আমি কখনো প্লেনে চড়িনি।
শুধু কি তাই? একটা সত্যিকারের জলজ্যান্ত উড়োজাহাজ খুব কাছ থেকে দেখার বাস্তব কোনো অভিজ্ঞতাও আমার নেই। বাল্যকালে অবশ্য বেশ কিছু খেলনা প্লেন নাড়াচাড়া করেছি বিশদভাবে। কাগজের প্লেন নির্মাতা হিসেবে ছোটবেলায় খানিকটা সুখ্যাতি ছিল। কত কাগুজে উড়োজাহাজ আমার হাতের নিপুন ছোয়ায় অকালে ক্রাশ করেছে খাটের অন্ধকার কোণে। অসংখ্য বিমান দূঘর্টনার বেদনায় ভরা আমার শৈশব। কত দিন আমি ছাদ কিংবা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ঈর্ষাভরা চোখে দেখেছি- আকাশে ক্ষুদ্র বিন্দুর মতো কোনো প্লেন ধীর লয়ে উড়ে যাচ্ছে -একরাশ রহস্য ছড়িয়ে।
আর ভ্রমণের ব্যাপারে আমার অভিজ্ঞতা আরও ব্যাপক। একা একা গিয়েছি ঢাকা থেকে সর্বোচ্চ মানিকগঞ্জ পর্যন্ত। সেই সামান্য যাত্রায়ও আছে নানান ভুলভ্রান্তি। সিটিং বাসে উঠতে গিয়ে ভুল করে উঠে বসেছি লোকাল বাসে। তারপরও সফলভাবে, নিরাপদে, একা একা মানিকগঞ্জ পৌছানোর পর মনের ভেতর সেকি উত্তেজনা।
কখনো বিদেশে যাইনি, কখনো প্লেনে চাপিনি। অতএব হঠাৎ করে যখন ভারত নয়, নেপাল নয়, সরাসরি ইতালি যাবার আমন্ত্রণ পেলাম- তখন বিস্ময়ে হতবাক হওয়া ছাড়া আমার সামনে অন্যকোনো পথ খোলা ছিল না। এটা ছিল একটা আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদানের আমন্ত্রণ।
অতএব, আমন্ত্রণ পেয়ে আমন্ত্রণকারী সংস্থাকে পরিষ্কার ইংরেজিতে জানিয়ে দিলাম, আমার পক্ষে ইতালি যাওয়া সম্ভব নয়। আমার উত্তর শুনে কেন জানি তারা খুবই আশ্বস্ত হলেন এবং ছাইমাখা হাতে চেপে ধরলেন, তোমাকে যেতেই হবে। অতি সত্ত্বর এম্বেসীতে যোগাযোগ করো। কিন্তু ইতালিয়ান এম্বেসি কোথায় আমি সঠিক ঠিকানাটা জানি না। দেশ-বিদেশ ঘুরেছে এমন এক বন্ধুকে ধরলাম ঠিকানাটা কোথায় তা জানার জন্য। সে আমাকে জিজ্ঞাসা করল, তোর পাসপোর্ট আছে?
আমি উত্তর দিলাম, না।
এরপর সে খুবই বিজ্ঞ ভঙ্গিনে বলল, ইতালির ভিসা পাওয়া এমনিতেই খুব শক্ত। তারপর যদি পাসপোর্ট না থাকে - তাহলে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা পুরোপুরি শূণ্য। আগে ওটা জোগাড় করো।
আমি পূর্ণ যৌবন এবং ভরা উদ্যম নিয়ে ঝাপিয়ে পড়লাম একটা পাসপোর্ট জোগাড়ের জন্য।
পাসপোর্ট এবং ভিসা প্রাপ্তির ইতিহাস গ্রীক ট্র্যাজেডির মতোই দীর্ঘ এবং বেদনাবিধুর। পাঠকদের ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটতে পারে- এই আশংকায় সেই ইতিহাস বর্ণনার ধারে কাছেও গেলাম না। সময় ও সুযোগ পেলে অন্য সময় সেসব কথা বলা যাবে।
( চলবে)