেয়ে মরে যেতো! হোয়াট এ নাইস জোক! এখন এই ডিভাইস ব্যবহার করে কোনো ক্রাইম করলেও আমার কোনো দোষ নাই। স্যালুট মি।
এমন ভিআইপি চিন্তা-ভাবনা অনেকের মনেই আছে, যদিও প্রকাশে আবার চক্ষুলজ্জা কাজ করে! ওরে আমার লজ্জাবতী! তো সেই ভিআইপি আর সর্বজ্ঞাণী চিন্তা-চেতনার জন্যেই আমি আর সবার হতে আলাদা। তাই ব্লগের সবাই আমার লিখা পড়তে মুখিয়ে থাকে। সবার যেনো কাজ একটাই ঘড়ি দেখে অপেক্ষা করা কখন আমার পোস্ট আসবে। আর পোস্ট করলেই সবার দায়িত্ব, পড়ে প্লাস আর কমেন্টে ভাসিয়ে দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া আমি কতো জ্ঞাণী! এক পোস্টেই কতো জ্ঞাণ উদ্ধার করে ফেলেছি। জাতি আর দেশ রক্ষা করে ফেলেছি। চলমান যুদ্ধ থামিয়ে ফেলেছি। আর অন্যেরা যতো পোস্ট দিবে সব যেনো আমাকে ঘিরে। যেভাবেই হোক অন্যের পোস্টে সে আমাকে ইনক্লুড না করলেও নিজ দায়িত্বে নিজেকে আমায় সেই পোস্টে ইনক্লুড করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে নচিকেতার সেই গানটি মনে পরে যাচ্ছে-
"রাজশ্রী তোমার জন্য মুদ্রাস্ফীতি অস্ট্রেলিয়ায়,
রাজশ্রী তোমার জন্য দুর্ঘটনা সোমালিয়ায়,
বাড়লো সিগারেটের দাম,
তছরুপের দায় সুখরাম,
বাড়লো সিগারেটের দাম,
তছরুপের দায় সুখরাম, আহা!
রাজশ্রী তোমার জন্য ওঠে সূর্য, চাঁদডুবে যায়।
রাজশ্রী, রাজশ্রী, ও রাজশ্রী তোমার জন্য
রাজশ্রী, রাজশ্রী, রাজশ্রী তোমার জন্য..
ওঠে সূর্য, চাঁদ ডুবে যায়।"
এখানে আমি যেনো সেই রাজশ্রী! তখন বিবেক বলে,
"ওরে বেকুব! তোরে নিয়ে এতো ভাবার সময় করো নাই। সবাই নিজের ধান্ধায় আন্ধা হয়ে আছে। শুধু তোর পোস্ট বা তোরে নিয়ে এনালাইসিস করতে কেউ এখানে আসেনা। তুই যেমনি মনের খোড়াক জোগাতে আসিস, তেমনি সবাই আসে নিজের মনের খোড়াক যোগাতে। নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে তোমারে নিয়ে নাচার মানসিক অবস্থা এই যুগে অন্তত কারো নাই। এখন সকলেই আমরা সকলের তরে, প্রত্যেকে আমরা নিজের তরে। বরং তুই বেকুব বেকার বলেই এতোকিছু ভাবার অবকাশ পাস!"