আমার মেয়ে এবার ওয়ানে ভর্তি হবে। প্রস্তুতির শুরু গত বছর থেকেই। মেধা নয় এবার স্কুলসমূহ লটারি করে প্রার্থীদের বেছে নেবে, সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। উদ্দেশ্য অতি মহৎ। শিশু এবং তাদের অভিভাবকদের উপর যেন অযথা কোনো চাপ না পড়ে, এজন্য এ ব্যবস্থা। সরকারী সিদ্ধান্ত মোতাবেক, আমি এবং আমার স্ত্রী লটারির টিকেট কিনতে নেমে পড়লাম। ভিখারুননেসার টিকিট কিনতে গিয়ে শুনলাম, লাইনে গত রাতে যারা দাঁড়িয়েছেন,তারাই নাকি আজ দুপুরেও সুযোগ পাচ্ছেন না। যাই হোক শেষমেষ বহুকষ্টে ফরম তোলা গেল। এখন সবার ফরম স্কুল কর্তৃপক্ষ জমা নেবেন না। ফরম জমার নেবার সময় বাচ্চাদের একটা ছোট পরীক্ষা দিতে হবে । মৌখিক,লিখিত এবং শারীরিক পরীক্ষা। লাইনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে আমার মেয়ে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দয়ায় পরীক্ষা দেবার সুযোগ পেল। তাকে বেশ কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হল। মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর, তাকে লিখিত পরীক্ষার সুযোগ দেয়া হল। নিজের নাম এবং বাবার নাম লিখতে বলা হল। এটাতে সে পার পেয়ে যাবার পর, তাকে শারীরিক পরীক্ষা করা হল। বলা হল, ডান হাত মাথার উপর দিয়ে বাম কান দুই আঙ্গুল দিয়ে ধরা। কীভাবে কীভাবে যেন, সে এটাও পেরে গেল। এরপর তারা ফরম জমা নিলেন। বললেন,যথা সময়ে জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে পরবর্তী করণীয় জানানো হবে।
ব্যাপক টেনশনে দিন কাটতে লাগল। মেয়ের মা ঠিক করল, লটারির দিন সে রোজা রাখবে। এর মধ্যে উড়া উড়া শোনা গেল, যারা টিকেছে, তাদের আরও এক দফা বাছাই করা হবে। তারপর লটারি। আমাকে একজন বলল, ভাই , আপনি লাইনে আসেন। আমি বললাম, ভাই আমি তো কয়েকদিন ধরেই লাইনেই জীবনযাপন করছি। এরপর আমার সেই শুভাকাঙ্খী যা বললেন, তাতে আমার ঘাড়ের চুল পর্যন্ত দাঁড়িয়ে গেল। একজন নেতা আছেন, তাকে দেড় লাখ টাকা দিতে হবে, সাংবাদিক দেখে এই বিশেষ কনসেশন, অন্যদের তিন চার লাখ লাগছে। নেতা আবার বামপন্থী, কাজেই ধনী গরীব যে কেউ তার এই অনুগ্রহ পেতে পারবে, এখানে কোনও দলীয় বিবেচনা থাকবে না। তার অনুগ্রহ পেলে আমার মেয়ের নাম লটারির জন্য মনোনীত হবে, এবং লটারিতেও টিকবে। তবে যিনি নেতার সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেবেন , তাকে অতিরিক্ত দশ হাজার দিতে হবে। বলাবাহুল্য, এটা আমার বিশ্বাস হয় নাই।
আজ অবাক হয়ে দেখলাম, লটারির জন্য আমার মেয়ে মনোনীত হয়নি, আমার সেই শুভাকাঙ্খী আমাকে জানালেন, এখনও সময় আছে, দেরী হওয়ায় রেট গিয়ে দাঁড়িয়েছে আড়াই লাখ টাকায়,পরে আর পাওয়া যাবেনা। যোগাযোগের দালালি বাবদ দশসহ দুই লাখ ষাট হাজার টাকা এখন আমি কোথায় পাবো?