এই ঘটনা এবং ঘটনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে আমাদের প্রত্যেক জাতীয় প্রতিষ্ঠানের কিছু দায় ও দায়িত্ব ছিল। সেটি সরকার বলেন, আর্মি বলেন, সংসদ বলেন , মিডিয়া বলেন আর সাধারণ মানুষের কথাই বলেন। মিডিয়ার একজন কর্মী হিসেবে মিডিয়ার কিছু ভুলের কথাই প্রথমে উল্লেখ করতে চাই। এতে যদি আমার ক্যারিয়ার বিঘ্নিত হয়, তাহলেও আমি সেটা কেয়ার করিনা।
একটি এক্সকুসিভ নিউজের চেয়ে জাতীয় স্বার্থ এবং জাতীয় নিরাপত্তা অনেক বড়ো। অ-নে-ক বড়ো।
১.ঘটনার সূত্রপাত ঘটার পর- দু একটি মিডিয়ার তথাকথিত সাহসী সাংবাদিকরা একটি কান্ড করলেন। তারা দু একজন বিডিআরের ইন্টারভিউ নিলেন। ইন্টারভিউ দাতাদেও কেউ কেউ হাতে গ্রেনেড আর কাঁধে রাইফেল নিয়ে কিছু কথা বললেন। সেই কথার সত্যতা কিংবা অসত্যতা বিচার্য্য বিষয়। কিন্তু সেই বক্তব্য যখন ঢালাওভাবে মিডিযাতে প্রচার করা হল। আমরা মেজর জেনারেল শাকিলের বিরুদ্ধে কিছু বক্তব্য শুনলাম। নিয়ম হচ্ছে- এক পওে বক্তব্য শোনার পর- অপর পওে বক্তব্যও শুনতে হয়। তারপর সেটি প্রকাশ করতে হয়। যেটা দেখলাম, গোটা মিডিয়া ডাল ভাত নিয়ে একটা খিচুরি পাকালো। জনগণও স্বাভাবিকভাবে খুব দ্রুত কনভিন্স হয়ে গেলেন। মধ্যরাতের টক শো-এর স্যুট টাই পরা তারকারা বহুদিন পর একটি সাবজেক্ট পেলেন। তার ফ্রি স্টাইলে ডাল ভাত নিয়ে শুরু করলেন।
বিডিআরের বঞ্চনা নিয়ে এমন হৃদয় বিদারক আলোচনা শুরু হলো, আমার মতো গো বেচারা নিরীহ মানুষের রক্তও গরম হয়ে গেল। আর্মির বিরুদ্ধে একটা সেন্টিমেন্ট দাঁড়িয়ে গেল। কথার ছলে জাতির কতো বড়ো সর্বনাশ যে হল, সেটি আমরা কোনদিন বুঝতে পারবো কিনা জানিনা।
২. আর্মির অফিসার চেইন অব কমান্ডের বিরুদ্ধে যে প্রোভেকেশসনটা বা সেন্টিমেন্ট তৈরী হল, সেটি যে কতখানি বিপদজনক দিকে গড়াতে পারে, তার নজির পরবর্তীতে আমরা দেখলাম।
৩. পিলখানার ভেতরে কি ঘটছে- আমরা তখন জানি না। কিন্তু নিরাপত্তার খাতিরে রাষ্ট্রের বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্তা যেমন সেনাবাহিনী, পুলিশ , র্যাব কে কোথায় কয়টি বন্দুক নিয়ে কি কি ভঙ্গিতে রাস্তার পজিশন নিলো, সেটি আমরা দেখলাম, প্রচার করলাম। ফলে যারা পিলখানার ভেতরে এই ঘটনা ঘটাচ্ছে- তারা জেনে ফেললো- বাইরের কি অবস্থা।
ফলশ্রুতিতে তারা তাদের দাবিমালায় নতুন পালক যুক্ত হল, সেটি হচ্ছে সেনাবাহিনীকে সরে যেতে হবে। এই নিয়ে অনর্থক দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হল। এই দীর্ঘ সূত্রিতার ফলাফল কতখানি ভয়াবহ হলো- সেটি ইতিহাসের বিচার্য বিষয়।
৪. তথ্য সংগ্রহ ও চট জলদি পরিবেশনে পটু আমাদের মিডিয়া সব খবর নিলেন, প্রচার করলেন। কিন্তু অস্ত্র সমর্পনের সময় কারেন্ট বিহীন অবস্থায় অনেক বিডিআর পালিয়ে গেলেন, সেটি তারা দেখতে পেলেন না। বোধহয় কারেন্ট না থাকায় অন্ধকারে তারা কিছু দেখতে পাননি। এই হচ্ছে, বিশ্লেষনী রির্পোটারের চোখ ও দৃষ্টি। বিডিআর জোয়ানদারদের সাক্ষাৎকার নেয়া সেইসব অকুতোভয় সাংবাদিক তখন কোথায় ছিলেন, এটি জানতে বড়ো ইচ্ছে করো।
৫. এখন আবার মিডিয়া ঝুঁকে পড়েছে আর্মির দিকে। বিজ্ঞাপন বাদ দিয়ে তারা হামদ নাথ পরিবেশন করছে। যে চ্যানেল গতকাল রাতেও ডালভাত, অনেক দিনের বঞ্চনা ও ক্ষোভ নিয়ে টিভির পর্দা গরম করে ফেলেছিলেন , আজ তাদেও অন্যরূপ। পাবলিক পড়েছে বিপদে। গতকাল রাতেও আড্ডায় যে সব কথা অনর্গল বলা গেছে- আজ হঠাৎ করে সুর ঘোরাতে ভীষণ বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। তারা তো টক শোর তারকাদের মতো নিজের রঙ বদলাতে অতো পটু না। ফলে দৃশ্যত দেখা যাচ্ছে, জাতি আজ দুইভাগে বিভক্ত, বিডিআর আর আর্মি।
ছাগল দিয়েও ধান চাষ হয়, ফসল নয়, আগাছাই ফলে বেশি।